ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
আমাদের মা ষষ্ঠীর পুজো পার্বণ মিটে যাওয়ার পরও বিষয়গুলো নিয়ে জনমত নির্বিশেষে আলোকপাত করি না বা করতে সেরকম উৎসাহ পাই না সেরকম একটি বিষয় হল আমাদের মধ্যে নানা রকম শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতা থাকে সেই সব নিয়ে একটি পরিপূর্ণ আলোচনা। প্রতিবন্ধকতা বলতে আমাদের মনের মধ্যে যে দৃশ্যগুলো ভেসে ওঠে সেগুলো আসলে সমাজের তৈরি করা কতগুলো ভাবনার ছবি। আপনারা প্রশ্ন করবেন সে কীভাবে সম্ভব? এই তো অপরের ফ্লাট কিংবা গলির শেষ বাড়িতে দেখতে পাই সেরিব্রাল পালসি বা ভালো করে হাঁটতে পারে না, কানে শুনতে পায় না, চোখে দেখে না অর্থাৎ কিছু শারীরিক সমস্যা থাকা মানুষের আমরা যাকে বলি ‘বিশেষ ভাবে সক্ষম’।
আমরা আর একটা বিষয় প্রত্যক্ষ্য করি সেটা হল, ট্রেন কিংবা বাসে এই ধরনের মানুষদের দেখতে পাই, যাঁরা এই সমস্ত প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ট্রেটের একটি কামরা থেকে অন্য কামরায় ওঠেন হাতড়ে হাতড়ে কিছু টাকা রোজগারের উদ্দ্যেশ্যে। এই দৃশ্যের অন্য একটা দিকও আছে। কিছু মানুষ প্রতিবন্ধকতার অভিনয় করে মানুষের আবেগে প্রভাব খাটিয়ে কিছু টাকা রোজগার করেন। অর্থাৎ সমাজে প্রতিবন্ধকতাকে ধরা হয় করুণার বিষয় হিসেবে। এই করুণা নারী প্রতিবন্ধীদের জীবনকে কি পরিপূর্ণ করে দেয়? যে নারীরা জন্ম দিয়েছে নারী বিশেষ ভাবে সক্ষমদের তাদের সমাজ কীভাবে দেখেছে? রাষ্ট্র কী ভাবছে নারী প্রতিবন্ধকতার বিষয়কে নিয়ে? আমি আলাদা করে নারী প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি নিয়ে ভাবছি কেন? ভাবনার নানা কারণের মধ্যে অন্যতম যে বিষয় হল নারীর সাধারণ অধিকার ভঙ্গের বিষয়ের দিকে আঙুল তুলছে সেই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা খুব জরুরি। আর একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, প্রতিবন্ধাকতার কারণে এমনিতেই কিছু অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেই সঙ্গে নারী হওয়ার জন্য আরও কিছু বঞ্চনা জুড়ে যায়। এই দ্বৈত বঞ্চনা বাড়তে পারে যদি সেই নারী আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারে জন্মান কিংবা নিম্ন জাতির হয়ে থাকেন অথবা গ্রামীণ ভারতে জন্মগ্রহণ করেন যেখানে ভালো চিকিৎসা বা শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। তাই নারী প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা খুব জরুরি।
আমরা আর একটা বিষয় প্রত্যক্ষ্য করি সেটা হল, ট্রেন কিংবা বাসে এই ধরনের মানুষদের দেখতে পাই, যাঁরা এই সমস্ত প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ট্রেটের একটি কামরা থেকে অন্য কামরায় ওঠেন হাতড়ে হাতড়ে কিছু টাকা রোজগারের উদ্দ্যেশ্যে। এই দৃশ্যের অন্য একটা দিকও আছে। কিছু মানুষ প্রতিবন্ধকতার অভিনয় করে মানুষের আবেগে প্রভাব খাটিয়ে কিছু টাকা রোজগার করেন। অর্থাৎ সমাজে প্রতিবন্ধকতাকে ধরা হয় করুণার বিষয় হিসেবে। এই করুণা নারী প্রতিবন্ধীদের জীবনকে কি পরিপূর্ণ করে দেয়? যে নারীরা জন্ম দিয়েছে নারী বিশেষ ভাবে সক্ষমদের তাদের সমাজ কীভাবে দেখেছে? রাষ্ট্র কী ভাবছে নারী প্রতিবন্ধকতার বিষয়কে নিয়ে? আমি আলাদা করে নারী প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি নিয়ে ভাবছি কেন? ভাবনার নানা কারণের মধ্যে অন্যতম যে বিষয় হল নারীর সাধারণ অধিকার ভঙ্গের বিষয়ের দিকে আঙুল তুলছে সেই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা খুব জরুরি। আর একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, প্রতিবন্ধাকতার কারণে এমনিতেই কিছু অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেই সঙ্গে নারী হওয়ার জন্য আরও কিছু বঞ্চনা জুড়ে যায়। এই দ্বৈত বঞ্চনা বাড়তে পারে যদি সেই নারী আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারে জন্মান কিংবা নিম্ন জাতির হয়ে থাকেন অথবা গ্রামীণ ভারতে জন্মগ্রহণ করেন যেখানে ভালো চিকিৎসা বা শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। তাই নারী প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা খুব জরুরি।
এই আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, কীভাবে সমাজে প্রতিবন্ধকতাকে নির্ধারণ করা হয়। কারণ সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং পলিসি মেকারদের ভূমিকা রয়েছে প্রতিবন্ধকতা নির্ধারণে। ভারতীয় আইনে সাত রকম প্রতিবন্ধকতার কথা বলা হয়েছে। ১৯৯৬ সালের আইন অনুযায়ী এ সব অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ২০০১ এবং ২০১১ সালের জনগণনার তথ্যে এই সাত রকম প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধকতার বিষয় নিয়ে এখনও সম্পূর্ণ তথ্য বা এই তথ্যের অন্যতম বিষয় সমাজে এই সাত প্রকার মানুষদের কী ভাবে স্থান দেওয়া হয়েছে তার ধারণা এখনও স্পষ্ট নয়। এই জনগণনার তথ্য কেন সম্পূর্ণ বিষয়টিকে তুলে ধরতে পারছে না সেটা বোঝা যাবে যখন দেখবো এই সাত প্রকার মানুষদের মধ্যে বিশেষ ভাবে সক্ষম নারীদের মধ্যে শিক্ষার হার পুরুষদের থেকে বেশ কম। সরকারি হিসেব বলছে, ৫৫ শতাংশ নারী বিশেষ ভাবে সক্ষম অশিক্ষিত। আর বাকি যাঁরা শিক্ষিত তাঁদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ স্নাতক অবধি পড়েছেন।
গ্রামের দিকে নিরক্ষরতার সংখ্যা শহরের থেকে বেশি। নিজেদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যান বলছে পুরুষদের যেখানে ৪৭ শতাংশ নানা রকমের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, সেখানে মাত্র ২৩ শতাংশ নারী অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত। আরও পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে পরিবারের উপর নির্ভশীল বিশেষ ভাবে সক্ষমদের সংখ্যা বেশি। এই নির্ভরশীলতার কারণ শুধু যে তাঁরা লেখা পড়া করছেন তা নয়, বা বাড়ির কাজ করে দিচ্ছেন বলে নয়। এই সব মানুষদের কী ধরনের কাজে নিয়োগ করা যাবে তা নিয়ে পরিবার বা রাষ্ট্রের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। কেন নেই? দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছে নেই বলে? পরিসংখ্যান আরও বলছে পুরুষ বিশেষ ভাবে সক্ষমদের মধ্যে ৬২ শতাংশ বিবাহিত হলে নারী বিশেষ ভাবে সক্ষমদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ বিবাহিত।
গ্রামের দিকে নিরক্ষরতার সংখ্যা শহরের থেকে বেশি। নিজেদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যান বলছে পুরুষদের যেখানে ৪৭ শতাংশ নানা রকমের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, সেখানে মাত্র ২৩ শতাংশ নারী অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত। আরও পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে পরিবারের উপর নির্ভশীল বিশেষ ভাবে সক্ষমদের সংখ্যা বেশি। এই নির্ভরশীলতার কারণ শুধু যে তাঁরা লেখা পড়া করছেন তা নয়, বা বাড়ির কাজ করে দিচ্ছেন বলে নয়। এই সব মানুষদের কী ধরনের কাজে নিয়োগ করা যাবে তা নিয়ে পরিবার বা রাষ্ট্রের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। কেন নেই? দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছে নেই বলে? পরিসংখ্যান আরও বলছে পুরুষ বিশেষ ভাবে সক্ষমদের মধ্যে ৬২ শতাংশ বিবাহিত হলে নারী বিশেষ ভাবে সক্ষমদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ বিবাহিত।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২১: ষষ্ঠী ষাট ষাট ষাট ও সমৃদ্ধি কামনা
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২২: স্টেরয়েড বড় ভয়ঙ্কর ওষুধ?
সামাজিক প্রেক্ষাপটের দৃষ্টিকোণ থেকে এই পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করার চেষ্টা করলে আপনারাও বুঝতে পারবেন নারী বিশেষ ভাবে সক্ষমদের অবস্থান প্রান্তিকস্তরে। অর্থাৎ তাঁরা মূল সমাজের একে বারে প্রান্তে অবস্থান করছেন। মূল সমাজ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ভাবে এই সব নারীদের ক্রমেই ‘অন্য’ ভাবে ভাবতে বাধ্য করায়। তাই জন্মের পর থেকে যখন বোঝা যেতে থাকে যে এই নারী প্রথাগত ছন্দে সুন্দরী যেমন হয়নি, আবার হয় তো হাতে, পায়ের, চোখে বা মানসিক সমস্যা আছে। যা তাঁকে “স্বাভাবিক” নয় বলে দেগে দিচ্ছেন। তখন মা-বাবা এবং সেই নারী সন্তানের মূল সমাজের জায়গা ছেড়ে পিছিয়ে চলার পর্ব শুরু হয়।
মা-বাবা অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা থেকে অলটারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন যদি সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। এই সমাজ নির্দিষ্ট ‘স্বাভাবিক’ হতে পারলেই যেন একমাত্র সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসা যাবে। এই মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে তখন এসে যেতে থাকে দোষারোপের পালা। এই রকম একটি গল্প শুনেছিলাম আমার রান্নার দিদির কাছে। তার দুই ছেলের প্রথম দফায় যখন নাতনি হল তখন বংশরক্ষার জন্য রান্নার দিদি নানা দেবতার দোরে মানত করতে শুরু করলেন। তারপর মনসা দেবীর কাছে সোনার টিপ মানত করে পুত্রবধূ সন্তান ধারণে সমর্থ হলেন। রান্নার দিদি বৌমাকে দেখে বলেছিলেন এবার তাঁর নাতি হবেই।
গণ্ডগোলটা বাঁধল সূর্য অথবা চন্দ্র গ্রহণ পড়ে যাওয়াতে। রান্নার দিদি বিধান দিলেন বৌমা যেন খাটে চুপচাপ শুয়ে থাকে। তারপর যথা সময়ে সন্তান হল এবং পুত্র সন্তান হল কিন্তু পায়ে সমস্যা নিয়ে। রান্নার দিদি হাসপাতাল থেকেই হুংকার ছাড়লেন গ্রহণের সময়ে নিশ্চই বৌমা পা বেঁকিয়ে রেখেছিল তাই এরকম হয়েছে। পুর দোষ গিয়ে পড়ল বৌমার উপরে। বৌমা এ যাত্রা একটু রক্ষা পেল পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে বলে। না হলে কী হত কিছুটা অনুমান যে করা যায় না তা নয়।
মা-বাবা অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা থেকে অলটারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন যদি সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। এই সমাজ নির্দিষ্ট ‘স্বাভাবিক’ হতে পারলেই যেন একমাত্র সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসা যাবে। এই মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে তখন এসে যেতে থাকে দোষারোপের পালা। এই রকম একটি গল্প শুনেছিলাম আমার রান্নার দিদির কাছে। তার দুই ছেলের প্রথম দফায় যখন নাতনি হল তখন বংশরক্ষার জন্য রান্নার দিদি নানা দেবতার দোরে মানত করতে শুরু করলেন। তারপর মনসা দেবীর কাছে সোনার টিপ মানত করে পুত্রবধূ সন্তান ধারণে সমর্থ হলেন। রান্নার দিদি বৌমাকে দেখে বলেছিলেন এবার তাঁর নাতি হবেই।
গণ্ডগোলটা বাঁধল সূর্য অথবা চন্দ্র গ্রহণ পড়ে যাওয়াতে। রান্নার দিদি বিধান দিলেন বৌমা যেন খাটে চুপচাপ শুয়ে থাকে। তারপর যথা সময়ে সন্তান হল এবং পুত্র সন্তান হল কিন্তু পায়ে সমস্যা নিয়ে। রান্নার দিদি হাসপাতাল থেকেই হুংকার ছাড়লেন গ্রহণের সময়ে নিশ্চই বৌমা পা বেঁকিয়ে রেখেছিল তাই এরকম হয়েছে। পুর দোষ গিয়ে পড়ল বৌমার উপরে। বৌমা এ যাত্রা একটু রক্ষা পেল পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে বলে। না হলে কী হত কিছুটা অনুমান যে করা যায় না তা নয়।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭: ঝুঁকি না নিলে জীবনে বড় কিছুই অর্জন করা যায় না
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৩: ‘ওই দেখ, রাহুল দেব বর্মণের বাবা হেঁটে যাচ্ছেন’
বিখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী রেণু আদলেখার লেখা থেকে জানতে পারি ভারতে একজন নারী বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জীবন কীভাবে গড়ে ওঠে। যেখানে শিশুদের শৈশব একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয় সেখানে প্রতিবন্ধকতা যখন নির্ণয় হয় তখন সমস্ত শৈশবকাল ধরে চলে ডাক্তারের চেম্বারে চেম্বারে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান সমাধান সূত্রের খোঁজে। সেই সঙ্গে বাবা-মাদের নিজেদের মধ্যে চলে দোষারোপের পালা। কখনও সেই দোষারোপের প্রভাব এসে পড়ে সেই ছোট্ট মেয়েটির উপরে। নিজেদের এবং সেই শিশুর ভাগ্যকে দোষারোপ করা চলতে থাকে। শিশু বয়স থেকেই তার মনে হতে থাকে তার জন্যই তার পরিবারের অসুবিধা হচ্ছে। সারাজীবন ধরে এই যন্ত্রণা তাকে এবং তার পরিবারকে বয়ে নিয়ে যেতে হয়। কোথাও যেন পরিবার এবং সেই মেয়েটিকে অদ্ভুত শূন্যতাকে বয়ে নিয়ে যেতে হয়। আত্মীয়দের মধ্যে হোক কিংবা স্কুলে—সবাই আহা উহু করছে কিন্তু কেউ নিজেদের মধ্যের একজন বলে গ্রহণ করছে না। আলাদা করে দূরে রেখে দিচ্ছে।
রেণু আদলেখা নিজে চোখের সমস্যাতে ভুগেছেন। তাই তিনি এই বেদনা যেমন ভোগ করেছেন আবার জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আনন্দ উপভোগ করেছেন। কিন্তু বুঝেছেন এই ভাগ্য সবার হয় না। বাস্তবে সমস্যা আরও জটিল এবং কঠিন।
জটিলতার একটা বড় কারণ সামাজিক ভাবে দেগে দেওয়া যে, সে হয় বোবা, নয় পাগল এই সব বলে। এতে তাঁদেরও যে সমাজে ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে সেই অধিকার থেকে বিচ্যুত করা হয়। সমাজের যেখানে সেই সহমর্মিতা দেখান দরকার, সমাজে তাঁদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা সেখানে যদি ক্রমাগত প্রতিবন্ধকতাকে ব্যক্তিগত পারিবারিক সমস্যা বলা হয় তখন এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের বেচেঁ থাকার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এই অধিকার কি আছে আমাদের? আমরা যত বেশি এই সব নারীদের শিক্ষার অধিকার বা সাবলম্বী হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করব, তত দেখব মা বাবা’রা না দেখভাল করতে পেরে অনামী বা ভিনরাজ্যের হোম গুলিতে রেখে চলে আসছেন। তারপর আর তাদের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষা সম্পূর্ন না পাওয়ার কারণে অনেক দরকারি খবর থেকে তাঁরা বঞ্চিত হন। সারাজীবন এক নির্ভরশীল জীবন কাটাতে বাধ্য হন।
রেণু আদলেখা নিজে চোখের সমস্যাতে ভুগেছেন। তাই তিনি এই বেদনা যেমন ভোগ করেছেন আবার জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আনন্দ উপভোগ করেছেন। কিন্তু বুঝেছেন এই ভাগ্য সবার হয় না। বাস্তবে সমস্যা আরও জটিল এবং কঠিন।
জটিলতার একটা বড় কারণ সামাজিক ভাবে দেগে দেওয়া যে, সে হয় বোবা, নয় পাগল এই সব বলে। এতে তাঁদেরও যে সমাজে ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে সেই অধিকার থেকে বিচ্যুত করা হয়। সমাজের যেখানে সেই সহমর্মিতা দেখান দরকার, সমাজে তাঁদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা সেখানে যদি ক্রমাগত প্রতিবন্ধকতাকে ব্যক্তিগত পারিবারিক সমস্যা বলা হয় তখন এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের বেচেঁ থাকার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এই অধিকার কি আছে আমাদের? আমরা যত বেশি এই সব নারীদের শিক্ষার অধিকার বা সাবলম্বী হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করব, তত দেখব মা বাবা’রা না দেখভাল করতে পেরে অনামী বা ভিনরাজ্যের হোম গুলিতে রেখে চলে আসছেন। তারপর আর তাদের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষা সম্পূর্ন না পাওয়ার কারণে অনেক দরকারি খবর থেকে তাঁরা বঞ্চিত হন। সারাজীবন এক নির্ভরশীল জীবন কাটাতে বাধ্য হন।
আরও পড়ুন:
ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-৪: পুতুলের মাথায় কোঁচকানো সোনালি চুল, চোখ দুটো কেমন যেন অদ্ভুত, কিন্তু এটা আমায় কে পাঠালো?
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৬: যুগে যুগে যা ‘সবার উপরে’
এই ধরনের নারীরা সামাজিক এবং রাষ্ট্রের সুরক্ষা কবচ সে ভাবে না পাওয়ার ফলে যৌন হেনস্থার শিকার হয়ে পড়ছে। বাড়িতে কিংবা বাড়ির বাইরে। সে ক্ষেত্রে ২০২১ সালের গর্ভপাত আইন অনেকটাই সাহায্য করবে। কিন্তু আবার এই আইনের সুযোগ নিয়ে অত্যাচার বন্ধ হবে না। আবার অন্যদিকে অন্য একটি বিষয় উঠে আসছে সেটা হল, ভ্রূণের মধ্যে যদি সমস্যা দেখা যায় আর তা যদি চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে সারিয়ে তোলা না যায় তাহলে সেই শিশুকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরের কষ্ট দেওয়ার অধিকার কি সমাজের আছে?
আমরা যদি সুরক্ষা না দিতে পারি, অধিকার না দিতে পারি, লিঙ্গ বৈষম্যকে না সরাতে পারি তাহলে কি শুধুই কষ্ট দিয়ে যাব? আগেই দেখিয়েছি, বিশেষ ভাবে সক্ষম পুরুষের বিয়ের যা পরিসংখ্যান, সেখানে নারীদের বিয়ে হওয়া বা না চাওয়ার সংখ্যা বেশি। এই জনগণনার তথ্য শুধু সংখ্যা নয়, আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি বোঝায়। যদি নারী সেবা না দিতে পারল তাহলে তাঁকে কেন পুরুষ বিয়ে করবে? একটা কারণে রাজি হতে দেখা গিয়েছে। তা হল মেয়ের বাবা অনেক টাকা বা সম্পত্তি দিয়ে যাবেন। এই টাকার বিনিময়ে বিয়ে করার ফলাফল আবার খুব দূরের বিষয় নয় অনুধাবন করার জন্য।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজ যে শুধু সাত প্রকার বিশেষ ভাবে সক্ষম নারীদের নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে তাই নয়, প্রতিনিয়ত এমন সব প্রকার ভেদ বানিয়ে চলেছে, যেমন ক্যানসার বা ক্রনিক অসুখে ভোগা নারীদের ও বলা হচ্ছে বিশেষ ভাবে সক্ষম। কারণ তাঁরা স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারবে না। তাই সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধকতা একটি সুদূর প্রসারি ঐতিহাসিক ঘটনা। সেখানে ক্ষমতার লড়াই, বহু বিভাজন, প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। আবার ভেঙ্গে চুরমারও করে দিতে পারে স্বার্থের কারণে।
* প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
আমরা যদি সুরক্ষা না দিতে পারি, অধিকার না দিতে পারি, লিঙ্গ বৈষম্যকে না সরাতে পারি তাহলে কি শুধুই কষ্ট দিয়ে যাব? আগেই দেখিয়েছি, বিশেষ ভাবে সক্ষম পুরুষের বিয়ের যা পরিসংখ্যান, সেখানে নারীদের বিয়ে হওয়া বা না চাওয়ার সংখ্যা বেশি। এই জনগণনার তথ্য শুধু সংখ্যা নয়, আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি বোঝায়। যদি নারী সেবা না দিতে পারল তাহলে তাঁকে কেন পুরুষ বিয়ে করবে? একটা কারণে রাজি হতে দেখা গিয়েছে। তা হল মেয়ের বাবা অনেক টাকা বা সম্পত্তি দিয়ে যাবেন। এই টাকার বিনিময়ে বিয়ে করার ফলাফল আবার খুব দূরের বিষয় নয় অনুধাবন করার জন্য।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজ যে শুধু সাত প্রকার বিশেষ ভাবে সক্ষম নারীদের নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে তাই নয়, প্রতিনিয়ত এমন সব প্রকার ভেদ বানিয়ে চলেছে, যেমন ক্যানসার বা ক্রনিক অসুখে ভোগা নারীদের ও বলা হচ্ছে বিশেষ ভাবে সক্ষম। কারণ তাঁরা স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারবে না। তাই সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধকতা একটি সুদূর প্রসারি ঐতিহাসিক ঘটনা। সেখানে ক্ষমতার লড়াই, বহু বিভাজন, প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। আবার ভেঙ্গে চুরমারও করে দিতে পারে স্বার্থের কারণে।
* প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।