
মাছের উৎপাদন ও উৎকর্ষতার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ বরাবরই অগ্রণী রাজ্য। বহুল প্রচলিত মাছ চাষ আমাদের জন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্থানীয় সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারে সুনিশ্চিত হয় জীবন-প্রবাহ, পুষ্টি, সুরক্ষা এবং সেই সঙ্গে কিছুটা উপার্জনও। মিষ্টি জলে সমন্বিত মিশ্র চাষ এখানে ব্যাপক হারে হয়ে থাকে—যে দুটি মাছ বিশেষ প্রাধান্য পেয়ে থাকে, তা হলও রুই এবং কাতলা। দুটি মাছেরই চাহিদা সারা বছর সর্বত্র সমানভাবে থাকে।
এ দুটি মাছ, মোট মাছ উৎপাদনে সিংহভাগ অংশ দখল করে থাকে। যারা এই দুটি মাছ পুকুরে চাষ করেন, তাতে ফলন ৫ টন বা ৫০০০ কিলোগ্রাম তো পাওয়াই যায়। প্রতি হেক্টরে সাত থেকে আট মাসের চাষে। যেহেতু সব মাছ বাজারেই এই মাছ দুটি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় তাই বাজারে বর্জ্য হিসাবেও এদের আঁশ পাখনা ইত্যাদি ছাড়া যেটা পড়ে থাকে তা হ’ল ভিসেরা বা নাড়িভুঁড়ি (অন্ত্র)। মূলত শাকাহারী এই মাছ দুটিরই অন্ত্র হয় খুব লম্বা।
আরও পড়ুন:

পর্ব-৩৬: পাতে নিয়মিত মাছ থাকলে রোগ থাকবে দূরে, শরীর হবে তরতাজা, কীভাবে খেলে পুষ্টিগুণ বজায় থাকবে?

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১: চায়ের দোকান থেকে বিশ্বজয়

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১: নারী কি আলাদা? তাঁরা পুরুষদের সঙ্গে বসতে ভয় পান? তাহলে কি এত আয়োজন শুধু তাঁদের ভয় দেখাতে…
মাছ দুটি প্রাকৃতিক হিসেবে শুরুতে প্রাণীকণা খেতে পছন্দ করে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শৈবাল, ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ কণা, খোলস যুক্ত অতি ক্ষুদ্র নরম প্রাণীও খেতে থাকে। সর্বোপরি বিভিন্ন উদ্ভিদ (কৃষিজ) উপকরণে প্রস্তুত খাবারও ভালোভাবেই গ্রহণ করে থাকে এরা।

এই ফেলে দেওয়া দীর্ঘ অন্ত্রের এক অসাধারণ প্রয়োগের কথা চিন্তা করেছেন কোচিনে অবস্থিত মৎস্য প্রযুক্তি গবেষণাগারের (Central Institute of Fisheries Technology, Willinglon Island, Cochin, Kerala) বিজ্ঞানীরা। এঁরা তৈরি করেছেন সার্জিক্যাল সুচার (Surgical sutures) বা অস্ত্রোপচারের পরে সেলাইয়ের সুতো। তার পেটেন্ট হয়ে গিয়েছে। আশা করা যায়, কিছুদিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক কোনও সংস্থার মাধ্যমে তা বাজারে পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-১: অমৃতের সন্ধানে…

জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-১: চলার পথে খানিক ভণিতা
রপ্তানিমুখী এমন এক ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের সার্থক রূপায়ণ দেখতে পাবো আমরা। শুধু মাছের উৎপাদনই নয়, এই রুই-কাতলার সঙ্গে এখন চাষ হচ্ছে গলদা চিংড়ির, যার চাহিদাও প্রচুর। এককভাবেও চাষ হচ্ছে এই অমেরুদন্ডী সন্ধিপদ প্রাণীটির। জলাশয়ের তলদেশে বিভিন্ন পতঙ্গ লার্ভা, ঝিনুক, শামুক ছাড়াও খাবারের ব্যাপারে প্রায় সর্বভুকই বলা যায় একে। নির্দিষ্ট সময় পর পর এরা খোলস ত্যাগ করে আর অতিরিক্ত মাংসপেশী যুক্ত হওয়ায় বাড়বৃদ্ধিও হয়।
আরও পড়ুন:

স্বাদে-গন্ধে: একঘেয়ে চিকেন কারি আর ভালো লাগছে না? বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো বানিয়ে ফেলুন মুর্গ মালাই হান্ডি

ডায়েট ফটাফট: নিয়ম করে খান আমন্ড? ভালো থাকবে হার্ট, এড়ানো যাবে রিঙ্কল! এর বহুমুখী পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা আছে কি?
মজুত পুকুরে জুভেনাইল চিংড়ি লালন করে বাজার উপযোগী বড় চিংড়ির উৎপাদিত করা হয়। বাজারে চিংড়ি বিক্রি হওয়ার পর ক্রেতা এর বড় খোলো বা খোলস ছাড়ানো অবস্থায় কিনে নিয়ে যান। ফলে এই খোলস বর্জ্য হিসেবে স্তুপাকৃত হতে থাকে। এই একই গবেষণাগারে এই খোলস থেকে বহুমূল্য কাইটিন (chitin) ও কাইটোসান (chitosan) উৎপাদন করার পদ্ধতি বার করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেটাও পেটেন্টকৃত। গ্লাইকোপ্রোটিনের এই যৌগ দুটির কত যে বাজার আছে, তা বলে শেষ হওয়ার নয়। বিভিন্ন প্রসাধনী বিশেষত ময়েশ্চারাইজার তৈরিতে এদের ব্যবহার সুবিদিত।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।