ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
পাণ্ডবদের রাজ্য প্রাপ্তি বিষয়ক আলোচনায়, কুরুপ্রধান ধৃতরাষ্ট্র, উপদেষ্টামণ্ডলীর পরামর্শগুলি শুনলেন। দুর্যোধনের সখা কর্ণ, প্রাজ্ঞ ভীষ্ম, অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য ও ধার্মিক বৈমাত্রেয় অনুজ বিদুর সকলেই যথাক্রমে তাঁদের অভিমত ব্যক্ত করলেন। ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্ম, দ্রোণ ও বিদুরের সুপ্রস্তাবগুলির প্রশংসা করলেন। স্বীকার করলেন, পাণ্ডুপুত্র যুধিষ্ঠির ও তাঁর ভাইরা সকলেই তাঁর পুত্রপ্রতিম। এই রাজ্য তিনি যেমন তাঁর পুত্রদের দিয়েছেন তেমনই নিঃসংশয়ে পাণ্ডুপুত্রদের এই রাজ্য প্রাপ্য। বিদুরকে নির্দেশ দিলেন ধৃতরাষ্ট্র, যাও, মায়ের সঙ্গে ,দেবীরূপিণী কৃষ্ণা দ্রৌপদী সহ আদরণীয় পাণ্ডবদের নিয়ে এস। ক্ষত্তরানয় গচ্ছৈতান্ সহ মাত্রা সুসৎকৃতান্। তয়া চ দেবরূপিণ্যা কৃষ্ণয়া-সহ ভারত।।
ধৃতরাষ্ট্র বললেন, সৌভাগ্যক্রমে মাতা কুন্তীসহ পাণ্ডবরা জীবিত আছেন। মহাবীর পৃথাপুত্ররা দ্রুপদকন্যাকে লাভ করেছেন। পরম ভাগ্য যে এর ফলে কুরুকুলের সকলের অভ্যুদয় সম্ভব হয়েছে।পুরোচন মৃত, সকলের দুঃখদিনের অবসান হয়েছে।
ধৃতরাষ্ট্রের আদেশানুসারে বিদুর, দ্রৌপদী, পাণ্ডব ও দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেনের জন্যে বিবিধ ধনরত্ন নিয়ে দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেন ও পাণ্ডবদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। ধর্মবিদ ও সর্বশাস্ত্রজ্ঞ বিদুর বৈবাহিক সম্বন্ধানুসারে যথাযথভাবে দ্রুপদ রাজাকে নমস্কারাদির মাধ্যমে অভিনন্দিত করলেন। রাজা দ্রুপদও প্রত্যুত্তরে ধর্মসম্মত নিয়মে বিদুরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলেন। পরস্পর কুশলপ্রশ্নাদি শিষ্টাচারমূলক সম্ভাষণ সম্পন্ন হল। পাণ্ডব ও কৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্নেহভরে তাঁদের আলিঙ্গন করে তাঁদের সুস্থতা সম্বন্ধে অবহিত হলেন। অপরিমিত বুদ্ধিমান বিদুর, তাঁকে যুধিষ্ঠির ও পাণ্ডবভায়েরা ক্রমানুসারে সম্মান জানালেন। বিদুর, ধৃতরাষ্ট্রের নির্দশানুসারে সস্নেহে পাণ্ডুপুত্রদের সুস্থতাবিষয়ে প্রশ্ন করতে লাগলেন এবং সপাণ্ডব কুন্তী, দ্রৌপদী, দ্রুপদ ও দ্রুপদপুত্রদের বিবিধ ধন রত্নাদি প্রদান করলেন।
মহামতি বিদুর বিনয়সহকারে প্রীতিভরে পাণ্ডব ও কৃষ্ণের উপস্থিতিতে, অমাত্য আগ্রহী। দ্রুপদের প্রতি, ধৃতরাষ্ট্র, চিরকালই প্রীত। (কুটুম্বিতার সম্বন্ধজনিত কারণে) প্রেম আরও দৃঢ় হওয়ায়, ধৃতরাষ্ট্র এবং শান্তনুপুত্র ভীষ্মসহ সকল কৌরব দ্রুফদরাজের কুশলবিষয়ে বার বার প্রশ্ন করেছেন। ভরদ্বাজপুত্র, মহা প্রজ্ঞাবান, দ্রুপদসখা দ্রোণাচার্য প্রগাঢ় আলিঙ্গনে রাজা দ্রুপদের কল্যাণ সম্বন্ধে জানতে ইচ্ছুক। ধৃতরাষ্ট্রসহ সকল কুরুকুল আপনার সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নিজেদের কৃতার্থ মনে করছেন। কৃতার্থং মন্যে আত্মানং তথা সর্ব্বেঽপি কৌরবাঃ। হে দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেন, আমার মনে হয়, কোনও রাজ্যলাভ তাঁদের কাছে তেমন প্রীতিপ্রদ নয়, যেমনটি আপনার সঙ্গে আত্মীয়তার সম্বন্ধ স্থাপনের ফলে হয়েছে। ন তথা রাজ্যসম্প্রাপ্তিস্তেষাং প্রীতিকরী মতা। যথা সম্বন্ধকং প্রাপ্য যজ্ঞসেন! ত্বয়া সহ।।
এই সব অবগত হয়ে দ্রুপদ যেন পাণ্ডবদের প্রেরণ করেন। পাণ্ডবদের দর্শনকামনায় কৌরবরা, ভয়ানক উৎসুক হয়ে আছেন। পৃথা কুন্তী এবং পাণ্ডবরা সুদীর্ঘ প্রবাসজীবনের শেষে (হস্তিনা) নগরী দর্শনে ব্যগ্র হয়ে আছেন। কৃষ্ণা দ্রৌপদীর দর্শনেচ্ছায়, পুরবাসী ও দেশবাসীগণ, সকল কুরুশ্রেষ্ঠদের পত্নীরা, সকলে অপেক্ষা করছেন। বিদুরের অনুরোধ, স ভবান্ পাণ্ডুপুত্রাণামাজ্ঞাপয়তু মা চিরম্।গমনং সহদারাণামেতদত্র মতং মম।। আপনি সস্ত্রীক পাণ্ডবদের গমনের আদেশ দিন।বিলম্ব করবেন না। এটিই আমার মত।বিদুর আশ্বস্ত করলেন,রাজা দ্রুপদ মহান পাণ্ডবদের বিদায় দিলে, বিদুর, ধৃতরাষ্ট্রের সমীপস্থ পাণ্ডবদের পুনরায় শীঘ্রই পাঠিয়ে দেবেন। কুন্তীসহ, কুন্তীপুত্ররা, কৃষ্ণাকে সঙ্গে নিয়ে আবার ফিরে আসবেন।
ধৃতরাষ্ট্র বললেন, সৌভাগ্যক্রমে মাতা কুন্তীসহ পাণ্ডবরা জীবিত আছেন। মহাবীর পৃথাপুত্ররা দ্রুপদকন্যাকে লাভ করেছেন। পরম ভাগ্য যে এর ফলে কুরুকুলের সকলের অভ্যুদয় সম্ভব হয়েছে।পুরোচন মৃত, সকলের দুঃখদিনের অবসান হয়েছে।
ধৃতরাষ্ট্রের আদেশানুসারে বিদুর, দ্রৌপদী, পাণ্ডব ও দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেনের জন্যে বিবিধ ধনরত্ন নিয়ে দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেন ও পাণ্ডবদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। ধর্মবিদ ও সর্বশাস্ত্রজ্ঞ বিদুর বৈবাহিক সম্বন্ধানুসারে যথাযথভাবে দ্রুপদ রাজাকে নমস্কারাদির মাধ্যমে অভিনন্দিত করলেন। রাজা দ্রুপদও প্রত্যুত্তরে ধর্মসম্মত নিয়মে বিদুরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলেন। পরস্পর কুশলপ্রশ্নাদি শিষ্টাচারমূলক সম্ভাষণ সম্পন্ন হল। পাণ্ডব ও কৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্নেহভরে তাঁদের আলিঙ্গন করে তাঁদের সুস্থতা সম্বন্ধে অবহিত হলেন। অপরিমিত বুদ্ধিমান বিদুর, তাঁকে যুধিষ্ঠির ও পাণ্ডবভায়েরা ক্রমানুসারে সম্মান জানালেন। বিদুর, ধৃতরাষ্ট্রের নির্দশানুসারে সস্নেহে পাণ্ডুপুত্রদের সুস্থতাবিষয়ে প্রশ্ন করতে লাগলেন এবং সপাণ্ডব কুন্তী, দ্রৌপদী, দ্রুপদ ও দ্রুপদপুত্রদের বিবিধ ধন রত্নাদি প্রদান করলেন।
মহামতি বিদুর বিনয়সহকারে প্রীতিভরে পাণ্ডব ও কৃষ্ণের উপস্থিতিতে, অমাত্য আগ্রহী। দ্রুপদের প্রতি, ধৃতরাষ্ট্র, চিরকালই প্রীত। (কুটুম্বিতার সম্বন্ধজনিত কারণে) প্রেম আরও দৃঢ় হওয়ায়, ধৃতরাষ্ট্র এবং শান্তনুপুত্র ভীষ্মসহ সকল কৌরব দ্রুফদরাজের কুশলবিষয়ে বার বার প্রশ্ন করেছেন। ভরদ্বাজপুত্র, মহা প্রজ্ঞাবান, দ্রুপদসখা দ্রোণাচার্য প্রগাঢ় আলিঙ্গনে রাজা দ্রুপদের কল্যাণ সম্বন্ধে জানতে ইচ্ছুক। ধৃতরাষ্ট্রসহ সকল কুরুকুল আপনার সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নিজেদের কৃতার্থ মনে করছেন। কৃতার্থং মন্যে আত্মানং তথা সর্ব্বেঽপি কৌরবাঃ। হে দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেন, আমার মনে হয়, কোনও রাজ্যলাভ তাঁদের কাছে তেমন প্রীতিপ্রদ নয়, যেমনটি আপনার সঙ্গে আত্মীয়তার সম্বন্ধ স্থাপনের ফলে হয়েছে। ন তথা রাজ্যসম্প্রাপ্তিস্তেষাং প্রীতিকরী মতা। যথা সম্বন্ধকং প্রাপ্য যজ্ঞসেন! ত্বয়া সহ।।
এই সব অবগত হয়ে দ্রুপদ যেন পাণ্ডবদের প্রেরণ করেন। পাণ্ডবদের দর্শনকামনায় কৌরবরা, ভয়ানক উৎসুক হয়ে আছেন। পৃথা কুন্তী এবং পাণ্ডবরা সুদীর্ঘ প্রবাসজীবনের শেষে (হস্তিনা) নগরী দর্শনে ব্যগ্র হয়ে আছেন। কৃষ্ণা দ্রৌপদীর দর্শনেচ্ছায়, পুরবাসী ও দেশবাসীগণ, সকল কুরুশ্রেষ্ঠদের পত্নীরা, সকলে অপেক্ষা করছেন। বিদুরের অনুরোধ, স ভবান্ পাণ্ডুপুত্রাণামাজ্ঞাপয়তু মা চিরম্।গমনং সহদারাণামেতদত্র মতং মম।। আপনি সস্ত্রীক পাণ্ডবদের গমনের আদেশ দিন।বিলম্ব করবেন না। এটিই আমার মত।বিদুর আশ্বস্ত করলেন,রাজা দ্রুপদ মহান পাণ্ডবদের বিদায় দিলে, বিদুর, ধৃতরাষ্ট্রের সমীপস্থ পাণ্ডবদের পুনরায় শীঘ্রই পাঠিয়ে দেবেন। কুন্তীসহ, কুন্তীপুত্ররা, কৃষ্ণাকে সঙ্গে নিয়ে আবার ফিরে আসবেন।
বিদুরের প্রস্তাবের যাথার্থ্য বিষয়ে দ্রুপদরাজ সহমত পোষণ করলেন। কুরুবংশের সঙ্গে এই বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপনহেতু তিনি আনন্দিত। কিন্তু পাণ্ডবদের স্বরাজ্যে প্রত্যাবর্তনবিষয়ে স্বয়ং সিদ্ধান্তগ্রহণে দ্বিধান্বিত হলেন। ন তু তাবন্ময়া যুক্তমেতদ্বক্তুং স্বয়ং গিরা। তিনি নিজ মুখে এই ঘোষণা, যুক্তিযুক্ত মনে করলেন না। তাঁর বিবেচনায়, যুধিষ্ঠির, ভীমসেন, অর্জুন, নকুল ও সহদেব যদি সম্মত হন, সেই সঙ্গে ধার্মিক বলরাম ও কৃষ্ণ তাঁদের সঙ্গে সহমত হন তখনই পাণ্ডবরা যেতে পারেন সেখানে। কারণ কৃষ্ণ ও বলরাম এই দুজন পুরুষশ্রেষ্ঠ পাণ্ডবদের প্রিয় মঙ্গল কামনা করেন। যুধিষ্ঠির, অনুচরবর্গসহ দ্রুপদরাজের অধীনে রয়েছেন। তাই যুধিষ্ঠির জানালেন, রাজা যেমন বলবেন তাঁরা সানন্দে সেটিই করবেন। যথা বক্ষ্যসি নঃ প্রীত্যা তৎ করিষ্যামহে বয়ম্। পাণ্ডবদের গমনবিষয়ে, নীতিবিদ দ্রুপদের সেই সিদ্ধান্তে বাসুদেব প্রীত হলেন। দ্রুপদ কৃষ্ণের বক্তব্যের সমর্থনে জানালেন, পুরুষোত্তম মহাবলী কৃষ্ণ যথাসময়ে যে মত প্রকাশ করেছেন সেটি নিঃসংশয়ে গ্রহণযোগ্য।
সম্প্রতি, পাণ্ডবরা, দ্রুপদের কাছে যেমন প্রিয় তেমনই বাসুদেবের কাছে তাঁরা চিরদিনের প্রিয়। পাণ্ডুপুত্র যুধিষ্ঠির নিজেও বোধ হয় সেভাবে নিজেদের কল্যাণ চিন্তা করেন না যতটা এই পুরুষব্যাঘ্র কৃষ্ণ তাঁদের সম্বন্ধে ভাবেন। রাজা দ্রুপদের অনুমতিক্রমে পঞ্চ পাণ্ডব, কৃষ্ণ, বিদুর, কৃষ্ণা দ্রৌপদী ও যশস্বিনী কুন্তীকে সঙ্গে নিয়ে বিলাসসহকারে সুখে হস্তিনাপুরের উদ্দেশে যাত্রা করলেন।বীর পাণ্ডবদের আগমনবার্তা শুনে,জনগণের প্রভু ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডবদের সাদর সম্বর্ধনার্থে বিকর্ণ, উদারমনা চিত্রসেন প্রভৃতি কৌরবদের এবং দ্রোণাচার্য, গৌতম কৃপাচার্যকে, প্রেরণ করলেন। কৌরবপরিবৃত ও শোভিত বীর, মহাবীর পাণ্ডবগণ ধীরে ধীরে হস্তিনাপুরে প্রবেশ করলেন। পাণ্ডবদের আগমনবার্তা শুনতে পেয়ে, পুরবাসীরা কৌতূহলভরে হস্তিনাপুর নগরটিকে সুসজ্জিত করলেন। তাঁদের নিক্ষিপ্ত ফুলে সমাচ্ছন্ন হল চতুর্দিক, সর্বত্র জলসিক্ত হল, সুগন্ধি মাঙ্গলিক ধূপ জ্বলে উঠল, মাঙ্গলিক দ্রব্যে সাজিয়ে রাখা হল, উত্তোলিত পতাকায় মালা দুলে উঠল, শঙ্খ ও ভেরীর নিনাদে এবং নানা বাদ্যধ্বনিতে, অতুলনীয় হয়ে উঠল নগরটি।
শোকদুঃখবিনাশক পুরুষশ্রেষ্ঠরা যেখানে উপস্থিত হয়েছেন, সেই নগর যেন কৌতুকহেতু প্রোজ্জ্বল হয়ে শোভমান হল। পাণ্ডবহিতৈষী, প্রিয় কাজ করতে ইচ্ছুক এমন পৌরবৃন্দ, পাণ্ডবদের হৃদয়ঙ্গম হয় এমন নানা প্রকার কথা উচ্চকণ্ঠে বলতে লাগলেন। এই সেই পুরুষশ্রেষ্ঠ ধর্মজ্ঞ যুধিষ্ঠির, যিনি ধর্মসঙ্গত উপায়ে আমাদের নিজের পুত্রবৎ রক্ষা করবেন।
সম্প্রতি, পাণ্ডবরা, দ্রুপদের কাছে যেমন প্রিয় তেমনই বাসুদেবের কাছে তাঁরা চিরদিনের প্রিয়। পাণ্ডুপুত্র যুধিষ্ঠির নিজেও বোধ হয় সেভাবে নিজেদের কল্যাণ চিন্তা করেন না যতটা এই পুরুষব্যাঘ্র কৃষ্ণ তাঁদের সম্বন্ধে ভাবেন। রাজা দ্রুপদের অনুমতিক্রমে পঞ্চ পাণ্ডব, কৃষ্ণ, বিদুর, কৃষ্ণা দ্রৌপদী ও যশস্বিনী কুন্তীকে সঙ্গে নিয়ে বিলাসসহকারে সুখে হস্তিনাপুরের উদ্দেশে যাত্রা করলেন।বীর পাণ্ডবদের আগমনবার্তা শুনে,জনগণের প্রভু ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডবদের সাদর সম্বর্ধনার্থে বিকর্ণ, উদারমনা চিত্রসেন প্রভৃতি কৌরবদের এবং দ্রোণাচার্য, গৌতম কৃপাচার্যকে, প্রেরণ করলেন। কৌরবপরিবৃত ও শোভিত বীর, মহাবীর পাণ্ডবগণ ধীরে ধীরে হস্তিনাপুরে প্রবেশ করলেন। পাণ্ডবদের আগমনবার্তা শুনতে পেয়ে, পুরবাসীরা কৌতূহলভরে হস্তিনাপুর নগরটিকে সুসজ্জিত করলেন। তাঁদের নিক্ষিপ্ত ফুলে সমাচ্ছন্ন হল চতুর্দিক, সর্বত্র জলসিক্ত হল, সুগন্ধি মাঙ্গলিক ধূপ জ্বলে উঠল, মাঙ্গলিক দ্রব্যে সাজিয়ে রাখা হল, উত্তোলিত পতাকায় মালা দুলে উঠল, শঙ্খ ও ভেরীর নিনাদে এবং নানা বাদ্যধ্বনিতে, অতুলনীয় হয়ে উঠল নগরটি।
শোকদুঃখবিনাশক পুরুষশ্রেষ্ঠরা যেখানে উপস্থিত হয়েছেন, সেই নগর যেন কৌতুকহেতু প্রোজ্জ্বল হয়ে শোভমান হল। পাণ্ডবহিতৈষী, প্রিয় কাজ করতে ইচ্ছুক এমন পৌরবৃন্দ, পাণ্ডবদের হৃদয়ঙ্গম হয় এমন নানা প্রকার কথা উচ্চকণ্ঠে বলতে লাগলেন। এই সেই পুরুষশ্রেষ্ঠ ধর্মজ্ঞ যুধিষ্ঠির, যিনি ধর্মসঙ্গত উপায়ে আমাদের নিজের পুত্রবৎ রক্ষা করবেন।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৬: রাজনৈতিক পরিসরে অখ্যাতি ও সন্দেহর আবিলতা থেকে কি মুক্তি সম্ভব?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৫: রবীন্দ্রনাথ ভয় পেতেন মহর্ষিদেবকে
অয়ং স পুরুষব্যাঘ্রঃ পুনরায়াতি ধর্ম্মবিৎ। যো নঃ স্বানিব দায়াদান্ ধর্ম্মেণ পরিরক্ষতি।। পুরবাসীদের মনে হল, জনপ্রিয় মহান রাজা পাণ্ডু যেন প্রজাদের হিতকামনায় অরণ্য থেকে ফিরে এসেছেন। তাঁরা আজ কোন কাজটি করবেন না তা ভেবেই অস্থির হয়েছেন। যেহেতু তাঁদের সকলের পরম প্রিয়, সেই বীর কৌন্তেয়রা আবার আসছেন এই নগরে। পুরবাসীদের অনুভব — যদি তাঁরা দান করে থাকেন, যদি বা যজ্ঞে আহুতি প্রদান করে থাকেন, যদি তাঁদের তপস্যায় অর্জিত ফললাভ হয়ে থাকে তবে যেন পাণ্ডবরা শত শরৎ এখানেই বিরাজ করেন। পাণ্ডুপুত্ররা ধৃতরাষ্ট্র,ভীষ্ম এবং অন্যান্য মহান কুরুশ্রেষ্ঠদের যথাযোগ্য পদবন্দনা করলেন। নগরবাসীদের সঙ্গে পারস্পরিক কুশল সংবাদ বিনিময়ের পরে, ধৃতরাষ্ট্রের আদেশানুসারে নিজেদের আবাসে প্রবেশ করলেন পঞ্চ পাণ্ডব।
কাশিরাজতনয়া দুর্যোধনপত্নী, ধৃতরাষ্ট্রের অন্যান্য বধূমাতাদের সঙ্গে একত্রে সাধ্বী লক্ষ্মীর তুল্য দ্রৌপদীকে আদরের সঙ্গে গ্রহণ করলেন। যেন শচী সমাগতা, তাঁর তুল্যা সম্মানীয়া দ্রৌপদীকে, অভিবাদন করলেন সকলে। দেবী কুন্তী, কৃষ্ণার সঙ্গে একযোগে গান্ধারীকে প্রণতি নিবেদন করলেন।
আলিঙ্গনাবদ্ধা, কমলনয়না দ্রৌপদীর স্পর্শে যেন এক অশুভ ইঙ্গিত। গান্ধারীর মনে হল, এই পাঞ্চালীই হবেন আমার পুত্রদের মৃত্যুর কারণ। পরিষ্বজ্যৈব গান্ধারী কৃষ্ণাং কমললোচনাম্। পুত্রাণাং মম পাঞ্চালী মৃত্যুরেবেত্যমন্যত।। সুবলকন্যা গান্ধারী, সুচিন্তিত, যুক্তিসঙ্গত, সিদ্ধান্ত জানালেন বিদুরকে। আপনার যদি রুচিকর মনে হয় তবে, অন্যতম, লগ্ন, নক্ষত্র এগুলির যোগে শুভ তিথিতে সমস্ত উপকরণ সহযোগে, দেবী কুন্তীকে, বধূমাতা রাজপুত্রীসহ, পাণ্ডুর আলয়ে সত্বর নিয়ে যান। কুন্তীং রাজসুতাং ক্ষত্তঃ! সবধূং সপরিচ্ছদাম্।। পাণ্ডোর্নিবেশনং শীঘ্রং নীয়তাং যদি রোচতে। করণেন মুহূর্ত্তেন নক্ষত্রেণ শুভে তিথৌ।। যেমন খুশি তেমনভাবেই কুন্তী যেন পুত্রদের সঙ্গে স্বগৃহে বসবাস করেন।
‘তাই হোক’ বলে বিদুর সেই মতোই কাজটি করলেন। বন্ধুবর্গ, নাগরিকবৃন্দ, নিজ নিজ দলের প্রধানরা, পাণ্ডবদের অত্যন্ত সম্মান প্রদর্শন করতে লাগলেন। ধৃতরাষ্ট্রের আদেশক্রমে, মাননীয় ভীষ্ম, আচার্য দ্রোণ, কৃপাচার্য, কর্ণ, স্বপুত্র বাহ্লীক, অতিথিক্রিয়া অর্থাৎ ভোজন প্রভৃতির ব্যবস্থা করলেন। এমনভাবে দিন অতিবাহিত হল যখন, ধৃতরাষ্ট্রের আদেশানুসারে মহান পাণ্ডবদের সব কাজের দিশারী হলেন বিদুর। কিছুকাল বিশ্রাম নেওয়ার পরে মহাবীর পাণ্ডবদের ডেকে পাঠালেন শান্তনুপুত্র ভীষ্ম ও রাজা ধৃতরাষ্ট্র।
কাশিরাজতনয়া দুর্যোধনপত্নী, ধৃতরাষ্ট্রের অন্যান্য বধূমাতাদের সঙ্গে একত্রে সাধ্বী লক্ষ্মীর তুল্য দ্রৌপদীকে আদরের সঙ্গে গ্রহণ করলেন। যেন শচী সমাগতা, তাঁর তুল্যা সম্মানীয়া দ্রৌপদীকে, অভিবাদন করলেন সকলে। দেবী কুন্তী, কৃষ্ণার সঙ্গে একযোগে গান্ধারীকে প্রণতি নিবেদন করলেন।
আলিঙ্গনাবদ্ধা, কমলনয়না দ্রৌপদীর স্পর্শে যেন এক অশুভ ইঙ্গিত। গান্ধারীর মনে হল, এই পাঞ্চালীই হবেন আমার পুত্রদের মৃত্যুর কারণ। পরিষ্বজ্যৈব গান্ধারী কৃষ্ণাং কমললোচনাম্। পুত্রাণাং মম পাঞ্চালী মৃত্যুরেবেত্যমন্যত।। সুবলকন্যা গান্ধারী, সুচিন্তিত, যুক্তিসঙ্গত, সিদ্ধান্ত জানালেন বিদুরকে। আপনার যদি রুচিকর মনে হয় তবে, অন্যতম, লগ্ন, নক্ষত্র এগুলির যোগে শুভ তিথিতে সমস্ত উপকরণ সহযোগে, দেবী কুন্তীকে, বধূমাতা রাজপুত্রীসহ, পাণ্ডুর আলয়ে সত্বর নিয়ে যান। কুন্তীং রাজসুতাং ক্ষত্তঃ! সবধূং সপরিচ্ছদাম্।। পাণ্ডোর্নিবেশনং শীঘ্রং নীয়তাং যদি রোচতে। করণেন মুহূর্ত্তেন নক্ষত্রেণ শুভে তিথৌ।। যেমন খুশি তেমনভাবেই কুন্তী যেন পুত্রদের সঙ্গে স্বগৃহে বসবাস করেন।
‘তাই হোক’ বলে বিদুর সেই মতোই কাজটি করলেন। বন্ধুবর্গ, নাগরিকবৃন্দ, নিজ নিজ দলের প্রধানরা, পাণ্ডবদের অত্যন্ত সম্মান প্রদর্শন করতে লাগলেন। ধৃতরাষ্ট্রের আদেশক্রমে, মাননীয় ভীষ্ম, আচার্য দ্রোণ, কৃপাচার্য, কর্ণ, স্বপুত্র বাহ্লীক, অতিথিক্রিয়া অর্থাৎ ভোজন প্রভৃতির ব্যবস্থা করলেন। এমনভাবে দিন অতিবাহিত হল যখন, ধৃতরাষ্ট্রের আদেশানুসারে মহান পাণ্ডবদের সব কাজের দিশারী হলেন বিদুর। কিছুকাল বিশ্রাম নেওয়ার পরে মহাবীর পাণ্ডবদের ডেকে পাঠালেন শান্তনুপুত্র ভীষ্ম ও রাজা ধৃতরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৯: টাকা-পয়সা থাকলে চোর-ডাকাতকেও লোকে সম্মান দেখায়
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৭: ভাগ নুনিয়া, ভাগ
ধৃতরাষ্ট্র বললেন, পাণ্ডব ভাইসকল, কৌন্তেয়, তোমরা, আমি যা বলছি, শোন। যাতে আমাদের মধ্যে আর বিরোধ না হয়, তাই তোমরা খাণ্ডবপ্রস্থে বসবাস কর। ভ্রাতৃভিঃ সহ কৌন্তেয়! নিবোধ গদতো মম। পুনর্নো বিগ্রহো মাভূৎ খাণ্ডবপ্রস্থমাবিশ।। পার্থ অর্জুন পাণ্ডবদের রক্ষকরূপে থাকবেন সেখানে, এমন অবস্থায়, সেখানে তাঁরা বসবাস করলে, ইন্দ্রের দ্বারা রক্ষিত দেবতাদের মতো কেউ পাণ্ডবদের বাধা দিতে পারবে না। তাই রাজ্যার্দ্ধের প্রাপ্তি স্বীকার করে তোমরা খাণ্ডবপ্রস্থে প্রবেশ কর। অর্দ্ধং রাজ্যস্য সম্প্রাপ্য খাণ্ডবপ্রস্থমাবিশ।
ধৃতরাষ্ট্রের রাজ্যার্দ্ধগ্রহণের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে, পাণ্ডবগণ গহন বনপথে ধরে খাণ্ডবপ্রস্থের উদ্দেশে প্রস্থান করলেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে, কৃষ্ণের সান্নিধ্যে সুরলোকসদৃশ নগরটির শোভাবর্ধন করলেন। সেই মঙ্গলময় পুণ্যভূমিতে শান্তি বিধায়ক মঙ্গলাচরণ করে, মহর্ষি বেদব্যাসকে সামনে রেখে নগরটির (সীমা নির্দেশের কারণে) পরিমাপ করলেন। সমুদ্রপ্রতিম পরিখা দিয়ে অলঙ্কৃত, গগনস্পর্শী ধবলমেঘবরণ যার, এমন চন্দ্রকিরণসদৃশ শুভ্রতাযুক্ত প্রাচীর ঘিরে রেখেছে নগরটিকে। যেন নাগপরিবেষ্টিত পাতালপুরীর শোভা ধারণ করল সেই নগর। বহু সৌধে সজ্জিত, গরুড়ের প্রসারিত পাখাদুটির তুল্য দ্বারের কপাটগুলি, বিশাল আকাশছোঁয়া মন্দার পর্বতের সঙ্গে তুলনীয় এর গোপুর বা দ্বার। অত্যন্ত সুরক্ষিত এই নগরটি।
ধৃতরাষ্ট্রের রাজ্যার্দ্ধগ্রহণের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে, পাণ্ডবগণ গহন বনপথে ধরে খাণ্ডবপ্রস্থের উদ্দেশে প্রস্থান করলেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে, কৃষ্ণের সান্নিধ্যে সুরলোকসদৃশ নগরটির শোভাবর্ধন করলেন। সেই মঙ্গলময় পুণ্যভূমিতে শান্তি বিধায়ক মঙ্গলাচরণ করে, মহর্ষি বেদব্যাসকে সামনে রেখে নগরটির (সীমা নির্দেশের কারণে) পরিমাপ করলেন। সমুদ্রপ্রতিম পরিখা দিয়ে অলঙ্কৃত, গগনস্পর্শী ধবলমেঘবরণ যার, এমন চন্দ্রকিরণসদৃশ শুভ্রতাযুক্ত প্রাচীর ঘিরে রেখেছে নগরটিকে। যেন নাগপরিবেষ্টিত পাতালপুরীর শোভা ধারণ করল সেই নগর। বহু সৌধে সজ্জিত, গরুড়ের প্রসারিত পাখাদুটির তুল্য দ্বারের কপাটগুলি, বিশাল আকাশছোঁয়া মন্দার পর্বতের সঙ্গে তুলনীয় এর গোপুর বা দ্বার। অত্যন্ত সুরক্ষিত এই নগরটি।
আরও পড়ুন:
ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৪৪: ত্রিপুরার মাণিক্য রাজাগণ সর্বদা সাহিত্য সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করে গিয়েছেন
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮১: সুন্দরবনের পাখি—বেনে বউ
ছিদ্রহীন ও অভেদ্য শস্ত্র যথোপযুক্ত স্থানে সংরক্ষণযোগ্য, বাহুবলের দ্বারা নিক্ষেপ করা হয় এমন লৌহময় শক্তি অস্ত্র, যা দ্বিজিহ্বাযুক্ত সাপের মতো এই সব অস্ত্রসমূহ সংগৃহীত হল। অট্টালিকাগুলির নির্মাণকাজে যুক্ত শ্রমিকদের রক্ষাকার্যে রইলেন যোদ্ধারা। প্রাকারশীর্ষে স্থাপিত যন্ত্রবিশেষে (আগ্নেয় দ্রব্যনিক্ষেপ করে অনেক প্রাণঘাতক, কামান জাতীয় যন্ত্র) যাঁর মধ্যে তীক্ষ্ণ অঙ্কুশ স্থাপিত হল, এমন অনেক বিবিধ যন্ত্র, সৌন্দর্য সৃষ্টি করল সেখানে। লোহা নির্মিত মহাচক্র শ্রেষ্ঠনগরটির শোভাবর্দ্ধন করল। সেখানে রাজপথগুলি পৃথকভাবে বিন্যস্ত। দৈব উৎপাতের (ভূকম্পনাদি) সম্ভাবনা বর্জিত সেই নগর। বিবিধ উত্তম শুভ্রবর্ণ গৃহগুলিতে সজ্জিত, সুরলোকতুল্য হল সেই ইন্দ্রপ্রস্থ নগর।
সেখানে, সেই সুন্দর শুভ স্থানে, যুধিষ্ঠিরের গৃহ, বিদ্যুতে শোভিত মেঘ হয়ে যেন আকাশে মিশে গেল। কুবেরালয়তুল্য ধনে পরিপূর্ণ ইন্দ্রপ্রস্থ নগরের শোভা। সেখানে সর্ববেদজ্ঞ শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণদের সমাগম হল যেমন, তেমনই সেখানে সর্বভাষাবিদরা বাস করতে ইচ্ছুক হলেন। নানা দিক হতে ধন লাভের ইচ্ছায় বণিকেরা ভিড় জমালেন।তখন সর্বশিল্পবিদেরা বসবাসের জন্যে উপস্থিত হলেন। নগরের চারিদিকে রমণীয় উদ্যানসমূহ রয়েছে। সেগুলি আম, আমড়া, কদম্ব, অশোক, চাঁপা, পুন্নাগ, নাগকেশর, মহুয়া, শাল, তাল, তমাল, বকুল, কেতকী, মনোহর কুসুমিত ফলভারে অবনত, প্রাচীন আমলা, লোধ্র, আকোড়, সপুষ্প জাম, পাটলা, কুব্জা, তিনিশ, করবীর, পারিজাত এবং বিবিধ তরুরাজিবিশিষ্ট। নিত্য পুষ্পফলসমন্বিত বৃক্ষগুলি। সেখানে রয়েছেন নানা দেশ থেকে আগত অযুত সংখ্যক ব্রাহ্মণরা, প্রমত্ত ময়ূরের কেকা ধ্বনিতে পরিপূর্ণ, সদা মত্ত কোকিলের রবে মুখর, সেই উপবনগুলিতে ছিল আদর্শ দর্পণবৎ স্বচ্ছ নির্মল বিবিধ লতাগৃহ।
সেখানে, সেই সুন্দর শুভ স্থানে, যুধিষ্ঠিরের গৃহ, বিদ্যুতে শোভিত মেঘ হয়ে যেন আকাশে মিশে গেল। কুবেরালয়তুল্য ধনে পরিপূর্ণ ইন্দ্রপ্রস্থ নগরের শোভা। সেখানে সর্ববেদজ্ঞ শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণদের সমাগম হল যেমন, তেমনই সেখানে সর্বভাষাবিদরা বাস করতে ইচ্ছুক হলেন। নানা দিক হতে ধন লাভের ইচ্ছায় বণিকেরা ভিড় জমালেন।তখন সর্বশিল্পবিদেরা বসবাসের জন্যে উপস্থিত হলেন। নগরের চারিদিকে রমণীয় উদ্যানসমূহ রয়েছে। সেগুলি আম, আমড়া, কদম্ব, অশোক, চাঁপা, পুন্নাগ, নাগকেশর, মহুয়া, শাল, তাল, তমাল, বকুল, কেতকী, মনোহর কুসুমিত ফলভারে অবনত, প্রাচীন আমলা, লোধ্র, আকোড়, সপুষ্প জাম, পাটলা, কুব্জা, তিনিশ, করবীর, পারিজাত এবং বিবিধ তরুরাজিবিশিষ্ট। নিত্য পুষ্পফলসমন্বিত বৃক্ষগুলি। সেখানে রয়েছেন নানা দেশ থেকে আগত অযুত সংখ্যক ব্রাহ্মণরা, প্রমত্ত ময়ূরের কেকা ধ্বনিতে পরিপূর্ণ, সদা মত্ত কোকিলের রবে মুখর, সেই উপবনগুলিতে ছিল আদর্শ দর্পণবৎ স্বচ্ছ নির্মল বিবিধ লতাগৃহ।
আরও পড়ুন:
শ্যাম বেনেগল সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারতেন
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭৮: মা সারদার ‘পরকে আপন করা’
মনোরম চিত্রশালা ও রাজাদের জন্য নির্মিত কৃত্রিম কেলিপর্বত। সেখানে জলাশয়গুলি জলে পরিপূর্ণ। সরোবরগুলি পদ্ম ও উৎপলের সৌরভে সুরভিত এবং মনোহর। সেগুলি হংস, কারণ্ডব, চক্রবাকে সজ্জিত ছিল। রমণীয়, বিবিধ পুষ্করিণী ও বহু সুন্দর বৃহৎ জলাশয়গুলি দিয়ে, বনভূমি আবৃত ছিল। ধার্মিক জনগণ অধ্যুষিত সেই মহান রাষ্ট্রে প্রবিষ্ট হয়ে পাণ্ডবদের আনন্দজনিত তৃপ্তি, দিনে দিনে বৃদ্ধি পেল। ধর্মানুসারে ভীষ্ম ও ধৃতরাষ্ট্রের প্রদত্ত রাজ্যে, পাণ্ডবগণ ইন্দ্রপ্রস্থনিবাসী হলেন। ইন্দ্রতুল্য মহাধনুর্দ্ধর পঞ্চ পাণ্ডব সমন্বিত সেই সর্বোত্তম ইন্দ্রপ্রস্থ নগর, নাগ পরিবেষ্টিত পাতালের শোভা বিস্তার করল। পাণ্ডবদের সেখানে প্রতিষ্ঠিত করে তাঁদের অনুমতিক্রমে বলরামের সঙ্গে কৃষ্ণ, দ্বারকায় প্রস্থান করলেন।
কুরুরাজ ধৃতরাষ্ট্র অবশেষে তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলীর সদর্থক উপদেশ গ্রহণ করলেন। তিনি তাঁদের বক্তব্যের মান্যতা দিয়ে পাণ্ডবদের প্রাপ্য রাজ্যাংশ ফিরিয়ে দিতে সম্মত হলেন। তিনি মান্যবর বিদুরকে আদেশ দিলেন মাতা কুন্তীসহ সস্ত্রীক পাণ্ডবদের কুরুরাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে নিয়ে আসা হোক। ধৃতরাষ্ট্রের শুভবোধ উদ্বোধনের মূল কারণ ছিল ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য ও বিদুরের সদুপদেশ। নাস্ত্যর্থক চিন্তা দূরীভূত হয়, সুস্থ সদর্থক চিন্তার আলোকে। ধৃতরাষ্ট্রের মৃত বিবেকবোধ, সংবেদনশীল মানসিকতার মুখোমুখি হয়ে কিছুকালের জন্যে হয়তো জাগরিত হল। মৃত বিবেকবোধ জেগে ওঠে সজ্জনসংসর্গে। সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সংসর্গে নরকবাস —এটি যে প্রমাণিত সত্য।এই পৃথিবীতেই এই স্বর্গ ও নরকের অস্তিত্ব লুকিয়ে আছে মনের গভীরের অনুভবে, অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ঊষর বন্ধুর জীবন পথে—মহাভারতীয় শিক্ষায় সেই সত্যের অনুভববেদ্য দর্শন হয়তো সম্ভব।
কুরুরাজ ধৃতরাষ্ট্র অবশেষে তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলীর সদর্থক উপদেশ গ্রহণ করলেন। তিনি তাঁদের বক্তব্যের মান্যতা দিয়ে পাণ্ডবদের প্রাপ্য রাজ্যাংশ ফিরিয়ে দিতে সম্মত হলেন। তিনি মান্যবর বিদুরকে আদেশ দিলেন মাতা কুন্তীসহ সস্ত্রীক পাণ্ডবদের কুরুরাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে নিয়ে আসা হোক। ধৃতরাষ্ট্রের শুভবোধ উদ্বোধনের মূল কারণ ছিল ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য ও বিদুরের সদুপদেশ। নাস্ত্যর্থক চিন্তা দূরীভূত হয়, সুস্থ সদর্থক চিন্তার আলোকে। ধৃতরাষ্ট্রের মৃত বিবেকবোধ, সংবেদনশীল মানসিকতার মুখোমুখি হয়ে কিছুকালের জন্যে হয়তো জাগরিত হল। মৃত বিবেকবোধ জেগে ওঠে সজ্জনসংসর্গে। সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সংসর্গে নরকবাস —এটি যে প্রমাণিত সত্য।এই পৃথিবীতেই এই স্বর্গ ও নরকের অস্তিত্ব লুকিয়ে আছে মনের গভীরের অনুভবে, অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ঊষর বন্ধুর জীবন পথে—মহাভারতীয় শিক্ষায় সেই সত্যের অনুভববেদ্য দর্শন হয়তো সম্ভব।
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
ধৃতরাষ্ট্র হার মেনেছেন শুভবোধের কাছে। মহান, শুভ চিন্তার, আধার বিদুর। তিনি ও তাঁর পারিপার্শ্বিকের সজ্জনদের, ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য, কুরুপ্রধান ধৃতরাষ্ট্রের চিন্তার উষ্ণ ওম পৌঁছে দিয়েছেন দ্রুপদরাজের হৃদয়ের গভীরে। আত্মীয়তার বৈবাহিক সম্বন্ধ ছাপিয়ে দুটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্কের বন্ধন সৃষ্টি করতে কৃতকার্য হয়েছেন বিদুর। তিনি, রাজা দ্রুপদের আস্থা অর্জন করেছেন।পাণ্ডবদের হিতাকাঙ্খী কৃষ্ণের সম্মতিসাপেক্ষ ছিল পাণ্ডবদের নিজরাজ্যে প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত। কৃষ্ণ ও দ্রুপদরাজ সহমত হয়েছেন। প্রজাবৃন্দ ও রাজপরিবারের সদস্যগণ পাণ্ডবদের সাদরে স্বাগত সম্ভাষণ জানিয়েছেন। ভীষ্ম ও ধৃতরাষ্ট্রের প্রস্তাব নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছেন পাণ্ডবরা। নির্বাসন নয়, রাজ্যের অর্দ্ধাংশ গ্রহণে কোন মতপার্থক্যের সম্মুখীন হননি কুরুরাজ ধৃতরাষ্ট্র। একবাক্যে, প্রতস্থিরে ততো ঘোরং বনং তন্মনুজর্ষভাঃ। গভীর বনপথ ধরে প্রস্থান করেছেন খাণ্ডবপ্রস্থের উদ্দেশে। সুরক্ষিত, প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্ট কৃত্রিম সৌন্দর্যে অপরূপ ইন্দ্রপ্রস্থনগরের সৃজনে হয়তো নিশ্চিতভাবে পাণ্ডবদের অবদান ছিল। সামর্থ্য মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। এই অন্তর্নিহিত আত্মশক্তিই হয়, নতুন কিছু শুরু করবার প্রেরণা। দৈব আনুকূল্য বলে যদি কিছু থাকে, সেটিও বোধ হয় আত্মশক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় গৌণ প্রতিপন্ন হয়।
পাণ্ডবদের নতুন, সুসমৃদ্ধ, অনুকূল পরিবেশ বিশিষ্ট, প্রতিষ্ঠিত রাজ্যে ধার্মিক মানুষের বসবাস। বেদবিদ শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণগণ, সর্বভাষাবিদ মানুষ প্রভৃতি বিদ্বজ্জনেরা বেছে নিয়েছেন সেই সজ্জন অধ্যুষিত স্থানটি। সুশাসকবর্গের সংশ্রবে, ধার্মিক হয়ে ওঠেন নাগরিকবৃন্দ। প্রাজ্ঞবিজ্ঞব্যক্তিত্ববহুল হয়ে ওঠে স্থানটি। মহাভারতে পাণ্ডবদের ইন্দ্রপ্রস্থের চালচিত্রে যেন সেই সুশাসিত ধর্মরাজ্যের প্রতিচ্ছবি। মন, প্রাণ, অধ্যবসায়, একনিষ্ঠতা থাকলে পাথরেও ফুল ফোটে, ঊষর মরুতেও মরূদ্যান সৃষ্টি হয়, অরাজক দেশেও নৈতিকতার সুবাতাস বয়ে যায়, যেখানে প্রবাহিত হয় সম্ভাবনার উদ্দীপনায় প্রভাবিত সদ্ভাবনা। মহাভারতের কাহিনিতে প্রচ্ছন্ন সদর্থকতার এমন অনেক দৃষ্টান্ত, যা হয়তো ভরতবংশীয়দের এখনও উদ্বুদ্ধ করে থাকে।—চলবে।
পাণ্ডবদের নতুন, সুসমৃদ্ধ, অনুকূল পরিবেশ বিশিষ্ট, প্রতিষ্ঠিত রাজ্যে ধার্মিক মানুষের বসবাস। বেদবিদ শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণগণ, সর্বভাষাবিদ মানুষ প্রভৃতি বিদ্বজ্জনেরা বেছে নিয়েছেন সেই সজ্জন অধ্যুষিত স্থানটি। সুশাসকবর্গের সংশ্রবে, ধার্মিক হয়ে ওঠেন নাগরিকবৃন্দ। প্রাজ্ঞবিজ্ঞব্যক্তিত্ববহুল হয়ে ওঠে স্থানটি। মহাভারতে পাণ্ডবদের ইন্দ্রপ্রস্থের চালচিত্রে যেন সেই সুশাসিত ধর্মরাজ্যের প্রতিচ্ছবি। মন, প্রাণ, অধ্যবসায়, একনিষ্ঠতা থাকলে পাথরেও ফুল ফোটে, ঊষর মরুতেও মরূদ্যান সৃষ্টি হয়, অরাজক দেশেও নৈতিকতার সুবাতাস বয়ে যায়, যেখানে প্রবাহিত হয় সম্ভাবনার উদ্দীপনায় প্রভাবিত সদ্ভাবনা। মহাভারতের কাহিনিতে প্রচ্ছন্ন সদর্থকতার এমন অনেক দৃষ্টান্ত, যা হয়তো ভরতবংশীয়দের এখনও উদ্বুদ্ধ করে থাকে।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।