ছবি: প্রতীকী। ছবি: সংগৃহীত।
অরণ্যের যাত্রাপথে, ভরদ্বাজমুনির উপদেশানুসারে সীতা ও লক্ষ্মণ পৌঁছে গেলেন চিত্রকূট পর্বতে। মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও বসবাসের আদর্শ জায়গাটি ভারি পছন্দ হল রামের। সেখানে বসবাসের উদ্দেশ্যে কুটির নির্মিত হল।
সারথি সুমন্ত্র ও বন্ধু নিষাদরাজ গুহ, দু’জনেই ব্যথিত মনে সেখানে অবস্থানকালীন রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের প্রয়াগতীর্থে ভরদ্বাজমুনির আতিথ্যগ্রহণ এবং চিত্রকূটে গমনবৃত্তান্ত জানতে পারলেন। গুহের কাছে বিদায় নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে চললেন সুমন্ত্র। তাঁর মনে গভীর দুশ্চিন্তা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পথ ফুরিয়ে এল। পরের দিন সন্ধ্যায় নিরানন্দ অযোধ্যায় প্রবেশ করলেন সারথি সুমন্ত্র। তাঁর মন ভারাক্রান্ত।
এমন শূন্যতা, এমন স্তব্ধ নগরী দেখে, শোকাবেগে বিমনা হয়ে সুমন্ত্র ভাবলেন, হাতি ঘোড়া স্বজনসহ রাজা প্রজা সকলে শোকের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাননি তো? এমন নানা চিন্তায় আকুল হয়ে, অশ্বারোহী সুমন্ত্র, অযোধ্যা নগরীতে প্রবেশমাত্র শত সহস্র কণ্ঠের প্রশ্নের সম্মুখীন হলেন, ক্ব রাম ইতি কোথায় রাম? বলতে বলতে বেগে ধেয়ে এলেন প্রশ্নকর্ত্তারা। পুরবাসীরা জানলেন, রামের অনুমতি নিয়ে সুমন্ত্র ফিরে এসেছেন। তিনজনে গঙ্গা উত্তীর্ণ হয়ে এগিয়ে চলেছেন বনবাসের পথে—এই তথ্য জেনে পুরবাসীরা চোখের জলে ভেসে, ধিক্কার দিতে দিতে রামের নামোচ্চারণ করে বিলাপ করতে লাগলেন।
অহো ধিগিতি নিশ্বস্য হা রামেতি বিচক্রুশুঃ। পথে যেতে যেতে দলে দলে পুরবাসীদের আশঙ্কামূলক আলাপচারিতা শুনতে পেলেন সুমন্ত্র। অযোধ্যাবাসীদের অনুমান, তাঁরা রামের দেখা পাননি, তাই রাম নিশ্চয়ই মৃত। এখন থেকে পুরবাসীদের দান, যজ্ঞ, বিবাহ প্রভৃতি অনুষ্ঠানে রাম অনুপস্থিত থাকবেন। তাঁদের প্রবল আক্ষেপ, কিং সমর্থং জনস্যাস্য কিং প্রিয়ং কিং সুখাবহম্। ইতি রামেণ নগরং পিত্রেব পরিপালিতম্ জনগণের প্রতি কেমন আচরণ কর্তব্য, তাঁদের প্রিয় কী, কী উপায়ে তাঁদের সাচ্ছন্দ্য সম্ভব, এই সবকিছু বিবেচনা করে, রাম পিতার স্নেহে আমাদের পরিপালন করতেন।
সারথি সুমন্ত্র ও বন্ধু নিষাদরাজ গুহ, দু’জনেই ব্যথিত মনে সেখানে অবস্থানকালীন রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের প্রয়াগতীর্থে ভরদ্বাজমুনির আতিথ্যগ্রহণ এবং চিত্রকূটে গমনবৃত্তান্ত জানতে পারলেন। গুহের কাছে বিদায় নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে চললেন সুমন্ত্র। তাঁর মনে গভীর দুশ্চিন্তা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পথ ফুরিয়ে এল। পরের দিন সন্ধ্যায় নিরানন্দ অযোধ্যায় প্রবেশ করলেন সারথি সুমন্ত্র। তাঁর মন ভারাক্রান্ত।
এমন শূন্যতা, এমন স্তব্ধ নগরী দেখে, শোকাবেগে বিমনা হয়ে সুমন্ত্র ভাবলেন, হাতি ঘোড়া স্বজনসহ রাজা প্রজা সকলে শোকের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাননি তো? এমন নানা চিন্তায় আকুল হয়ে, অশ্বারোহী সুমন্ত্র, অযোধ্যা নগরীতে প্রবেশমাত্র শত সহস্র কণ্ঠের প্রশ্নের সম্মুখীন হলেন, ক্ব রাম ইতি কোথায় রাম? বলতে বলতে বেগে ধেয়ে এলেন প্রশ্নকর্ত্তারা। পুরবাসীরা জানলেন, রামের অনুমতি নিয়ে সুমন্ত্র ফিরে এসেছেন। তিনজনে গঙ্গা উত্তীর্ণ হয়ে এগিয়ে চলেছেন বনবাসের পথে—এই তথ্য জেনে পুরবাসীরা চোখের জলে ভেসে, ধিক্কার দিতে দিতে রামের নামোচ্চারণ করে বিলাপ করতে লাগলেন।
অহো ধিগিতি নিশ্বস্য হা রামেতি বিচক্রুশুঃ। পথে যেতে যেতে দলে দলে পুরবাসীদের আশঙ্কামূলক আলাপচারিতা শুনতে পেলেন সুমন্ত্র। অযোধ্যাবাসীদের অনুমান, তাঁরা রামের দেখা পাননি, তাই রাম নিশ্চয়ই মৃত। এখন থেকে পুরবাসীদের দান, যজ্ঞ, বিবাহ প্রভৃতি অনুষ্ঠানে রাম অনুপস্থিত থাকবেন। তাঁদের প্রবল আক্ষেপ, কিং সমর্থং জনস্যাস্য কিং প্রিয়ং কিং সুখাবহম্। ইতি রামেণ নগরং পিত্রেব পরিপালিতম্ জনগণের প্রতি কেমন আচরণ কর্তব্য, তাঁদের প্রিয় কী, কী উপায়ে তাঁদের সাচ্ছন্দ্য সম্ভব, এই সবকিছু বিবেচনা করে, রাম পিতার স্নেহে আমাদের পরিপালন করতেন।
বিপণিশ্রেণির মধ্যে দিয়ে চললেন সুমন্ত্র। বাতায়নে মহিলারা ক্রন্দনরতা। এ দৃশ্য থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে, তিনি মুখ ঢাকলেন। সুমন্ত্রের গন্তব্য রাজা দশরথের ভবন। একাকী সুমন্ত্রকে দেখে প্রাসাদের রাজ-রানিরা হাহাকার করে উঠলেন। চোখভরা জল নিয়ে পরস্পরের দিকে নি:শব্দে দৃষ্টিবিনিময় করতে লাগলেন। প্রাসাদের অভ্যন্তরের শোকাকুল রাজমহিষীদের মৃদু আলাপচারিতা তাঁর কানে এসে পৌঁছল। রামের সঙ্গে বহির্গত সুমন্ত্র ফিরে এসেছেন রাম বিনা। শোকার্তা রানি কৌশল্যার কাছে সারথি কী জবাবদিহি করবেন?মনে হয়, রানি কৌশল্যার জীবনধারণ করাই দুষ্কর হয়ে উঠবে।
মায়ের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে রাম চলে গেলেও, কৌশল্যা এখনও জীবিতা আছেন। যা মনে হয়, এখন কৌশল্যার কঠিন জীবনধারণ আরও দুষ্কর হয়ে উঠবে। যথা চ মন্যে দুর্জীবমেবং ন সুকরং ধ্রুবম্। আচ্ছিদ্য পুত্রে নির্যাতে কৌশল্যা যত্র জীবতি।। রাজস্ত্রীদের কথার সত্যতা অস্বীকার করার নয়। সুমন্ত্র শোকের আগুনে যেন দগ্ধ হলেন। দ্রুত প্রবেশ করলেন প্রাসাদের অষ্টম কক্ষে। সেই পাণ্ডুবর্ণ কক্ষটিতে, পুত্রশোকাতুর দীন আতুর রাজা দশরথকে অভিবাদন করে সারথি অনুপুঙ্খভাবে রামের বার্তা নিবেদন করলেন। স্তব্ধ রাজা সব শুনে শোকে ব্যাকুল হয়ে সংজ্ঞা হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। সমবেত অন্তঃপুরবাসিনীরা হাত তুলে, উচ্চকণ্ঠে কেঁদে উঠলেন। দেবী কৌশল্যা, সুমিত্রা দেবীর সাহায্যে ভূপতিত রাজাকে মাটি থেকে তুললেন।
রাজাকে বললেন, সেই কঠিন কাজ করছে যে রাম,তার দূত হয়ে বন থেকে ফিরে এসেছেন সুমন্ত্র। রাজা কেন সুমন্ত্রর কথার প্রত্যুত্তর দিচ্ছেন না? রাঘব রামের প্রতি যে অবিচার করেছেন, তার দরুণ এখন বৃথা লজ্জিত হচ্ছেন কেন? আপনার মঙ্গল হোক। উঠুন, এখন শোকপ্রকাশে লাভ নেই কোন। অদ্যেমমনয়ং কৃত্বা ব্যপত্রপসি রাঘবে। উত্তিষ্ঠ সুকৃতং তেঽস্তু শোকে ন স্যাৎ সহায়তা।। রানি কৌশল্যা আরও জানালেন, যাঁর ভয়ে, রাজা সারথিকে রামের বিষয়ে প্রশ্ন করছেন না, সেই কৈকেয়ী এখানে নেই। নিশ্চিন্তমনে আলাপ চলতেই পারে। এই কথা বলতে বলতে, শোকে কৌশল্যার কণ্ঠ রুদ্ধ হল। মাটিতে পড়ে গেলেন তিনি। চারিদিক থেকে অন্যান্য নারীরা, ভূলুণ্ঠিতা রোদনকারিণী কৌশল্যাকে দেখে বিলাপ করে উঠলেন। শোক বোধ হয় সংক্রামক। সেই বেদনার্ত রব শুনে সেখানে উপস্থিত বৃদ্ধ তরুণ ও নারীরা সকলে মিলে কেঁদে উঠলেন। অন্তঃপুর যেন আবারও রোদনধ্বনিতে হাহাকার করে উঠল।
মায়ের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে রাম চলে গেলেও, কৌশল্যা এখনও জীবিতা আছেন। যা মনে হয়, এখন কৌশল্যার কঠিন জীবনধারণ আরও দুষ্কর হয়ে উঠবে। যথা চ মন্যে দুর্জীবমেবং ন সুকরং ধ্রুবম্। আচ্ছিদ্য পুত্রে নির্যাতে কৌশল্যা যত্র জীবতি।। রাজস্ত্রীদের কথার সত্যতা অস্বীকার করার নয়। সুমন্ত্র শোকের আগুনে যেন দগ্ধ হলেন। দ্রুত প্রবেশ করলেন প্রাসাদের অষ্টম কক্ষে। সেই পাণ্ডুবর্ণ কক্ষটিতে, পুত্রশোকাতুর দীন আতুর রাজা দশরথকে অভিবাদন করে সারথি অনুপুঙ্খভাবে রামের বার্তা নিবেদন করলেন। স্তব্ধ রাজা সব শুনে শোকে ব্যাকুল হয়ে সংজ্ঞা হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। সমবেত অন্তঃপুরবাসিনীরা হাত তুলে, উচ্চকণ্ঠে কেঁদে উঠলেন। দেবী কৌশল্যা, সুমিত্রা দেবীর সাহায্যে ভূপতিত রাজাকে মাটি থেকে তুললেন।
রাজাকে বললেন, সেই কঠিন কাজ করছে যে রাম,তার দূত হয়ে বন থেকে ফিরে এসেছেন সুমন্ত্র। রাজা কেন সুমন্ত্রর কথার প্রত্যুত্তর দিচ্ছেন না? রাঘব রামের প্রতি যে অবিচার করেছেন, তার দরুণ এখন বৃথা লজ্জিত হচ্ছেন কেন? আপনার মঙ্গল হোক। উঠুন, এখন শোকপ্রকাশে লাভ নেই কোন। অদ্যেমমনয়ং কৃত্বা ব্যপত্রপসি রাঘবে। উত্তিষ্ঠ সুকৃতং তেঽস্তু শোকে ন স্যাৎ সহায়তা।। রানি কৌশল্যা আরও জানালেন, যাঁর ভয়ে, রাজা সারথিকে রামের বিষয়ে প্রশ্ন করছেন না, সেই কৈকেয়ী এখানে নেই। নিশ্চিন্তমনে আলাপ চলতেই পারে। এই কথা বলতে বলতে, শোকে কৌশল্যার কণ্ঠ রুদ্ধ হল। মাটিতে পড়ে গেলেন তিনি। চারিদিক থেকে অন্যান্য নারীরা, ভূলুণ্ঠিতা রোদনকারিণী কৌশল্যাকে দেখে বিলাপ করে উঠলেন। শোক বোধ হয় সংক্রামক। সেই বেদনার্ত রব শুনে সেখানে উপস্থিত বৃদ্ধ তরুণ ও নারীরা সকলে মিলে কেঁদে উঠলেন। অন্তঃপুর যেন আবারও রোদনধ্বনিতে হাহাকার করে উঠল।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৩: দুই মহর্ষির দ্বন্দ্বে কি ‘ইতি ও নেতি’র বিরোধেরই প্রতিফলন?
গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৪: যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না?
মূর্চ্ছিত রাজা সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে রামের খবরাখবর জানতে উৎসুক হলেন। সারথি সুমন্ত্রকে ডেকে পাঠালেন। সুমন্ত্র মুখোমুখি হলেন পুত্রশোকে কাতর, বেদনার্ত প্রবীণ রাজার। রাজা যেন ধরা দেওয়া অসুস্থ নতুন হাতিটি, ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করছেন রাজা, তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন। রাজার সম্মুখীন হলেন ধূলিধূসরদেহে, অশ্রুপূর্ণ মুখে, দীন, আর্ত সারথি সুমন্ত্র। ব্যাকুল পিতার সহস্র প্রশ্ন। সেই ধার্মিক রাম, কোন তরুমূলে আশ্রয় নিয়েছেন? চিরসুখে অভ্যস্ত রাম কিই বা খাচ্ছেন। যিনি কখনও দুঃখভোগ করেননি, সুখশয্যায় অভ্যস্ত, অনাথবৎ ভূমিশয্যায় কেমন করে শয়ন করছেন তিনি?যাঁকে অনুসরণ করত পদাতিক, রথ ও হাতি, সেই রাম কীভাবে নির্জন বনপথে চলেছেন? হিংস্র শ্বাপদ, মৃগ, কৃষ্ণবর্ণের সাপের আবাস যে অরণ্য, সেখানে দুই কুমার, বৈদেহীকে সঙ্গে নিয়ে কেমন করে বসবাস করবেন? পুত্রবধূ সুকুমারী তপস্বিনী বৈদেহী, রথ থেকে অবতরণ করে পায়ে হেঁটে কিভাবে চলেছেন অরণ্যে? হে সূত, তুমি সত্যিই কৃতার্থ, তুমি, মন্দরগামী দুই অশ্বিনীকুমারতুল্য অরণ্যপ্রান্তে প্রবেশরত, আমার দুই আত্মজকে দেখেছ।
সিদ্ধার্থঃ খলু সূত ত্বং যেন দৃষ্টৌ মমাত্মজৌ। বনান্তং প্রবিশন্তৌ তাবশ্বিনাবিব মন্দরম্।।
বেদনার্ত রাজার অপার কৌতূহল, বনে প্রবেশ করে রাম, লক্ষ্মণ, কী বললেন? সীতাই বা কী বললেন? ওদের তিনজনের আসন, ভোজন, শয়নের ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানতে, অসীম আগ্রহ রাজার। যযাতি যেমন সাধুসংসর্গে প্রাণ ধারণ করেছিলেন তেমনই রাজা দশরথের জীবনধারণের অনুপান হবে এই বিবরণ। রাজার আদেশে, অশ্রুভারাক্রান্ত আবেগমথিত কণ্ঠে, সুমন্ত্র রামের বিদায়কালীন বার্তা পরিবেশন করলেন।
সারথির প্রতি রামের নির্দেশ ছিল, সুমন্ত্র যেন তাঁর হয়ে পিতা দশরথের ও সেই সঙ্গে বিমাতাদের পাদবন্দনা করে যথাস্থানে প্রণাম নিবেদন করেন এবং তাঁদের কুশল সংবাদ জানান। জননী কৌশল্যা দেবীকে যথাযথ অভিবাদন ও কুশল সমাচার জানিয়ে ধর্মবিষয়ে অবহিত করবেন। ধর্ম্মনিত্যা যথাকালমগ্ন্যাগারপরা ভব। দেবি দেবস্য পাদৌ চ দেববৎ পরিপালয়।। দেবী কৌশল্যা যেন নিত্য ধর্মে আস্থা রেখে অগ্নিগৃহে উপাসনারতা থাকেন। অবশ্যই দেবতুল্য স্বামীর পদসেবা করবেন। মান অভিমান পরিত্যাগ করে সপত্নীদের সঙ্গে মিলে মিশে থাকেন যেন।
রামের অনুরোধ—মা কৌকৌশল্যা, আর্যা কৈকেয়ীকে রাজার প্রতি অনুগতা হতে দেবেন। অনুরাজানমার্য্যাঞ্চ কৈকেয়ীমম্ব কারয়।। মা যেন রাজধর্ম স্মরণে রাখেন, বয়োজ্যেষ্ঠ না হলেও রাজা সর্বদাই সম্মানীয়, তাই কুমার ভরতের প্রতি তিনি যেন রাজোচিত ব্যবহার বজায় রাখেন। ভরতের প্রতি রামের উপদেশ, ভরত যেন সব মায়েদের প্রতি যথাপ্রাপ্য ব্যবহারবিষয়ে সমদর্শী হন।
সিদ্ধার্থঃ খলু সূত ত্বং যেন দৃষ্টৌ মমাত্মজৌ। বনান্তং প্রবিশন্তৌ তাবশ্বিনাবিব মন্দরম্।।
বেদনার্ত রাজার অপার কৌতূহল, বনে প্রবেশ করে রাম, লক্ষ্মণ, কী বললেন? সীতাই বা কী বললেন? ওদের তিনজনের আসন, ভোজন, শয়নের ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানতে, অসীম আগ্রহ রাজার। যযাতি যেমন সাধুসংসর্গে প্রাণ ধারণ করেছিলেন তেমনই রাজা দশরথের জীবনধারণের অনুপান হবে এই বিবরণ। রাজার আদেশে, অশ্রুভারাক্রান্ত আবেগমথিত কণ্ঠে, সুমন্ত্র রামের বিদায়কালীন বার্তা পরিবেশন করলেন।
সারথির প্রতি রামের নির্দেশ ছিল, সুমন্ত্র যেন তাঁর হয়ে পিতা দশরথের ও সেই সঙ্গে বিমাতাদের পাদবন্দনা করে যথাস্থানে প্রণাম নিবেদন করেন এবং তাঁদের কুশল সংবাদ জানান। জননী কৌশল্যা দেবীকে যথাযথ অভিবাদন ও কুশল সমাচার জানিয়ে ধর্মবিষয়ে অবহিত করবেন। ধর্ম্মনিত্যা যথাকালমগ্ন্যাগারপরা ভব। দেবি দেবস্য পাদৌ চ দেববৎ পরিপালয়।। দেবী কৌশল্যা যেন নিত্য ধর্মে আস্থা রেখে অগ্নিগৃহে উপাসনারতা থাকেন। অবশ্যই দেবতুল্য স্বামীর পদসেবা করবেন। মান অভিমান পরিত্যাগ করে সপত্নীদের সঙ্গে মিলে মিশে থাকেন যেন।
রামের অনুরোধ—মা কৌকৌশল্যা, আর্যা কৈকেয়ীকে রাজার প্রতি অনুগতা হতে দেবেন। অনুরাজানমার্য্যাঞ্চ কৈকেয়ীমম্ব কারয়।। মা যেন রাজধর্ম স্মরণে রাখেন, বয়োজ্যেষ্ঠ না হলেও রাজা সর্বদাই সম্মানীয়, তাই কুমার ভরতের প্রতি তিনি যেন রাজোচিত ব্যবহার বজায় রাখেন। ভরতের প্রতি রামের উপদেশ, ভরত যেন সব মায়েদের প্রতি যথাপ্রাপ্য ব্যবহারবিষয়ে সমদর্শী হন।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৬: নান্দনিক শিক্ষায় উৎসাহী ছিলেন শ্রীমা
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫২: হিতকারী মূর্খ বন্ধুর থেকে একজন পণ্ডিত শত্রু থাকা ভালো
পিতার প্রতি আচরণবিষয়ে ভরতকে অনুরোধ জানিয়েছেন রাম। রাজনন্দন ভরত,যেন যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হয়ে রাজ্যে অধিষ্ঠিত পিতার রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করেন। পিতার আয়ু প্রায় নিঃশেষিত। তাঁর বিরোধিতা নয়, পিতার আজ্ঞানুসারে রাজ্য শাসন করে বেঁচে থাকাই কাম্য। এই সব কথা বলতে বলতে রামের চোখের জল বাঁধা মানেনি। চোখের জলে ভেসে রাম, সুমন্ত্রর মাধ্যমে ভরতকে জানিয়েছেন, মাতেব মম মাতা তে দ্রষ্টব্যা পুত্রগর্দ্ধিনী। নিজের মায়ের সঙ্গে একভাবে যেন আমার পুত্রবৎসলা মায়ের প্রতিও সমদৃষ্টি রাখেন। অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে, কমলনয়ন রাম, ক্রমাগত এই সব কথা বলে চললেন। সুমন্ত্র, লক্ষ্মণের ক্ষোভও ব্যক্ত করলেন। ক্রুদ্ধ লক্ষ্মণ ঘন ঘন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেছেন, কোন অপরাধে রাজপুত্রের এই নির্বাসন? রানি কৈকেয়ীর একটি ছোট্ট ইচ্ছাপূরণরূপ অনুশাসন মেনে নিয়ে, রাজা কর্তব্য মনে করে, একটি অকাজ করেছেন। যার খেসারৎ দিচ্ছি আমরা। রাজ্ঞা তু খলু কৈকেয্যা লঘু ত্বাশ্রুত্য শাসনম্। কৃতং কার্য্যমকার্য্যং বা বয়ং যেনাভিপীড়িতাঃ।। লোভের কারণে বা বরদানের প্রতিশ্রুতিরক্ষার জন্যে, যদি রামকে নির্বাসনে বাধ্য করা হয়ে থাকে তবে সেটি সব দিক থেকেই খারাপ কাজ হয়েছে। রামের নির্বাসনের যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি লক্ষ্মণ। প্রভুত্বহেতু রাজা যথেচ্ছচারী হয়েছেন। স্বল্পবুদ্ধি রাজার,অবিবেচনাপ্রসূত ভুল সিদ্ধান্তের পরিণাম হল রামের এই নির্বাসন। রাজার এই সিদ্ধান্ত সংক্ষোভ সৃষ্টি করবে। পিতৃত্বের সম্মান হারিয়েছেন তিনি। রামই এখন লক্ষ্মণের ভাই, তিপালক, বন্ধু, পিতার সমান মাননীয়।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৯: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—কালি লতা ও পান লতা
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৫: বার্নার্ড শ ও শার্লটি—যদি প্রেম দিলে না প্রাণে/১
ধার্মিক রাম, তাঁর জনহিতৈষী কাজের নিরিখে লোকনির্বিশেষে জনপ্রিয় ও জনমনের অধীশ্বর হয়েছেন। তাঁকে অরণ্যে নির্বাসিত করে, রাজা দশরথ জনগণের বিরুদ্ধাচরণ করে, রাজপদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন তো? সূত সুমন্ত্র সীতার অভিব্যক্তি বর্ণনা করলেন। নিষ্পাপ যশস্বিনী জানকী দেবী ঘন ঘন শ্বাস ফেলে, ভূতাবিষ্ট নারীর মতো সব কিছু ভুলে, সেখানে দাঁড়িয়ে রইলেন। এর আগে তিনি কখনও এমন বিপদের সম্মুখীন হননি। তিনি কষ্টে কেঁদে উঠলেন। কিন্তু তিনি সুমন্ত্রকে কোন কথাই বললেন না। চোখের জল মুছে শুকনো মুখে, গমনোন্মুখ স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলেন। সুমন্ত্র জানালেন, রাম, জোড়হাতে, চোখভরা জল নিয়ে, তাঁর বক্তব্য জানাচ্ছিলেন যখন, তখন তপস্বিনী সীতাও কাঁদতে কাঁদতে রাজকীয় রথ ও তার সারথির দিকে চেয়ে রইলেন।
দশরথ আমাদের সাধারণ জীবনবোধ। অযোধ্যার সাধারণ পুরবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করছে এই অন্তর্নিহিত জীবনবোধ।আমরা সাংসারিক প্রতিকূলতার চাপে দোলাচলচিত্ততায় আক্রান্ত হই, দ্বন্দ্ব, পারিবারিক জটিলতার আবর্তে পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই। ত্রুটির মাসুল দিতে হয়। চোখের জল, অনুশোচনা, পরিতাপে জর্জরিত মন নিয়ে অনেক বিচ্ছেদ, প্রিয়জনের দূরত্ব মেনে নিতে হয়। তখন আর পুনর্বিবেচনার অবকাশ থাকে না। পারিপার্শ্বিকের স্বজনেরাও তার ফলভোগ করে থাকেন।রাম সেই অপরিণামদর্শিতার শিকার। জীবনে অনেক বিষয় আয়ত্তাধীন থাকে না। নিয়তির বিধান অমোঘ হলেও, মনে হয় সেই বিধানকে অকাট্যভাবে যথাযথ লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় কোনও মাধ্যম। সে মাধ্যম কোন মানুষের বিভ্রম, ভ্রান্তি বা অতি সচেতন কোন সিদ্ধান্ত হতে পারে বা কোনও ঘটনাসূত্রও হতে পারে। মন্থরার মন্ত্রণা ও সেটি বাস্তবায়িত করতে কৈকেয়ীর তৎপরতা, বিবেকতাড়িত অসহায় রাজার মর্মযন্ত্রণা—এ সব কিছুই যেন সেই নিয়তি ঠাকরুণের চাল।
দশরথ আমাদের সাধারণ জীবনবোধ। অযোধ্যার সাধারণ পুরবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করছে এই অন্তর্নিহিত জীবনবোধ।আমরা সাংসারিক প্রতিকূলতার চাপে দোলাচলচিত্ততায় আক্রান্ত হই, দ্বন্দ্ব, পারিবারিক জটিলতার আবর্তে পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই। ত্রুটির মাসুল দিতে হয়। চোখের জল, অনুশোচনা, পরিতাপে জর্জরিত মন নিয়ে অনেক বিচ্ছেদ, প্রিয়জনের দূরত্ব মেনে নিতে হয়। তখন আর পুনর্বিবেচনার অবকাশ থাকে না। পারিপার্শ্বিকের স্বজনেরাও তার ফলভোগ করে থাকেন।রাম সেই অপরিণামদর্শিতার শিকার। জীবনে অনেক বিষয় আয়ত্তাধীন থাকে না। নিয়তির বিধান অমোঘ হলেও, মনে হয় সেই বিধানকে অকাট্যভাবে যথাযথ লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় কোনও মাধ্যম। সে মাধ্যম কোন মানুষের বিভ্রম, ভ্রান্তি বা অতি সচেতন কোন সিদ্ধান্ত হতে পারে বা কোনও ঘটনাসূত্রও হতে পারে। মন্থরার মন্ত্রণা ও সেটি বাস্তবায়িত করতে কৈকেয়ীর তৎপরতা, বিবেকতাড়িত অসহায় রাজার মর্মযন্ত্রণা—এ সব কিছুই যেন সেই নিয়তি ঠাকরুণের চাল।
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫৮: কালীর হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মহানায়ক বলেছিলেন, ‘কাউকে বলো না’
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার
অবশ্য এ সব ভাগ্যের কাছে পরাজিত বিবেকের নতমস্তকে হারস্বীকারের অজুহাতমাত্র, যা হয়তো ব্যাখ্যাগম্য নয়। সব থেকে আশ্চর্য বোধ হয় মানবমনের বিচিত্র লীলা। মানুষ যখন বিবেককে নির্বাসিত করে, সেই অনমনীয় বিবেকবানের মেরুদণ্ডটি কিন্তু সেই নির্বাসিতের যন্ত্রণায় কাতর হয় না। সানন্দে বরণ করে নেয় কষ্টকর প্রবাস। কর্তব্যে অবিচল থেকে দায়িত্ববোধের অঙ্গীকার পালন করে যায়। রামচন্দ্রের বার্তা যেন চৈতন্যের উদ্বোধন ঘটায় নতুন করে। বিচ্যুতি সাময়িক, অপেক্ষায় আছে নব দিগন্তের নতুন উদ্ভাস। আবেগের উচ্ছ্বাসে কখনও সাময়িক হৃদয়াবেগের শিকার হয় মানুষ।
স্বজনের পদস্খলন যেন না হয়, সে বিষয়ে পূর্ণ সচেতনতা বজায় রেখে, বিবেকবান রাম, ভরতকে পিতামাতা ও স্বজনবর্গের প্রতি দায়িত্বপালনের কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিলেন। লক্ষ্মণ যেন মনোজগতের যুক্তিনিষ্ঠ মন্ত্রী। তাঁর যুক্তি হল, একজন মহান ব্যক্তিত্ব যদি নীতিবহির্ভূত কাজ করেন এবং জনপ্রিয় যোগ্য উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করেন, তবে তাঁর জনমতবিরোধী সিদ্ধান্তের ফলে তিনি লোকপ্রিয় স্থানটি হারাবেন। লক্ষ্মণের অভিযোগ যুক্তিপূর্ণ ও নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য। সাধারণের যুক্তিনিষ্ঠতা সেটাই সমর্থন করে। সুমন্ত্রের বর্ণনায়, লক্ষ্মণের যুক্তিতে, রাজার সিদ্ধান্ত প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখীন হয়েছে। এমনটাই ঘটে থাকে। অবিবেকী মানুষের সিদ্ধান্ত সমালোচনার ঊর্দ্ধে নয়, রাজা হলেও নয়।
স্বজনের পদস্খলন যেন না হয়, সে বিষয়ে পূর্ণ সচেতনতা বজায় রেখে, বিবেকবান রাম, ভরতকে পিতামাতা ও স্বজনবর্গের প্রতি দায়িত্বপালনের কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিলেন। লক্ষ্মণ যেন মনোজগতের যুক্তিনিষ্ঠ মন্ত্রী। তাঁর যুক্তি হল, একজন মহান ব্যক্তিত্ব যদি নীতিবহির্ভূত কাজ করেন এবং জনপ্রিয় যোগ্য উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করেন, তবে তাঁর জনমতবিরোধী সিদ্ধান্তের ফলে তিনি লোকপ্রিয় স্থানটি হারাবেন। লক্ষ্মণের অভিযোগ যুক্তিপূর্ণ ও নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য। সাধারণের যুক্তিনিষ্ঠতা সেটাই সমর্থন করে। সুমন্ত্রের বর্ণনায়, লক্ষ্মণের যুক্তিতে, রাজার সিদ্ধান্ত প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখীন হয়েছে। এমনটাই ঘটে থাকে। অবিবেকী মানুষের সিদ্ধান্ত সমালোচনার ঊর্দ্ধে নয়, রাজা হলেও নয়।
ছবি: প্রতীকী। ছবি: সংগৃহীত।
সরলা চিন্তা ধর্মের আশ্রয়ে নিশ্চিন্ত হয়। ধর্ম বিপদগ্রস্ত হলে তার অস্তিত্বের সঙ্কট দেখা যায়। ধার্মিক রাম, শোকে দুঃখে ভেঙ্গে পড়েন যখন, তখন তাঁর আশ্রিতা সীতাও ভেঙ্গে খানখান হয়ে যান, তাঁর বলার কিছু থাকে না। লক্ষ্মণ, রাজা দশরথের ধর্মবোধ বিসর্জনের যৌক্তিকতা খোঁজেন, শেষে স্থূল যুক্তিবোধ হার মানে। যুক্তির অন্তিম আশ্রয় ধর্মবোধ, ধার্মিক রামের আশ্রয়।
রাম ও লক্ষ্মণ মানবসত্তার দুই দিক। রাম সত্যনিষ্ঠ,শুধুমাত্র ধর্মবোধ তাঁর সম্বল। নীতিনিষ্ঠতা তাঁকে প্রবাদপ্রতীম করে তুলেছে। ভারতীয় জনজীবনের আদর্শ পুরুষ হয়েছেন তিনি। যুক্তি, ন্যায় অন্যায়বোধের সেখানে স্থান নেই,আছে কেবল একনিষ্ঠভাবে সত্যের প্রতি আনুগত্যবোধ। রামের ছায়াসঙ্গী লক্ষ্মণ। ধর্মবোধের ছায়ায় আছে যুক্তিবোধ। যুক্তিবোধ, ন্যায় অন্যায়বোধকে নিক্তির মানদণ্ডে পরিমাপ করে ঠিকই। কিন্তু শেষপর্যন্ত শরণ নেয় ধর্মের। লক্ষ্মণের শেষ আশ্রয় হন রাম।
জীবনবোধ, আদর্শ, যুক্তিবোধ, সব, সবকিছুর আশ্রয় মানবমন, রামায়ণের চরিত্রগুলির মধ্যে কী তাদের খুঁজে পাওয়া যায়?—চলবে।
রাম ও লক্ষ্মণ মানবসত্তার দুই দিক। রাম সত্যনিষ্ঠ,শুধুমাত্র ধর্মবোধ তাঁর সম্বল। নীতিনিষ্ঠতা তাঁকে প্রবাদপ্রতীম করে তুলেছে। ভারতীয় জনজীবনের আদর্শ পুরুষ হয়েছেন তিনি। যুক্তি, ন্যায় অন্যায়বোধের সেখানে স্থান নেই,আছে কেবল একনিষ্ঠভাবে সত্যের প্রতি আনুগত্যবোধ। রামের ছায়াসঙ্গী লক্ষ্মণ। ধর্মবোধের ছায়ায় আছে যুক্তিবোধ। যুক্তিবোধ, ন্যায় অন্যায়বোধকে নিক্তির মানদণ্ডে পরিমাপ করে ঠিকই। কিন্তু শেষপর্যন্ত শরণ নেয় ধর্মের। লক্ষ্মণের শেষ আশ্রয় হন রাম।
জীবনবোধ, আদর্শ, যুক্তিবোধ, সব, সবকিছুর আশ্রয় মানবমন, রামায়ণের চরিত্রগুলির মধ্যে কী তাদের খুঁজে পাওয়া যায়?—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।