বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ভারত নদীমাতৃক দেশ। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, কাবেরী হতে তিস্তা প্রভৃতি নদীগুলি আমাদের দেশকে নদীমাতৃক করে তুলেছে। দেশে অনেক নদ-নদী থাকলেও গঙ্গার একটি বিশেষ ভূমিকা আছে আমাদের কাছে। একে আমরা পুণ্যসলিলা মনে করি, বিশ্বাস করি এর স্রোতধারায় অবগাহন করলে পাপক্ষয় নিশ্চিত। গৃহ ও মনের শুচিতা রক্ষার্থে এবং জীবন ও জীবিকার অগ্রগতিতে গঙ্গানদী আমাদের কাছে প্রণম্য।

গঙ্গার বহু মানুষের অন্নের চাহিদা মেটায় পর্যাপ্ত মাছ জোগানের মধ্য দিয়ে। আমরা বিভিন্ন জলাশয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন মাছ সংগ্রহ করি, কিন্তু গঙ্গানদীর মাছে কিছু বিশেষ গুণ আছে, যেগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মাছ খাই আমাদের ভালোলাগা থেকে। এ রকম স্বাদু খাবার খুব কমই আছে। সেরা স্বাদ ও পুষ্টিতে মাছ অগ্রণী। শুধু স্বাদ বা পুষ্টি গুণের জন্যই যে খেতে চাওয়া এমনটা বোধহয় নয়, বৈচিত্র্যগুণ ও রসনা তৃপ্তির জন্যও মাছ আট থেকে আশির প্রিয়।
অন্যান্য মনোহর খাবারের সঙ্গে মাছের পার্থক্যটি হল যদি আমরা মাংস খাই তাহলে স্বাদ কিন্তু একটিই, চিকেনের ক্ষেত্রেও একই। কিন্তু যদি মাছের কথা বলা হয় তাহলে এক একটি মাছের ক্ষেত্রে এক একরকম স্বাদ! ইলিশের এক, পার্সের এক, পাবদার এক ও কাতলার আর এক। অর্থাৎ যত রকমের মাছ আমরা খাবো স্বাদে ও বৈচিত্র্যে ভিন্ন কিছু আমরা পাবো।
আরও পড়ুন:

আরও ১১২ জনকে চাকরির নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের, পুজোর আগেই মোট ১৮৯ টেট পরীক্ষার্থীর চাকরি

ডিএ মামলায় রাজ্য সরকারের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জির শুনানি পিছিয়ে গেল, শুনানি হবে বৃহস্পতিবার দুপুরে

 

গঙ্গার মাছ

গঙ্গার মাছ বলতে প্রথমেই যার নাম নিতে হয় সে হল ইলিশ। এখানে পরিবার বা ফ্যামিলি হিসাবে তুলে ধরা হল মাছগুলিকে—
 

ক্লু পিডি ফ্যামিলি

এই পরিবারের মধ্যে আছে বেশ কিছু মাছ। তার মধ্যে তিনটি মাছ হল—
১. ইলিশ মাছ
২. খয়েরা মাছ
৩. ফ্যাসা মাছ।

কিন্তু চিন্তার বিষয় হল— এই পরিবারের মাছগুলি বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য হয়ে গিয়েছে।
 

সাইপ্রিনিড ফ্যামিলি

এই পরিবারের মধ্যেও অনেক ধরনের মাছ আছে। তার মধ্যে কয়েকটি হল— রেবা বাটা, সরপুঁটি, চ্যালা, দারকিনে, বিভিন্ন ধরনের পুঁটিমাছ প্রভৃতি। রুই, কাতলা প্রভৃতি যে মাছগুলি আমরা সাধারণত বাজার থেকে কিনি সেগুলি এই পরিবারের মাছ। এগুলি গঙ্গার মাছ। বর্তমানে যদিও পুকুরে পাওয়া যায় বলে আমরা এগুলিকে পুকুরের মাছও বলি। এই তথ্য ঠিক নয়। এই সব প্রজাতির মাছও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।

অনেক মাছের মধ্যে এই পরিবারের কিছু মাছের নাম উল্লেখ্য করা করছি যেগুলিও বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য। যেমন: কাজুরি, বাচমাছ, আড় মাছ, ট্যাংরা, নোনা ট্যাংরা, রিঠা মাছ প্রভৃতি।
 

লুপ্তের পথে কিছু মাছ

এছাড়াও আরও কিছু কিছু মাছ ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে, যেমন: বেলে, ন্যাদোশ, কাকিলা, খরশুলা, ত্রেচোখো প্রভৃতি।
 

হারিয়ে যাওয়ার কারণ

মাছগুলি লুপ্তের অনেক কারণ আছে। তবে সেগুলির মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসেছে, চিংড়ির মিন সংগ্রহ করার সময় ওই জাতীয় মাছের মীন নষ্ট করা ফেলা হয়। চিংড়ির মীনের সঙ্গে উঠে আসে অন্যান্য মাছের মীনও। চিংড়ির মীন সংগ্রহ হয়ে গেলে অন্যান্য মিনগুলিকে ডাঙ্গায় বা অন্যত্র ফেলে দেওয়া হয়। এর ফলে খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই প্রজাতির মাছগুলির।

আরও পড়ুন:

ডাক্তারের ডায়েরি, পর্ব-৩৪: সেই সব মহান ডাক্তারবাবুরা / ২

গৃহিণীদের মধ্যে বইয়ের নেশা বাড়াতে কাঁধে ঝোলা নিয়ে ঘুরে বেড়ান রাধা, ‘চলমান পাঠাগার’ তাঁর পরিচয়!

ভারত সরকারের অধীনস্থ মৎস্যদপ্তরও বুঝতে পারছে যে, মাছগুলি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। আর সে কারণেই বাইরে থেকে পোনা এনে গঙ্গায় ছাড়তে হচ্ছে। এক সময় গঙ্গা থেকে যে মাছ ধরা হতো, আজ সেই নদীতে এই মাছগুলির অস্তিত্ব যাতে অক্ষুন্ন থেকে বংশবিস্তার করতে পারে তার জন্যই এই প্রয়াস।
মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে সর্বতো ভাবেই স্বাস্থ্যকর। মাছে পুষ্টি তো রয়েছেই, স্বাদেও অতুলনীয়। পুষ্টির দিক থেকে প্রায় সব মাছই এক। কেবল পার্থক্য হয় কিছু অনুপুষ্টিতে। আর এই অনুপুষ্টির ফলে আবার স্বাদের তারতম্যও দেখা যায়।

উপরিউক্ত মাছগুলি যাতে না হারিয়ে যায় সেদিকে আমাদের বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে। কারণ, অতীতের মতো এখনও যদি সেই সব মাছের পর্যাপ্ত জোগান থাকে তাহলে আমরা আমাদের তৃপ্তিকে ফিরে পাবো পছন্দের মাছগুলিকে খাওয়ার মধ্য দিয়ে।

ছবি: লেখক

* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।
 

অনুলিখন: সুমন্ত দাস


Skip to content