
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
পঞ্চপাণ্ডব, মা কুন্তীর সঙ্গে একচক্রানগরীতে যে ব্রাহ্মণের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, সেই আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণকে বকরাক্ষসের করালগ্রাস হতে দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমসেন একাই, উদ্ধার করলেন। এরপরে পাণ্ডবদের গতিবিধি এবং কার্যাবলী জানতে প্রবল আগ্রহ মহাভারত শ্রোতা পাণ্ডবদের উত্তরসূরী রাজা জন্মেজয়ের। বৈশাম্পয়ন পাণ্ডবদের অবস্থান বর্ণনা করলেন।
একচক্রানগরীতে আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের বাড়িতে পাণ্ডবদের দিন কাটে বেদবিদ্যাচর্চায়। একদা পাণ্ডবদের আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের আলয়ে উপস্থিত হলেন আশ্রয়প্রার্থী হয়ে একদল ব্রতচারী ব্রাহ্মণ। গৃহকর্তা তাঁদের সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করলেন। মা কুন্তী-সহ পঞ্চপাণ্ডব তাঁদের পরিচর্যায় রত হলেন। ব্রাহ্মণেরা তাঁদের শোনাতে লাগলেন, দেশ, তীর্থ, নদী, রাজাদের রাজ্য ও রাজধানী বিষয়ক নানা বিচিত্র কাহিনি। সেই প্রসঙ্গে পাঞ্চালদেশের রাজা দ্রুপদকৃত যজ্ঞাগ্নি থেকে ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডী ও দ্রুপদকন্যা দ্রৌপদীর উদ্ভব বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন। সেই সঙ্গে শোনালেন, দ্রৌপদীর অদ্ভুত স্বয়ম্বরবৃত্তান্ত। পাণ্ডবরা আশ্চর্য কাহিনি বিস্তারিতভাবে জানতে আগ্রহী হলেন।
ব্রাহ্মণ সবিস্তারে বর্ণনা করলেন, ঋষি ভরদ্বাজপুত্র অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের জন্মবৃত্তান্ত,ভরদ্বাজসখা পৃষতরাজার পুত্র দ্রুপদের সঙ্গে দ্রোণের বাল্যকালের সখ্যতা, পরিণত বয়সের শত্রুতা, প্রতিশোধস্পৃহায় দ্রোণের হস্তিনাপুরে আশ্রয়গ্রহণ, ভীষ্মের উদ্যোগে কুরুপাণ্ডবদের অস্ত্রগুরুর পদপ্রাপ্তি, ছাত্রদের কাছে গুরুদক্ষিণারূপে দ্রুপদের রাজ্য কামনা, পাণ্ডবদের দ্বারা সমন্ত্রী পরাজিত বন্দী দ্রুপদকে গুরুদক্ষিণারূপে প্রদান, দ্রোণের দ্রুপদকে রাজ্যের অর্দ্ধাংশ প্রদান, প্রতিশোধ স্পৃহায় দ্রুপদরাজের দ্রোণবধকারী পুত্রকামনায় যজ্ঞ ইত্যাদি।
একচক্রানগরীতে আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের বাড়িতে পাণ্ডবদের দিন কাটে বেদবিদ্যাচর্চায়। একদা পাণ্ডবদের আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের আলয়ে উপস্থিত হলেন আশ্রয়প্রার্থী হয়ে একদল ব্রতচারী ব্রাহ্মণ। গৃহকর্তা তাঁদের সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করলেন। মা কুন্তী-সহ পঞ্চপাণ্ডব তাঁদের পরিচর্যায় রত হলেন। ব্রাহ্মণেরা তাঁদের শোনাতে লাগলেন, দেশ, তীর্থ, নদী, রাজাদের রাজ্য ও রাজধানী বিষয়ক নানা বিচিত্র কাহিনি। সেই প্রসঙ্গে পাঞ্চালদেশের রাজা দ্রুপদকৃত যজ্ঞাগ্নি থেকে ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডী ও দ্রুপদকন্যা দ্রৌপদীর উদ্ভব বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন। সেই সঙ্গে শোনালেন, দ্রৌপদীর অদ্ভুত স্বয়ম্বরবৃত্তান্ত। পাণ্ডবরা আশ্চর্য কাহিনি বিস্তারিতভাবে জানতে আগ্রহী হলেন।
ব্রাহ্মণ সবিস্তারে বর্ণনা করলেন, ঋষি ভরদ্বাজপুত্র অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের জন্মবৃত্তান্ত,ভরদ্বাজসখা পৃষতরাজার পুত্র দ্রুপদের সঙ্গে দ্রোণের বাল্যকালের সখ্যতা, পরিণত বয়সের শত্রুতা, প্রতিশোধস্পৃহায় দ্রোণের হস্তিনাপুরে আশ্রয়গ্রহণ, ভীষ্মের উদ্যোগে কুরুপাণ্ডবদের অস্ত্রগুরুর পদপ্রাপ্তি, ছাত্রদের কাছে গুরুদক্ষিণারূপে দ্রুপদের রাজ্য কামনা, পাণ্ডবদের দ্বারা সমন্ত্রী পরাজিত বন্দী দ্রুপদকে গুরুদক্ষিণারূপে প্রদান, দ্রোণের দ্রুপদকে রাজ্যের অর্দ্ধাংশ প্রদান, প্রতিশোধ স্পৃহায় দ্রুপদরাজের দ্রোণবধকারী পুত্রকামনায় যজ্ঞ ইত্যাদি।
দ্রুপদকৃত যজ্ঞাগ্নি থেকে উত্থিত হলেন অগ্নিবর্ণ, ভীষণাকৃতি, বর্ম ও উষ্ণীষ তরবারি এবং ধনুর্বাণ ধারণ করে দেবতুল্য পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন। এই পুত্রকে দেখে পাঞ্চালদেশবাসীরা হর্ষধ্বনিতে তাঁকে স্বাগত জানালেন। আকাশবাণী ধ্বনিত হল, দ্রোণ হত্যাকারী, পাঞ্চালদের ত্রাসনিরসনকারী, কীর্তিমান এই পুত্র। এর পরে যজ্ঞবেদী হতে উত্থিত হলেন পাঞ্চালী। শ্যামবর্ণা, পদ্মনয়না, কালো কুঞ্চিত কেশ, নখগুলি তাঁর তাম্রাভ, সুন্দর যুগল ভ্রূ, স্তনদুটি সুডৌল ও স্থূল, অপরূপা সুরনারীতুল্যা, নীলোৎপলগন্ধা অনুপমা, দেবদানবযক্ষদের অভীপ্সিতা কৃষ্ণা হবেন ক্ষত্রিয়দের ধ্বংসের কারণ। এই মর্মে দৈববাণী উচ্চারিত হল। পুত্র ও কন্যাটিকে দ্রুপদপত্নী সন্তান রূপে স্বীকৃতি দিলেন। প্রতাপশালী দ্রোণ নিজের অনিবার্য পরিণতি জেনেও নিজ কীর্তি অক্ষুণ্ণ রাখবার লক্ষ্যে ধৃষ্টদ্যুম্নকে নিজের গৃহে এনে অস্ত্রশিক্ষায় সুশিক্ষিত করে তুললেন। এই বৃত্তান্ত শুনে হয়তো গুরুদেবের অব্যর্থ নিয়তির কথা চিন্তা করে, কষ্টে পাণ্ডবরা যেন শল্যবিদ্ধ হলেন। তাঁরা সকলেই অসুস্থ বোধ করলেন। চিন্তিত পুত্রদের দেখে দেবী কুন্তী জ্যেষ্ঠপুত্র যুধিষ্ঠিরকে প্রস্তাব দিলেন, ভিক্ষা করে ব্রাহ্মণগৃহে দীর্ঘদিন কেটে গেল।
এখানকার বন, উপবন সবকিছুই দেখা হল। ভিক্ষাও আর সহজলভ্য নয়। এ বার পাঞ্চালদেশে যাওয়া যাক। সেখানে অদৃষ্টপূর্ব অনেক কিছু,নিশ্চয়ই ভাল লাগবে। শোনা যায় পাঞ্চালদেশে ভিক্ষা সহজলভ্য, দ্রুপদরাজা যজ্ঞসেনও শুনেছি ব্রাহ্মণদের হিতাকাঙ্খী। সুভিক্ষাশ্চৈব পাঞ্চাল্যঃ শ্রূয়ন্তে শত্রুকর্ষণ!। যজ্ঞসেনশ্চ রাজাসৌ ব্রহ্মণ্য ইতি শুশ্রূম।। দেবী কুন্তীর মতে, এক জায়গায় দীর্ঘদিন অবস্থান উচিত নয়। একত্র চিরবাসশ্চ ক্ষমো ন চ মতো মম। তাই সেই দ্রুপদরাজ্যেই বরং যাওয়া যাক। সবভাইরা একযোগে সম্মতি জানালেন। গৃহস্বামীর অনুমতি নিয়ে, তাঁরা, দ্রুপদের রাজধানীতে যাবার উদ্যোগ নিলেন। হঠাৎ একদিন সেখানে ব্রাহ্মণগৃহে পিতামহ, মহর্ষি বেদব্যাস, পৌত্রদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে উপস্থিত হলেন।
এখানকার বন, উপবন সবকিছুই দেখা হল। ভিক্ষাও আর সহজলভ্য নয়। এ বার পাঞ্চালদেশে যাওয়া যাক। সেখানে অদৃষ্টপূর্ব অনেক কিছু,নিশ্চয়ই ভাল লাগবে। শোনা যায় পাঞ্চালদেশে ভিক্ষা সহজলভ্য, দ্রুপদরাজা যজ্ঞসেনও শুনেছি ব্রাহ্মণদের হিতাকাঙ্খী। সুভিক্ষাশ্চৈব পাঞ্চাল্যঃ শ্রূয়ন্তে শত্রুকর্ষণ!। যজ্ঞসেনশ্চ রাজাসৌ ব্রহ্মণ্য ইতি শুশ্রূম।। দেবী কুন্তীর মতে, এক জায়গায় দীর্ঘদিন অবস্থান উচিত নয়। একত্র চিরবাসশ্চ ক্ষমো ন চ মতো মম। তাই সেই দ্রুপদরাজ্যেই বরং যাওয়া যাক। সবভাইরা একযোগে সম্মতি জানালেন। গৃহস্বামীর অনুমতি নিয়ে, তাঁরা, দ্রুপদের রাজধানীতে যাবার উদ্যোগ নিলেন। হঠাৎ একদিন সেখানে ব্রাহ্মণগৃহে পিতামহ, মহর্ষি বেদব্যাস, পৌত্রদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে উপস্থিত হলেন।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৬: বিগ্রহে রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা, আদিকবির নবীন নায়ক রামের মানবিক মুখ

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৯: রসিক স্বভাব মা সারদা
পিতামহকে ষাষ্টাঙ্গে প্রণাম এবং যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন করে পাণ্ডবভাইয়েরা মহর্ষি বেদব্যাসের সামনে জোড়হাতে দাঁড়ালেন। পাণ্ডবদের সম্মানে মুগ্ধ ব্যাস স্নেহভরে জানতে চাইলেন, পাণ্ডবরা ধর্মসম্মত শাস্ত্রানুসারে জীবনযাপন করছেন কি না। সম্মানীয় ব্রাহ্মণদের পূজায় কোনও ছেদ নেই তো? এরপরে তিনি পৌত্রদের বিচিত্র সব কাহিনি শোনালেন। তার মধ্যে একটি ছিল পাণ্ডবদের ভাবি পারাবারিক জীবন বিষয়ক।
কাহিনিটি হল—এক তপোবনে কোন এক ঋষির এক তন্বী মনোরমা গুণবতী কন্যা ছিল। কন্যাটির দুর্ভাগ্য, সেই কন্যা রূপবতী, কিন্তু তাঁর স্বামী নেই। নাধ্যগচ্ছৎ পতিং সা তু কন্যা রূপবতী সতী। অর্থাৎ বিবাহযোগ্যা কন্যাটির বিয়ে হয় না আর। কন্যা পতিলাভের কামনায় মহাদেবের তপস্যা শুরু করল। কঠোর তপস্যায় তুষ্ট হলেন মহাদেব। কন্যা, গুণবান পতিলাভের বর প্রার্থনা করলেন। যেহেতু সে পাঁচবার পতিং সর্ব্বোগুণোপেতমিচ্ছামীতি পুনঃ পুনঃ। বলেছিলেন তাই মহাদেব বর দিলেন, পঞ্চ তে পতয়ো ভদ্রে! ভবিষ্যন্তীতি ভারতাঃ। পাঁচ ভরতবংশীয়, তোমার পঞ্চ পতি হবে। সেই কন্যা মাত্র একটি পতিলাভের প্রার্থনা জানালেন।
পাঁচবার প্রার্থনা করায় ভাবি জন্মে তাঁর পাঁচজন পতিই হবে। মহর্ষি ব্যাস জানালেন, জন্মান্তরে সেই কন্যা দ্রুপদকন্যারূপে জন্ম নিয়েছে। কৃষ্ণা নামে সেই দ্রুপদকন্যা পঞ্চপাণ্ডবদের পত্নীরূপে নির্ধারিত। তাই পাণ্ডবদের এখন পাঞ্চালনগরে বসবাস করাই শ্রেয়। তাঁর সান্নিধ্যে পাণ্ডবরা নিঃসন্দেহে সুখী হবেন। সুখিনস্তামনুপ্রাপ্য ভবিষ্যথ ন সংশয়ঃ। এই ভবাষ্যদ্বাণী করে বিদায় নিলেন মাননীয় ব্যাসদেব।
পাণ্ডবভাইরা গৃহকর্তা ব্রাহ্মণকে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করে বিদায় নিলেন। মা, দেবী কুন্তীকে সম্মুখে রেখে উত্তরাভিমুখে পাঞ্চালদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। সোমাশ্রয়ায়ণ তীর্থে জনহীন গঙ্গাতীরে, নারীদের সঙ্গে জলকেলিলরত ঈর্ষাপরায়ণ গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণের সঙ্গে দেখা হল। তাঁর বিরোধিতার সম্মুখীন হলেন পঞ্চপাণ্ডব। অর্জুন অঙ্গারপর্ণকে পরাজিত করলেন। আগ্নেয়াস্ত্রপ্রয়োগে তাঁর রথটি দগ্ধ করলেন অর্জুন। রথহীন অঙ্গারপর্ণের পত্নী কুম্ভীনসীর অনুরোধে, যুধিষ্ঠির অর্জুনকে অঙ্গারপর্ণের প্রাণ হরণ করতে নিষেধ করলেন। অঙ্গারপর্ণের সুন্দর রথটি দগ্ধ হওয়ায় তিনি ‘চিত্ররথ’ নাম গ্রহণ করলেন। পরাজিত অঙ্গারপর্ণ প্রাণ ফিরে পেয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে অর্জুনকে ‘চাক্ষুষী’ বিদ্যা দান করলেন।
কাহিনিটি হল—এক তপোবনে কোন এক ঋষির এক তন্বী মনোরমা গুণবতী কন্যা ছিল। কন্যাটির দুর্ভাগ্য, সেই কন্যা রূপবতী, কিন্তু তাঁর স্বামী নেই। নাধ্যগচ্ছৎ পতিং সা তু কন্যা রূপবতী সতী। অর্থাৎ বিবাহযোগ্যা কন্যাটির বিয়ে হয় না আর। কন্যা পতিলাভের কামনায় মহাদেবের তপস্যা শুরু করল। কঠোর তপস্যায় তুষ্ট হলেন মহাদেব। কন্যা, গুণবান পতিলাভের বর প্রার্থনা করলেন। যেহেতু সে পাঁচবার পতিং সর্ব্বোগুণোপেতমিচ্ছামীতি পুনঃ পুনঃ। বলেছিলেন তাই মহাদেব বর দিলেন, পঞ্চ তে পতয়ো ভদ্রে! ভবিষ্যন্তীতি ভারতাঃ। পাঁচ ভরতবংশীয়, তোমার পঞ্চ পতি হবে। সেই কন্যা মাত্র একটি পতিলাভের প্রার্থনা জানালেন।
পাঁচবার প্রার্থনা করায় ভাবি জন্মে তাঁর পাঁচজন পতিই হবে। মহর্ষি ব্যাস জানালেন, জন্মান্তরে সেই কন্যা দ্রুপদকন্যারূপে জন্ম নিয়েছে। কৃষ্ণা নামে সেই দ্রুপদকন্যা পঞ্চপাণ্ডবদের পত্নীরূপে নির্ধারিত। তাই পাণ্ডবদের এখন পাঞ্চালনগরে বসবাস করাই শ্রেয়। তাঁর সান্নিধ্যে পাণ্ডবরা নিঃসন্দেহে সুখী হবেন। সুখিনস্তামনুপ্রাপ্য ভবিষ্যথ ন সংশয়ঃ। এই ভবাষ্যদ্বাণী করে বিদায় নিলেন মাননীয় ব্যাসদেব।
পাণ্ডবভাইরা গৃহকর্তা ব্রাহ্মণকে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করে বিদায় নিলেন। মা, দেবী কুন্তীকে সম্মুখে রেখে উত্তরাভিমুখে পাঞ্চালদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। সোমাশ্রয়ায়ণ তীর্থে জনহীন গঙ্গাতীরে, নারীদের সঙ্গে জলকেলিলরত ঈর্ষাপরায়ণ গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণের সঙ্গে দেখা হল। তাঁর বিরোধিতার সম্মুখীন হলেন পঞ্চপাণ্ডব। অর্জুন অঙ্গারপর্ণকে পরাজিত করলেন। আগ্নেয়াস্ত্রপ্রয়োগে তাঁর রথটি দগ্ধ করলেন অর্জুন। রথহীন অঙ্গারপর্ণের পত্নী কুম্ভীনসীর অনুরোধে, যুধিষ্ঠির অর্জুনকে অঙ্গারপর্ণের প্রাণ হরণ করতে নিষেধ করলেন। অঙ্গারপর্ণের সুন্দর রথটি দগ্ধ হওয়ায় তিনি ‘চিত্ররথ’ নাম গ্রহণ করলেন। পরাজিত অঙ্গারপর্ণ প্রাণ ফিরে পেয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে অর্জুনকে ‘চাক্ষুষী’ বিদ্যা দান করলেন।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫১: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—পশুর, ধুধুল ও হাবল

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫৫: বসু পরিবার-এ উত্তমকুমার দিনভর একটি শব্দই রিহার্সাল করেছিলেন, কোনটি?
এই বিদ্যার বৈশিষ্ট্য হল—এই বিদ্যার অধিকারী হবেন তিনিই যিনি কাপুরুষ নন। এই বিদ্যার অধিকারী মানুষ ত্রিলোকের যা কিছু দেখতে ইচ্ছুক হবেন, যেমনটি দেখতে চাইবেন, সেটিই দেখতে সক্ষম হবেন। এই বিদ্যা ছাড়াও বহু উপদেশ দান করলেন এবং গন্ধর্বদেশীয় শ্রেষ্ঠ অশ্ব উপহার দিতে চাইলেন। প্রতিদান বিনা দানগ্রহণে অর্জুনের আগ্রহ নেই। অঙ্গারপর্ণের মতে, মহান ব্যক্তিত্বের সংসর্গ সর্বদাই আনন্দদায়ক হয়ে থাকে। সংযোগো বৈ প্রীতিকরো মহৎসু প্রতিদৃশ্যতে। অর্জুন, উপহারের প্রতিদানরূপে আগ্নেয় অস্ত্রদান করে উপহারগ্রহণে সম্মত হলেন ও অঙ্গারপর্ণের চিরসখ্যতা কামনা করলেন। গন্ধর্বরাজ উপদেশ দিলেন, রাজাদের পুরোহিত প্রয়োজন। রাজাদের পুরোহিত হবেন, পবিত্র, ধার্মিক, সত্যবাদী ও সুশিক্ষিত। কারণ ধর্মবিদ, বাগ্মী, চরিত্রবান, পবিত্র পুরোহিত পাশে থাকে যদি তবে সেই রাজার জয় নিশ্চিত।
পুরোহিতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত হলেন, সূর্যবংশের কুলগুরু বশিষ্ঠ এবং দেবগুরু বৃহস্পতি। তাই পাণ্ডবদের একজন পুরোহিত আবশ্যক।আরও অনেক পরামর্শ, বংশের তথ্য, তাত্ত্বিক উপদেশ ও পরামর্শ দান করলেন গন্ধর্বরাজ। অর্জুনের অনুরোধে একজন যোগ্য পুরোহিতের সন্ধান দিলেন। উপহার বিনিময়ের সময়ে প্রাপ্ত অশ্বগুলি গন্ধর্বরাজের কাছেই গচ্ছিত রাখলেন অর্জুন। পাণ্ডবরা ও গন্ধর্বরাজ, গঙ্গাতীরে পরস্পরকে সম্মান জানিয়ে বিদায় নিলেন।
পাণ্ডবরা উৎকোচকতীর্থে বেদবিদদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধৌম্যকে পৌরোহিত্যে বরণ করলেন। আচার্য ধৌম্য পৌরোহিত্য স্বীকার করলেন। উভয়ের আত্মীয়তা হল। পাণ্ডবরা সেই ব্রাহ্মণকে উপদেষ্টারূপে মেনে নিলেন।পুরোহিত ধৌম্যের অভিভাবকত্ব স্বীকার করে, তাঁকে সঙ্গে নিয়ে দ্রৌপদীর স্বয়ংবরে যোগদানের উদ্দেশ্য যাত্রা করলেন।
পথে দেখা হল বহু ব্রাহ্মণের সঙ্গে। ব্রাহ্মণরা ব্রাহ্মণবেশী পাণ্ডবদের জিজ্ঞাসা করলেন, ক্ব ভবন্তো গমিষ্যন্তি কুতো বাভ্যাগতা ইহ। আপনারা কোথায় যাবেন?কোথা হতেই বা আসছেন? যুধিষ্ঠির জানালেন, আগতানেকচক্রায়াঃ সোদর্য্যানেকচারিণঃ। ভবন্তো বৈ বিজানন্তু সহ মাত্রা দ্বিজর্ষভাঃ!।। একচক্রা নগরী হতে ভাইরা একসঙ্গে আসছি। হে দ্বিজশ্রেষ্ঠরা, আপনারা অবগত হন, ‘মা’ও আমাদের সঙ্গে আছেন।
পুরোহিতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত হলেন, সূর্যবংশের কুলগুরু বশিষ্ঠ এবং দেবগুরু বৃহস্পতি। তাই পাণ্ডবদের একজন পুরোহিত আবশ্যক।আরও অনেক পরামর্শ, বংশের তথ্য, তাত্ত্বিক উপদেশ ও পরামর্শ দান করলেন গন্ধর্বরাজ। অর্জুনের অনুরোধে একজন যোগ্য পুরোহিতের সন্ধান দিলেন। উপহার বিনিময়ের সময়ে প্রাপ্ত অশ্বগুলি গন্ধর্বরাজের কাছেই গচ্ছিত রাখলেন অর্জুন। পাণ্ডবরা ও গন্ধর্বরাজ, গঙ্গাতীরে পরস্পরকে সম্মান জানিয়ে বিদায় নিলেন।
পাণ্ডবরা উৎকোচকতীর্থে বেদবিদদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধৌম্যকে পৌরোহিত্যে বরণ করলেন। আচার্য ধৌম্য পৌরোহিত্য স্বীকার করলেন। উভয়ের আত্মীয়তা হল। পাণ্ডবরা সেই ব্রাহ্মণকে উপদেষ্টারূপে মেনে নিলেন।পুরোহিত ধৌম্যের অভিভাবকত্ব স্বীকার করে, তাঁকে সঙ্গে নিয়ে দ্রৌপদীর স্বয়ংবরে যোগদানের উদ্দেশ্য যাত্রা করলেন।
পথে দেখা হল বহু ব্রাহ্মণের সঙ্গে। ব্রাহ্মণরা ব্রাহ্মণবেশী পাণ্ডবদের জিজ্ঞাসা করলেন, ক্ব ভবন্তো গমিষ্যন্তি কুতো বাভ্যাগতা ইহ। আপনারা কোথায় যাবেন?কোথা হতেই বা আসছেন? যুধিষ্ঠির জানালেন, আগতানেকচক্রায়াঃ সোদর্য্যানেকচারিণঃ। ভবন্তো বৈ বিজানন্তু সহ মাত্রা দ্বিজর্ষভাঃ!।। একচক্রা নগরী হতে ভাইরা একসঙ্গে আসছি। হে দ্বিজশ্রেষ্ঠরা, আপনারা অবগত হন, ‘মা’ও আমাদের সঙ্গে আছেন।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪৬: রাজার নিয়ন্ত্রণহীন অনুচরেদের কুকর্মের দায় রাজাকেই নিতে হয়

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯১: এক আলমারি বই : রাণুর বিয়েতে কবির উপহার
ব্রাহ্মণরা পরামর্শ দিলেন, আজই চলে যান, পাঞ্চালদেশে দ্রুপদরাজার বাড়ি। সেখানে বহুব্যয়বহুল স্বয়ংবরসভার আয়োজন করা হয়েছে। তাঁরাও চলেছেন সেখানে। কারণ হল সেই অদ্ভুত স্বয়ংবর সভা। দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেনকন্যা, যজ্ঞবেদী হতে যাঁর উদ্ভব,সেই কমলনয়না, প্রিয়দর্শিনী, অপূর্ব যাঁর অঙ্গসৌষ্ঠব, সুকুমারী, মননশীলা, দ্রোণাচার্যের শত্রু প্রতাপশালী ধৃষ্টদ্যুম্নের ভগ্নীর হবে স্বয়ংবর। সেই প্রজ্বলিত যজ্ঞাগ্নি থেকেই কবচ, খড়্গ ও ধনুর্বাণসহ অগ্নিতুল্য ধৃষ্টদ্যুম্নের উত্থান। তাঁর ভগ্নী অনন্য দেহসৌন্দর্যের অধিকারিণী, যাঁর শরীরের মধ্যদেশ কৃশ, তাঁর পদ্মতুল্য গন্ধ এক ক্রোশ দূর হতে প্রবাহিত হয়।যজ্ঞসেনের সেই কন্যা স্বয়ং বর নির্ণয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ব্রাহ্মণরা জানালেন, গচ্ছামো বৈ বয়ং দ্রষ্টুং তঞ্চ দিব্যং মহোৎসবম্। সেই অলৌকিক মহোৎসব দেখতেই আমরা সেখানে চলেছি।
বিভিন্ন দেশের রাজারা যাঁরা যজ্ঞে প্রভূত দক্ষিণা দান করেছেন, বেদাধ্যয়ন করেছেন, পবিত্র, মহাত্মা, নিয়ত ব্রতাচরণে রত এমন তাঁরা সমবেত হবেন সেখানে। শুধু তাই নয়, তরুণ, দর্শনীয়,অস্ত্রবিদ্যায় শিক্ষিত, মহারথ রাজারাও সেখানে আসবেন। বিজয় কামনায় তাঁরা নানাবিধ দ্রব্য, ধন, গোরু, বিচিত্র নানা খাদ্য ও পানীয় দান করবেন।সেই সব দান গ্রহণ করে, স্বয়ংবর সভা দেখে, উৎসবের আনন্দ প্রাণভরে উপভোগ করে, ইচ্ছেমতো প্রস্থান করবেন ব্রাহ্মণেরা। সেখানে আসবেন নানা দেশ থেকে নট, বৈতালিক অর্থাৎ স্তুতিপাঠক, নর্তক, সূত পুরাণপাঠকবৃন্দ, বংশপরিচায়ক মাগধেরা, মহাবলশালী বাহুযোদ্ধারা।
বিভিন্ন দেশের রাজারা যাঁরা যজ্ঞে প্রভূত দক্ষিণা দান করেছেন, বেদাধ্যয়ন করেছেন, পবিত্র, মহাত্মা, নিয়ত ব্রতাচরণে রত এমন তাঁরা সমবেত হবেন সেখানে। শুধু তাই নয়, তরুণ, দর্শনীয়,অস্ত্রবিদ্যায় শিক্ষিত, মহারথ রাজারাও সেখানে আসবেন। বিজয় কামনায় তাঁরা নানাবিধ দ্রব্য, ধন, গোরু, বিচিত্র নানা খাদ্য ও পানীয় দান করবেন।সেই সব দান গ্রহণ করে, স্বয়ংবর সভা দেখে, উৎসবের আনন্দ প্রাণভরে উপভোগ করে, ইচ্ছেমতো প্রস্থান করবেন ব্রাহ্মণেরা। সেখানে আসবেন নানা দেশ থেকে নট, বৈতালিক অর্থাৎ স্তুতিপাঠক, নর্তক, সূত পুরাণপাঠকবৃন্দ, বংশপরিচায়ক মাগধেরা, মহাবলশালী বাহুযোদ্ধারা।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৬: কুসুমকুমারী দাশ—লক্ষ্মী সরস্বতীর যুগ্ম মূর্তি

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৬৯: আবার সত্যব্রত
ব্রাহ্মণরা প্রস্তাব দিলেন, ব্রাহ্মণবেশী পাণ্ডবরা না হয় তাঁদের কৌতূহল নিবৃত্ত করে ব্রাহ্মণদের সঙ্গেই ফিরে আসবেন। ভাগ্যে থাকলে, দেবতুল্য রূপবান তাঁদের মধ্যে একজনকে, কৃষ্ণা দ্রৌপদী বরণ করে নিতেই পারেন। আর ভাগ্য সহায় হলে, আপনার এই সুন্দরাকৃতি মহাবাহু ভাইটি, হয়তো আপনার আদেশবলে বহু ধন জয় করতেই পারে। অয়ং ভ্রাতা তব শ্রীমান্ দর্শনীয়ো মহাভুজঃ।নিযুজ্যমানো বিজয়েৎ সঙ্গত্যা দ্রবিণং বহু।। যুধিষ্ঠির তাঁদের আশ্বস্ত করলেন,তাঁরা সকলেই ব্রাহ্মণদের সঙ্গে সেই মহোৎসবে সামিল হবেন, সেই কন্যার স্বয়ংবর দেখতে যেতেই হবে।
জ্ঞাতিদের ষড়যন্ত্রের ফলে পাণ্ডবরা গৃহচ্যুত হয়েছিলেন। তবে এই ছদ্ম পরিচয়ে দেশ বিদেশে আশ্রয় নিয়ে তাঁরা জীবনাভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছেন। আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের গৃহে তাঁদের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেখানে বকরাক্ষস বধ, আশ্রয়প্রার্থী অপর ব্রাহ্মণদের কাছে জেনেছেন বিচিত্র সব কাহিনি। নিজেদের আত্মীয়দের পরিমণ্ডলে, ভাবি স্ত্রী দ্রৌপদীর জন্মবৃত্তান্ত, গুরু দ্রোণাচার্যের জন্ম, মিত্রতার শত্রুতায় রূপান্তর, নিজেদের গুরুদক্ষিণা দান, দ্রোণাচার্যের দ্বারা অপমানিত দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেনের প্রতিশোধস্পৃহা, গুরুদেব দ্রোণের হত্যাকারী ধৃষ্টদ্যুম্ন ও অপরূপা কৃষ্ণা পাঞ্চালীর উত্থানবৃত্তান্ত। সব বৃত্তান্ত শ্রুতিসুখকর নয়। জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতাও মেনে নিতে হয়। পাণ্ডবরা প্রাসাদ পরিসর থেকে গৃহচ্যুত হয়ে ভীমসেন হিড়িম্বকে বধ করে হিড়িম্বাকে পেয়েছেন যাঁকে পাণ্ডবদের জ্যেষ্ঠা কুলবধূ বলা যেতে পারে। ঘটোৎকচের মতো দীপ্ত তেজোময় বংশধর লাভ করেছেন। তাঁর জন্ম যে ব্যর্থ নয় সেটি ভবিষ্যতে বার বার প্রমাণিত হয়েছে। তিনি ও হিড়িম্বা পাণ্ডবদের বিপদের দিনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ঘটোৎকচ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন যুদ্ধে। প্রাণ রক্ষা করেছেন অর্জুনের।
জ্ঞাতিদের ষড়যন্ত্রের ফলে পাণ্ডবরা গৃহচ্যুত হয়েছিলেন। তবে এই ছদ্ম পরিচয়ে দেশ বিদেশে আশ্রয় নিয়ে তাঁরা জীবনাভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছেন। আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের গৃহে তাঁদের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেখানে বকরাক্ষস বধ, আশ্রয়প্রার্থী অপর ব্রাহ্মণদের কাছে জেনেছেন বিচিত্র সব কাহিনি। নিজেদের আত্মীয়দের পরিমণ্ডলে, ভাবি স্ত্রী দ্রৌপদীর জন্মবৃত্তান্ত, গুরু দ্রোণাচার্যের জন্ম, মিত্রতার শত্রুতায় রূপান্তর, নিজেদের গুরুদক্ষিণা দান, দ্রোণাচার্যের দ্বারা অপমানিত দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেনের প্রতিশোধস্পৃহা, গুরুদেব দ্রোণের হত্যাকারী ধৃষ্টদ্যুম্ন ও অপরূপা কৃষ্ণা পাঞ্চালীর উত্থানবৃত্তান্ত। সব বৃত্তান্ত শ্রুতিসুখকর নয়। জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতাও মেনে নিতে হয়। পাণ্ডবরা প্রাসাদ পরিসর থেকে গৃহচ্যুত হয়ে ভীমসেন হিড়িম্বকে বধ করে হিড়িম্বাকে পেয়েছেন যাঁকে পাণ্ডবদের জ্যেষ্ঠা কুলবধূ বলা যেতে পারে। ঘটোৎকচের মতো দীপ্ত তেজোময় বংশধর লাভ করেছেন। তাঁর জন্ম যে ব্যর্থ নয় সেটি ভবিষ্যতে বার বার প্রমাণিত হয়েছে। তিনি ও হিড়িম্বা পাণ্ডবদের বিপদের দিনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ঘটোৎকচ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন যুদ্ধে। প্রাণ রক্ষা করেছেন অর্জুনের।

ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
অন্দরমহলের শত্রু ছাড়াও আছে পথে পদে পদে বিপদ, আছেন অঙ্গারপর্ণের মতো কেউ। তাঁদের জয় করতে পারলে, আছে মিত্রলাভ, আছে স্বস্তি, পথশ্রমের গ্লানিলাঘব। গৃহকোণের জ্ঞাতিশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব কিন্তু জীবনপথে বহিঃশত্রুর অভাব নেই। তাদের দমন করাতেই আছে আত্মশক্তির উদ্বোধন। পাণ্ডবরা ভাবি স্ত্রীলাভ করতে চলেছেন। পিতামহ বেদব্যাস তাঁদের ভবিতব্যবিষয়ে জানিয়েছেন। এই নিয়তির বিধান অব্যর্থ অমোঘ। যজ্ঞবেদী থেকে যে অপরূপার আবির্ভাব, তাঁকে অর্জন করা দুরূহ জেনেও পিতামহের নির্দেশে ক্ষত্রিয়দের ধ্বংসের কারণ সেই অগ্নিসমা নারীকে জীবনে স্বীকার করবার লক্ষ্যে মোহমুগ্ধ পতঙ্গের মতো এগিয়ে চলেছেন, পাঞ্চালদেশের উদ্দেশ্যে, যেমন গুরু আচার্য দ্রোণ ধৃষ্টদ্যুম্নকে তাঁর ভাবি হত্যাকারী জেনেও তাঁকে গৃহে স্থান দিয়েছিলেন, করে তুলেছিলেন অস্ত্রশিক্ষায় সুশিক্ষিত।
অঙ্গারপর্ণের উপদেশে পঞ্চপাণ্ডব আচার্য ধৌম্যকে পুরোহিতরূপে বরণ করেছেন। জীবনে একজন পথপ্রদর্শক উপদেষ্টার প্রয়োজন আছে। ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রৌপদী দু’জনের শৈশবহীন জীবন। দু’জনেই পরিণত,দুজনেরই উদ্ভিন্ন যৌবন। অপরের একেকটি উদ্দেশ্যপূরণের কারণেই যেন দু’জনের উদ্ভব। তাঁদের দু’জনের খ্যাতি লোকমুখে ছড়িয়ে পরেছে দূরে দূরান্তে। পাঞ্চাল অভিমুখে ধাবমান অর্থী ব্রাহ্মণদের বিবরণে তা সুস্পষ্ট হয়েছে। ধৃষ্টদ্যুম্নের শৌর্য ও ভগ্নী পাঞ্চালীর রূপের খ্যাতিতে মুগ্ধ কীর্তিমান রাজারা যোগ্যা পত্নীলাভের উদ্দেশ্যে দ্রৌপদীর স্বয়ংবরসভায় যাবেন। সাধারণদের মনেও প্রবল কৌতূহল। পাণ্ডবরাও তার ব্যতিক্রম নন।
ভাল না মন্দ, শুভ না অশুভ কোন উদ্দেশ্যসাধনের লক্ষ্যে মানুষের জন্ম? জানা নেই। অনেক সময়ে ভাবি ঘটনার ইঙ্গিত পাওয়া সত্ত্বেও তা প্রতিরোধের ক্ষমতা আমাদের নেই। যেমন পাণ্ডবদের বোধ, বুদ্ধি, বিবেচনা একমুখী লক্ষ্যে ধাবিত হয়েছে। আচার্য বেদব্যাসের ভবিষ্যদ্বাণী সফল হতেই হবে যে।
সুরক্ষিত গৃহকোণ নয়, দ্বন্দ্বময় যাপনে জীবন নিজেই একজন শিক্ষক। প্রতি পদক্ষেপে বাধা বিপত্তি, প্রতিকূলতা জয়ের মধ্যে আছে সম্পূর্ণতা, আছে আত্মবিশ্বাসলাভের অভয়বার্তা, জয়ের আনন্দ, কখনও বা মিত্রলাভ, কখনও বিরুদ্ধশক্তির উত্থান, শেষে এই অমেয় অমৃতমন্থনের ফল জীবনানন্দ কিংবা পরাজিতের গ্লানিময় গরল। সব মিলিয়ে এই বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন সবাই, কৌরব পাণ্ডব সকলে। অভিজাত থেকে আভাজন, শেষ হাসি হাসবেন কে? জানেন শুধু বিধাতা পুরুষ।—চলবে।
অঙ্গারপর্ণের উপদেশে পঞ্চপাণ্ডব আচার্য ধৌম্যকে পুরোহিতরূপে বরণ করেছেন। জীবনে একজন পথপ্রদর্শক উপদেষ্টার প্রয়োজন আছে। ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রৌপদী দু’জনের শৈশবহীন জীবন। দু’জনেই পরিণত,দুজনেরই উদ্ভিন্ন যৌবন। অপরের একেকটি উদ্দেশ্যপূরণের কারণেই যেন দু’জনের উদ্ভব। তাঁদের দু’জনের খ্যাতি লোকমুখে ছড়িয়ে পরেছে দূরে দূরান্তে। পাঞ্চাল অভিমুখে ধাবমান অর্থী ব্রাহ্মণদের বিবরণে তা সুস্পষ্ট হয়েছে। ধৃষ্টদ্যুম্নের শৌর্য ও ভগ্নী পাঞ্চালীর রূপের খ্যাতিতে মুগ্ধ কীর্তিমান রাজারা যোগ্যা পত্নীলাভের উদ্দেশ্যে দ্রৌপদীর স্বয়ংবরসভায় যাবেন। সাধারণদের মনেও প্রবল কৌতূহল। পাণ্ডবরাও তার ব্যতিক্রম নন।
ভাল না মন্দ, শুভ না অশুভ কোন উদ্দেশ্যসাধনের লক্ষ্যে মানুষের জন্ম? জানা নেই। অনেক সময়ে ভাবি ঘটনার ইঙ্গিত পাওয়া সত্ত্বেও তা প্রতিরোধের ক্ষমতা আমাদের নেই। যেমন পাণ্ডবদের বোধ, বুদ্ধি, বিবেচনা একমুখী লক্ষ্যে ধাবিত হয়েছে। আচার্য বেদব্যাসের ভবিষ্যদ্বাণী সফল হতেই হবে যে।
সুরক্ষিত গৃহকোণ নয়, দ্বন্দ্বময় যাপনে জীবন নিজেই একজন শিক্ষক। প্রতি পদক্ষেপে বাধা বিপত্তি, প্রতিকূলতা জয়ের মধ্যে আছে সম্পূর্ণতা, আছে আত্মবিশ্বাসলাভের অভয়বার্তা, জয়ের আনন্দ, কখনও বা মিত্রলাভ, কখনও বিরুদ্ধশক্তির উত্থান, শেষে এই অমেয় অমৃতমন্থনের ফল জীবনানন্দ কিংবা পরাজিতের গ্লানিময় গরল। সব মিলিয়ে এই বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন সবাই, কৌরব পাণ্ডব সকলে। অভিজাত থেকে আভাজন, শেষ হাসি হাসবেন কে? জানেন শুধু বিধাতা পুরুষ।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।