
গিরিশচন্দ্র।
নাট্যকার গিরিশ চন্দ্র ঘোষ বহু ধরনের নাটক লিখেছেন। অনুবাদ নাটকও লিখেছেন। উপন্যাসের রূপান্তর করেছেন নাটকে। কাব্য রূপান্তর করেছেন নাটকে। পাশাপাশি তিনি গীতিনাট্য রচনা করেছিলেন। তেমনই একটি উল্লেখযোগ্য গীতিনাট্য হল ‘স্বপ্নের ফুল’। মিনার্ভা থিয়েটারে এই নাটকটি প্রথম অভিনীত হয় ১৮৯৪ সালের ১৭ নভেম্বর। মূল চরিত্রগুলিতে অভিনয় করলেন শরৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (ধীর) ,গিরিশচন্দ্র ঘোষের পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ (অধীর), তিনকড়ি দাসী (মনোহরা), হিঙ্গনবালা (মনখরা), কুসুমকুমারী (যুথি), ভূষণ কুমারী (বেলা)।
‘স্বপ্নের ফুল’ হল একটি রূপক গীতিনাট্য। এই গীতিনাট্যের বিষয়বস্তু প্রেম তবে সেই প্রেম সাধারণ প্রেম নয়। এই প্রেম হল ভোগ নয়, আত্মত্যাগ। ভোগলুব্ধ বাস্তব সংসারে এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসাই ‘স্বপ্নের ফুল’। আনন্দের সৃষ্টি। গ্রন্থের শুরুতে মনোহরা রূপে মহামায়ার আবির্ভাব এবং তাঁর প্রথম উক্তি ”ফুটলো কলি নয়ন জল ঢেলে”। এর অনেক আগেই ‘কমলে কামিনী’ নাটকেও গিরিশচন্দ্র কিন্তু এই রকম প্রেমের আভাস দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৩৯: ‘সপ্তমীতে বিসর্জন’ ও ‘বড়দিনের বখশিস’-এর সাফল্যের পরে একাধিক পঞ্চরং লিখেছিলেন গিরিশচন্দ্র

রিভিউ: ‘কফস’ হল আমাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সেই ভয়ঙ্কর খাঁচা
এই গীতিনাট্যের নায়ক দু’ জন ধীর এবং অধীর। নায়িকা দু’জন। যুথি এবং বেলা। এদের সাংসারিক পরিচয় নেই। জিজ্ঞাসা করলে বলে “আমরা স্বপ্নের মানুষ, স্বপ্নে কথা কই, স্বপ্নে দেখা দিই, ঘুম ভাঙলেই চলে যাই। ধীর চরিত্রটি উদাসী, নারী বিদ্বেষী। আর অধীর চরিত্রটি অনুরাগী। কিন্তু উভয়ের প্রকৃতিগত এই বৈষম্য থাকলেও স্বার্থশূন্য সখ্যতা পরস্পরের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। নায়িকাদেরও ঠিক অনুরুপ ভাব। স্বার্থশূন্য সৌহার্দের বন্ধনে সকলেই আকৃষ্ট হয়ে আছে।
আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৭: তোমরা যে সব বুড়ো খোকা

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২৮: ‘সম্মতি’ আদায়ের চাবিকাঠি
এরা সকলেই নগর প্রান্তের উপবনে স্বপ্নের ফুল দেখবার জন্য সমাগত। উপবন রমণীয়, রাত্রি রম্যতরা। কামনার দেবতা মদন স্থির থাকতে পারলেন না। শর প্রয়োগ করলেন কিন্তু শরে আহত হল কেবল তিনজন। বেলা যুথি এবং অধীর। পাশাপাশি ধীর নারী বিরাগী। সে সর্বদাই বলে
“সাবধান সাবধান তোরে সদা বলি প্রাণ
সাবধান কুটিল নয়না।।
যদি দেবী মূর্তি হয় চেও মাত্র রাঙা পায়,
সাহসে বদন তুলে বদন দেখনা।।”
“সাবধান সাবধান তোরে সদা বলি প্রাণ
সাবধান কুটিল নয়না।।
যদি দেবী মূর্তি হয় চেও মাত্র রাঙা পায়,
সাহসে বদন তুলে বদন দেখনা।।”
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২: মেয়েটি যেন গৃহলক্ষ্মী

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২২: কেস কালাদেও: ফাইল নম্বর ১
অধীর এবং বেলা পরস্পরের প্রতি পরস্পরে অত্যন্ত আকৃষ্ট। যুথি ধিরের অনুরাগী হলেও। এই অনুরোধ নিষ্ফল প্রতিদান বিহীন।
অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে গিরিশচন্দ্র এই স্বপ্নের ফুল গীতিনাট্যটি রচনা করেছিলেন এবং দর্শক মনে এটি অত্যন্ত সমাদ্রিত হয়েছিল। সকলেরই ভালো লেগেছিল এই ‘স্বপ্নের ফুল’। নাটক রচনার সময় গিরিশচন্দ্র এতটাই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন যে তার পরিচয় সাহিত্য সৃষ্টির পাতায় পাতায় ছড়ানো আছে।
অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে গিরিশচন্দ্র এই স্বপ্নের ফুল গীতিনাট্যটি রচনা করেছিলেন এবং দর্শক মনে এটি অত্যন্ত সমাদ্রিত হয়েছিল। সকলেরই ভালো লেগেছিল এই ‘স্বপ্নের ফুল’। নাটক রচনার সময় গিরিশচন্দ্র এতটাই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন যে তার পরিচয় সাহিত্য সৃষ্টির পাতায় পাতায় ছড়ানো আছে।
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh – Actor – Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।