শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


গিরিশচন্দ্র ও রামকৃষ্ণদেব ।

কোহিনুর থিয়েটারের জন্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ একটি সামাজিক নাটকের চার অঙ্ক পর্যন্ত লিখেছিলেন। নাটকটির নাম ‘গৃহলক্ষ্মী’। গিরিশচন্দ্র অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি আর এই নাটকটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি। গিরিশচন্দ্রের পরম আত্মীয় সুপণ্ডিত দেবেন্দ্রনাথ বসু মশাই তখন এর পঞ্চম অংকটি লিখে দেন। গিরিশচন্দ্রের পরলোক গমনের সাত মাস পরে মিনার্ভা থিয়েটারে এই ‘গৃহলক্ষ্মী’ নাটকটি প্রথম অভিনীত হয়। দিনটি ছিল ১৯১২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর।
 

প্রথম অভিনয় রজনীতে যাঁরা শিল্পী ছিলেন

সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ (উপেন্দ্রনাথ)
ক্ষেত্রমোহন মিত্র (নীরদ)
সত্যেন্দ্রনাথ দে (মন্মথ)
নগেন্দ্রনাথ ঘোষ (বৈদ্যনাথ)
প্রিয়নাথ ঘোষ (নিতাই)
অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (হীরু ঘোষাল)
তারকনাথ পালিত (শিবু)
হেমন্ত কুমারী (কুমুদিনীর মা)
নীরদাসুন্দরী (ফুলি)
চারুশীলা (কুমুদিনী)।

আরও পড়ুন:

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৬১: গিরিশচন্দ্র ‘তপোবল’ নাটকটি ভগিনী নিবেদিতাকে উৎসর্গ করেছিলেন

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৫: সঙ্গীত অনুরাগিণী মা সারদা

মনমোহন পাঁড়ে হলেন এই নাটকের স্বত্বাধিকারী। অধ্যক্ষ অবশ্যই সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ। শিক্ষক হিসেবে ছিলেন হরিভূষণ ভট্টাচার্য ও সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ। এই নাটকের সংগীত শিক্ষক দেবকণ্ঠ বাগচী। নৃত্য শিক্ষক ছিলেন সাতকড়ি গঙ্গোপাধ্যায় এবং মেকাপের দায়িত্বে ছিলেন কালীচরণ দাস।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩১: হেমন্তবালা দেবী— রবি ঠাকুরের পত্রমিতা

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—বন লেবু ও টাগরি বানি

যদিও গিরিশচন্দ্র নাটকটি অসমাপ্ত অবস্থায় রেখে চলে গিয়েছিলেন এবং তার পরিণামটা কি হবে তা দেবেন্দ্রবাবুকে জানিয়েও যাননি। তথাপি তাঁর প্রিয়তম ভক্তের কল্পনা ও লিপিচাতুর্যে দর্শকরা পঞ্চমাংক যে অন্য কেউ লিখেছেন সেটা কখনওই তাঁরা বুঝতে পারেননি। শেষ দৃশ্য দর্শনের পর আনন্দে নাটকের ভুয়সী প্রশংসা করে যান।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—বন লেবু ও টাগরি বানি

চরিত্র সৃষ্টি এবং নাট্য সৌন্দর্যে গৃহলক্ষ্মী অতি অল্প দিনের মধ্যেই নাট্যমোদীদের কাছে বিশেষ প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল। এই নাটকের চরিত্রগুলি অত্যন্ত অসাধারণ। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চরিত্র উপেন্দ্রনাথ। তাঁকে সম্পূর্ণ নতুন ছাঁচে তৈরি করেছিলেন গিরিশচন্দ্র। সামান্য উত্তেজনাতেও উপেন্দ্র অসংযত। এমন কি সংজ্ঞা শুন্য হয়ে পড়তেন। বড় বউ বিরজা চরিত্রের কোন তুলনা নেই।

একদিকে উপেণ্ডের চরিত্রে যেমন ধৈর্যের অভাব, অন্যদিকেই বড় বউ বিরজা সহিষ্ণুতার প্রতিমূর্তি হয়ে রয়েছেন। পুত্রের উপর জননীর কুপ্রভাব যে কি বিষময় পরিণাম তৈরি করে, এই নাটকে তার ছবি অত্যন্ত নিপুণভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। গনিকা কন্যা ফুলি, হীরু ঘোষাল, শরৎ, কুমুদিনী এবং অবধূত চরিত্র একেবারে সজীব। নাটকটির অভিনয়ও সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়েছিল।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-২: অসীম রোদন জগৎ প্লাবিয়া দুলিছে যেন?

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১৩: অদ্বিতীয় সম্রাট

১৯১২-১৩ সালের বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এর রিপোর্টে এ নাটকের অত্যন্ত প্রশংসা প্রকাশিত হয়েছিল। নাটকটি শুরুর আগেই রঙ্গমঞ্চে পুষ্পপত্রশোভিত গিরিশচন্দ্রের প্রতিকৃতির সামনে সমবেত অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা গিরিশ বন্দনা গানে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
“শ্রীরামকৃষ্ণ শ্রীমুখ মিশ্রিত ভৈরব আখ্যা যাঁর,
বীরভক্ত মুক্তপুরুষ ধ্রুব বিশ্বাসাধার,
গুরু কৃপাবল বর্ম পরিয়া বিজয়ী কর্মক্ষেত্রে,
স্তুতি নিন্দায় নহে বিচলিত চকিত শত্রু মিত্রে!
বিরামবিহীন জীবন সমরে উড়ায়ে বিজয়নিশান।
গুরুআজ্ঞা পালি
রামকৃষ্ণ বলি তেয়াগিল কেবা প্রাণ?
সে যে, বঙ্গের গৌরব, বঙ্গের সৌরভ,
বঙ্গের কৌস্তবহার
বঙ্গের গিরিশ, বঙ্গের গ্যারিক, বঙ্গের সেক্সপিয়ার।”
—চলবে।
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh–Actor –Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।

Skip to content