বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ডিমপোনাই হোক বা ধানীপোনা—পুকুরে জন্মানো প্রাণীকণার পরিমাণের ওপরে তাদের কত সংখ্যায় ছাড়া হবে তা নির্ধারণ করা হয়। যেমন পুকুরের পঞ্চাশ লিটার জলে প্রাণীকণার পরিমাণ দেড় থেকে দুই মিলিলিটার হলে দুই থেকে তিন লক্ষ ডিমপোনা ছাড়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, পুকুরে সরাসরি ডিমপোনা ছাড়লে হঠাৎ পরিবেশের তারতম্যের কারণে সব ডিমপোনা বাঁচতে নাও পারে। সেই কারণে ডিমপোনার ব্যাগের জলের তাপ এবং পুকুরের জলের তাপের সমতা এনে ধীরলয়ে পুকুরের জলে ডিমপোনা ছাড়াই ভালো।
ভোরবেলা বা সন্ধের সময় এই কাজটি সমাধা করতে পারলেই ভালো হয়। এক দু’ দিন অপেক্ষা করে চালের পালিশ কুঁড়ো ও বাদামখোলের মিহি করে মেশানো মিশ্রণ জলের ওপরে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। পুকুরে যদি দু’ লক্ষ ডিমপোনা ছাড়া হয় এবং ডিমপোনার গড় ওজন যদি ১.৫ মিলিগ্রাম হয়। তবে পুকুরে ডিমপোনার মোট ওজন হবে ৩০০ গ্রাম। প্রথম সাতদিন মোট প্রাথমিক ওজনের চার গুণ অর্থাৎ ৩০০X৪=১২০০ গ্রাম হবে প্রথম সাতদিনের খাবার সরবরাহের পরিমাণ। অনুরূপভাবে পরবর্তী সাতদিন ৩০০X৮=২৪০০ গ্রাম খাবার সরবরাহ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-১০১: নিরোগ ও উচ্চমানে মাছচাষের জন্য অবশ্যই প্রশিক্ষণ নিতে হবে

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬০: আধুনিক ভারতীয় রাজনীতির চালচিত্রে কি দশরথ ও কৈকেয়ীর ছায়া?

এই সময়ের পরে ধানীপোনাকে আঁতুর পুকুর থেকে পালন পুকুরে ছাড়তে হয় সেখানে এদের তিন মাস ধরে পরিচর্যা করে চারাপোনা উৎপাদন করা হয়। পালনপুকুর নার্সারিপুকুর থেকে অনেকটাই বড় হবে (১০ থেকে অন্তত ১৫ কাঠা) হবে। এর গভীরতা হবে ৪ ফুটেরও বেশি। এই পুকুরে চুন প্রয়োগেরও প্রয়োজন হতে পারে। জলের পিএইচ দেখে নিয়ে তবে চুলের পরিমাণ ঠিক করা হয়ে থাকে। প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করে জৈবজুস প্রয়োগ করতে পারলে প্রাণীকণার স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকে। সাধারণত বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার ধানীপোনা অনায়াসেই ছাড়া যায়।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২০: মানকুমারী বসু—সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল রত্ন!

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৩: শ্রীমার বড় ভাইজিরা—নালু ও মাকু

পালনপুকুরে যেহেতু একসঙ্গে বিভিন্ন মাছের পোনা মজুদ করা হয় সেক্ষেত্রে একটি অনুপাত এইরকম হতে পারে—কাতলা : রুই : মৃগেল : বাটা : সিলভার কার্প= ৩ : ৩ : ২ : ১ : ১। পরবর্তী করণীয় পরিচর্যা হল, নিয়মিত পরিপূরক খাবার পরিবেশন। খাদ্যের আকার সরু সিমাইয়ের মতো হতে পারে, অনুপান চালের কুঁড়ো এবং বাদামখোলেল সমপরিমাণ মিশ্রণ। পুকুরে যদি ৩০ হাজার ধানীপোনা ছাড়া হয়। সেক্ষেত্রে মোট ধানীপোনার প্রাথমিক ওজন হবে ৯ কেজি।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৫: ভূপেনবাবুর ভূত

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৬: সুন্দরবনের লৌকিক চিকিৎসায় ম্যানগ্রোভ—হরগোজা ও কেয়া

যদি ধরে নেওয়া যায় মোট ওজনের ১০ শতাংশ হারে খাবার দেওয়া হবে। তবে সেক্ষেত্রে খাবার লাগবে ৯০০ গ্রাম প্রত্যহ। এইরকম চলবে প্রথম দশ দিন। তারপরে দ্বিতীয় দশ দিনে তা কিছুটা বাড়বে। কারণ দশদিনে মাছের ওজনও বেড়ে যাবে। এইভাবে নবম দশদিন পর্যন্ত চলবে এবং তারপরে চারাপোনার প্রতিটির ওজন ১০০ গ্রাম হলে তুলে নেওয়া হবে।—চলবে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content