বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


সাগরের প্রাণীজগতে এক অভিনবত্বের দাবি রাখে সামুদ্রিক ঘোড়া বা সি-হর্স বা হিপ্পোক্যাম্পাস নামের একটি মাছ। অবয়বে ঘোড়ার সঙ্গে এর খানিকটা সাদৃশ্য আছে। আবার ক্যাঙারুর মতো পেটে থলিও আছে এর। মাছটির বাহারি ল্যাজটি সুন্দরভাবে ঝুলে থাকে। যখন ইচ্ছে হয় তখন জলজ গাছকে জড়িয়ে নিয়ে মাছটি কেতাদুরস্তভাবে বিশ্রাম নেয়। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এদের প্রলম্বিত নাক।
সি-হর্সের বাহারি এই নাকটি অদ্ভুত সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে তোলেছে। শরীরকে হেলিয়ে দুলিয়ে দেহের বায়ুর পরিমাণ কমিয়ে বাড়িয়ে যখন এরা জলে দুলকি চালে চলাফেরা ও ওঠানামা করে সে দৃশ্য যে কোনও মানুষকেই আকৃষ্ট করে থাকে। প্রায়শই এদের ঝাঁক বেঁধে থাকতে দেখা যায়। কুচো চিঙড়ি ও নানা ছোট সামুদ্রিক প্রাণী এদের পছন্দের খাদ্য। সামুদ্রিক ঘোড়া নামের এই মাছটি বেশি দেখতে পাওয়া যায় আটলান্টিক মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর, ভূমধ্যসাগর এবং কৃষ্ণসাগরে।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-১০৮: গভীর সমুদ্রবাসী ‘ডাক্তার মাছ’-এর নাম শুনেছেন?

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৯: মহাভারতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য আখ্যান-উপাখ্যান, তেমনই একটি সম্বরণ ও তপতীর কাহিনি

পুরুষ সামুদ্রিক ঘোড়াদের ‘মিস্টার মম’ নামে সর্বত্র অভিহিত করা হয়। কারণ পুরুষরাই সন্তান পালনের পূর্ণ দায়িত্ব নেয়। কখনই এর অন্যথা হয় না। স্ত্রী ডিম পাড়ার পরে পুরুষটি তার ক্যাঙারুর মতো থলিতে ডিমগুলিকে রেখে দেয়। সেখানে রক্তজালিকার মাধ্যমে ডিমগুলি পুষ্টিতে সমৃদ্ধ হয়। সেখান থেকে সদ্যজাত শিশু অবস্থা থেকে কয়েকদিনের মধ্যে চলাফেরার অবস্থায় আসে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫২: দেশহিতৈষী মা সারদা

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৮: জ্ঞানদানন্দিনী দেবী—উনিশ শতকের বলিষ্ঠ লেখক এবং সমাজসংস্কারক

ক্রমে যখন এগুলি আরও পূর্ণতা পায় তখন বাবার তত্ত্বাবধান ছেড়ে স্বাধীনভাবে চলতে শুরু করে। এই মাছ খুব সহজে পোষ মানে এবং এরা মানুষের সঙ্গ পছন্দ করে বলে উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসকারী অনেকেই বাড়ির অ্যাকুয়ারিয়ামে এদের রাখেন এবং আবালবৃদ্ধ বনিতা এর অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন।
কোনও কোনও দেশের মানুষের মধ্যে একটি ধারণা জন্মেছে যে, এদের শুকনো গুঁড়ো করা দেহাবশেষ দুরারোগ্য রোগ উপশমে সক্ষম। হয়তো সেই কারণেই কিছু শিকারী ব্যাপকভাবে এই সুন্দর মাছটিকে নির্বিশেষে ধরে চালান করছেন। এই অসাধু প্রচেষ্টার ফলে মাছটি ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পথে। অবিলম্বে এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার দরকার।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content