বেলে মাছ
খুবই উপাদেয় এই মাছ। এত সুস্বাদু মাছ যে মানুষ যদি বাজারে পায় তৎক্ষণাৎ তাঁরা কিনে নেন। এই মাছ লম্বায় ৫-৬ ইঞ্চি হয়, ওজন হয় ১০০-১৩০ গ্রামের মধ্যে। চোখ বড় বড়, গায়ের রং হলদেটে। ছোট মাছ শিকার করে এরা খায়।
বর্তমানে পুকুরে এই মাছকে আর দেখা যায় না। কিন্তু অল্প পরিমাণে নদীতে দেখা যায়। কিন্তু নদীর বেলের স্বাদ পুকুরের বেলের মতো না হওয়ার কারণে সাধারণের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা ততটা নেই।
চ্যাং মাছ
এতিও খুবই সুস্বাদু মাছ। মাছটিকে দেখতে অনেকটা ল্যাটা মাছের মতো। কিন্তু একটু মোটা ও বেঁটে হয়। মশা, মাছি, উড়ন্ত নানা প্রজাতির পোকা-মাকর এরা লাফ দিয়ে খায়। বাড়ির পাশের পুকুরে যদি এই মাছ চাষ করা হয় তাহলে মশা, মাছি এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব অনেকাংশে কমে যাবে।
মাগুর মাছ
দেশি মাগুর মাছও কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এই মাছের স্বাদ ও তার পুষ্টিগত গুণাবলী রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। অনভিপ্রেত রাসায়নিকের প্রয়োগে ‘পুরুষ’ মাগুর মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাঁরা এই মাছ চাষ করেন তাঁরা হাইবিট ‘পুরুষ’ মাগুর ও দেশি স্ত্রী মাগুর দিয়ে ব্রিডিং করাচ্ছেন। আশ্চর্যের ব্যাপার একেই দেশি মাগুর বলে প্রচার করছেন। যদিও তাঁরা সফল হতে পারছেন না।
শিঙ্গি মাছ
শিঙ্গি মাছের দৈহিক গঠন নিয়ে বলার অপেক্ষা থাকে না। সকলের জানা ও চেনা মাছ এটি। কিন্তু এই মাছটি কমে যাওয়ায় কারণ হল এর কাঁটা এতটাই বিপদজনক যে এই মাছকে নিয়ে ব্রিডিং করানোর চেষ্টা খুব বেশি দেখা যায় না।
খরশুলা মাছ
আকারে লম্বা হয় এই মাছ। এদের চোখদুটি যেন পাশাপাশি বসানো রয়েছে বলে মনে হয়। অত্যন্ত সুস্বাদু এই মাছ। কিন্তু আজকাল সেরকম ভাবে দেখা যায় না।
বাচা মাছ
এই মাছ লম্বায় হয় প্রায় ৬ ইঞ্চি। খুব বড় বড় চোখ এবং লালচে হয় গায়ের রং। স্বাদে এই মাছ খুবই উপাদেয়। বহু মানুষ এই মাছকে পছন্দ করেন। কিন্তু বর্তমানে এই মাছ সেভাবে পাওয়া যায় না।
চ্যালা মাছ
খুবই সুস্বাদু মাছ। এদের সাধারণত ধানক্ষেত বা পুকুর পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে এগুলিকে আর সেরকম ভাবে দেখা যায় না। পুকুরের জল যদি পরিষ্কার হয় তাহলে বুঝতে হবে জলে চ্যালা মাছের উপস্থিতি রয়েছে। জলকে স্বচ্ছ রাখতে সাহায্য করে এই মাছ।
কেন বিপন্ন এই সব মাছ
সাধারণত এই সব মাছ যে ধরনের পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত, সেই ধরনের পরিবেশ না পাওয়ার ফলে এরা ক্রমশ বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। পুকুর পরিষ্কারের জন্য দেওয়া হচ্ছে মহুয়া খোল। এতে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই সব মাছ। আরও একটি কারণ হল, পুকুরে অনভিপ্রেত রাসায়নিকের প্রয়োগ। যে প্রয়োগের ফলে মারা যাচ্ছে এই ধরনের মাছ।
প্রতিকারের উপায়
প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় একটি করে পুকুরে বা দুটি পঞ্চায়েত এলাকা মিলিয়ে একটি করে পুকুরে ‘লাইফ জিন ব্যাঙ্ক’ রাখতে হবে। এই ‘লাইফ জিন ব্যাঙ্ক’ হল এই ধরনের জীবন্ত মাছগুলিকে ধরে রাখার একটা জায়গা। কোনও ব্যক্তি যদি এই ধরনের মাছ চাষ করতে চান তাহলে সেই ব্যক্তি ওই পুকুর থেকে বা ‘লাইফ জিন ব্যাঙ্ক’ থেকে মাছ কিনে তা চাষ করতে পারবেন।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।