শনিবার ৯ নভেম্বর, ২০২৪


সুন্দরবনের নামের ইতিহাস যাই হয়ে থাক না কেন, তার সৌন্দর্য এখন বিপন্ন প্রায়। প্রকৃতির রুদ্ররোষের মধ্যে দিয়ে তার আত্মশুদ্ধির ও অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার মরণপণ পরীক্ষা চলছে। ৫৪টি দ্বীপকে ঘিরে রাখা ৩৫০০ কিলোমিটার নদী বাঁধে যত্রতত্র যখন তখন ভাঙ্গন দেখা দেয়।
সর্বত্র নদীবাঁধ রক্ষা করে লবণাক্ত জলকে আটকে শস্য-শ্যামলা ও মোহনার পলিতে সমৃদ্ধ উর্বরতা কবে ফিরে পাবে আমাদের প্রিয় সবুজ মোহন সুন্দরবন সেটা এখন চিন্তার বিষয়। যেখানে জলে খেলে বেড়াবে অগুন্তি মাছ। সেই উজ্জ্বল উদ্ধার কীভাবে সম্ভব হবে যাতে আমাদের বাংলার অপার মৎস্যবৈচিত্র ও প্রাচুর্যে ভরা প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের উত্তরাধিকার আমরা হারিয়ে ফেলব না।
আরও পড়ুন:

পর্ব-৪০: শুধু খাল-বিল ঝিল নয়নজুলিতে মৌরালা মাছ করে প্রায় ২০ লক্ষ শিশুর অনুপুষ্টির ঘাটতি মেটানো সম্ভব

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫০: লুকোনো বই পড়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ বাক্সের চাবি চুরি করেছিলেন

অসংখ্য নদী বেষ্টিত সুন্দরবনের কয়েকটি নদী হল মাতলা, রায়মঙ্গল, সপ্তমুখী, ঠাকুরান, গোসাবা, হাড়িভাঙ্গা কালিন্দী, ইছামতি, মুড়িগঙ্গা, মৃদঙ্গভাঙ্গা ইত্যাদি। সবকটিতেই জোয়ার ভাটা খেলে ও জোয়ারের জলে উঠে আসা মীন বা বাগদা মীন সংগ্রহ শুরু হয় বর্ষায়। চলে শীতের শেষ পর্যন্ত।

বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য মীন সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক মাছের পোনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বঙ্গোপসাগর উপকূল অঞ্চল সুন্দরবনের প্রাকৃতিকভাবে সংগৃহীত মীন সংলগ্ন জলাশয়ে মজুত করে চিংড়ি চাষের সূচনা হয়। পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চল খুব সামান্য ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার মাত্র। এখানে লবণাক্ততা ৫-৩৫ পিপিটি পর্যন্ত ওঠানামা করে। এখানে জলের স্বচ্ছতাও একই রকম থাকে না। কম বেশি হয়। এখানে চিংড়ি ডিম ফোটানোর জন্য এখনও হ্যাচারি তৈরি করেও সফলতা আসেনি।
আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: গাল জুড়ে এক রাশ ব্রণ? সমাধান লুকিয়ে আছে এ সবের মধ্যে, কী ভাবে কাজে লাগাবেন ঘরোয়া টোটকা?

স্বাদে-আহ্লাদে: শীতে পছন্দের তালিকায় রয়েছে লাড্ডু? মিষ্টিমুখ হয়ে যাক গাজরের লাড্ডু দিয়েই

তবে নদী মোহনায় অনেক মানুষ এই মীন সংগ্রহের কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। আপাত দৃষ্টিতে এতে কোনও অসুবিধের কারণ নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় বহুদিন ধরে চলে আসা প্রাকৃতিক ভাবে চিংড়ি মীন আহরণকালে প্রচুর মাছের পোনা এবং অন্য চিংড়ির মীন (পোস্ট লার্ভি) নষ্ট হয়। জেলা মৎস্য দপ্তর থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও প্রতিবন্ধকতার ফাঁকফোঁকর এড়িয়ে আবার তা চালু হয়ে যায়।

মীন সংগ্রহের সময় এ ভাবে প্রচুর মাছ নষ্ট হয়।

অথচ সাধারণ কিছু ব্যবস্থা বীজ সংগ্রহকালে নিতে পারলে— যেমন মীন বাছাই করার সময়ে মাছ ও চিংড়ি যাতে নষ্ট না হয়। সেই বহু অনির্বাচিত পোনা ও চিংড়িগুলি একটি আলাদা গামলায় ওই নোনা জলে রেখে দিলে সেখানে জীবন্ত অবস্থায় সুন্দর জমা করা যায়। কিছু সময় পরে আবার জোয়ারের জল সংগ্রহ করে তটে বসে ওই পাত্রের জল সমেত পোনাগুলি মোহনায় ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৫: জনজাতি ও জনসত্ত্বা

শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়েছে? প্রাকৃতিক উপায়েই সহজে জব্দ হবে এই রোগ, কী ভাবে?

এই কাজটুকু সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তরফেও নজর রাখা সম্ভব। কিছুটা প্রশিক্ষণ দিলে অনেকে এই অপচয় সম্পর্কে অবহিত হবেন। মাছের জীব বৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। সুন্দরবনকে এ ভাবে ক্ষতি থেকে বাঁচিয়েও প্রান্তিক মানুষগুলি জীবিকা চালু রাখতে পারবেন। নচেৎ আগামী দিনে সুন্দরবনের চিংড়ি ও মাছের আকাল যে দেখা দেবে না, তা কে বলতে পারে?

ছবি: লেখক
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content