গত সপ্তাহে উল্লেখ করেছিলাম, ছোট এবং পুরোনো পুকুরে যেখানে তিন ফুট জল থাকে, সেখানে বেশ কিছুদিন ধরে ডিমপোনা চাষ করা যায়। তাই ডিমপোনা থেকে ধানী পোনা উৎপাদন সেখানে সম্ভব। এ বার আলোচনা করব, কীভাবে সেই ধানী পোনাকে কাজে লাগিয়ে চারা পোনা উৎপাদন করা যায়, সেই পদ্ধতিটি।
এই চাষের পুকুরগুলিকে লালন পুকুর বলা হয়ে থাকে। সাধারণভাবে বিঘা প্রতি ৩০ হাজার ধানী পোনাকে (২০-২৫ মিমি) আঁতুর পুকুর থেকে তুলে লালন পুকুরে ছাড়া যায়। পুকুরে ধানী পোনা ছাড়ার সময় হল সাধারণত সকালের দিকে। একান্ত সকালে সম্ভব না হলে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামার মুখে। ছাড়ার আগে পোনাগুলিকে ফাঁস জালে বেঁধে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে (১০ লিটার জলে ২০ মিলিগ্রাম হিসেবে) কয়েক সেকেন্ড ডুবিয়ে নিয়ে ধীর লয়ে পুকুরে ছাড়তে হবে। যদি পরিচালনার ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকে, তাহলে এই ধানী পোনা তিন মাসের মধ্যে ১২-১৫ সেমি লম্বা আকারের চারাপোনায় পরিণত হবে।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৯৮: মাছচাষে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা প্রয়োজন
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৭: সাধারণের প্রতি পাণ্ডবদের কৃতজ্ঞতার প্রকাশ কোন মহাভারতীয় শিক্ষা?
ধানী পোনা বাঁচার হার ৭০-৮০ শতাংশ হারে থাকে। আঁতুর পুকুরের মতো পালন পুকুরেও পরিপূরক খাদ্য যোগান দিতে হবে নিয়মিত এবং একাধিক বার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাবারের পরিমাণের পরিবর্তন হবে। পরিপূরক খাদ্য হিসাবে চালের পালিশ কুঁড়ো ও বাদামখোলের গুঁড়ো সমপরিমাণে মিশিয়ে ও সেই সঙ্গে ভিটামিন এবং খনিজ মিশ্রণ কিঞ্চিৎ পরিমাণে নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এর পরে নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করতে হবে। দিনে অনন্ত তিনবার প্রয়োগের প্রয়োজন। মাসে দু’বার করে জাল টানা দরকার। এর ফলে মাছের বৃদ্ধি আন্দাজ করা যাবে এবং সেই বৃদ্ধির সঙ্গে সমতা রেখে পরিপূরক খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৮: মোহিতকুমারী এক মহিলা আত্মজীবনীকার
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪০: মা সারদার নিজবাটি
সপ্তাহে একবার অন্তত জলের পিএইচ দেখে নিতে পারলে ভালো হয়। ছবিতে দেখানো পদ্ধতি অবলম্বন করে, জলে অক্সিজেন যোগানের প্রয়োজন হতে পারে। যদি পিএইচের পরিবর্তন হয় অর্থাৎ পিএইচ যদি কমে যায় তাহলে চুন প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে। এই চুনের পরিমাণ বিঘাপ্রতি ২০ কেজি-র বেশি যেন না হয়।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৪: নোবেল পাওয়ায় বন্ধু দিয়েছিলেন লজ্জাবতীর চারা
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৬: সুখের লাগিয়া
সচরাচর এই সময়ে, মাছের রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা কম। তাই রোগ প্রতিরোধের নানা ব্যবস্থা না নিলেও চলবে। এই ভাবে মাছচাষ করলে পুকুরের জলের নির্মলতা অক্ষুণ্ণ থাকে এবং বিঘাপ্রতি ২০-২৫ হাজার চারাপোনাও পাওয়া যেতে পারে।—চলবে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।