ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
আমাদের অতিপ্রিয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে। সবাইকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানানো সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু আমার মনের মধ্যে এত সব প্রশ্ন খচ খচ করছে যে আমি উৎসবে গা ভাসিয়ে দিতে পারিনি। এই সবের কারণ পাড়ার পুজতে মাইক জোরে বেজেছে। সেই সঙ্গে জোর করে আমাকে পুজোর চার দিনের মন্ত্র পাঠ শুনিয়েছে। এই শুনেই আমার যত প্রশ্ন ছিল সেগুল ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়েছে। এই যেমন আমাদের পশ্চিমবঙ্গে দুর্গা পুজোকে অকাল বোধন বলছে সেটার কারণ কী? এই উত্তর খুঁজতে গিয়ে ১০৮টা পদ্ম ফুলের গল্প বুঝতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম বাগানের স্থলপদ্মের গাছে কোনও ফুল নেই কেন! চুরি গিয়েছে সব! প্রবল মাইকের আওয়াজে রোজ একই রকমের মন্ত্র শুনে বুঝতে পারলাম আমাদের নানা রকম যুদ্ধে জয় পাওয়ার আশাতে এই দুর্গা আবাহন। দুর্গার আদি রূপে এক দামাল মেয়ের কথা পাওয়া যায়। সেই দামাল মেয়ে ময়ূরের পালক পরে ভুত-পেত্নিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে শিকার করে দিন কাটাতেন।
অথচ প্রতিমার যে কাঠামো আমাদের মণ্ডপ গুলিতে শোভা পায়, তা নিটোল এক পারিবারিক ছবি। পুত্র-কন্যা নিয়ে মা এসেছেন তাঁর বাপের বাড়ি। পিতৃতান্ত্রিক এই ছবি তুলে ধরার মধ্যেও এক অদমিত ইচ্ছে কাজ করেছে। এই ইচ্ছে দামাল মেয়ে নয়, গোবেচারা, শান্ত মেয়েকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। এই চেষ্টার মধ্যে আর একটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে সেটি হল, স্বামী মদ্যপ, গরীব হলেও তাঁকে কখনও ছেড়ে চলে যাওয়া যাবে না।
আমরাও উমার ঘরে ফেরার গান গাই। আবার তার শ্বশুর বাড়ি ফিরে যাওয়ার গান গাই। এই সমস্ত গান তৈরি এবং গ্রামে গ্রামে গিয়ে জনসমক্ষে গান গাওয়ার সময় কাল মঙ্গলকাব্যগুলি লেখার সময়ে মানে ১৫ থেকে ১৮ শতাব্দীর মধ্যে।
কোথাও যেন মনে হয় উমার বাপের বাড়ি আসাকে কেন্দ্র করে এত বড় উৎসব আমরা আয়োজন করি নিজেদের সামাজিক অবস্থানকে তুলে ধরার জন্য। বাঙালি সমাজে নারীদের বাপের বাড়িতেও কত আপ্যায়ন হয় সেটা বোঝানর জন্য। অন্যদিকে দেখলে দেখব বাস্তবে ঠিক উলট। দুই ভাই শিক্ষিত বোনের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে ট্রাক চালকের সঙ্গে বোনের আপত্তি সত্তেও। বিয়ের পর বোনের সঙ্গে খারাপ ব্যাবহার করা শুরু করে দুই ভাই যাতে বোন বাপের বাড়িতে ফিরে না আসে।
অথচ প্রতিমার যে কাঠামো আমাদের মণ্ডপ গুলিতে শোভা পায়, তা নিটোল এক পারিবারিক ছবি। পুত্র-কন্যা নিয়ে মা এসেছেন তাঁর বাপের বাড়ি। পিতৃতান্ত্রিক এই ছবি তুলে ধরার মধ্যেও এক অদমিত ইচ্ছে কাজ করেছে। এই ইচ্ছে দামাল মেয়ে নয়, গোবেচারা, শান্ত মেয়েকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। এই চেষ্টার মধ্যে আর একটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে সেটি হল, স্বামী মদ্যপ, গরীব হলেও তাঁকে কখনও ছেড়ে চলে যাওয়া যাবে না।
আমরাও উমার ঘরে ফেরার গান গাই। আবার তার শ্বশুর বাড়ি ফিরে যাওয়ার গান গাই। এই সমস্ত গান তৈরি এবং গ্রামে গ্রামে গিয়ে জনসমক্ষে গান গাওয়ার সময় কাল মঙ্গলকাব্যগুলি লেখার সময়ে মানে ১৫ থেকে ১৮ শতাব্দীর মধ্যে।
কোথাও যেন মনে হয় উমার বাপের বাড়ি আসাকে কেন্দ্র করে এত বড় উৎসব আমরা আয়োজন করি নিজেদের সামাজিক অবস্থানকে তুলে ধরার জন্য। বাঙালি সমাজে নারীদের বাপের বাড়িতেও কত আপ্যায়ন হয় সেটা বোঝানর জন্য। অন্যদিকে দেখলে দেখব বাস্তবে ঠিক উলট। দুই ভাই শিক্ষিত বোনের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে ট্রাক চালকের সঙ্গে বোনের আপত্তি সত্তেও। বিয়ের পর বোনের সঙ্গে খারাপ ব্যাবহার করা শুরু করে দুই ভাই যাতে বোন বাপের বাড়িতে ফিরে না আসে।
আসলে আমরা নিজেদের পরিচয় গড়ে তোলার এবং অবশ্যই তার একটি ঐতিহাসিক কারণ আছে দেবী দুর্গার একটি নারী কেন্দ্রিক পারিবারিক ছবি শহরাঞ্চলে সর্বজনীন করার পিছনে। ইংরেজ বণিকদের সঙ্গে যখন বাংলার বণিকরা কাজ করছেন কেরানি রূপে কিংবা সহযোগী ব্যবসায়ী রূপে তখন বাড়ির অন্দরে ধর্মীয় আচারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পুজো করার রূপের পরিবর্তন হয়ে তামসিক এবং সাত্ত্বিক দুই ভাবনার মিশ্রণ হয়ে সন্তান নিয়ে বাড়ির মেয়ের রূপ গ্রহণ করে। আগে বাড়িতে ঘট পেতে বা পটে পুজো হত। ঘটের মধ্যেই বা পটের মধ্যেই দেবী কে কল্পনা করে নেওয়া হত। ঘট বা পট আমাদের চেতনাতে কোনও নির্দিষ্ট নারীর রূপের কল্পনা থাকত না। নারী রূপবান কিনা, এক ঢাল চুল যুক্ত কিনা, টানা টানা চোখ আছে কিনা, শরীরের মধ্যে সন্তানের জন্ম দেওয়া মায়ের গঠনের মিল আছে কিনা যা মানুষ কে প্রভাবিত করবে সবসময়, দামি বস্ত্র পরা কিনা, গয়না পরি কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলির কোনও স্থান ছিল না শুধু তাঁর গুণের কথাই স্মরণ করা হত। এই নতুন মৃণ্ময়ী রূপ আমাদের নারীর গুনের জায়গায় তার শান্ত, গৃহকর্মে নিপুণা বিষয়কেই মূল পরিচয় এবং তার কর্তৃত্বের পরিচয় করে দেওয়া হল।
সেই পুজোতে একদিকে মাছ মাংস খাওয়া, বাইজি নাচ উপভোগের বিষয় যেমন ছিল তেমনি ধর্ম শাস্ত্র দেখে পুজো করা। এই দুই ভাবনার মিশ্রণ বাংলার আধুনিকতার এক নতুন মাত্রা দেখা দিল। সর্বজনের মধ্যে নতুন জাতীয়তার ভাবনার জন্ম নিল কিন্তু সেই ভাবনার মধ্যে অনেক বেশি পিতৃতান্ত্রিকতা প্রকাশ পেল। উৎসব তৈরি হল নারী মূর্তিকে সামনে রেখে বা মায়ের ভাবনাকে মাথায় রেখে এবং মানুষ দলে দলে যোগদান করল সেই উৎসবে। উৎসব পরিণত হল একটি পুঁজি নির্ভর প্রকল্পে। এই প্রকল্পের মধ্যে সাধারণ বাঙ্গালি নারীর প্রতিনিধিত্বের এবং তার নিজের উপরে কর্তৃত্বের বিষয়টিও অনেক বেশি বাণিজ্য বা পুঁজি দ্বারা পরিচালিত হতে শুরু করল। নারীর রূপের অবস্থান যখন তার গুণের অবস্থানের উপরে হয়ে যায় তখন তার প্রভাব সমাজে কি ভাবে পড়ে?
সেই পুজোতে একদিকে মাছ মাংস খাওয়া, বাইজি নাচ উপভোগের বিষয় যেমন ছিল তেমনি ধর্ম শাস্ত্র দেখে পুজো করা। এই দুই ভাবনার মিশ্রণ বাংলার আধুনিকতার এক নতুন মাত্রা দেখা দিল। সর্বজনের মধ্যে নতুন জাতীয়তার ভাবনার জন্ম নিল কিন্তু সেই ভাবনার মধ্যে অনেক বেশি পিতৃতান্ত্রিকতা প্রকাশ পেল। উৎসব তৈরি হল নারী মূর্তিকে সামনে রেখে বা মায়ের ভাবনাকে মাথায় রেখে এবং মানুষ দলে দলে যোগদান করল সেই উৎসবে। উৎসব পরিণত হল একটি পুঁজি নির্ভর প্রকল্পে। এই প্রকল্পের মধ্যে সাধারণ বাঙ্গালি নারীর প্রতিনিধিত্বের এবং তার নিজের উপরে কর্তৃত্বের বিষয়টিও অনেক বেশি বাণিজ্য বা পুঁজি দ্বারা পরিচালিত হতে শুরু করল। নারীর রূপের অবস্থান যখন তার গুণের অবস্থানের উপরে হয়ে যায় তখন তার প্রভাব সমাজে কি ভাবে পড়ে?
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৪০: রূপ, অলঙ্কার ও নারীর অবস্থান
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২২: সুন্দরবনে গোয়াল পুজো আর ‘ধা রে মশা ধা’
আমি পুজোর ছুটির মধ্যে একদিন বাজারে যাব বলে বেরিয়ে একটি টোটো তে উথেছি। টোটো প্রচণ্ড দুরন্ত গতিতে যাচ্ছে বলে আমি জিজ্ঞেস করলাম এরকম গতি হওয়ার কারণ কী? উত্তর পেলাম এই টোটো বারে নাচ, গান করা মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি আরও অনুসন্ধান করে এই মেয়েদের কাছে পৌঁছলাম। জানতে পারলাম বাড়িতে যেগুল মূলত ভাড়া বাড়ি সেখানে তারা জানিয়েছে যে তারা নাইট ডিউটিতে আয়ার কাজ করে। কীভাবে এই কাজে এসেছে জানতে চাইলে শুনতে পেলাম যে এরা সবাই কম বেশি বাড়ির লোকেদের অত্যাচারে জর্জরিত ছিল। মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচারের সঙ্গে দিনের পর দিন না খেতে পাওয়া বা আধপেটা খেয়ে থাকতে হচ্ছিল। খুব কম বয়েসে এই মানসিক, শারীরিক দুরবস্থা এবং ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে কাজ খুঁজতে বেরিয়েছিল। কিন্তু কাজের বদলে আবার শারীরিক যৌন নিগ্রহ করার চেষ্টা করেছে মানুষ কিন্তু কাজ দেয়নি। এখানেই এদের লড়াই শেষ নয়। এরা এর পর প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে মুখোশ পরা প্রেমিকের হাত ধরে উপস্থিত হয়েছে হয় যৌন পল্লিতে নয়ত বার ডান্সের মেঝেতে। সেখানেও তাদের আবার পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এদের কথায় শরীরে সব জিনিসপত্র আছে কিনা তা দেখে নিয়ে মানে আমরা যাকে কাস্টিং করা বলি সেই যৌন নিগ্রহ পেরিয়ে তারপর তারা হতে পেরেছে বারের ডান্সার। তারপর খেতে পেরেছে।
এখানেই গল্পের শেষ হয়নি। এই সমস্ত নর্তকীদের জন্য পাহারার ব্যাবস্থা আছে আবার নেইও। যে কাস্টমার টাকা দেবে তা ৫০ শতাংশ হারে বার মালিকের সঙ্গে রফা করে পাহারা তুলে নেওয়া হবে। এই নারীরাই বিউটি পার্লরে এসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে নিজেদের রং রূপ বজায় রাখতে খরচ করবে প্রতি মাসে। এখানে একটি বিষয় কে তুলে ধরতে চাইছি। এই নারী নিজের শরীর কে ব্যবহার করে রোজগার করছে। আমরা বলতেই পারি নিজে উপার্জন করছে সে দেহ কে ব্যবহার করে যেমন শ্রমিক মানুষ করে থাকেন। এতে সমস্যা কোথায়? কাজ পেতে গেলে সবাইকে সংগ্রাম করতে হয়, হয়েছে, কিছু ব্যতিক্রম আছে হয়ত। সমস্যা অন্য জায়গায়। আসছি সেখানে।
এখানেই গল্পের শেষ হয়নি। এই সমস্ত নর্তকীদের জন্য পাহারার ব্যাবস্থা আছে আবার নেইও। যে কাস্টমার টাকা দেবে তা ৫০ শতাংশ হারে বার মালিকের সঙ্গে রফা করে পাহারা তুলে নেওয়া হবে। এই নারীরাই বিউটি পার্লরে এসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে নিজেদের রং রূপ বজায় রাখতে খরচ করবে প্রতি মাসে। এখানে একটি বিষয় কে তুলে ধরতে চাইছি। এই নারী নিজের শরীর কে ব্যবহার করে রোজগার করছে। আমরা বলতেই পারি নিজে উপার্জন করছে সে দেহ কে ব্যবহার করে যেমন শ্রমিক মানুষ করে থাকেন। এতে সমস্যা কোথায়? কাজ পেতে গেলে সবাইকে সংগ্রাম করতে হয়, হয়েছে, কিছু ব্যতিক্রম আছে হয়ত। সমস্যা অন্য জায়গায়। আসছি সেখানে।
এ বার আসি বাড়িতে বসে সেই সব মেয়েদের কথায় যারা না না রকমের রিলস বানায়। রিলস এর বিষয় ঘর কন্নার রোজনামচা থেকে শুরু করে উরফি জাভেদ দের তৈরি করা রিলস যা বিশ্বাস করে ‘ মোর বুবস মোর ভিউজ’ তত্ত্বে। একদিকে এই রিলস বলছে ঘরকন্না কীভাবে করতে হবে তাও আবার বিদেশের মাটিতে আবার অন্য দিকে ঝকঝকে স্কিন নিয়ে নিজেকে কী করে লাস্যময়ী করে তুললে বেশি টাকা কীভাবে রোজগার করা যাবে। এখানে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই দুই ক্ষেত্রেই নারীরা বাড়িতে থাকছেন। কাজের ক্ষেত্র বাড়ি। কোথাও যেন মনে হয় পিতৃতন্ত্রের বারং বার চোখ রাঙানি যে মেয়েরা বাড়ির বাইরে কাজ করলে সংসার হয় না। মেয়েরা বাধ্য হচ্ছিল অতিরিক্ত পরিশ্রম করে সামান্য টাকা (অবশ্যই রিলস নির্মাতারা বেশি রোজগার করে। উর্ফি জাভেদ জানিয়েছেন তিনি দুটি ওয়ার্কশপে নিজের পোষাক বানান আর একটি ৩টি ঘর যুক্ত ফ্ল্যাট এ থাকেন) রোজগার করেন। বাড়ির বাইরে কাজ করতে যাওয়া মেয়েদের মনে হতেই পারে তার পরিশ্রমের দাম নেই? এর থেকে বাড়িতে থেকে এরকম রিলস বানালেই হল। এই ধারণা আরও বড় আকার ধারণ করে যখন কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আংশিক সময়ের শিক্ষককে শুনতে হয় তাকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বেতন দেওয়া হবে না। নারীদের শ্রমিক সত্তা ধাক্কা খেতে বাধ্য। শিক্ষক যিনি গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি যখন তার শ্রমের মূল্য পাচ্ছেন না তখন আমরা কাকে দোষ দেব? বাড়ি বসে রিলস বানিয়ে ঘর বজায় রেখে, পুরুষের মনের, চোখের আকাঙ্খা পূর্ণ করাকেই বলব নারীদের সাম্যের অধিকার প্রাপ্তি হয়েছে। পুঁজি সবসময় দ্রুত এবং বেশি রোজগারের কথা বলতে চায়। পুঁজিবাদীদের কাছে শ্রমিকের স্বাস্থ্য কিংবা মানবিক অধিকারের জন্য টাকা খরচ করা গুরুত্ত্বপূর্ন নয়। যেখানে রাষ্ট্রের কাছে আমরা নাগরিক অধিকার আদায় করব বলে দুর্গাপুজোর উৎসব চালু করলাম বকলমে দুর্গাকে সর্বজনীন প্রকাশ করলাম। বাড়ির মেয়েদের বাইরের জগতে আসতে দিলাম। তারপর দেখা গেল বাড়ির নারীদের যখন শ্রমের মূল্য দেওয়ার প্রশ্ন এল তখন আমরা বলছি তোমরা ‘মোর বুবস মোর ভিউজ’ এ ফিরে যাও। অর্থাৎ বাড়ির ভিতরে বসে রিল যারা না না রকমের রিলস বানায়।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
পরিযায়ী মন, পর্ব-১৪: কুর্গের সবুজ দুর্গ
রিলস-এর বিষয় ঘর কন্নার রোজনামচা থেকে শুরু করে পল্লিতে নয়তো বার ডান্সের মেঝেতে। সেখানেও তাদের আবার পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এদের কথায় শরীরে সব জিনিসপত্র আছে কিনা তা দেখে নিয়ে মানে আমরা যাকে কাস্টিং করা বলি সেই যৌন নিগ্রহ পেরিয়ে তারপর তারা হতে পেরেছে বারের ডান্সার। তারপর খেতে পেরেছে। এখানেই গল্পের শেষ হয়নি। এই সমস্ত নর্তকী দের জন্য পাহারার ব্যাবস্থা আছে আবার নেইও। যে কাস্টমার টাকা দেবে তা ৫০ শতাংশ হারে বার মালিকের সঙ্গে রফা করে পাহারা তুলে নেওয়া হবে। এই নারীরাই বিউটি পার্লরে এসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে নিজেদের রং রূপ বজায় রাখতে খরচ করবে প্রতি মাসে। এখানে একটি বিষয়কে তুলে ধরতে চাইছি। এই নারী নিজের শরীরকে ব্যবহার করে রোজগার করছে। আমরা বলতেই পারি নিজে উপার্জন করছে সে দেহকে ব্যবহার করে যেমন শ্রমিক মানুষ করে থাকেন। এতে সমস্যা কোথায়? কাজ পেতে গেলে সবাইকে সংগ্রাম করতে হয়, হয়েছে, কিছু ব্যতিক্রম আছে হয়ত।সমস্যা অন্য জায়গায়। আসছি সেখানে।
এখানে আবারও উর্ফির কথা বলতে হয়। উর্ফি বলেছে যারা ছয় মাসের ছোট বাচ্চাকে দেখে যৌণ উত্তেজনা বোধ করে তারা তাকে দেখে আলাদা করে উত্তেজিত হবে এমন ভাবার কারণ নেই। কিন্তু আমাদের ভাবতে হচ্ছে কারণ সমাজ বেশি করে রিলস দেখছে এবং গার্হস্থ্য হিংসা বাড়ছে। যৌন হেনস্থা বাড়ছে। দুটি ঘটনা সংখ্যায় বাড়ছে। কিন্তু এই দুটি ঘটনার কারণ এই দুটি বিষয়কে সরাসরি জুড়ে বলা যাবে কিনা, এখনও গবেষণা সাপেক্ষ। আমরা আলোচনা সভাতেও এই বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত।
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২২: এদিক ওদিক বেড়ায় তবু ভুলের পাড়া বেড়ায় না
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৩৯: ভালোবাসার ভোরে…
পুঁজি সবসময় দ্রুত এবং বেশি রোজগারের কথা বলতে থাকে। পুঁজিবাদীদের কাছে শ্রমিকের স্বাস্থ্য কিংবা মানবিক অধিকারের জন্য টাকা খরচ করা গুরুত্ত্বপূর্ণ নয়। যেখানে রাষ্ট্রের কাছে আমরা নাগরিক অধিকার আদায় করব বলে দুর্গা পূজার উৎসব চালু করলাম বকলমে দুর্গাকে সর্বজনীন প্রকাশ করলাম সেখানে বাড়ির নারীদের যখন শ্রমের মূল্য দেওয়ার প্রশ্ন এল তখন আমরা বলছি তোমরা ‘মোর বুবস মোর ভিউজ’ এ ফিরে যাও অর্থাৎ তোমরা বাড়িতে বসে এমন কিছু কর যাতে বাড়ির লোকেদের এই ভয় না হয় যে তোমাকে আলাদা করে রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে। সামনে থেকে যেহেতু শরীর ছুঁতে পারছে না সেই কারণে অপবিত্র হওয়ার সম্ভবনা থাকছে না। অন্য দিকে নারীর রোজগারের উপর বাড়ির লোক ভাগ বসাতে পারবে। যদিও উর্ফি জাভেদ বলেছেন তার এই যৌনতা প্রদর্শনের টাকায় তার একার অধিকার আছে। তার কর্তৃত্ত্ব তার নিজের শরীরে আছে কিন্তু বাজারের চাহিদার কাছে তার শরীরের কর্তৃত্ত্ব সবসময় তার নিজের হাতে থাকছে কী?
পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, নারীকে লিলিথ হতে দিতে সমাজ যখন বাধা দিতে পারবে না তখন নারীর শরীরে নারীর অধিকার কায়েম হবে। কিন্তু সমাজে তখন কে শিশুর পিতা আর কেই বা মাতা তাই নিয়ে বিবাদের সম্ভবনা বাড়বে। তাই আমাদের আগামীর প্রতিটি পদক্ষেপ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: শিলাজিৎ সেনগুপ্ত, অনুরাধা গুপ্ত
পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, নারীকে লিলিথ হতে দিতে সমাজ যখন বাধা দিতে পারবে না তখন নারীর শরীরে নারীর অধিকার কায়েম হবে। কিন্তু সমাজে তখন কে শিশুর পিতা আর কেই বা মাতা তাই নিয়ে বিবাদের সম্ভবনা বাড়বে। তাই আমাদের আগামীর প্রতিটি পদক্ষেপ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: শিলাজিৎ সেনগুপ্ত, অনুরাধা গুপ্ত
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।