শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


প্রথাগত মাছচাষ পদ্ধতির উন্নয়নের সঙ্গে হেক্টরপিছু মাছের উৎপাদন বছরে এখন ছয়-সাত মেট্রিক টনেই উন্নীত হয়েছে। শুধু নয়, চাষপদ্ধতির ক্রমোন্নতির ফলে এখন বছরে ১০-১৫ টন মাছ এখন অনেক চাষিই পাচ্ছেন। শুরুতে প্রতি হেক্টর মিটারে পাঁচ হাজারটি মোট পোনা মজুদের পরিবর্তে এখন ২৫ হাজার হারে চারা ছাড়া হচ্ছে। এর ফলে প্রাকৃতিক খাদ্যকণার ক্রমাগত ঘাটতির মোকাবেলায় পরিপূরক খাদ্যপ্রয়োগ একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
মাছচাষে খাবারের খরচ এখন মোট খরচের ষাট শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। কম সময়ের মধ্যে বিশেষভাবে ফাল্গুন থেকে আশ্বিনের মধ্যে এই আট মাসে চাষিও চাইছেন অধিকতর ফলন পেতে। মাছের ফলন বাড়াতে খাবারের বা তার উপাদানগুলির উৎকর্ষতার পাশাপাশি সুস্থায়ী মাছচাষের লক্ষ্যে মাছকে সঠিকভাবে খাওয়ানো অর্থাৎ সঠিক পরিমাণে, উপযুক্ত আকারে, সঠিক সময়ের ব্যবধানে এবং প্রয়োজনীয় পৌষ্টিক গুণমানে তৈরি এসব অন্যতম লক্ষ্যণীয় বিষয়।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-১০২: ডিমপোনাই হোক বা ধানীপোনা—পুকুরে ছাড়ার সঠিক সময় কখন?

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬১: মহাভারতের রাক্ষসরা কী আজও বর্তমান? প্রসঙ্গ— বকরাক্ষসবধ

খাবারে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদাপূরণই নিবিড় মাছচাষে বছরে পনেরো টন হারে উৎপাদনের চাবিকাঠি। খাবারের রকমফের যেমন আছে তেমনই রয়েছে মাছকে খাদ্যপ্রদান পদ্ধতির বিভিন্নতা। আঁতুরপুকুরে একেবারে শিশুমাছ পালনে মিহি গুঁড়োকরা উচ্চমানের বাদামখোল ও চালের পালিশকুঁড়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আবার একটু বড় হলে অনুরূপ মিশ্রণ শর্ষের মতোন দানা আকারের কিংবা মাছ একটুবড় হলে সেমাই আকারে বা আরেকটু বড় হলে চাউমিন আকারে পরিবেশন করা হয়।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৪: সারদা মায়ের মানসিক দৃঢ়তা

জলস্তরের ওপরের মাছের খাওয়ার জন্য অনেকে ভাসমান দানা খাবারও ব্যবহার করে থাকেন। যাঁরা এরকম খাবার নিয়মিত দেন না তাঁরা বিভিন্ন মিহিকরা উপাদানের মিশ্রণ, গরমজল, ভাতের ফ্যান ইত্যাদি সহযোগে আটা বা ময়দার তালের মতো করে মেখে চারিদিকে ফুটোকরা বস্তা বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে দেন এবং দিনের শেষে তুলে নিয়ে, ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে পরেরদিন আবার ব্যবহার করেন। খাবার আত্তীকরণের সুবিধার্থে অনেকে জলে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করে মাছের বাড়বৃদ্ধি বজায় রাখতে চেষ্টা করেন এবং জলের গুণমানও নষ্ট হতে দেন না।—চলবে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content