বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


প্রকৃতির প্রকৃতজাত উপাদানগুলি প্রকৃতির সৌন্দর্যায়নে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। সেই সৌন্দর্যে থাকে না কোনও কৃত্রিমতা, থাকে শুধু অকৃত্রিম মধুরতা। এই সুন্দর আবেশ সৃষ্টিতে প্রকৃতি যেন নিজেই হয়ে ওঠে শিল্পী। শৈল্পিকতাই তার মহৎ গুণ।

জগতের বহু কিছুকে আশ্রয় করে জন্ম নেয় কারুশিল্প বা কুটিরশিল্প। গ্রামের জলাভূমি বা ধানক্ষেত থেকে ছোটছোট মাছ ধরার জন্য গ্রামেরই মানুষ নিজেদের গৃহে প্রস্তুত করেন মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম, যেগুলি ঘূণি, আটল প্রভৃতি নামে পরিচিত। গ্রামের সেই সমস্ত শিল্পীরা নিজেদের মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রস্তুত করেন এই সব সরঞ্জাম। প্রস্তুতজাত সেই সামগ্রীর সাহায্যে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ হয়।

কিন্তু সাম্প্রতিককালে এই সমস্ত শিল্প বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কারণ, গ্রামের জলাভূমি থেকে শুরু করে ধানক্ষেত সর্বত্রই ছোটছোট মাছগুলিকে আগের মতো দেখা যায় না। ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে এই সকল মাছ। ফলস্বরূপ এই শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে গ্রামের শিল্পীরা জীবন ও জীবিকার সন্ধানে পরিযায়ীর জীবন বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবারের সান্নিধ্যলাভ করে আপন খুশিতে সৃষ্ট হতো যে শিল্প, সেই শিল্পীর শৈল্পিকতা আজ ম্লান।

অতীতে এও দেখা যেত, ছোটছোট মাছকে ধরে বিক্রি করা হতো পথেঘাটে। তা থেকে সামান্য কিছু হলেও অর্থের সংস্থান হতো। কিন্তু এই মাছগুলি সংখ্যায় বিপুল পরিমাণে কমে যাওয়ায় ফলে সেই সমস্ত পরিবারগুলিও রয়েছেন অর্থকষ্টে।
আমাদের ভাবতে হবে এই মাছগুলি থাকার ফলে শিল্পীর শৈল্পিকতা বেঁচে ছিল, পরিবারগুলির আর্থিক সঙ্গতি স্বাভাবিক ছিল। শিল্পীরা পরিবারহারা পরিযায়ী ছিল না। তাই এই সব মাছগুলিকে আমরাদের রক্ষা করার জন্য বিশেষ উদ্যোগী হতে হবে। প্রত্যেকটি পঞ্চায়েত এলাকায় একটি করে পুকুরে যদি এই মাছ গুলিকে চাষ করা যায়, সামাজিক মৎস্যসৃজন প্রকল্প যদি শুরু করা যায় তাহলে হয়তো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমরা আবার দেখতে পাবো এই মাছগুলিকে। আমরা দেখতে পারবো শিল্পীর শৈল্পিক সুষমা, আমরা দেখতে পাবো আর্থিক সঙ্গতিপূর্ণ জীবন।

ছবি: লেখক

* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।
 

অনুলিখন: সুমন্ত দাস


Skip to content