ড্রাগন ফলের কথা আজকাল সকলেই জানেন। কিন্তু এই নামে যে একটি মাছও আছে তা হয়তো অনেকেরই অজানা। যার কদর সারা বিশ্বে এখন ঊর্ধ্বমুখী, তা হয়তো কারও জানা নাই থাকতেই পারে। মিষ্টি জলের এই মাছটি পাওয়া যায় মূলত চিন, তাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, মায়ানমারে। পাওয়া যায় আমাদের দেশেও। চিনে এটি ড্রাগন ফিশ নামে পরিচিত। আর সে দেশে ড্রাগন তো পয়মন্ত।
স্বাভাবিক ভাবেই মাছটি চিনে সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। কথিত আছে, অশুভশক্তি বিনাশ করতে এই মাছটির জুড়ি মেলা ভার। সে যাই হোক, আমাদের এই মহাদেশের অস্টিওগ্লসিডি পরিবার ভুক্ত এই মাছটির প্রকৃত নাম আরোয়ানা। বলা যেতে পারে, সারা বিশ্বে অ্যাকোয়ারিয়াম মাছেদের রাজা মশাই বা রানি। আকৃতিগত ভাবে কিংবা সামান্য তফাতে এরই কয়েকটি প্রজাতি আছে। সব কটিরই দাম বেশ ভালোই।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৫: সুন্দরবনের মাছ বৈচিত্র্যের ক্ষতিকারক প্রজাতি হল ক্রোকোডাইল ফিশ
ষাট পেরিয়ে, পর্ব-২৫: মা-বাবার বয়স বাড়ছে, এই সময় পড়ে গেলে বড় বিপদ ঘটতে পারে, সুরক্ষার প্রয়োজনে মানতে হবে কিছু নিয়ম/১
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১০: স্থাপত্য ছাড়িয়ে অভয়ারণ্য
আরোয়ানা হল পৃথিবীর অন্যতম দামী একটি মাছ। লাল, সোনালি, রুপোলি রঙেরই সাধারণত হয়। বায়ুশ্বাসী এই মাছটি তার পটকাকে কাজে লাগিয়ে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে সহজেই বেঁচে থাকতে পারে। যেটা এই মাছটি সহ্য করতে পারে না, তা হল অন্ধকার। অ্যাকোরিয়ামে একে রাখতে হলে মৃদু আলো কিন্তু চাই। নচেৎ লাফ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকবেই।
আরও পড়ুন:
নাকের পলিপের চিকিৎসায় সার্জারিই একমাত্র পথ নয়, বরং আগেভাগে সচেতন হলে সার্জারির প্রয়োজনই পড়ে না
স্বাদে-আহ্লাদে: বিকেল হলেই জমিয়ে প্রেম বা আড্ডা, সঙ্গে যদি থাকে ভেজিটেবিল চপ
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১: আর্ষ মহাকাব্যের স্রষ্টাদ্বয়ের কথা
কিঞ্চিত আম্লিক (পিএইচ ৬.৫-৬.৮) এবং জলেও তাপমাত্রা ২৬-৩০ ডিগ্রির মধ্যে হলে ওরা স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। সাধারণ ভাবে পুরুষ বা স্ত্রী মাছ চেনা একটু মুশকিল। কারণ জননেনন্দ্রিয় দেখে বোঝা যায় না। কেবল পুরুষ একটু স্লিম আর হাঁ-মুখ বেশ বড় এবং গভীরতা হয় অনেকটা বেশি। ঠিক মতো রাখতে পারলে একটি মাছ অন্তত ১০ বছর বাঁচে।
আরও পড়ুন:
হেলদি ডায়েট: রোজ টক দই খাচ্ছেন? খাওয়ার আগে কোন বিষয়গুলি অবশ্যই মাথায় রাখবেন
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৪: ঠাকুরবাড়িতে দোলে আসত নাচিয়ে, নাচের তালে তালে হত আবিরের আলপনা
‘ওগো তুমি যে আমার…’— আজও তাঁর জায়গা কেউ নিতে পারেনি/২
সাধারণত এরা আক্রমণাত্মক স্বভাবের হয়। তাই অন্য কোনও মাছের সঙ্গে একে রাখা যাবে না। আবার একে রাখতে গেলেও যথেষ্ট বড় মাপের অ্যাকোয়ারিয়াম চাই যেখানে জল ধারন ক্ষমতা ২০০ লিটার মতো হতেই হবে এবং লম্বায় অন্তত ৩ ফুট হবে। বদ্ধ জলাশয়ে এদের প্রজনন সম্ভব। এদের ডিম ফুটতে বেশ সময় লাগে। এক মাসের বেশি তো বটেই। এই মাছটির সবচেয়ে সুন্দর ও মুগ্ধতার বিষয়টি হল, ডিম নিষিক্ত হওয়ার পর থেকে শুরু করে ডিম পোনা এমনকি, ধানী পোনা হওয়া পর্যন্ত এর পূর্ণ দায়িত্ব বাবার। প্রাণী জগতে এত দায়িত্বশীল পিতা খুব কম দেখা যায়। পোনাগুলিকে নিজের মুখগহ্বরে দীর্ঘদিন রাখা এবং যতক্ষণ না বাচ্ছারা খাবার সংগ্রহ করে খেতে শিখবে ততদিন ধরে রাখবে। আবার শত্রুদের থেকে পাহারাও দেবে। শত্রুর সন্ধান পেলেই বাবা এমন এক সংকেত দেবে যে, সঙ্গে সঙ্গে তারা সেই মুখগহ্বরে এসে আশ্রয় নেবে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এদের পছন্দের খাবার চাই, যেমন ছোট বা বড় কেঁচো, ছোট মাছ ও চিংড়ি এমনকি ছোট ব্যাঙও।
এদের আঁশগুলি খুব সুন্দর। এগুলি দিয়ে নানান ধরনের শৌখিন ও ফ্যাশন সামগ্রী তৈরি হয়। এহেন এই মাছ যে বেশ কয়েক হাজার বা লাখ টাকাতেও বিক্রি হবে, এতে আর আশ্চর্য হওয়ার কি আছে?
রূপোলি আরোয়ানা মাছটির ছবি তুলেছি তমলুক সিএডিসি-র প্রকল্পের প্রধান ড. উত্তম লাহার অফিসে রাখা অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে।
রূপোলি আরোয়ানা মাছটির ছবি তুলেছি তমলুক সিএডিসি-র প্রকল্পের প্রধান ড. উত্তম লাহার অফিসে রাখা অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।