রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


পতঙ্গবাহিত কিছু রোগবালাই বিশেষ করে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে একটি চ্যালেঞ্জ। এ সব ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য হল, রোগসৃষ্টিকারী বাহক অর্থাৎ মশার উৎপত্তি এবং বংশবিস্তারকে সমূলে বিনাশ। মূল উদ্দেশ্য কিন্তু মশামারা নয়। বরং মশার লার্ভা থেকে পিউপা এবং পরবর্তী ধাপে পিউপা থেকে পূর্ণাঙ্গ মশার রূপান্তরের চক্রটির বিনাশ।
সচরাচর রাসায়নিক কীটনাশকের সাহায্যে এই কাজটি বহু জায়গাতেই হয়ে থাকে এবং এর দ্বারা মশার উপদ্রব কমানো গেলেও পরিবেশ এবং আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থেকে যায়। অথচ এই কাজটিকে প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করে অত্যন্ত সহজেই করে নেওয়া সম্ভব। কারণ, মাছের সাহায্যেই এটি করা সম্ভব। কীটপতঙ্গের লার্ভাখাদক হল মাছ। এমন কয়েকটি মাছের উদাহরণ হল গাপ্পি, গাম্বুশিয়া, কই, তেলাপিয়া। এমন কি শিঙ্গি মাগুর পর্যন্ত লার্ভা খেয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-১০৬: উৎকৃষ্ট মানের চিংড়ি চাষে সতর্কতার পাশাপাশি জরুরি বিশেষজ্ঞের পরামর্শও

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯১: এক আলমারি বই : রাণুর বিয়েতে কবির উপহার

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস্য দফতর এবং গ্রামোন্নয়ন বা পঞ্চায়েত দফতর এই সব মাছ চাষ করে ব্লকের বা জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য-সদস্যাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেশ চমৎকার ভাবে কীটপতঙ্গের লার্ভা-পিউপার বিনাশের মাধ্যমে মশার বংশবৃদ্ধি বেশ খানিকটা প্রতিহত করতে পেরেছেন। এর আরেকটি সফলতার দিকে হল, এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা নিজ নিজ এলাকার ছোট পুকুর ডোবায় এই সব মাছের চাষ সফলতার সঙ্গে করছেন। এই কর্মকাণ্ডে জেলার জনস্বাস্থ্যশাখা থেকেও তাঁরা এ বিষয়ে সহযোগিতা পেয়ে আসছেন।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭০: পাভেল কোথায়?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৯: রসিক স্বভাব মা সারদা

এই রকম অভিনব কর্মসূচির মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করছেন এবং উল্লিখিত মাছগুলি তাঁদের নিজ নিজ এলাকার বিভিন্ন জলাশয় নালা ইত্যাদিতে সময়মতো যাতে বংশবৃদ্ধি করে সে বিষয়ে নজর রাখছেন। শুধু তাই নয় আশে পাশের অঞ্চলেও যেখানে প্রয়োজন বা চাহিদা আছে সেখানেও মাছ সরবরাহ করছেন। এর ফলে সামান্য হলেও তাঁদের আয় হচ্ছে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৭: পাঞ্চালদেশে যাত্রাপথে পাণ্ডবদের বিচিত্র অভিজ্ঞতায় কিসের ইঙ্গিত?

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৩: এক্সপায়ারি ডেটের ওষুধ খাবেন?

সর্বোপরি জৈব উপায়ে মশার উৎপাত বন্ধ করে অনেক প্রাণঘাতী অসুখ থেকে নিস্তার লাভের দিশা দেখাতে পেরেছেন। এ বিষয়ে বলাবাহুল্য মাছের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আশা করা যায়, এরকম প্রয়াস শুধু আমাদের রাজ্যেই নয়, পড়শি রাজ্যগুলির কাছেও এই উদ্যোগ দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে পথ দেখাবে।—চলবে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content