ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
কুরুবংশের কুমাররা এখন পরিণত, সমর্থ। তাঁদের রাজ্য শাসনের যোগ্যতা পরীক্ষিত হয়েছে। বৎসরান্তে ধৃতরাষ্ট্র, কুমারদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ, পাণ্ডপুত্র যুধিষ্ঠিরকে, যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করলেন। যুধিষ্ঠির ধৈর্য্যে, স্থিরতায়, সহিষ্ণুতায়, চিরস্থায়ী সম্পর্ক স্থাপনের মতো প্রণয়ে, দায়বদ্ধতাপালনে, স্বভাবে, ব্যবহারে ও কার্যসম্পাদনে একাগ্রতাতায়, পিতা পাণ্ডুর যশকেও অতিক্রম করে গেলেন। দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীম, অসিযুদ্ধ, গদাযুদ্ধ, রথযুদ্ধে কৃষ্ণের ভাই বলরামের কাছে প্রশিক্ষণ বজায় রাখলেন। শিক্ষাসমাপনান্তে ভাইদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর জীবনে পথ চলা শুরু হল। তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন, দৃঢ়মুষ্টিতে অস্ত্রধারণে, দ্রুত অস্ত্রপ্রয়োগের দক্ষতায়, লক্ষ্যভেদে অব্যর্থ—একজন দক্ষ অস্ত্রবিদাবিদ হিসেবে তার প্রসিদ্ধি।
এ ছাড়াও ক্ষুর, নারাচ প্রভৃতি পার্শ্বধারযুক্ত, তীক্ষ্ণ অগ্রভাগবিশিষ্ট অস্ত্র, ভল্ল, বিপাঠ প্রভৃতি বিশাল মুখযুক্ত অস্ত্রচালনায়, একাধারে সরল ও বক্র, বরশি দিয়ে শত্রুকে উঠিয়ে নিয়ে হরণ করবার যোগ্য অস্ত্রপ্রয়োগেও তাঁর নৈপুণ্য। দ্রোণাচার্য মনে করলেন, পৃথিবীতে ক্ষিপ্রগতিতে অস্ত্র প্রয়োগে, যথাযথ অস্ত্রকৌশলের প্রয়োগনৈপুণ্যে অর্জুন অতুলনীয়। তাই কৌরব রাজসভায় গুরু দ্রোণাচার্য অর্জুনকে বললেন, তিনি নিজে গুরুপরম্পরায় অধীতবিদ্যা দান করবার লক্ষ্যে, বজ্রতুল্য অব্যর্থ অস্ত্র, যা পৃথিবীকে দগ্ধ করতে সমর্থ, এমন ব্রহ্মশির অস্ত্র, অর্জুনকে দান করেছিলেন। তপস্যালব্ধ এই অস্ত্রবিষযে, দ্রোণাচার্যের গুরু অগ্নিবেশের নির্দেশ ছিল, মানুষ এবং অল্পশক্তিবিশিষ্ট প্রাণীর প্রতি এই অস্ত্রপ্রয়োগ নিষিদ্ধ।
এই নিয়মের ঊর্ধ্বে অর্জুন নন। তিনিই এই দিব্যাস্ত্রপ্রয়োগের যোগ্য, অন্য কেউ নন। ত্বয়া প্রাপ্তমিদং বীর! দিব্যং নান্যোঽর্হতি ত্বিদম্ এই নির্দেশ পালন করতে হবে অর্জুনকে। আচার্য দ্রোণের এই নির্দেশের প্রত্যক্ষ শ্রোতা জ্ঞাতিবর্গকে, দক্ষিণাদানের জন্য আদেশ দিলেন গুরু দ্রোণাচার্য। শ্রদ্ধাবনত অর্জুন প্রতিজ্ঞা করলেন, দদানীতি দেব। গুরু দ্রোণাচার্য তাঁর নিজের প্রতিশ্রুত গুরুদক্ষিণা ঘোষণা করলেন। যুদ্ধেঽহং প্রতিযোদ্ধব্যো যুধ্যমানস্ত্বয়াঽনঘ! আমি যুদ্ধে অংশ নিলে তুমি আমার সঙ্গে যুদ্ধ করবে। অর্জুন তথেতি তাই হবে, সম্মতিরূপ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে উত্তরদেশ জয়ের লক্ষ্যে প্রস্থান করলেন। লোকের মুখে অর্জুনপ্রশংসা প্রবাদে পরিণত হল, জগতে অর্জুন তুল্য তীরন্দাজ কেউ নেই। অর্জুনস্য সমো লোকে নাস্তি কশ্চিদ্ধনুর্দ্ধরঃ অর্জুন গদাযুদ্ধ, অসিযুদ্ধ, রথযুদ্ধ এবং ধনুর্যুদ্ধ, সব যুদ্ধেই পারদর্শিতা অর্জন করলেন। পাণ্ডবদের আরও একজন ভাই সহদেব। তিনি শ্রেষ্ঠ শাস্ত্রবিদ, শুক্রাচার্য এবং বৃহস্পতির কাছে নীতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করে নীতিশাস্ত্রবিদ হয়ে উঠলেন। কিন্তু ভাইদের সর্বদাই আজ্ঞানুবর্তী রইলেন। প্রিয়, কনিষ্ঠ, বিনয়ী, নকুল গুরু দ্রোণাচার্যের প্রশিক্ষণে চিত্রযোধী নামে বিখ্যাত হলেন এবং অতিরথরূপে গণ্য হলেন।
এ ছাড়াও ক্ষুর, নারাচ প্রভৃতি পার্শ্বধারযুক্ত, তীক্ষ্ণ অগ্রভাগবিশিষ্ট অস্ত্র, ভল্ল, বিপাঠ প্রভৃতি বিশাল মুখযুক্ত অস্ত্রচালনায়, একাধারে সরল ও বক্র, বরশি দিয়ে শত্রুকে উঠিয়ে নিয়ে হরণ করবার যোগ্য অস্ত্রপ্রয়োগেও তাঁর নৈপুণ্য। দ্রোণাচার্য মনে করলেন, পৃথিবীতে ক্ষিপ্রগতিতে অস্ত্র প্রয়োগে, যথাযথ অস্ত্রকৌশলের প্রয়োগনৈপুণ্যে অর্জুন অতুলনীয়। তাই কৌরব রাজসভায় গুরু দ্রোণাচার্য অর্জুনকে বললেন, তিনি নিজে গুরুপরম্পরায় অধীতবিদ্যা দান করবার লক্ষ্যে, বজ্রতুল্য অব্যর্থ অস্ত্র, যা পৃথিবীকে দগ্ধ করতে সমর্থ, এমন ব্রহ্মশির অস্ত্র, অর্জুনকে দান করেছিলেন। তপস্যালব্ধ এই অস্ত্রবিষযে, দ্রোণাচার্যের গুরু অগ্নিবেশের নির্দেশ ছিল, মানুষ এবং অল্পশক্তিবিশিষ্ট প্রাণীর প্রতি এই অস্ত্রপ্রয়োগ নিষিদ্ধ।
এই নিয়মের ঊর্ধ্বে অর্জুন নন। তিনিই এই দিব্যাস্ত্রপ্রয়োগের যোগ্য, অন্য কেউ নন। ত্বয়া প্রাপ্তমিদং বীর! দিব্যং নান্যোঽর্হতি ত্বিদম্ এই নির্দেশ পালন করতে হবে অর্জুনকে। আচার্য দ্রোণের এই নির্দেশের প্রত্যক্ষ শ্রোতা জ্ঞাতিবর্গকে, দক্ষিণাদানের জন্য আদেশ দিলেন গুরু দ্রোণাচার্য। শ্রদ্ধাবনত অর্জুন প্রতিজ্ঞা করলেন, দদানীতি দেব। গুরু দ্রোণাচার্য তাঁর নিজের প্রতিশ্রুত গুরুদক্ষিণা ঘোষণা করলেন। যুদ্ধেঽহং প্রতিযোদ্ধব্যো যুধ্যমানস্ত্বয়াঽনঘ! আমি যুদ্ধে অংশ নিলে তুমি আমার সঙ্গে যুদ্ধ করবে। অর্জুন তথেতি তাই হবে, সম্মতিরূপ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে উত্তরদেশ জয়ের লক্ষ্যে প্রস্থান করলেন। লোকের মুখে অর্জুনপ্রশংসা প্রবাদে পরিণত হল, জগতে অর্জুন তুল্য তীরন্দাজ কেউ নেই। অর্জুনস্য সমো লোকে নাস্তি কশ্চিদ্ধনুর্দ্ধরঃ অর্জুন গদাযুদ্ধ, অসিযুদ্ধ, রথযুদ্ধ এবং ধনুর্যুদ্ধ, সব যুদ্ধেই পারদর্শিতা অর্জন করলেন। পাণ্ডবদের আরও একজন ভাই সহদেব। তিনি শ্রেষ্ঠ শাস্ত্রবিদ, শুক্রাচার্য এবং বৃহস্পতির কাছে নীতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করে নীতিশাস্ত্রবিদ হয়ে উঠলেন। কিন্তু ভাইদের সর্বদাই আজ্ঞানুবর্তী রইলেন। প্রিয়, কনিষ্ঠ, বিনয়ী, নকুল গুরু দ্রোণাচার্যের প্রশিক্ষণে চিত্রযোধী নামে বিখ্যাত হলেন এবং অতিরথরূপে গণ্য হলেন।
পিতা পাণ্ডুর দ্বারা অপরাজিত, সুমিত্র নামে যিনি পরিচিত, সেই সৌবীররাজ, যিনি শত্রু নিধন অথবা জীবনপণ —এই দুটি বাজি রেখে যুদ্ধ করেন, তাঁকে অর্জুন শরাঘাতে পরাজিত করলেন। অপ্রতিরোধ্য অর্জুন, শুধুমাত্র ভীমসেনের সহায়তায় পূর্বদেশীয় রাজাদের দশহাজার রথারোহী যোদ্ধাকে পরাভূত করলেন। এ ভাবে দক্ষিণদিকও জয় করলেন অর্জুন। প্রচুর শত্রুধন আহরণ করে নিয়ে এলেন তিনি। পঞ্চপাণ্ডব কুরুরাজ্যের সীমানা প্রসারিত করলেন। তাঁদের শক্তিমত্তা দেখে ঈর্ষান্বিত হলেন জ্যেষ্ঠপিতা ধৃতরাষ্ট্র। দুশ্চিন্তা তাঁর রাতের ঘুম কেড়ে নিল। বিনিদ্ররজনীযাপন এখন উদ্বিগ্ন ধৃতরাষ্ট্রের নিত্যসঙ্গী।পাণ্ডবদের অভ্যুদয়ের বৃত্তান্ত শুনে তিনি অস্বস্তি অনুভব করলেন। কি ভয়ানক বীরত্বের প্রকাশ পাণ্ডুপুত্রদের। পঞ্চপাণ্ডবের প্রবাদপ্রতিম অভ্যুদয়ের বৃত্তান্ত শুনে,কুরুরাজ ধৃতরাষ্ট্র, মন্ত্রী নীতিবিদ কণিককে ডেকে পাঠালেন। উৎসক্তাঃ পাণ্ডবা নিত্যং তেভ্যোঽসূয়ে দ্বিজোত্তমে!। তত্র মে নিশ্চিততমং সন্ধিবিগ্রহকারণম্। কণিক! ত্বং সমাচক্ষ্ব করিষ্যে বচনং তব।। পাণ্ডবদের শৌর্য সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। সেই কারণে আমার মনে অসূয়া (গুণের মধ্যেও দোষ আবিষ্কারের প্রবণতা) বোধ করছি। পাণ্ডবদের সঙ্গে সন্ধি অর্থাৎ মিত্রতা এবং বিগ্রহ অর্থাৎ বিরোধিতার কারণ আছে। এ বিষয়ে কর্তব্য বিষয়ে আপনি বলুন। আপনার নির্দেশ অনুসারে চলব। নীতিবিদ, কণিক তীক্ষ্ণবাক্যে রাজাকে পরামর্শ দিলেন। তিনি যা বলবেন তাতে ধৃতরাষ্ট্র যেন অসূয়া বোধ না করেন অর্থাৎ সেই হিতকর, সত্যবচনে, ধৃতরাষ্ট্র যেন দোষ খুঁজতে না যান।
রাজা সৈন্যবল দ্বারা দমননীতি অর্থাৎ দণ্ডনীতির প্রয়োগে শত্রুর মোকাবিলায় তৎপর থাকবেন। তিনি হস্তী,অশ্ব,রথ ও পদাতিক সৈন্যবলরূপ বাহিনীকে প্রচ্ছন্ন রাখবেন। নিজের বিবর অর্থাৎ ত্রুটি গোপন রাখবেন। রাজার লক্ষ্য হল, কর্তব্যবিষয়ে নিষ্পত্তি। তা থেকে তিনি বিরত হবেন না। কারণ শরীরে কাঁটা বিঁধলে তা অল্প কেটে ফেললেও স্থায়ী ব্রণের সৃষ্টি করে থাকে। কণিকের পরামর্শ—শত্রু শৌর্যশালী হলে তো বটেই এমনকি দুর্বল হলেও তাকে অবজ্ঞা করা যাবে না।
রাজনীতির চারটি উপায় সাম,দান দণ্ড ও ভেদনীতি প্রয়োগ করে, বশীভূত শত্রুকে নাশ করবেন। শত্রুর শেষ রাখতে নেই। তাই কণিকের মত হল, দুর্বল শত্রু শরণাপন্ন হলেও তার প্রতি দয়া নয়।তাকে হত্যা করাই উচিত। কারণ নিহত শত্রু হতে কোন ভয় থাকবেনা।ফলে রাজা নিরুদ্বেগ থাকবেন। সাম ও দাননীতির প্রয়োগের মাধ্যমে প্রবল ও সহজ শত্রুকে পরাজিত করবেন রাজা। কণিকের মতে, বিপক্ষের মূল উচ্ছেদ করলেই জয় নিশ্চিত। কারণ তার ফলে যেমন গাছের আশ্রিত যারা সকলেই হত ও বিনষ্ট হয় তেমনটাই ঘটে থাকে শত্রুর মূলোচ্ছেদে। জটাজুট ও কাষায়বস্ত্রধারী যজ্ঞকারী ব্যক্তি যেমন মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে নেকড়ের মতো ঝাপিয়ে পরে তেমনই শত্রুবধের জন্য রাজা দ্বিচারিতার ছদ্মবেশ ধারণ করে শত্রুকে ধ্বংস করবেন। রাজার পক্ষে সাধুব্যক্তির ছদ্মবেশ ধারণ করাই শ্রেয়।
রাজা সৈন্যবল দ্বারা দমননীতি অর্থাৎ দণ্ডনীতির প্রয়োগে শত্রুর মোকাবিলায় তৎপর থাকবেন। তিনি হস্তী,অশ্ব,রথ ও পদাতিক সৈন্যবলরূপ বাহিনীকে প্রচ্ছন্ন রাখবেন। নিজের বিবর অর্থাৎ ত্রুটি গোপন রাখবেন। রাজার লক্ষ্য হল, কর্তব্যবিষয়ে নিষ্পত্তি। তা থেকে তিনি বিরত হবেন না। কারণ শরীরে কাঁটা বিঁধলে তা অল্প কেটে ফেললেও স্থায়ী ব্রণের সৃষ্টি করে থাকে। কণিকের পরামর্শ—শত্রু শৌর্যশালী হলে তো বটেই এমনকি দুর্বল হলেও তাকে অবজ্ঞা করা যাবে না।
রাজনীতির চারটি উপায় সাম,দান দণ্ড ও ভেদনীতি প্রয়োগ করে, বশীভূত শত্রুকে নাশ করবেন। শত্রুর শেষ রাখতে নেই। তাই কণিকের মত হল, দুর্বল শত্রু শরণাপন্ন হলেও তার প্রতি দয়া নয়।তাকে হত্যা করাই উচিত। কারণ নিহত শত্রু হতে কোন ভয় থাকবেনা।ফলে রাজা নিরুদ্বেগ থাকবেন। সাম ও দাননীতির প্রয়োগের মাধ্যমে প্রবল ও সহজ শত্রুকে পরাজিত করবেন রাজা। কণিকের মতে, বিপক্ষের মূল উচ্ছেদ করলেই জয় নিশ্চিত। কারণ তার ফলে যেমন গাছের আশ্রিত যারা সকলেই হত ও বিনষ্ট হয় তেমনটাই ঘটে থাকে শত্রুর মূলোচ্ছেদে। জটাজুট ও কাষায়বস্ত্রধারী যজ্ঞকারী ব্যক্তি যেমন মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে নেকড়ের মতো ঝাপিয়ে পরে তেমনই শত্রুবধের জন্য রাজা দ্বিচারিতার ছদ্মবেশ ধারণ করে শত্রুকে ধ্বংস করবেন। রাজার পক্ষে সাধুব্যক্তির ছদ্মবেশ ধারণ করাই শ্রেয়।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৩৬: রানি কৈকেয়ীর অযৌক্তিক প্রস্তাব—রাজা দশরথের বিষাদ কি রাজনীতির কোনও পাঠ?
কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১৪: একটু হোক-ফোক!
রাজনীতির সাম,দান,দণ্ড ও ভেদনীতিপ্রযোগের মাধ্যমে কীভাবে যথাযথ শত্রুনাশ সম্ভব? —নীতিবিদ,বিশ্বস্ত মন্ত্রী কণিককে প্রশ্ন করে,জানতে চাইলেন কুরুপ্রধান ধৃতরাষ্ট্র।
মন্ত্রী কণিক, একটি গল্পের অবতারণা করলেন। এক বনে নীতিনিষ্ঠ একটি বাঘ,একটি ইঁদুর,এক নেকড়ে ও একটি বেজি সখ্যতাসূত্রে একত্রে বাস করত। একদা সেখানে হাজির হল স্বার্থপর, ধুরন্ধর এক শৃগাল। একটি বিরাট বলিষ্ঠ হরিণকে দেখতে পেয়ে চার বন্ধু তাকে ভোজ্যহিসেবে কিভাবে ধরাশায়ী করা যায়—সে বিষয়ে পরামর্শ করল। স্থির হল, ঘুমন্ত হরিণটির চারটি পায়ে ইঁদুর কামড় দিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করুক তারপর যেই হরিণটি ছুটে পালাতে পারবেনা তখন বাঘ তাকে ঘায়েল করতে পারবে।এর আগেও হরিণকে অনুসরণ করে, ছুটে ছুটেও সে ধরতে পারেনি। তারপরে সকলে মিলে হরিণের মাংস খাওয়া যাবে। পরামর্শটি ছিল শৃগালের। শৃগালের কথামতো চার বন্ধু, হরিণটিকে হত্যা করতে সক্ষম হল। শৃগাল দেখল যে, কাজ শেষ। সে বলল, স্নাত্বাগচ্ছত ভদ্রং বো রক্ষামীত্যাহ জম্বুকঃ। যাও। স্নান করে এসো আমি ততক্ষণ মৃত হরিণটির পাহারায় রই। প্রথমে স্নান সেরে ফিরল বাঘ। শৃগাল, গভীর চিন্তার ভাণ করল। বাঘ,তার চিন্তার কারণ জানতে চাইল? শৃগাল বলল, ইঁদুর বলেছে, সে একাই হরিণটিকে মেরেছে। ধিক্কার দিই ওই পশুশ্রেষ্ঠ বাঘকে। ধিগ্ বলং মৃগরাজস্য ময়াঽদ্যায়ং মৃগো হতঃ। ওই অহংকারী, গর্জনরত বাঘই ওই মাংস ভোজন করুন। ওই মাংস আমার রুচবে না। গর্জ্জমানস্য তস্যৈবমতো ভক্ষ্যং ন রোচয়ে বাঘের আত্মসম্মানে আঘাত লাগল। সে চলল অন্য পশুশিকারে। সেই মাংস দিয়েই সে ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করবে স্থির করল। এরপরে হাজির হল ইঁদুর। তাকে ধূর্ত, শৃগাল বলল— বেজি বলেছে, বাঘের উচ্ছিষ্ট বিষবৎ মাংস, সে খাবে না বরং ইঁদুরকে মেরে খেয়ে ফেললে বেশ হয়,আপনি অনুমতি দিন। মৃগমাংসং ন খাদেয়ং গরমেতন্ন রোচতে। মূষিকং ভক্ষয়িষ্যামি তদ্ভবাননুমন্যতাম্।। ভীত, ত্রস্ত ইঁদুরটি পালিয়ে গর্তে আশ্রয় নিল।
এরপর উপস্থিত নেকড়েটিকে শৃগাল বলল,পশুরাজ বাঘ তোমার উপর রেগে আগুন। সস্ত্রীক আসছেন তিনি। তোমার পক্ষে সেটি মোটেই ভাল হবে না। নেকড়ে, লম্বা লম্বা লাফ দিয়ে সত্বর বিদায় নিল। এরপর উপস্থিত হল বেজি। তাকে শৃগালটি বলল, আমি বাহুবলে তোমার বন্ধুদের জয় করেছি। তারা পালিয়েছে। তাহলে এস, আমার সঙ্গে একহাত যুদ্ধ হয়ে যাক। তারপরে মৃত হরিণটিকে গ্রহণ করে, ভোজন কর, তুমি। বেজি রণে ভঙ্গ দিয়ে,স্বীকার করল, বাঘ, ইঁদুর, নেকড়ে, এদের হারিয়েছে যে শৃগাল, সে মহাবীরই বটে। কাজেই এই অসমযুদ্ধে তিনি রাজি নন। মানে মানে সরে পরল বেজী। শৃগাল, একাই সেই হরিণের মাংস ভক্ষণ করল। কণিক কাহিনিটি বলে শৃগালের এই নীতি প্রশংসা করে বললেন রাজার নীতি হবে, ঠিক এইরকম। রাজা ভয় দেখিয়ে ভীরুকে, জোড়হাতে প্রবলকে,বলসম্পন্ন লোভীকে অর্থের প্রলোভনে ভুলিয়ে, তেজ প্রকাশ করে দুর্বলকে শান্ত করবেন।এমনটাই হবে রাজনীতি।
মন্ত্রী কণিক, একটি গল্পের অবতারণা করলেন। এক বনে নীতিনিষ্ঠ একটি বাঘ,একটি ইঁদুর,এক নেকড়ে ও একটি বেজি সখ্যতাসূত্রে একত্রে বাস করত। একদা সেখানে হাজির হল স্বার্থপর, ধুরন্ধর এক শৃগাল। একটি বিরাট বলিষ্ঠ হরিণকে দেখতে পেয়ে চার বন্ধু তাকে ভোজ্যহিসেবে কিভাবে ধরাশায়ী করা যায়—সে বিষয়ে পরামর্শ করল। স্থির হল, ঘুমন্ত হরিণটির চারটি পায়ে ইঁদুর কামড় দিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করুক তারপর যেই হরিণটি ছুটে পালাতে পারবেনা তখন বাঘ তাকে ঘায়েল করতে পারবে।এর আগেও হরিণকে অনুসরণ করে, ছুটে ছুটেও সে ধরতে পারেনি। তারপরে সকলে মিলে হরিণের মাংস খাওয়া যাবে। পরামর্শটি ছিল শৃগালের। শৃগালের কথামতো চার বন্ধু, হরিণটিকে হত্যা করতে সক্ষম হল। শৃগাল দেখল যে, কাজ শেষ। সে বলল, স্নাত্বাগচ্ছত ভদ্রং বো রক্ষামীত্যাহ জম্বুকঃ। যাও। স্নান করে এসো আমি ততক্ষণ মৃত হরিণটির পাহারায় রই। প্রথমে স্নান সেরে ফিরল বাঘ। শৃগাল, গভীর চিন্তার ভাণ করল। বাঘ,তার চিন্তার কারণ জানতে চাইল? শৃগাল বলল, ইঁদুর বলেছে, সে একাই হরিণটিকে মেরেছে। ধিক্কার দিই ওই পশুশ্রেষ্ঠ বাঘকে। ধিগ্ বলং মৃগরাজস্য ময়াঽদ্যায়ং মৃগো হতঃ। ওই অহংকারী, গর্জনরত বাঘই ওই মাংস ভোজন করুন। ওই মাংস আমার রুচবে না। গর্জ্জমানস্য তস্যৈবমতো ভক্ষ্যং ন রোচয়ে বাঘের আত্মসম্মানে আঘাত লাগল। সে চলল অন্য পশুশিকারে। সেই মাংস দিয়েই সে ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করবে স্থির করল। এরপরে হাজির হল ইঁদুর। তাকে ধূর্ত, শৃগাল বলল— বেজি বলেছে, বাঘের উচ্ছিষ্ট বিষবৎ মাংস, সে খাবে না বরং ইঁদুরকে মেরে খেয়ে ফেললে বেশ হয়,আপনি অনুমতি দিন। মৃগমাংসং ন খাদেয়ং গরমেতন্ন রোচতে। মূষিকং ভক্ষয়িষ্যামি তদ্ভবাননুমন্যতাম্।। ভীত, ত্রস্ত ইঁদুরটি পালিয়ে গর্তে আশ্রয় নিল।
এরপর উপস্থিত নেকড়েটিকে শৃগাল বলল,পশুরাজ বাঘ তোমার উপর রেগে আগুন। সস্ত্রীক আসছেন তিনি। তোমার পক্ষে সেটি মোটেই ভাল হবে না। নেকড়ে, লম্বা লম্বা লাফ দিয়ে সত্বর বিদায় নিল। এরপর উপস্থিত হল বেজি। তাকে শৃগালটি বলল, আমি বাহুবলে তোমার বন্ধুদের জয় করেছি। তারা পালিয়েছে। তাহলে এস, আমার সঙ্গে একহাত যুদ্ধ হয়ে যাক। তারপরে মৃত হরিণটিকে গ্রহণ করে, ভোজন কর, তুমি। বেজি রণে ভঙ্গ দিয়ে,স্বীকার করল, বাঘ, ইঁদুর, নেকড়ে, এদের হারিয়েছে যে শৃগাল, সে মহাবীরই বটে। কাজেই এই অসমযুদ্ধে তিনি রাজি নন। মানে মানে সরে পরল বেজী। শৃগাল, একাই সেই হরিণের মাংস ভক্ষণ করল। কণিক কাহিনিটি বলে শৃগালের এই নীতি প্রশংসা করে বললেন রাজার নীতি হবে, ঠিক এইরকম। রাজা ভয় দেখিয়ে ভীরুকে, জোড়হাতে প্রবলকে,বলসম্পন্ন লোভীকে অর্থের প্রলোভনে ভুলিয়ে, তেজ প্রকাশ করে দুর্বলকে শান্ত করবেন।এমনটাই হবে রাজনীতি।
কণিক, রাজনীতি গভীর ব্যাখ্যা করে বলে চললেন।যে ব্যক্তিরা জীবনে উন্নতির শিখরে পৌঁছতে চান তাঁরা পুত্র, মিত্র, ভ্রাতা, পিতা এমন কি গুরুও যদি শত্রুভাবাপন্ন হন তাহলে নির্দ্বিধায় তাঁদের হত্যা করে থাকেন। এমনকি বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিদান, ধনদান, বিষ প্রয়োগ এবং যে কোনও কূট কৌশল প্রয়োগেও তাঁরা শত্রুকে ধ্বংস করে থাকেন। মন্ত্রী কণিকের মতে, গুরু যদি বৃথা গর্ব করেন, কিংবা নিজের ইতিকর্তব্যতা সম্বন্ধে অবহিত না থাকেন অথবা কুপথে প্রবৃত্ত হন, তবে তিনিও শাসনযোগ্য। মনে মনে ক্রদ্ধ হলেও বাইরে সেই ক্রোধ প্রকাশ না করাই ভাল। হাসিমুখে বাক্যালাপে রত থাকাই কর্তব্য, মানহানিকর কোন তিরস্কার সমীচিন নয়। অন্যকে প্রহার করতে উদ্যত হয়েও কিংবা অন্যকে প্রহার করার সময়ও সর্বদাই প্রিয়বাক্য প্রয়োগ, প্রহারান্তে দয়াপ্রদর্শন বিধেয়।সাম,দান ও সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে রাজা শত্রুকে আশ্বস্ত করবেন। তারপরে শত্রু যখন অসহায় অবস্থায় থাকবে তখন তাকে আঘাত করাই কাজ।
বধযোগ্য কিন্তু ধার্মিক, এমন শত্রু অপরাধ করেও যদি ধর্মকে আশ্রয় করে থাকেন তবে,তবে তাকে বধ না করে তার বাড়ি আগুনে দগ্ধ করবেন আর অধার্মিক, নাস্তিক এবং চোরকে রাজা রাজ্য থেকে নির্বাসিত করবেন। শত্রুর ক্ষেত্রে রাজার নীতি হল জলমগ্ন কুমিরের মতো, হঠাৎ আক্রমণ করে তাকে হত্যা করা। শত্রুর প্রতি সৌজন্য প্রকাশ, উপহার দান এগুলোর দ্বারা তাঁর বিশ্বাস উৎপাদন করবেন তারপর তাঁকে নিধন করবেন। যাঁদের থেকে বিপদের আশঙ্কা তাঁদের সন্দেহভাজন তালিকায় রাখবেন। আর যাঁদের থেকে ভীষণভাবে শঙ্কিত তাঁদেরকে সব বিষয়ে সন্দেহ করবেন। কারণ যাঁরা সন্দেহের ঊর্ধ্বে তাঁরা যদি ভয়ের কারণ হন সেই কারণ রাজার ভিত্তিমূল পর্যন্ত ছিন্ন করতে পারে।অবিশ্বাসী লোক, রাজার বিশ্বাসভাজন নন। বিশ্বাসী লোককেও রাজা গভীরভাবে বিশ্বাস করবেন না। কারণ বিশ্বাস থেকে যদি ভয় উৎপন্ন হয় সেই ভয় মূলও ছেদন করতে সক্ষম। রাজা স্বরাজ্যে এবং পররাজ্যে, দক্ষ, সুপরীক্ষিত গুপ্তচর নিয়োগ করবেন। গুপ্তচরেদের মধ্যে পররাজ্যে পাষণ্ড অর্থাৎ ছদ্ম গেরুয়াধারী, তপস্বী প্রভৃতি প্রধান চরতালিকাভুক্ত হবেন।
বধযোগ্য কিন্তু ধার্মিক, এমন শত্রু অপরাধ করেও যদি ধর্মকে আশ্রয় করে থাকেন তবে,তবে তাকে বধ না করে তার বাড়ি আগুনে দগ্ধ করবেন আর অধার্মিক, নাস্তিক এবং চোরকে রাজা রাজ্য থেকে নির্বাসিত করবেন। শত্রুর ক্ষেত্রে রাজার নীতি হল জলমগ্ন কুমিরের মতো, হঠাৎ আক্রমণ করে তাকে হত্যা করা। শত্রুর প্রতি সৌজন্য প্রকাশ, উপহার দান এগুলোর দ্বারা তাঁর বিশ্বাস উৎপাদন করবেন তারপর তাঁকে নিধন করবেন। যাঁদের থেকে বিপদের আশঙ্কা তাঁদের সন্দেহভাজন তালিকায় রাখবেন। আর যাঁদের থেকে ভীষণভাবে শঙ্কিত তাঁদেরকে সব বিষয়ে সন্দেহ করবেন। কারণ যাঁরা সন্দেহের ঊর্ধ্বে তাঁরা যদি ভয়ের কারণ হন সেই কারণ রাজার ভিত্তিমূল পর্যন্ত ছিন্ন করতে পারে।অবিশ্বাসী লোক, রাজার বিশ্বাসভাজন নন। বিশ্বাসী লোককেও রাজা গভীরভাবে বিশ্বাস করবেন না। কারণ বিশ্বাস থেকে যদি ভয় উৎপন্ন হয় সেই ভয় মূলও ছেদন করতে সক্ষম। রাজা স্বরাজ্যে এবং পররাজ্যে, দক্ষ, সুপরীক্ষিত গুপ্তচর নিয়োগ করবেন। গুপ্তচরেদের মধ্যে পররাজ্যে পাষণ্ড অর্থাৎ ছদ্ম গেরুয়াধারী, তপস্বী প্রভৃতি প্রধান চরতালিকাভুক্ত হবেন।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২২: সুন্দরবনে গোয়াল পুজো আর ‘ধা রে মশা ধা’
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
এ ছাড়াও উপবন, বৌদ্ধমঠ, দেবালয় সূরীখানা, রাস্তা, তীর্থস্থান, বাড়ির আঙিনা, কুয়ো অর্থাৎ জলাধার, পাহাড়, বন, সবরকম জমায়েতের স্থান অর্থাৎ সভা এবং নদীর তীরে সব জায়গায় রাজা চর নিয়োগ করবেন। সর্বদাই কোন ব্যক্তি ভয়ানক কাজ করতে প্রবৃত্ত হলেও মুখে মৌখিক বিনয় প্রকাশ করবেন। তার মনটি হবে ক্ষুরের মতো শানিত। তিনি সর্বদাই মুখে মৃদু হাসিটি বজায় রাখবেন।হাতজোড় করে কথা বলা, শপথ বাক্য উচ্চারণ করা, মধুর স্বরে কথা বলা এবং মাথা নত করে চরণ স্পর্শ করা এবং আশা প্রদর্শন করা— যাঁরা জীবনে উন্নতি করতে অভ্যস্ত, এগুলি তাঁদের বৈশিষ্ট্য।তাঁরা ফুল দেখান কিন্তু ফল দান করেন না। ফল দিলেও তা নাগালের বাইরের সে ফল বা কাঁচা হয়েও পাকার মতো দেখতে যে ফল, সেই ফল দেবেন। নিজে কখনও জরাগ্রস্তের মতো হবেন না।
ধর্ম, অর্থ, কাম তিনটির অনুষ্ঠান একত্রে করলে তা একে অপরের বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে তাই রাজা পৃথক পৃথকভাবে প্রত্যেকটির অনুষ্ঠান করবেন। রাজা নিরহঙ্কারী হয়ে, মনোযোগী ও সুমধুরভাষী হয়ে পরের দোষ প্রকাশ করবেন না। সব বিষয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা করে পূতচিত্তে শুধু দ্বিজাতিদের সঙ্গে মন্ত্রণা করবেন। রাজা কোমল বা ভীষণ যে কোনও কাজের মাধ্যমে প্রথমে দুর্দশা থেকে নিজেকে উদ্ধার করবেন।পরে সমর্থ হয়ে পরে ধর্মাচরণ করবেন।সংশয় না থাকলে মানুষ জীবনে উন্নতি করতে পারে না। সংশয়গ্রস্ত হয়েও যদি বেঁচে থাকা যায় তাহলে হয়তো হিতসাধন সম্ভব। যিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ়,তাঁকে অতীতের দৃষ্টান্ত মনে করিয়ে দিয়ে শান্ত করাই মানবিক গুণ।
ধর্ম, অর্থ, কাম তিনটির অনুষ্ঠান একত্রে করলে তা একে অপরের বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে তাই রাজা পৃথক পৃথকভাবে প্রত্যেকটির অনুষ্ঠান করবেন। রাজা নিরহঙ্কারী হয়ে, মনোযোগী ও সুমধুরভাষী হয়ে পরের দোষ প্রকাশ করবেন না। সব বিষয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা করে পূতচিত্তে শুধু দ্বিজাতিদের সঙ্গে মন্ত্রণা করবেন। রাজা কোমল বা ভীষণ যে কোনও কাজের মাধ্যমে প্রথমে দুর্দশা থেকে নিজেকে উদ্ধার করবেন।পরে সমর্থ হয়ে পরে ধর্মাচরণ করবেন।সংশয় না থাকলে মানুষ জীবনে উন্নতি করতে পারে না। সংশয়গ্রস্ত হয়েও যদি বেঁচে থাকা যায় তাহলে হয়তো হিতসাধন সম্ভব। যিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ়,তাঁকে অতীতের দৃষ্টান্ত মনে করিয়ে দিয়ে শান্ত করাই মানবিক গুণ।
ভবিষ্যতের আশা দিয়ে নির্বোধকে এবং বর্তমানের কৌশল প্রদর্শন করে বুদ্ধিমানকে শান্ত করাই উচিত কর্তব্য। যে মানুষ, শত্রুর সঙ্গে সন্ধি করে সফল হয়ে নিরুদ্বেগে দিন কাটায় তার দশা ঠিক গাছের মগডালে যে ঘুমিয়ে পড়ে এবং আঘাত পেয়ে জেগে ওঠে এমন ব্যক্তির মতো, যিনি শত্রুর দ্বারা নির্যাতিত হয়ে নিজের ত্রুটি সম্বন্ধে অবহিত হন।রাজা সর্বদাই মন্ত্রণা গোপন রাখাবার চেষ্টা করবেন। গুপ্তচরের সম্মুখেও ইঙ্গিত আকার গোপন রাখবেন। শারীরিক প্রচেষ্টা ও দৈহিক অভিব্যক্তি গোপন করবেন। বুদ্ধিমান ব্যক্তি রাত্রিতে,ভৃত্যদের দ্বারা পরিচর্যারত অবস্থায়, অট্টালিকার উপরে, পর্বতের উপরে অথবা বিস্তৃত নির্জন স্থানে বসে চারিদিকে যাঁদের সতর্ক দৃষ্টি এমন বিশ্বস্ত লোকেদের সঙ্গেই শুধু মন্ত্রণা করবেন। মন্ত্রণার স্থানে যেন কোন পাখী, বালক, মূর্খ, বিকলাঙ্গ লোক, উপস্থিত না থাকে।
ঐতিহাসিক, ধার্মিক, নীতিশাস্ত্রজ্ঞ, শাস্ত্রবিদ দ্বিজাতিগণের সঙ্গে রাজা মন্ত্রণা করবে। মন্ত্রণার পরে সাবধানে মন্ত্রণা গোপন রাখবেন এবং মন্ত্রণার পরে তিনি নিজের কর্তব্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিনা অপরাধে বিশাল সম্পদ লাভ করা যেমন সহজ নয় তেমনই রাজাও অন্যের ক্ষতি না করে নিদারুণ কার্য সম্পন্ন না করে কোন কাজে সফল হতে পারেন না। বিপন্ন শত্রুসৈন্যকে রাজা প্রহারে বিধ্বস্ত করবেন। ভয় না পেয়ে নির্ভীকভাবে বিরুদ্ধাচরণকারীদের দমন করবেন। তিনি শত্রুকে ক্ষতিগ্রস্ত করেও আবার তার প্রতি যদি অনুগ্রহ করেন সেই শত্রুর সংসর্গ যেন মৃত্যুর আলিঙ্গনস্বরূপ। ক্ষুদ্র হলেও শত্রু উপেক্ষনীয় নয় তাকে উপেক্ষা করলে সে পরে ঠিক তালগাছের মতো দৃঢ়মূল হতে পারেন এবং বনের ছিটকে পরা আগুনের মতো তিনি দাবানলের মতো বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারেন। নিজেকে গুপ্ত রাখেন যিনি, যিনি, যথাকালে শত্রুর সংহার করেন,যথোচিত সময়ের অপেক্ষায় থাকেন যিনি, সর্বদাই চর্মকোষাবৃত অসির মতো নিজেকে গুপ্ত রাখেন, সর্বদাই সহায়ক সংগ্রহে রাখেন যিনি, তিনিই, নিষ্ঠুরতায় ছেদনে কুশল, তীক্ষ্ণ ক্ষুরের মতো, শত্রুনিধনে সমর্থ রাজা।
ঐতিহাসিক, ধার্মিক, নীতিশাস্ত্রজ্ঞ, শাস্ত্রবিদ দ্বিজাতিগণের সঙ্গে রাজা মন্ত্রণা করবে। মন্ত্রণার পরে সাবধানে মন্ত্রণা গোপন রাখবেন এবং মন্ত্রণার পরে তিনি নিজের কর্তব্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিনা অপরাধে বিশাল সম্পদ লাভ করা যেমন সহজ নয় তেমনই রাজাও অন্যের ক্ষতি না করে নিদারুণ কার্য সম্পন্ন না করে কোন কাজে সফল হতে পারেন না। বিপন্ন শত্রুসৈন্যকে রাজা প্রহারে বিধ্বস্ত করবেন। ভয় না পেয়ে নির্ভীকভাবে বিরুদ্ধাচরণকারীদের দমন করবেন। তিনি শত্রুকে ক্ষতিগ্রস্ত করেও আবার তার প্রতি যদি অনুগ্রহ করেন সেই শত্রুর সংসর্গ যেন মৃত্যুর আলিঙ্গনস্বরূপ। ক্ষুদ্র হলেও শত্রু উপেক্ষনীয় নয় তাকে উপেক্ষা করলে সে পরে ঠিক তালগাছের মতো দৃঢ়মূল হতে পারেন এবং বনের ছিটকে পরা আগুনের মতো তিনি দাবানলের মতো বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারেন। নিজেকে গুপ্ত রাখেন যিনি, যিনি, যথাকালে শত্রুর সংহার করেন,যথোচিত সময়ের অপেক্ষায় থাকেন যিনি, সর্বদাই চর্মকোষাবৃত অসির মতো নিজেকে গুপ্ত রাখেন, সর্বদাই সহায়ক সংগ্রহে রাখেন যিনি, তিনিই, নিষ্ঠুরতায় ছেদনে কুশল, তীক্ষ্ণ ক্ষুরের মতো, শত্রুনিধনে সমর্থ রাজা।
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৩: অকালে খেয়েছ কচু, মনে রেখো কিছু কিছু
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৩৯: ভালোবাসার ভোরে…
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
মন্ত্রী কণিক ধৃতরাষ্ট্রকে উপদেশ দিলেন, এই নীতি অনুসরণ করে যদি ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডব বা অন্যের সঙ্গে চলেন তাহলে অন্তত ডুবে যাবেন না। সুতরাং সেভাবেই তিনি যেন কাজ করেন। সর্ব্বকল্যাণসম্পন্নো বিশিষ্ট ইতি নিশ্চয়ঃ। তস্মাত্ত্বং পাণ্ডুপুত্রেভ্যো রক্ষাত্মানং নরাধিপ!।। ধৃতরাষ্ট্র সববিষয়ে কল্যাণকামী এবং তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, এটি নিশ্চিত সত্য। অতএব পাণ্ডব পুত্রদের কাছ থেকে তিনি আত্মরক্ষা করুন। এটিই মন্ত্রীর পরামর্শ। পাণ্ডবেরা, ধৃতরাষ্ট্রপুত্র দুর্যোধনের থেকেও শৌর্যশালী। তাই মন্ত্রী কণিকের স্পষ্ট কথা হল, এ অবস্থায় কর্তব্যনির্দেশ।কণিক বললেন, পাণ্ডবরা যেন ভয়ের কারণ না হন, আপনি পুত্রদের সঙ্গে মিলিত হয়ে সেই কাজই করুন। স পুত্রঃ শৃণু তদ্রাজন্! শ্রুত্বা চ ভব যত্নবান্। যথা ভয়ং ন পাণ্ডুভ্যস্তথা কুরু নরাধিপ!।। শেষে যেন অনুতাপ না হয় সেই রকম কৌশল অবলম্বন করুন। পশ্চাত্তাপো তথা ন স্যাত্তথা নীতির্বিধীয়তাম্।। এই কথা বলে কণিক প্রস্থান করলেন এবং ধৃতরাষ্ট্র মনে মনে উদ্বিগ্ন শঙ্কিত এবং শোকার্ত হয়ে শকুনি, দুর্যোধন, দুঃশাসন, ও কর্ণ এই দুষ্ট ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে অশুভ মন্ত্রণায় ব্রতী হলেন।
ঈর্ষা ষড়রিপুর অন্যতম এবং অষ্টাদশ ব্যসনের মধ্যে অন্যতম। ব্যসন অর্থ অবক্ষয় বা পতন। ব্যসনাসক্তি রাজাকে অধঃপতিত করে। ক্রোধজ অর্থাৎ ক্রোধ থেকে জাত পতন বা ব্যসনের ফল এই ঈর্ষা, যা কুরুরাজ ধৃতরাষ্ট্রকে অধঃপতিত করেছিল। যোগ্য উত্তরসূরীর প্রতি ঈর্ষা অনুভব করে অশুভচিন্তাকে আবাহন করে এনেছেন তিনি নিজের জীবনে। কুরুরাজ্যের সমৃদ্ধিতে সার্বিক উন্নতি— এই উদারচিন্তা তাঁর মনে স্থান পায়নি। পুত্রতুল্য ভ্রাতুষ্পুত্রদের প্রতি অসূয়া অনুভব করে রাজনীতির নতুন পাঠ নিয়েছেন মন্ত্রী কণিকের কাছে। মন্ত্রী কণিক যে একজন ধুরন্ধর রাজনীতিজ্ঞ, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তিনি সাম, দান, দণ্ড ও ভেদনীতির সম্বন্ধে যে জ্ঞান দান করেছেন সেটি একজন রাজার রাজ্যশাসনে আবশ্যক। কিন্তু একজন রাজা, প্রতিদ্বন্দ্বী বিপক্ষকল্পনা করে ছায়াযুদ্ধ করতে চাইছেন যে শুভাকাঙ্খীদের সঙ্গে, তাঁরা কী আদৌ বিরোধীপক্ষ? তাহলে ধৃতরাষ্ট্রের রাজ্যের সীমা বিস্তারে আগ্রহী কেন তাঁরা? মন্ত্রী কণিক যে গল্পটির অবতারণা করেছেন, তার বিষয়বস্তু ভেদনীতিপ্রধান। বিভেদসৃষ্টির নীতিই গল্পটিতে প্রাধান্য পেয়েছে। এই কাহিনি প্রভাবিত করেছে কুরুমুখ্য ধৃতরাষ্ট্রকে। তিনি কৌরব ও পাণ্ডবকুমারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়েছেন। সামনীতি বা সন্ধির উদ্যোগ অবহেলিত হয়েছে। দান নয়, দমন অর্থাৎ দণ্ডনীতি এর পরবর্তী পর্যায়ে কার্যকরী হয়েছে। ভারতযুদ্ধ যার আত্মক্ষয়ী পরিণাম। আবহমান ভারতীয় রাজনীতিতে বিভেদ বা বিচ্ছিন্নতাই প্রধান হয়েছে যুগান্তরেও। ধৃতরাষ্ট্রের বিভেদকামী মনোভাব কী ভারতচিন্তাকে প্রভাবিত করেনি? —চলবে।
ঈর্ষা ষড়রিপুর অন্যতম এবং অষ্টাদশ ব্যসনের মধ্যে অন্যতম। ব্যসন অর্থ অবক্ষয় বা পতন। ব্যসনাসক্তি রাজাকে অধঃপতিত করে। ক্রোধজ অর্থাৎ ক্রোধ থেকে জাত পতন বা ব্যসনের ফল এই ঈর্ষা, যা কুরুরাজ ধৃতরাষ্ট্রকে অধঃপতিত করেছিল। যোগ্য উত্তরসূরীর প্রতি ঈর্ষা অনুভব করে অশুভচিন্তাকে আবাহন করে এনেছেন তিনি নিজের জীবনে। কুরুরাজ্যের সমৃদ্ধিতে সার্বিক উন্নতি— এই উদারচিন্তা তাঁর মনে স্থান পায়নি। পুত্রতুল্য ভ্রাতুষ্পুত্রদের প্রতি অসূয়া অনুভব করে রাজনীতির নতুন পাঠ নিয়েছেন মন্ত্রী কণিকের কাছে। মন্ত্রী কণিক যে একজন ধুরন্ধর রাজনীতিজ্ঞ, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তিনি সাম, দান, দণ্ড ও ভেদনীতির সম্বন্ধে যে জ্ঞান দান করেছেন সেটি একজন রাজার রাজ্যশাসনে আবশ্যক। কিন্তু একজন রাজা, প্রতিদ্বন্দ্বী বিপক্ষকল্পনা করে ছায়াযুদ্ধ করতে চাইছেন যে শুভাকাঙ্খীদের সঙ্গে, তাঁরা কী আদৌ বিরোধীপক্ষ? তাহলে ধৃতরাষ্ট্রের রাজ্যের সীমা বিস্তারে আগ্রহী কেন তাঁরা? মন্ত্রী কণিক যে গল্পটির অবতারণা করেছেন, তার বিষয়বস্তু ভেদনীতিপ্রধান। বিভেদসৃষ্টির নীতিই গল্পটিতে প্রাধান্য পেয়েছে। এই কাহিনি প্রভাবিত করেছে কুরুমুখ্য ধৃতরাষ্ট্রকে। তিনি কৌরব ও পাণ্ডবকুমারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়েছেন। সামনীতি বা সন্ধির উদ্যোগ অবহেলিত হয়েছে। দান নয়, দমন অর্থাৎ দণ্ডনীতি এর পরবর্তী পর্যায়ে কার্যকরী হয়েছে। ভারতযুদ্ধ যার আত্মক্ষয়ী পরিণাম। আবহমান ভারতীয় রাজনীতিতে বিভেদ বা বিচ্ছিন্নতাই প্রধান হয়েছে যুগান্তরেও। ধৃতরাষ্ট্রের বিভেদকামী মনোভাব কী ভারতচিন্তাকে প্রভাবিত করেনি? —চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।