শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


পৌরাণিক তথা ধর্মমূলক নাটক রচনায় গিরিশচন্দ্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। ‘বৃষকেতু’ তাঁরই লেখা স্বল্পায়তন একাঙ্ক। এটি পৌরাণিক হলেও এর কাহিনী কিন্তু মহাভারতের নয়। ব্যাসদেব রচিত অষ্টাদশ পর্বে বিভক্ত সংস্কৃত ভাষার প্রাচীনতম মহাকাব্য মহাভারতে বৃষকেতুর উল্লেখ নেই। এমনকি কাশীরাম দাস অনূদিত মহাভারতের বৃষকেতুর উল্লেখ নেই। মহাবীর দাতা কর্ণের দানশীলতার কথা বাংলায় তখন বহুল প্রচলিত। নানান গল্প কথায় কর্ণের এই পরিচয় ফুটে উঠেছে। তেমনই একটি কাহিনী হল ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে ভগবান বিষ্ণুর বৃষকেতুর কচি মাংস ভক্ষণের গল্প। এই গল্পে কর্ণকে দাতা কর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে একসময়ে কল্পনা করা হয়েছিল। গিরিশচন্দ্র সেই বিষয়টি মাথায় রেখে এই গল্পকথাকে নাটকে রূপ দিলেন। একাঙ্ক নাটক। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচটি গর্ভাঙ্ক। দাতা কর্ণ, স্ত্রী পদ্মাবতী, এঁদের পুত্র বৃষকেতু তিনটি চরিত্র মহাভারতীয়। ভগবান বিষ্ণু পৌরাণিক চরিত্র। নাটকীয় কাহিনীর গতি সৃষ্টিতে এই চারটি চরিত্রের ভূমিকাই প্রধান।

এই বৃষকেতু নাটকের প্রথম অভিনয় রজনী হল ১৮৮৪ সালের ২৬ এপ্রিল শনিবার ৬৮ নম্বর বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটারে। প্রথমদিনে অভিনয় করলেন উপেন্দ্রনাথ মিত্র (কর্ণ), অঘোরনাথ পাঠক (বিষ্ণু), ভূষণকুমারী (বৃষকেতু), বিনোদিনী (পদ্মাবতী), গঙ্গামণি (পরিচারিকা) প্রমুখ শিল্পী। অভিনয় ক্ষেত্রে এঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন। নাটকের সুরকার ও সঙ্গীত শিক্ষক বেণীমাধব অধিকারী বা বেণী ওস্তাদ। দুটি গান রয়েছে এই নাটকে। গিরিশচন্দ্রের অন্যান্য পৌরাণিক নাটকের মতো এই নাটকেও মঞ্চসজ্জাকর বা স্টেজ ম্যানেজার ছিলেন অধ্যাপক জহরলাল ধর। অত্যন্ত নৈপুণ্যের সঙ্গে বিশেষ ধরণের যান্ত্রিক কৌশলে বৃষকেতুর শিরচ্ছেদ দেখান।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই নাটক দেখতে স্টার থিয়েটারে এসেছিলেন। সেই দিনটি ছিল ১৮৮৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার। সময় রাত ন’টা। এই অভিনয় রজনীতে ঠাকুরের পেশাদারী মঞ্চে শেষ অভিনয় দেখা। এর ঠিক পরেই ঠাকুরের গলদেশের রোগটি ধরা পড়ে। এইদিন নাটক দেখতে তাঁর সঙ্গী ছিলেন কথামৃতকার শ্রীম (মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত), নরেন (বিবেকানন্দ), শোভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেবের প্রপৌত্র যতীন দেব।
স্টার থিয়েটারে ঠাকুর গিরিশচন্দ্রের অভিনয় দেখেছেন শুধুমাত্র দক্ষযজ্ঞ নাটকে। সেখানে গিরিশচন্দ্র দক্ষের ভূমিকায়। ঠাকুর নটী বিনোদিনীর অভিনয় দেখেছেন সব কটি নাটকে: চৈতন্যলীলা (নিমাই), প্রহ্লাদচরিত্র (প্রহ্লাদ), নিমাই সন্ন্যাস (চৈতন্য), দক্ষযজ্ঞ (সতী), বৃষকেতু (পদ্মাবতী), বিবাহ বিভ্রাট (বিলাসিনী)। বলা বাহুল্য সব কটি নাটকেই চরিত্রগুলিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নটী বিনোদিনী।

Skip to content