শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


গিরিশচন্দ্র।

বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর বিরুদ্ধে রাজশাহীর জমিদার রাজা উদয়নারায়ণের বিদ্রোহ ইতিহাসে বর্ণিত হলেও গিরিশচন্দ্র ঘোষের ভ্রান্তি নাটকটাকে ঐতিহাসিক নাটক বলা চলে না। মহাকবি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, কিংলিয়ার যেমন ঐতিহাসিক চরিত্র হয়েও কল্পনা প্রধান, গিরিশচন্দ্রের ভ্রান্ত তাই। একটা কাল্পনিক ভ্রান্তি হাওয়ায় হাওয়ায় পুষ্ট হয়ে কেমন করে মহা ঝড় তুলতে পারে এই ভ্রান্তি নাটকে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
‘ভ্রান্তি’ নাটকটি ক্লাসিক থিয়েটারে প্রথম অভিনীত হয় ১৯০২ সালের ১৯ জুলাই। প্রথম দিনের অভিনয় রজনীতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁরা হলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ (রঙ্গলাল), অমরেন্দ্রনাথ দত্ত( নিরঞ্জন), সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ দানি বাবু (পুরঞ্জন), অঘোরনাথ পাঠক( উদয়নারায়ণ) হরিভূষণ ভট্টাচার্যা(শালিগ্রাম), নটোবর চৌধুরী (মুর্শিদকুলি খাঁ), প্রমদা সুন্দরী (অন্নদা), ভুবনেশ্বরী (মাধুরী), রাণীমণি (ললিতা), কুসুমকুমারী (গঙ্গা), কুমুদিনী (বৃদ্ধা)। এই নাটকের সংগীত শিক্ষক হলেন দেবকণ্ঠ বাগচি এবং নৃত্য শিক্ষয়ত্রী হলেন কুসুমকুমারী। স্ত্রীলোকের দ্বারা নৃত্যের শিক্ষা বঙ্গনাট্যশালায় প্রথম গিরিশচন্দ্র চালু করেছিলেন ওই কুসুমকুমারীর মাধ্যমে। কুসুমকুমারীর নৃত্য শিক্ষা কৌশল দর্শনে প্রীত হয়ে গিরিশচন্দ্র তাঁর গীতিনাট্যে প্রথমে পরে এই ভ্রান্তি নাটকেও তাঁকে সেই সুযোগ দেন।
আরও পড়ুন:

পর্ব-৪৯: শেষমেশ ‘মৃণালিনী’ নাটকে পশুপতির ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়ালেন গিরিশচন্দ্র

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৫: সুর হারানো হারানো সুর

মানব জীবনের অধিকাংশ সুখ-দুঃখই কল্পনা প্রসূত। ভ্রান্তির উপর প্রতিষ্ঠিত সত্যের সঙ্গে তার সংস্রব খুব সামান্য। গিরিশচন্দ্র এই নাটকে তা অত্যন্ত উজ্জ্বলভাবে চিত্রিত করেছেন। সংসারে একমাত্র যা সত্য তা প্রচ্ছন্ন রয়েছে, আর সেই রহস্য রূপের চারিদিকে কল্পনার সহায় রসের তরঙ্গ ছেয়ে পড়ছে। এটাই সংসারের দৈনন্দিন খেলা।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৫০: কুষ্টি বিচার, না কি রক্ত বিচার! জরুরি কোনটা?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৪: শ্যামপুকুরে ঠাকুর

ভ্রান্তি নাটকটা পাঠ করে সেই সময়ের বিখ্যাত ডাক্তার পন্ডিত মহেন্দ্র লাল সরকার বলেছিলেন— “এই অসুখ অবস্থাতেও গিরিশের বই বলে ‘ভ্রান্তি’ পড়তে আরম্ভ করলুম। বড় মিষ্টি লাগলো। একেবারেই সবটা পড়ে ফেললুম। রঙ্গলাল গঙ্গাবাঈ এই দুটি ক্যারেক্টারই অরিজিনাল। রঙ্গলাল সব্বার চেয়ে ভালো লেগেছে। গিরিশের এখনো লেখবার বেশ জোর আছে। এখনও সে টায়ার্ড হয়নি”।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, অসমের আলো-অন্ধকার, পর্ব-২: ইতিহাসে অসম

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৬: রবীন্দ্রনাথ চা নয়, প্রতিদিন সকালে কফি খেতেন

‘বঙ্গবাসী’ পত্রিকাতে বিহারীলাল সরকার লিখেছিলেন— “ভ্রান্তি নাটকের গিরিশ বাবু তুমি ধন্য! তুমি রঙ্গলাল আঁকিয়াছ আর তুমি রঙ্গলাল সাজিয়া রঙ্গমঞ্চে আপন চিত্র দেখাইয়া বঙ্গ নাট্য মঞ্চে রঙ্গরসের উৎস ছুটাইয়াছ পরোপকার মহাব্রতের যে ধ্যান কথা শুনাইয়াছ তাহা অনেকদিন শুনি নাই, দেখি নাই” ইত্যাদি। নাটকের শিক্ষাদান গিরিশচন্দ্র যেভাবে করেছিলেন, এর অভিনয়ও সেইরকম সর্বাঙ্গসুন্দর হয়েছিল। রঙ্গলালের ভূমিকায় নবীন যুবার মতো সাজসজ্জায় গিরিশচন্দ্রকে যেমন মানিয়েছিল যুবাজনোচিত উৎসাহে তাঁর অভিনয়ও তেমনি হৃদয়গ্রাহী হয়েছিল।
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh – Actor – Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।

Skip to content