সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

নারীবিদ্বেষ বা যদি বলি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে নারীর প্রতি নেতিবাচক যৌনতামূলক আচরণ করা এবং সেই আচরণগুলিকে সমাজ স্বীকৃত আচরণে পরিণত করাকে আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করব? পুরুষ সঙ্গী ভালোবাসার নারী সঙ্গীকে মেরে, দেহ টুকর করে ফেলে দিল কিংবা সহবাসে অসম্মত হলে বল প্রয়োগ করা, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে গুলি করে মেরে ফেলা অথবা ছুরি দিয়ে বা অ্যাসিড ছুঁড়ে ক্ষতি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, মনে করা হচ্ছে নারী অপবিত্র। তার সংস্পর্শে এলে পুরুষ অপবিত্র হয়ে যাবে। প্রভৃতি ঘটনাগুলি ঘটছে একান্ত ব্যাক্তিগত জীবনের পরিসরে। আবার কাজের জায়গাতে গিয়ে নারী সহকর্মীকে সম্মান দিতে দেওয়া থেকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কখনও আবার অন্য সহকর্মীরা নারী সহকর্মীর করা কাজকে যথাযথ বলছেন না। নিকৃষ্ট মনে করছেন। অর্থাৎ ঘরে বাইরে উভয় জায়গায় শুধুই নারীবিদ্বেষ।

বিষয়টি কিন্তু পিতৃতান্ত্রিক দর্শনের চার দেওয়াল দিয়ে ঘিরে শুধু আলোচনা করলে চলবে না। কেন চলবে না? এই না চলার মধ্যে অন্যতম কারণ হল, এখানে আমি নারীর প্রতি পুরুষের বিরূপ আচরণের কারণ অনুসন্ধান করতে চাইছি। কিন্তু সামাজিক কাঠামোতে পিতৃতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে উভয় নারী-পুরুষ নারীকে ক্ষমতাহীন করে রাখতে চায়। অর্থাৎ এই দর্শন লিঙ্গের সামাজিক ভূমিকা নির্ধারণ এবং তার প্রতিপালন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু নারীবিদ্বেষ এমন একটি হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ নারীর প্রতি পুরুষের, যা কুসংস্কারের সমকক্ষ বলা যেতে পারে। এই বহিঃপ্রকাশের ফলাফল নারীরা সবসময় ভয়ে গুটিয়ে থাকেন। সোজা হয়ে বসার অনুমতি নেই। চোখে চোখ রেখে কথা বলার অনুমতি নেই।

নারীদের সবসময় সেবা দিয়ে যেতে হবে—সে ভালোবাসার হোক কিংবা খাবার বানিয়ে দেওয়া অথবা সন্তান বা পুত্র সন্তানের জন্ম দেওয়া। এ সব করে যেতে হবে অত্যাচার সহ্য করে। নারীকে মেনে নিতে হবে পুরুষ মানুষ গায় হাত তুলবেই। গায়ে হাত তলার মধ্যে দিয়ে নারীকে শাসন করা হয়। আমি আমার দৈনন্দিন ট্রেন যাত্রায় শুনেছি, দু’ জন নারী এই গায়ে হাত তোলা বিষয়টিকে সমর্থন জানাচ্ছেন এই বলে যে, থাপ্পড় মারার অধিকার স্বামীর আছে। পিতৃতান্ত্রিক দর্শনের আগেই আগেই নির্মাণ হচ্ছে নেতিবাচক যৌনতাবাদী নারী বিদ্বেষ। তাই এই বিদ্বেষমূলক আচরণের কারণ শুধু পিতৃ তান্ত্রিক দর্শন নয়।
পুরুষ এই ধরনের বিরূপ আচরণ করে ফেলছে শুধুই নিজেকে পুরুষ প্রমাণ করার জন্য। কোথাও একটা হেরে যাওয়ার মনোভাব প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে। এই মনোভাব কোনও ভাবেই বাবা-মায়ের বাধ্য পুত্র প্রমাণ করার জন্য নয়। পুরুষ এই মনোভাব দেখিয়েছে যখন মানুষ গুহাবাসী ছিল তখনও। তাই মিসজিনি বা নারি-বিদ্বেষ এমন একটি সূক্ষ্ম বিষয়, যা নিয়ে দেশের দশের রাজনীতি কিংবা সন্ত্রাসবাদী দলের কার্যকলাপ নির্ধারণ কিংবা সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে।

ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাদের বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আমরা এখন সমাজমাধ্যমে অর্থাৎ ফেসবুক এবং অনলাইন মাধ্যমে দেখতে পাই ছবির আকারে কিছু কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর দুই একটি বললেই বুঝতে পারবেন। যেমন ধরুন প্রশ্ন করা হচ্ছে বিবাহ কী? উত্তরে বলা হচ্ছে, সারাজীবন সন্তুষ্ট করা যাবে না জেনেও একজন মহিলাকে আজীবন সন্তুষ্ট করবার চেষ্টাকেই বিবাহ বলে। এই উত্তরের মধ্যেই নারীর কথা বলার সময় লাল রং ব্যবহার করা হচ্ছে। মানে একদম রেড অ্যালার্ট জারি করার মতো করে বলা হচ্ছে।

আর একটি নমুনা পেশ করছি, তাতে বিষয়টি বুঝতে আরও সুবিধা হবে। এই দ্বিতীয় নমুনাতে বলা হচ্ছে, ম্যাড়ম্যাড়ে স্বামী না হয়ে থেকে এই বিবাহবার্ষিকীতে কিছু তুফানি করুন। কী করতে বলছে? স্ত্রীয়ের সঙ্গে ‘গার্ল ফ্রেন্ডের’ আলাপ করিয়ে উভয়কে চমকে দিন। আরও একটা নমুনা দিচ্ছি, আগে মা মারলে বাবাকে জড়িয়ে ধরা যেত, আর বাবা মারলে মাকে। কিন্তু বউ মারলে কাকে জড়িয়ে ধরব! এরকম বহু পোস্ট প্রতি মুহূর্তে লেখা হচ্ছে, আর সেটা মূলত পুরুষরাই নিজেদের মধ্যে আদানপ্রদান করছে।

এই সব পোস্টে সবচেয়ে বেশি লাইক, কমেন্ট হচ্ছে। এমনকি, এই ধরনের পোস্ট ভাইরালও হয়ে যাচ্ছে। মানে ভীষণ রকম ভাবে পুরুষ এই নারীবিদ্বেষ কথাগুলি নিজেদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে একটি সাংস্কৃতিক ধারাকে ক্রমাগত নির্মাণ এবং বহন করে নিয়ে চলেছে। এটিই হল মিসজিনি বা নারী বিদ্বেষ সহজ কথায় যা প্রতিদিন আমরা অনলাইন মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করছি কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারছি না।

যেই মুহূর্তে প্রতিবাদ করব আমি এক ঘরে হয়ে যাব। আমি পুনরায় হাসির খোরাক হব। এরকম অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। বলেছিলাম মাতাল বরের মার খেয়ে বউ কেন রাস্তায় পড়ে থাকা বরকে তুলে আনতে যাবে? সমস্বরে উত্তর এসেছিল ভালোবাসে বলেই যাবে। সে সংসারও চালাবে আবার মাতাল বরের মারও সহ্য করবে।
আরও পড়ুন:

বিচিত্রের বৈচিত্র: মাই নেম ইজ গওহর জান—ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে অঘোষিত বিপ্লব এনেছিলেন এই শিল্পী

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২: চলমান সুন্দরবন

আমরা যেমন বলে থাকি নারী পিতৃতান্ত্রিক দর্শনের ধারক এবং বাহক। তেমনি পুরুষ হল মিসজিনির ধারক এবং বাহক। গোটা বিশ্বে এমন কোনও জায়গা পাওয়া যায়নি যেখানে নারী বিদ্বেষ বিষয়টি দেখতে পাওয়া যায় না। এটি আমার কথা নয়, গবেষণা বলছে। একদিকে পুরুষ সেই নারীকেই বিয়ে করছে, পরিবার গড়ে তুলছে, আবার অন্য দিকে নিজের মা, দিদি বোনেদের মনে করছে আত্মত্যাগ করা পবিত্র মানুষ। যাঁরা কোনও ভুল করতে পারে না। সেই মা বা বোনকে কোনও অন্য পুরুষ তিনি যদি বাবা হন তখনও মায়ের জন্য, বোনের জন্য বাবার সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত।

আবার অন্যদিকে নিজের প্রেমিকাকে রাত দুপুরে বনিবনা হচ্ছে না বলে চলন্ত গাড়ি থেকে ঠেলে ফেলে দেয়। নিজের বউকে সন্দেহ করার নামে তার প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব দেখাচ্ছে ফোন ঘেঁটে, মিথ্যে সন্দেহ করে, প্রভৃতি নানা রকম ভয়ংকর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে। এই অদ্ভুত বৈপরিত্যের সম্পর্ক গড়ে ওঠার কারণ কি শুধুই ক্ষমতা দখল নাকি সামাজিক প্রচেষ্টা নারী-সহ বাকি প্রাণীদের দমন করে রাখার? গবেষণা আমাদের সামনে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক জটিলতার কথা তুলে ধরছে নারী বিদ্বেষের কারণ হিসেবে।

একাধিক গবেষণাতে দেখা গিয়েছে, নারীকে কী চোখে সমাজ দেখবে। সেই দেখার প্রস্তুতি পর্ব দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি পর্বে বলা হচ্ছে, পুরুষ তার বেড়ে ওঠার পর্বে কোথাও এমন কিছু পরিস্থিতির শিকার হয় যে, সে সারাজীবন এই বিদ্বেষকে নিজের জীবনের অঙ্গ করে নিতে হয়। দ্বিতীয় পর্বে, যে সমাজে সে বড় হয়ে উঠছে সেখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং সেখানের সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ যা হাস্তান্তরিত হয় এক পুরুষের থেকে অন্যজনের কাছে ভাষার মাধ্যমে, সেখানে।

কিন্তু নারীকে কেন্দ্র করে নানা রকম লড়াই, আমরা ডুয়েল লড়াইয়ের কথা শুনেছি, ত্রিমুখী প্রেমের জন্য খুন করতে দেখেছি, নানা রকম ছল-চাতুরি করে মেয়ে পটানোর গল্প শুনেছি। নিজের ভালোলাগার নারীর প্রতি ভালোবাসার তীব্র আবেগের আসা যাওয়া চলতে থাকে তাকে নিজের কাছে রেখে দেওয়ার জন্য। এই প্রচণ্ড দোলাচলে পুরুষ নারীকে কখন ভালো আর কখন খারাপ বলবে সেই মানসিক প্রক্রিয়াতে পুরুষের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থান এই নারী কেন্দ্রিক দৃষ্টিকোণকে নির্মাণ করে দেয়।
আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৪: এ শুধু অলস মায়া?

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৭: লতা-কিশোর-পঞ্চম-গুলজারের অনবদ্য সৃষ্টি ‘তেরে বিনা জিন্দেগি সে কই শিকওয়া নেহি’

দ্বিতীয় পর্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞানের জয়যাত্রার আগে কীভাবে এই বিশ্ব আর তাতে বসবাসকারী প্রাণীদের সৃষ্টি হয়েছে তার ব্যাখ্যা এবং বর্ণনা দিয়েছে। তাৎপর্য ভাবে এই সৃষ্টির মূলে বিচ্যুতি বা স্বর্গ থেকে বিতাড়নের একটি গল্প দেওয়া হয়। কীভাবে বিতাড়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল? নারীর দ্বারা বিমোহিত হয়ে পুরুষদের নৈতিক চরিত্রের অবনতি ঘটে। তাই তারা নিজেদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার অভিপ্রায় নিয়ে পৃথিবীর মাটিতে নেবে এসেছে। আর সঙ্গে এসেছে নারী যিনি পুরুষকে পৃথিবীতে থাকতে সাহায্য করবে। আবার এমনও বলা হয় নারীর স্থান পৃথিবীতেই। মাটি কাদার মধ্যে থেকেই দুঃখ যন্ত্রণা নিয়ে তার শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া এখানে তার স্ত্রীর রজস্বলার কথা বলা হচ্ছে, সন্তানের জন্ম দেবে। আর ব্যাখ্যা করতে না পারা স্ত্রী রজস্বলাকে বলা হবে অপবিত্র। শরীরের যে অংশ থেকে বেরচ্ছে সেই অংশকে একদিকে ভয় করবে, অন্যদিকে ভয় চাপা দেওয়ার জন্য আক্রমণ করা হবে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে। স্ত্রী রজস্বলার সময় তাকে এক ঘরে করে রাখা হবে। মনে করা হবে সেই নারী জাদু করে পুরুষকে হত্যা করে ফেলবে। ডাইনি প্রথার শিকার তাই মহিলারাই বেশি।

ধর্মীয় বিধি-নিষেধ দিয়ে এই আক্রমণকে ঈশ্বরের নির্দেশ বলে চালিয়ে দেওয়া হবে। তাই এখনও অনেক্ষেত্রেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কিংবা ধর্ম ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী কাজে সেই পুরুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় যিনি কঠিন ভাবে ব্রহ্মচর্য পালন করতে পারে। তিনি নারীর সংস্পর্শে আসাকে অপবিত্র কাজ বলে মনে করবে। নারীদের এই সব পুরুষদের সামনে এলেও নতজানু হয়ে থাকতে হবে। আইসিস গ্রুপের কথা মনে করতে পারেন।

ভারতের এমন কিছু ধর্মীয় বিশ্বাস বা পুজো পদ্ধতি আছে যেখানে নারীর জন্ম দেওয়ার শক্তি বা সৃষ্টি করার ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাকি ধর্ম মতে, অদ্ভুত দ্বিধা দ্বন্দ্বপূর্ণ ভাবে নারীদের দেখা হয়। একদিকে তাই মাতৃশক্তির উপাসনা করা হচ্ছে, আবার অন্য দিকে নারীকে বলা হচ্ছে পৃথিবীতে পাপ এবং যন্ত্রণার মূল কারণ।

এবার আসছি প্রথম পর্বে। যেখানে পুরুষের মানসিক যন্ত্রণা দুটি প্রধান বিষয়ের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। প্রথমটি হল, পুরুষের ভয় এবং ভয় থেকে জন্মানো ঘৃণা। দ্বিতীয়টি হল, নারীর প্রতি ভালোবাসা শুধু নয়, নিজের জন্য যে নারীর প্রয়োজন সেই উপলব্ধি এবং কল্পনাকে কেন্দ্র করে যে বিড়ম্বনা তৈরি হয় মনে।
আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৮: কোষার ভান্ডার ছররি থেকে কুঠাঘাট হয়ে কুরদার

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬১: এখন বাংলার মহিলারাও উন্নতমানের লার্ভা এনে চিংড়ি চাষ করে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন

প্রথমে বলি পুরুষের ভয় কোথা থেকে তৈরি হয়। আমাদের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক এবং এই সমাজে বৈবাহিকতার বা স্ত্রী-পুরুষের মধ্যেকার সম্পকর্কে গুরুত্ব দেয় না। সেখানে গুরুত্ব পায় ভ্রাতৃত্ব বন্ধন। তার সঙ্গে জুড়ে যায় যুদ্ধ করা, যুদ্ধে জয়লাভ করা, জাতিগত বিবাদে এগিয়ে গিয়ে অর্থাৎ নিজেকে সবসময় প্রমাণ করতে হবে, তিনি এমন পুরুষ যার বাহুতে এবং মনে শুধু জয় লাভের ইচ্ছে আছে। এই ইচ্ছে কোনওভাবেই তার জীবনে নারীর প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দিতে পারে না।

কিছুদিন আগেই একটি হাসির সিনেমা দেখলাম। সেখানে দেখানো হয়েছে নারীর প্রতি নিজের ভালোবাসা জানাতে এবং প্রেমের কবিতা লেখার কারণে তিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে পারেননি। ফলে যুদ্ধে পরাস্ত হতে হয়। তাই সেই রাজপুত্রকে চারশো বছর অভিশাপ বহন করে ভূত হয়ে থেকে যেতে হয়। প্রতিপক্ষের কোনও পুরুষ তার কাছে ক্ষমা চাইলেই তার মুক্তি হবে এই ছিল অভিশাপ মুক্তির শর্ত। সিনেমার শেষে তাই দেখান হল। হলে উপস্থিত দর্শকরা হেসে সমর্থনও জানালেন।

এ ভাবেই পুরুষের নারী বিদ্বেষ পৃথিবীতে এবং তার মনে স্থায়ী ভাবে জায়গা নিয়ে নেয়। একবিংশ শতাব্দীতেও পরিবর্তন তেমন চোখে পড়ে না। কারণ, লকডাউনের সময় হওয়া একটি সমীক্ষা বলছে, নারীবিদ্বেষ মূলক নানা বক্তব্য হাসির খোরাক হিসেবে পোস্ট হতে থেকে আর মূলত পুরুষরাই নিজেদের মধ্যে বিলি বন্টন করা শুরু করে। সেই প্রক্রিয়া এখনও বজায় আছে লেখার শুরুতে উল্লেখ করা কিছু নমুনা পড়লেই বুঝবেন।

একটি বিষয় এখানে লক্ষণীয়। সমাজে নারীবিদ্বেষ থাকলেও সেই ভাবে পুরুষ বিদ্বেষের ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। নারী কি শুধুই ভয় পেয়ে পুরুষের অত্যাচারকে মেনে নেয়? নাকি বিদ্বেষ আসলে চোখের বদলে চোখ, যা সর্বগ্রাসী সর্ব অর্থে নারীদের অন্য পন্থা গ্রহণ করতে শেখায়। সেই পন্থার অনুসন্ধানে অপেক্ষায় রইলাম।

* প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

ঋণ স্বীকার
Gilmore, david d. Misogyny: The Male Malady. University of Pennsylvania Press, 2001.
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।

Skip to content