গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অর্ধেন্দু শেখর মুস্তাফি।
গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে ‘জনা’। জনা কাহিনির মূল আমার দেখতে পাই জৈমিনি ভারতে। কাশীরাম দাস জৈমিনি ভারত থেকে তাঁর কাহিনির উপাদান সংগ্রহ করেছিলেন। সেখানে অশ্বমেধ পর্বের পঞ্চদশ অধ্যায় গঙ্গাশাপ বৃত্তান্ত রয়েছে। যদিও সেখানে জনার নাম ছিল জ্বালা। জনা চরিত্রের জটিল বিচিত্র আপাত বিরোধী দিকগুলি ধরা পড়েছে মধুসূদনের বীরাঙ্গনা কাব্যের অন্তর্গত ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ পত্রের মধ্যে। জীবনের করুণ ট্র্যাজিডি মধুসূদন দত্ত ওই পত্রের মধ্যে সংক্ষেপে অঙ্কন করেছেন। মধুসূদন এর সংক্ষিপ্ত চরিত্র গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটক ‘জনা’-র মধ্যে বিস্তৃতভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
পৌরাণিক নাটকের মধ্যে সাধারণত দুটি প্রকার রস মিশ্রণ দেখা যায়। প্রথমটি হল মানুষের জীবনে দেব শক্তির লীলা ও মহিমা দেখিয়ে এবং অলৌকিক বিধানের প্রতি দর্শকদের আবিষ্ট চিত্তকে ভক্তিরসে উদ্বুদ্ধ করা। দ্বিতীয়টি হল, পার্থিব জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে লৌকিক আনন্দ-বেদনা মিশ্রিত মানব সৃষ্টি করা। মনে রাখতে হবে যে, পৌরাণিক নাটক যাত্রা এবং বাস্তব নাটকের মধ্যবর্তী পথই অনুসরণ করেছে। পৌরাণিক নাটকের বাঁধানো ও বিন্যাস পাশ্চাত্য নাট্যরীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিন্তু তার ভাববস্তু পৌরাণিক জগত থেকে গৃহীত। গিরিশচন্দ্র জনা নাটকের মধ্যে উপরিউক্ত দুটি রসধারার মিশ্রণ আমরা দেখতে পাই। সেখানে জনা ও তার পুত্রকে কেন্দ্র করে নাটকের বাস্তব আবেগ প্রবৃত্তির ঘাত-প্রতিঘাত জনিত রস সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যদিকে জনার স্বামী নীলধ্বজ, বিদূষক, অগ্নি প্রমুখের মধ্য দিয়ে অলৌকিক ভক্তিরস নাটকের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে। প্রবীরের বীরধর্ম, স্বদেশপ্রেম, মাতৃভক্তি প্রভৃতি বিচিত্র মানবীয় গুণের এর সমাবেশ এই চরিত্রটি দর্শকদের সমীহ আদায় করে নেয়। পাশাপাশি জনার পুত্র স্নেহ, স্বাদেশিকতা, স্বামী ও অন্যান্য কৃষ্ণভক্ত লোকেদের বিরোধিতা, জ্বলন্ত প্রতি হিংসা নাটকের গতিকে একান্তভাবে বাস্তবমুখী করে তুলেছে।
পৌরাণিক নাটকের মধ্যে সাধারণত দুটি প্রকার রস মিশ্রণ দেখা যায়। প্রথমটি হল মানুষের জীবনে দেব শক্তির লীলা ও মহিমা দেখিয়ে এবং অলৌকিক বিধানের প্রতি দর্শকদের আবিষ্ট চিত্তকে ভক্তিরসে উদ্বুদ্ধ করা। দ্বিতীয়টি হল, পার্থিব জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে লৌকিক আনন্দ-বেদনা মিশ্রিত মানব সৃষ্টি করা। মনে রাখতে হবে যে, পৌরাণিক নাটক যাত্রা এবং বাস্তব নাটকের মধ্যবর্তী পথই অনুসরণ করেছে। পৌরাণিক নাটকের বাঁধানো ও বিন্যাস পাশ্চাত্য নাট্যরীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিন্তু তার ভাববস্তু পৌরাণিক জগত থেকে গৃহীত। গিরিশচন্দ্র জনা নাটকের মধ্যে উপরিউক্ত দুটি রসধারার মিশ্রণ আমরা দেখতে পাই। সেখানে জনা ও তার পুত্রকে কেন্দ্র করে নাটকের বাস্তব আবেগ প্রবৃত্তির ঘাত-প্রতিঘাত জনিত রস সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যদিকে জনার স্বামী নীলধ্বজ, বিদূষক, অগ্নি প্রমুখের মধ্য দিয়ে অলৌকিক ভক্তিরস নাটকের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে। প্রবীরের বীরধর্ম, স্বদেশপ্রেম, মাতৃভক্তি প্রভৃতি বিচিত্র মানবীয় গুণের এর সমাবেশ এই চরিত্রটি দর্শকদের সমীহ আদায় করে নেয়। পাশাপাশি জনার পুত্র স্নেহ, স্বাদেশিকতা, স্বামী ও অন্যান্য কৃষ্ণভক্ত লোকেদের বিরোধিতা, জ্বলন্ত প্রতি হিংসা নাটকের গতিকে একান্তভাবে বাস্তবমুখী করে তুলেছে।
প্রবীর ও জনার চরিত্রাশ্রিত লৌকিক রসের অবতরণের থাকলেই জনা পৌরাণিক নাটক রূপে সার্থক হতো না। সেজন্য গিরিশচন্দ্র প্রবীরের মৃত্যুর পরেও নাটকের দুটি অংকের অবতারণা করেছেন। নাটকের সেই দুটি অংকে গিরিশচন্দ্র শ্রীকৃষ্ণের লীলা রহস্য ও সীমাহীন মহিমা ব্যক্ত করেছেন। কৃষ্ণভক্ত বিদূষক এই দুটি অঙ্কে প্রধান চরিত্র এবং তাঁর গূঢ় কৃষ্ণভক্তির চরিতার্থতা দেখানোই গিরিশচন্দ্র মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিদূষক চরিত্রে গোড়ার দিকে অভিনয় করতেন বিখ্যাত নট অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি। তিনি দর্শকদের মাতিয়ে দিতেন। তিনি এই নাটক ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, বিদূষক চরিত্রে অবতীর্ণ হলেন স্বয়ং নাট্যকার গিরিশচন্দ্র। গিরিশচন্দ্রের অভিনয়ের বাহ্যিক হাস্যরসের আবরণে বিদূষকের অন্তর্নিহিত ভক্তি রসধারার আস্বাদনে দর্শক মন্ডলী যেমন পুলকিত হতেন, তেমনি বিস্মিতও হতেন। তিনকড়ি দাসি জনা নাটকের নামভূমিকার শিল্পী।লেডি ম্যাকবেথ নাটকে ম্যাকবেথের ভূমিকায় অভিনয় করে তিনকড়ি সেই সময়ে অভিনেত্রীগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠা বলে অভিহিত হয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিদূষক চরিত্রে গোড়ার দিকে অভিনয় করতেন বিখ্যাত নট অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি। তিনি দর্শকদের মাতিয়ে দিতেন। তিনি এই নাটক ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, বিদূষক চরিত্রে অবতীর্ণ হলেন স্বয়ং নাট্যকার গিরিশচন্দ্র। গিরিশচন্দ্রের অভিনয়ের বাহ্যিক হাস্যরসের আবরণে বিদূষকের অন্তর্নিহিত ভক্তি রসধারার আস্বাদনে দর্শক মন্ডলী যেমন পুলকিত হতেন, তেমনি বিস্মিতও হতেন। তিনকড়ি দাসি জনা নাটকের নামভূমিকার শিল্পী।লেডি ম্যাকবেথ নাটকে ম্যাকবেথের ভূমিকায় অভিনয় করে তিনকড়ি সেই সময়ে অভিনেত্রীগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠা বলে অভিহিত হয়েছিলেন।
মধুসূদন অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু অভিনয় টানা অমিত্রাক্ষরের ব্যবহার নাটকের শিল্পীদের ভীষণ কষ্ট হতো। এটি গিরিশচন্দ্র শিল্পীদের দিয়ে অভিনয় করানোর থেকে বুঝতে পেরেছিলেন। তাই গিরিশচন্দ্র দম অনুসারে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ভেঙে দিলেন। ছন্দের গুরুগম্ভীর চাল অনেক সহজ হয়ে এলো। এই ছন্দের নামকরণ করা হল, তারই নামানুসারে গৈরিশ ছন্দ। গৈরিশ ছন্দের শ্রেষ্ঠ ব্যবহার এই জনা নাটকেই। পুত্রহারা জননীর ব্যথা জনার সংলাপে প্রাণ পেয়েছে, ”দূরে বহুদূরে ভীষণ প্রান্তরে /মরুভূমে দুরন্ত শ্মশানে /হেথা তোর নাহি স্হান//দুর্গম কান্তারে তুষার মাঝারে/ পর্বতশিখরে চল/ চল পাপ রাজ্য ত্যজি।” হৃদয়বেদনা প্রকাশের জন্য যে গৈরিশ ছন্দের সংলাপ গিরিশচন্দ্র ব্যবহার করেছেন তার তুলনা নেই।
গিরিশচন্দ্রের অন্যান্য নাটকের মতো উজ্জ্বল গানের ব্যবহার আছে এ নাটকেও। গানের রাবীন্দ্রিক প্রয়োগে কোনও কালে গিরিশচন্দ্র করেননি। তিনি মূলত ঐতিহ্যগতভাবে চরিত্রের আবেগময় হৃদয় ভাব প্রকাশের জন্য কিংবা সরল দেব মাহাত্ম্য সংকীর্তনের জন্যই গানের অবতারণা করেছেন। নাটক তেমন কয়েকটি গান হল “প্রাণ কেমন করে সজনী”, “মা হয়ে মায়ের মনে ব্যথা দিও না”, “ভোলানাথ পঞ্চমুখে গায়”, “রাখাল মিলি ঘন করতালি”, “কানু দেখ ওই দেখ”, “ভালোবাসি তাই বসে থাকি” প্রভৃতি গান গুলি। এই নাটকের জনা অধিকারবোধ সম্পন্ন তীব্র মাতৃত্বেই মূলত প্রতিষ্ঠিত। নীলধ্বজের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যের কোন বিশেষ লক্ষণ স্ত্রী বা রানি হিসেবে পৃথক কোন মাত্রায় পরিস্ফুট নয়। জাহ্নবীর কন্যা হিসেবে তাঁর যে অধিকারবোধ তাও জনাকে অন্য রকমের শক্তি ও বিস্তার দিয়েছে যার ফলে সহজেই নাটকের মেরুদন্ড স্বরূপ হয়ে উঠতে পেরেছেন। গিরিশচন্দ্রের সর্বশ্রেষ্ঠ পৌরাণিক নাটক হিসেবে তাই “জনা” বাংলা নাটকের ইতিহাস উজ্জ্বল হয়ে আছে।
গিরিশচন্দ্রের অন্যান্য নাটকের মতো উজ্জ্বল গানের ব্যবহার আছে এ নাটকেও। গানের রাবীন্দ্রিক প্রয়োগে কোনও কালে গিরিশচন্দ্র করেননি। তিনি মূলত ঐতিহ্যগতভাবে চরিত্রের আবেগময় হৃদয় ভাব প্রকাশের জন্য কিংবা সরল দেব মাহাত্ম্য সংকীর্তনের জন্যই গানের অবতারণা করেছেন। নাটক তেমন কয়েকটি গান হল “প্রাণ কেমন করে সজনী”, “মা হয়ে মায়ের মনে ব্যথা দিও না”, “ভোলানাথ পঞ্চমুখে গায়”, “রাখাল মিলি ঘন করতালি”, “কানু দেখ ওই দেখ”, “ভালোবাসি তাই বসে থাকি” প্রভৃতি গান গুলি। এই নাটকের জনা অধিকারবোধ সম্পন্ন তীব্র মাতৃত্বেই মূলত প্রতিষ্ঠিত। নীলধ্বজের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যের কোন বিশেষ লক্ষণ স্ত্রী বা রানি হিসেবে পৃথক কোন মাত্রায় পরিস্ফুট নয়। জাহ্নবীর কন্যা হিসেবে তাঁর যে অধিকারবোধ তাও জনাকে অন্য রকমের শক্তি ও বিস্তার দিয়েছে যার ফলে সহজেই নাটকের মেরুদন্ড স্বরূপ হয়ে উঠতে পেরেছেন। গিরিশচন্দ্রের সর্বশ্রেষ্ঠ পৌরাণিক নাটক হিসেবে তাই “জনা” বাংলা নাটকের ইতিহাস উজ্জ্বল হয়ে আছে।