ছবি: প্রতীকী।
নববিবাহিত পঞ্চ পাণ্ডব। তাঁরা, দ্রুপদ রাজপরিবারের সঙ্গে, আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। প্রতিপক্ষ, জ্ঞাতিশত্রু ধৃতরাষ্ট্র ও তাঁর পুত্ররা ঈর্ষায় জ্বলে উঠলেন। তাঁদের কত চক্রান্ত, কত পরিকল্পনা, শত্রু পাণ্ডবদের কীভাবে পরাহত করা যায় কিংবা তাঁদের অস্তিত্ব মুছে দেওয়া যায়। জ্যেষ্ঠ দুর্যোধনের উদ্ভাবিত, পাণ্ডবদের নিশ্চিহ্ন করে অধিকার প্রতিষ্ঠার বিধ্বংসী পরিকল্পনায় সায় দিলেন না বন্ধুবর কর্ণ। কর্ণ প্রত্যক্ষ বিরোধিতায় বিশ্বাসী, তিনি দমন নীতিতে আস্থাশীল।
দুর্যোধনের পরিকল্পিত চক্রান্ত ও বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে পাণ্ডবদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে তাঁদের ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার পন্থায় কর্ণের মোটেই আস্থা নেই। কর্ণের প্রস্তাব ছিল—চতুরঙ্গ সেনা নিয়ে সোজাসুজি দ্রুপদরাজ্য আক্রমণ এবং পাণ্ডবদের দ্রুত নিজেদের রাজ্যে এনে তাঁদের বশে আনা। সন্তুষ্ট প্রৌঢ় রাজা ধৃতরাষ্ট্র প্রাজ্ঞ,বিজ্ঞ স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শগ্রহণে আগ্রহী। কারণ সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমেই কল্যাণময়ী বুদ্ধির উদ্ভব সম্ভব। প্রবীণ ভীষ্ম পাণ্ডব ও ধৃতরাষ্ট্রপুত্র, উভয়পক্ষের হিতৈষী। তিনি বিরোধিতায় নয়, সন্ধির মাধ্যমে মিত্রতায় বিশ্বাসী। প্রাজ্ঞ ভীষ্মের মতে, পাণ্ডবদের ন্যায্যমতে প্রাপ্য, পৈতৃক রাজ্য, দান করা হোক। তাহলে পাণ্ডবদের প্রতি দুর্যোধনকৃত যত অপরাধ সেগুলির দরুণ অপবাদ দূর হবে। তাই কুরুকুলের ধর্মবোধ, রক্ষিত হবে। পাণ্ডবদের রাজ্যার্দ্ধ প্রদান করা হোক।
দুর্যোধনের পরিকল্পিত চক্রান্ত ও বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে পাণ্ডবদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে তাঁদের ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার পন্থায় কর্ণের মোটেই আস্থা নেই। কর্ণের প্রস্তাব ছিল—চতুরঙ্গ সেনা নিয়ে সোজাসুজি দ্রুপদরাজ্য আক্রমণ এবং পাণ্ডবদের দ্রুত নিজেদের রাজ্যে এনে তাঁদের বশে আনা। সন্তুষ্ট প্রৌঢ় রাজা ধৃতরাষ্ট্র প্রাজ্ঞ,বিজ্ঞ স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শগ্রহণে আগ্রহী। কারণ সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমেই কল্যাণময়ী বুদ্ধির উদ্ভব সম্ভব। প্রবীণ ভীষ্ম পাণ্ডব ও ধৃতরাষ্ট্রপুত্র, উভয়পক্ষের হিতৈষী। তিনি বিরোধিতায় নয়, সন্ধির মাধ্যমে মিত্রতায় বিশ্বাসী। প্রাজ্ঞ ভীষ্মের মতে, পাণ্ডবদের ন্যায্যমতে প্রাপ্য, পৈতৃক রাজ্য, দান করা হোক। তাহলে পাণ্ডবদের প্রতি দুর্যোধনকৃত যত অপরাধ সেগুলির দরুণ অপবাদ দূর হবে। তাই কুরুকুলের ধর্মবোধ, রক্ষিত হবে। পাণ্ডবদের রাজ্যার্দ্ধ প্রদান করা হোক।
এ বারে অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের পালা।তিনি মহান ভীষ্মের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। তাঁর মতে, মন্ত্রণাকার্যে হিতাকাঙ্খীরা ধর্ম, ন্যায় ও যশোবৃদ্ধি বিষয়ক পরামর্শই দিয়ে থাকেন, এমনটাই তিনি জানেন। তিনি ভীষ্মের প্রস্তাব সমর্থন করলেন। রাজ্যবিভাগের ফলে, কুন্তীপুত্র পাণ্ডবরা রাজ্যের সমান ভাগীদার হবেন। এটাই চিরকালীন ধর্ম। সংবিভাজ্যাস্তু কৌন্তেয়া ধর্ম্ম এষ সনাতনঃ।
আচার্য দ্রোণের পরামর্শ হল, অবিলম্বে পাণ্ডবদের জন্য, প্রভূত ধনরত্ন সহ, দ্রুপদরাজ্যে কোন মধুরভাষী মানুষকে পাঠানো হোক। সেই ব্যক্তি, দ্রুপদরাজের জন্যে ধন নিয়ে গমন করুন। এই বৈবাহিক সম্পর্কের ফলে বংশের উন্নতি সম্ভব হয়েছে, এমন কথা যেন সেই মানুষটি বলেন। দ্রুপদরাজ ও ধৃষ্টদ্যুম্নকে বার বার এই কথা বলা প্রয়োজন যে, এই বৈবাহিক সম্পর্কের ফলেই যত উন্নতি সম্ভব হয়েছে। ধৃতরাষ্ট্র ও দুর্যোধন দুজনেই এমনই মনে করেন। দ্রোণাচার্য বললেন, সেই লোকটি, দ্রুপদরাজ্যের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক যথোচিত, প্রিয় হয়েছে, এমন কথা যেমন বলবেন সেই সঙ্গে পাণ্ডবদের আশ্বস্ত করবেন বারংবার। হে রাজশ্রেষ্ঠ, আপনার আদেশানুসারে, তিনি দ্রৌপদীর জন্য, হীরের তৈরি বহু অলঙ্কার দ্রুপদের হাতে সমর্পণ করুন। হিরণ্ময়ানি শুভ্রাণি বহূন্যাভরণানি চ। বচনাত্তব রাজেন্দ্র!দ্রৌপদ্যাঃ সম্প্রযচ্ছতু।। সেই লোকটি, দ্রুপদপুত্রদের, পাণ্ডবদের ও দেবী কুন্তীর যথাযোগ্য সমস্ত সামগ্রী যেন প্রদান করেন। পাণ্ডব ও দ্রুপদরাজের সঙ্গে, এমন সান্ত্বনামূলক বাক্য বিনিময়ের পরে, পাণ্ডবদের কুরুরাজ্যে আগমনবিষয়ক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন সেই প্রেরিত ব্যক্তি।
গুরু দ্রোণাচার্য,প্রিয় শিষ্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাঁর অভিমত হল, দ্রুপদরাজের অনুমতি নিয়ে,শুভ উদ্দেশ্যে, সেই বীরদের জন্যে সৈন্যদল প্রেরণ করা হোক। দুঃশাসন ও বিকর্ণ পাণ্ডবদের আনতে যাক। পাণ্ডবরা, প্রজাদের অনুমতিক্রমে রাজপদে অধিষ্ঠিত হবেন। রাজা, তাঁদের মর্যাদাপূর্ণ স্থানটি দেবেন। ধৃতরাষ্ট্রের প্রতি দ্রোণাচার্যের উপদেশ, হে মহারাজ, আপনার নিজ পুত্র ও পাণ্ডবদের প্রতি সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার (সমস্যা সমাধানের) একমাত্র উপায়, আমিও ভীষ্মের সঙ্গে এ বিষয়ে সহমত। এতত্তব মহারাজ!পুত্রেষু তেষু চৈব হ। বৃত্তমৌপয়িকং মন্যে ভীষ্মেণ সহ ভারত।।
আচার্য দ্রোণের পরামর্শ হল, অবিলম্বে পাণ্ডবদের জন্য, প্রভূত ধনরত্ন সহ, দ্রুপদরাজ্যে কোন মধুরভাষী মানুষকে পাঠানো হোক। সেই ব্যক্তি, দ্রুপদরাজের জন্যে ধন নিয়ে গমন করুন। এই বৈবাহিক সম্পর্কের ফলে বংশের উন্নতি সম্ভব হয়েছে, এমন কথা যেন সেই মানুষটি বলেন। দ্রুপদরাজ ও ধৃষ্টদ্যুম্নকে বার বার এই কথা বলা প্রয়োজন যে, এই বৈবাহিক সম্পর্কের ফলেই যত উন্নতি সম্ভব হয়েছে। ধৃতরাষ্ট্র ও দুর্যোধন দুজনেই এমনই মনে করেন। দ্রোণাচার্য বললেন, সেই লোকটি, দ্রুপদরাজ্যের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক যথোচিত, প্রিয় হয়েছে, এমন কথা যেমন বলবেন সেই সঙ্গে পাণ্ডবদের আশ্বস্ত করবেন বারংবার। হে রাজশ্রেষ্ঠ, আপনার আদেশানুসারে, তিনি দ্রৌপদীর জন্য, হীরের তৈরি বহু অলঙ্কার দ্রুপদের হাতে সমর্পণ করুন। হিরণ্ময়ানি শুভ্রাণি বহূন্যাভরণানি চ। বচনাত্তব রাজেন্দ্র!দ্রৌপদ্যাঃ সম্প্রযচ্ছতু।। সেই লোকটি, দ্রুপদপুত্রদের, পাণ্ডবদের ও দেবী কুন্তীর যথাযোগ্য সমস্ত সামগ্রী যেন প্রদান করেন। পাণ্ডব ও দ্রুপদরাজের সঙ্গে, এমন সান্ত্বনামূলক বাক্য বিনিময়ের পরে, পাণ্ডবদের কুরুরাজ্যে আগমনবিষয়ক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন সেই প্রেরিত ব্যক্তি।
গুরু দ্রোণাচার্য,প্রিয় শিষ্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাঁর অভিমত হল, দ্রুপদরাজের অনুমতি নিয়ে,শুভ উদ্দেশ্যে, সেই বীরদের জন্যে সৈন্যদল প্রেরণ করা হোক। দুঃশাসন ও বিকর্ণ পাণ্ডবদের আনতে যাক। পাণ্ডবরা, প্রজাদের অনুমতিক্রমে রাজপদে অধিষ্ঠিত হবেন। রাজা, তাঁদের মর্যাদাপূর্ণ স্থানটি দেবেন। ধৃতরাষ্ট্রের প্রতি দ্রোণাচার্যের উপদেশ, হে মহারাজ, আপনার নিজ পুত্র ও পাণ্ডবদের প্রতি সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার (সমস্যা সমাধানের) একমাত্র উপায়, আমিও ভীষ্মের সঙ্গে এ বিষয়ে সহমত। এতত্তব মহারাজ!পুত্রেষু তেষু চৈব হ। বৃত্তমৌপয়িকং মন্যে ভীষ্মেণ সহ ভারত।।
আরও পড়ুন:
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭৯: সুন্দরবনের পাখি: টুনটুনি
শ্যাম বেনেগল সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারতেন
ভীষ্ম ও দ্রোণের মতের ঘোর সমালোচক কর্ণ। তিনি তাঁদের বিরোধিতায় বলে চললেন, এটি ভীষণ আশ্চর্যজনক, অর্থ ও সম্মান দিয়ে সব কাজে যাঁদের অন্তরঙ্গ করে তুলেছেন, তাঁরা হিতকর পরামর্শ প্রদান করছেন না। তাঁদের মনে মনে দুরভিসন্ধি অথচ প্রচ্ছন্ন রেখেছেন প্রকৃত স্বরূপ, এমন মানুষ সজ্জনের মতো প্রকৃত মঙ্গলকর মত প্রকাশ করতে পারেন কি? সমস্যা উপস্থিত হলে মিত্ররা কল্যাণ বা অকল্যাণের কারণ হন না। সুখ দুঃখ এগুলি সব দৈবনির্দিষ্ট। যাঁদের অভিজ্ঞতালব্ধ বিচক্ষণতা আছে, কিংবা বিপরীতভাবে যাঁদের এমন বিচক্ষণতা নেই, এমন বালক, বৃদ্ধ, সহায়যুক্ত বা সহায়হীন সকলেই সর্বত্র একটি স্থান লাভ করেন। কর্ণ, এই প্রসঙ্গে, একটি কাহিনির অবতারণা করলেন। প্রাচীনকালে রাজগৃহনগরে, মগধরাজবংশে, দৈহিক শক্তিশালী অম্বুবীচ নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি চক্ষু প্রভৃতি ইন্দ্রিয়হীন হয়েও শ্বাসপ্রশ্বাসে সাবলীল ছিলেন।
রাজা সব কাজে, মন্ত্রীদের ওপরে নির্ভরশীল ছিলেন। সেই রাজার মহাকর্ণি নামে এক প্রধান মন্ত্রী ছিলেন, যিনি এক অদ্বিতীয় প্রভু হয়ে উঠেছিলেন। তিনি নিজেকে ক্ষমতাবলে বলী মনে করে রাজাকে অবজ্ঞা করতে লাগলেন। সেই মূর্খ মন্ত্রী, রাজার উপভোগ্য স্ত্রী, রত্ন, ধন অন্যান্য ঐশ্বর্য কুক্ষিগত করলেন।এই সব কিছু লাভ করে সেই লোভী মহাকর্ণির রাজ্যলাভের লালসা আরও বৃদ্ধি পেল। কর্ণ জানালেন, শোনা যায়, শত চেষ্টা করেও মন্ত্রী মহাকর্ণি, সেই ইন্দ্রিয়হীন, শুধুমাত্র শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে জীবিত, রাজার রাজ্য দখল করতে সক্ষম হলেন না। কি আর বলব, সেই রাজার রাজা হওয়া নিশ্চিতভাবে দৈবনির্দিষ্ট ছিল, এমন হলে ভাগ্যেবলে আপনারও এই রাজ্য অধিগত থাকবেই। কিমন্যদ্বিহিতা নূনং তস্য সা পুরুষেন্দ্রতা। যদি তে বিহিতং রাজ্যং ভবিষ্যতি বিশাংপতে!।।
রাজা সব কাজে, মন্ত্রীদের ওপরে নির্ভরশীল ছিলেন। সেই রাজার মহাকর্ণি নামে এক প্রধান মন্ত্রী ছিলেন, যিনি এক অদ্বিতীয় প্রভু হয়ে উঠেছিলেন। তিনি নিজেকে ক্ষমতাবলে বলী মনে করে রাজাকে অবজ্ঞা করতে লাগলেন। সেই মূর্খ মন্ত্রী, রাজার উপভোগ্য স্ত্রী, রত্ন, ধন অন্যান্য ঐশ্বর্য কুক্ষিগত করলেন।এই সব কিছু লাভ করে সেই লোভী মহাকর্ণির রাজ্যলাভের লালসা আরও বৃদ্ধি পেল। কর্ণ জানালেন, শোনা যায়, শত চেষ্টা করেও মন্ত্রী মহাকর্ণি, সেই ইন্দ্রিয়হীন, শুধুমাত্র শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে জীবিত, রাজার রাজ্য দখল করতে সক্ষম হলেন না। কি আর বলব, সেই রাজার রাজা হওয়া নিশ্চিতভাবে দৈবনির্দিষ্ট ছিল, এমন হলে ভাগ্যেবলে আপনারও এই রাজ্য অধিগত থাকবেই। কিমন্যদ্বিহিতা নূনং তস্য সা পুরুষেন্দ্রতা। যদি তে বিহিতং রাজ্যং ভবিষ্যতি বিশাংপতে!।।
আরও পড়ুন:
ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৪৩: বীরবিক্রম ত্রিপুরায় শিক্ষা সম্প্রসারণে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৪: আশ্রমের আনন্দময় পিকনিক
সব মানুষের চোখের সম্মুখে নিশ্চিত আপনার রাজ্য থাকবে। আর এর অন্যথা যদি বিধাতানির্দিষ্ট হয়, তবে চেষ্টা সত্ত্বেও আপনি ধরে রাখতে পারবেন না। হে বিদ্বান, মন্ত্রীদের সাধুতা ও অসাধুতা এ ভাবেই অবগত হন। দুষ্ট অদুষ্ট উভয়ের ভাষা বোঝা উচিত। এবং বিদ্বন্নুৎপাদৎস্ব মন্ত্রিণাং সাধ্বসাধুতাম্। দুষ্টানাঞ্চৈব বোদ্ধব্যমদুষ্টানাঞ্চ ভাষিতম্।।
আচার্য দ্রোণ বললেন, কর্ণ স্বভাবদোষে এই সব যা কিছু বলছেন তা দ্রোণ বেশ বুঝতে পারছেন। এই দুষ্ট কর্ণ, পাণ্ডবদের কারণে ভীষ্ম ও দ্রোণের ওপরে দোষারোপ করছেন। তিনি কর্ণকে আরও বিশদে বললেন, দ্রোণ বংশের উন্নতিবিষয়ক পরম হিতকর কথা বলেছেন। যদি কর্ণের, দ্রোণর কথা অকল্যাণকর বলে মনে হয় তবে কর্ণ, বিশেষ হিতকর যা মনে হয়, সেটি বলুন। দ্রোণাচার্যের অভিমত হল, তাঁর হিতকর পরামর্শের অন্যথা হলে কৌরবরা অচিরেই ধ্বংস হবে।
কুরুকুলের অন্যতম হিতৈষী বিদুর, ধৃতরাষ্ট্রের একজন পরামর্শদাতা তিনি ধৃতরাষ্ট্রের শুভবোধ উজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হলেন। তাঁর মতে, রাজা ধৃতরাষ্ট্রের সর্বদাই বন্ধুবর্গের উদ্দেশ্যে হিত বচন বলা কর্তব্য। ঠিক তেমনই, রাজা যদি হিতবাক্য শুনতে ইচ্ছুক না হন তাহলে কোনও চেষ্টাই ফলপ্রসূ হবে না। শান্তনুপুত্র কুরুশ্রেষ্ঠ ভীষ্ম যে সব কথা বলেছেন, আপনার কাছে কী সেগুলি গ্রহণযোগ্য হয়েছে? প্রতিগৃহ্ণাসি তদ্বচঃ?
আচার্য দ্রোণ বহুভাবে যে হিতকর উত্তম বাক্য বলেছেন, রাধেয় কর্ণ সেগুলি রাজা ধৃতরাষ্ট্রের পক্ষে কল্যাণকর মনে করেননি। এই দুই পুরুষসিংহের থেকেও অধিক প্রজ্ঞাবান কেউ আছেন কি না সেটি বিদুরের চিন্তার অতীত। এই দুই বৃদ্ধ, বয়স, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তায় রাজশ্রেষ্ঠ ধৃতরাষ্ট্রের ও পাণ্ডবদের সঙ্গে সম্পর্কসূত্রে সমগোত্রীয় তো বটেই। ধর্ম ও সত্য রক্ষার ক্ষেত্রে এনারা দুজন নিঃসন্দেহে, দাশরথি রাম ও গয়াসুর থেকে কম নন। আগে এনারা ধৃতরাষ্ট্রকে কোন কুপরামর্শ দিয়েছেন বা তাঁর কোন অপকার করেছেন, এমন কিছুমাত্র বিদুর লক্ষ্য করেননি। তাঁরা দুজনে পুরুষব্যাঘ্র এবং নিরপরাধ। সত্যপরায়ণতা যাঁদের শক্তি তাঁরা কেন ধৃতরাষ্ট্রকে অহিতকর মন্ত্রণা দেবেন?
আচার্য দ্রোণ বললেন, কর্ণ স্বভাবদোষে এই সব যা কিছু বলছেন তা দ্রোণ বেশ বুঝতে পারছেন। এই দুষ্ট কর্ণ, পাণ্ডবদের কারণে ভীষ্ম ও দ্রোণের ওপরে দোষারোপ করছেন। তিনি কর্ণকে আরও বিশদে বললেন, দ্রোণ বংশের উন্নতিবিষয়ক পরম হিতকর কথা বলেছেন। যদি কর্ণের, দ্রোণর কথা অকল্যাণকর বলে মনে হয় তবে কর্ণ, বিশেষ হিতকর যা মনে হয়, সেটি বলুন। দ্রোণাচার্যের অভিমত হল, তাঁর হিতকর পরামর্শের অন্যথা হলে কৌরবরা অচিরেই ধ্বংস হবে।
কুরুকুলের অন্যতম হিতৈষী বিদুর, ধৃতরাষ্ট্রের একজন পরামর্শদাতা তিনি ধৃতরাষ্ট্রের শুভবোধ উজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হলেন। তাঁর মতে, রাজা ধৃতরাষ্ট্রের সর্বদাই বন্ধুবর্গের উদ্দেশ্যে হিত বচন বলা কর্তব্য। ঠিক তেমনই, রাজা যদি হিতবাক্য শুনতে ইচ্ছুক না হন তাহলে কোনও চেষ্টাই ফলপ্রসূ হবে না। শান্তনুপুত্র কুরুশ্রেষ্ঠ ভীষ্ম যে সব কথা বলেছেন, আপনার কাছে কী সেগুলি গ্রহণযোগ্য হয়েছে? প্রতিগৃহ্ণাসি তদ্বচঃ?
আচার্য দ্রোণ বহুভাবে যে হিতকর উত্তম বাক্য বলেছেন, রাধেয় কর্ণ সেগুলি রাজা ধৃতরাষ্ট্রের পক্ষে কল্যাণকর মনে করেননি। এই দুই পুরুষসিংহের থেকেও অধিক প্রজ্ঞাবান কেউ আছেন কি না সেটি বিদুরের চিন্তার অতীত। এই দুই বৃদ্ধ, বয়স, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তায় রাজশ্রেষ্ঠ ধৃতরাষ্ট্রের ও পাণ্ডবদের সঙ্গে সম্পর্কসূত্রে সমগোত্রীয় তো বটেই। ধর্ম ও সত্য রক্ষার ক্ষেত্রে এনারা দুজন নিঃসন্দেহে, দাশরথি রাম ও গয়াসুর থেকে কম নন। আগে এনারা ধৃতরাষ্ট্রকে কোন কুপরামর্শ দিয়েছেন বা তাঁর কোন অপকার করেছেন, এমন কিছুমাত্র বিদুর লক্ষ্য করেননি। তাঁরা দুজনে পুরুষব্যাঘ্র এবং নিরপরাধ। সত্যপরায়ণতা যাঁদের শক্তি তাঁরা কেন ধৃতরাষ্ট্রকে অহিতকর মন্ত্রণা দেবেন?
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৪: দশরথপুত্র ভরত, এক ব্যতিক্রমী চরিত্র, বর্তমানের নিরিখে এক বিরলতম প্রজাতি
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’
এই পৃথিবীতে তাঁরা দুজন প্রজ্ঞাবান নরোত্তম। তাই তাঁরা কোনও মিথ্যাচার করতে পারেন না। বিদুর বললেন, আমার বুদ্ধি অনুসারে, এটাই নিঃসন্দেহে বিবাদনিষ্পত্তিবিষয়ক সমাধানসূত্র। এই দুই ধর্মজ্ঞ, শুধুমাত্র উদ্দেশ্য সিদ্ধির কারণে নয়, এক পক্ষ আশ্রয় করে তাঁদের এই বক্তব্য বিষয়, পরম শ্রেয় বলেই আমি মনে করি। ইতি মে নৈষ্ঠিকী বুদ্ধির্বর্ত্ততে কুরু নন্দন!। ন চার্থহেতোর্ধর্মজ্ঞৌ বক্ষ্যাবঃ পক্ষসংশ্রিতম্। এতদ্ধি পরমং শ্রেয়ো মন্যেঽহং তব ভারত!।। দুর্যোধন প্রভৃতি যেমন ধৃতরাষ্ট্রপুত্র তেমন পাণ্ডবরাও রাজার পুত্রতুল্য। এটি জেনেও মন্ত্রীরা যদি পাণ্ডবদের বিষয়ে অমঙ্গলজনক মন্তব্য করেন তবে তাঁরা বিশেষভাবে কোন কল্যাণকর কিছু দেখেন না। বিদুর দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বললেন, আপনার মনে যে স্বার্থবিষয়ক বিশেষ চিন্তা রয়েছে, সেগুলি প্রকাশ্যে এনে তাঁরা আপনার জন্যে সঠিক কাজ করেননি। অন্তরস্থং বিবৃণ্বানাঃ শ্রেয়ঃ কুর্য্যুর্ন তে ধ্রুবম্।
এই কারণেই এই মহাতেজস্বী মহান দুই ব্যক্তিত্ব, কোনও বিরুদ্ধ উক্তি করেননি। রাজা ধৃতরাষ্ট্র ,এই অন্তর্নিহিত অর্থটি নিশ্চিতরূপে আত্মস্থ করতে পারেননি। পাণ্ডবদের শৌর্যবলে জয় করা অসম্ভব। তাঁদের দুজনের বক্তব্য সত্য। রাজার মঙ্গল হোক। স্বয়ং ইন্দ্রের যাঁকে জয়ের সাধ্য নেই, এমন শ্রীমান ধনঞ্জয় অর্জুনকে কীভাবে জয় করতে সক্ষম হবেন? যাঁকে দেবতারা পর্যন্ত জয় করতে পারেননি এমন মহাবীর, অযুত হাতির মতো শক্তিধর, ভীমসেনকে যুদ্ধে জয় করা কী সম্ভব? জীবনপ্রার্থী এমন কোন মানুষ আছেন যিনি, যমপুত্রতুল্য, যুদ্ধনিপুণ, দুই যমজ ভাইকে জয় করতে পারবেন? আর ধৈর্য্য, করুণা, ক্ষমা, সত্য, শৌর্যের নিত্য প্রতিমূর্তি জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব যুধিষ্ঠির, যুদ্ধে তাঁকে কে জয় করবেন? সংগ্রামে বলরাম যাঁদের পক্ষ অবলম্বন করেন, যাঁদের মন্ত্রণাদাতা স্বয়ং জনার্দন কৃষ্ণ, সাত্যকি যাঁদের সমর্থক, কেন তাঁরা যুদ্ধে বিজয়ী হবেন না? দ্রুপদরাজ পাণ্ডবদের শ্বশুর মহাশয়, শ্যালক, পৃষতপৌত্র দ্রুপদরাজের ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতি বীর পুত্রগণ।
প্রথমে, পাণ্ডবদের জয় কেন অসম্ভবপ্রায়? সেই সম্বন্ধে,এই সব কারণগুলি, অবগত হয়ে, তারপরে ধর্মসম্মত উপায়ে রাজ্যের উত্তরাধিকারের বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। বিদুর, রাজা ধৃতরাষ্ট্রের স্মরণে আনলেন, পাণ্ডবদের প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়ে পুরোচন যে কাজটি করেছিলেন, নিঃসন্দেহে গুরুতর অখ্যাতির কালিমা সেটি, আগে ধুয়ে ফেলা আবশ্যক। পাণ্ডবদের প্রতি এবং বংশের সকলের প্রতি যদি রাজা এই অনুগ্রহটুকু দেখান তবে, জীবনরক্ষা ও ক্ষত্রিয়দের বংশবৃদ্ধি সম্ভব,তাহলেই পরম মঙ্গল। মহান রাজা দ্রুপদের সঙ্গে অতীতের শত্রুতার অবসান হবে, তাঁকে আয়ত্তাধীন করা সম্ভব হবে, সেইসঙ্গে স্বপক্ষের উন্নতি, সম্ভব হবে। যাদবরা সকলে বীর এবং সংখ্যাগুরু, তাঁরা সকলে যেখানে কৃষ্ণ সেই দলেই থাকবেন। আর যেখানে কৃষ্ণ সেখানেই জয়।
এই কারণেই এই মহাতেজস্বী মহান দুই ব্যক্তিত্ব, কোনও বিরুদ্ধ উক্তি করেননি। রাজা ধৃতরাষ্ট্র ,এই অন্তর্নিহিত অর্থটি নিশ্চিতরূপে আত্মস্থ করতে পারেননি। পাণ্ডবদের শৌর্যবলে জয় করা অসম্ভব। তাঁদের দুজনের বক্তব্য সত্য। রাজার মঙ্গল হোক। স্বয়ং ইন্দ্রের যাঁকে জয়ের সাধ্য নেই, এমন শ্রীমান ধনঞ্জয় অর্জুনকে কীভাবে জয় করতে সক্ষম হবেন? যাঁকে দেবতারা পর্যন্ত জয় করতে পারেননি এমন মহাবীর, অযুত হাতির মতো শক্তিধর, ভীমসেনকে যুদ্ধে জয় করা কী সম্ভব? জীবনপ্রার্থী এমন কোন মানুষ আছেন যিনি, যমপুত্রতুল্য, যুদ্ধনিপুণ, দুই যমজ ভাইকে জয় করতে পারবেন? আর ধৈর্য্য, করুণা, ক্ষমা, সত্য, শৌর্যের নিত্য প্রতিমূর্তি জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব যুধিষ্ঠির, যুদ্ধে তাঁকে কে জয় করবেন? সংগ্রামে বলরাম যাঁদের পক্ষ অবলম্বন করেন, যাঁদের মন্ত্রণাদাতা স্বয়ং জনার্দন কৃষ্ণ, সাত্যকি যাঁদের সমর্থক, কেন তাঁরা যুদ্ধে বিজয়ী হবেন না? দ্রুপদরাজ পাণ্ডবদের শ্বশুর মহাশয়, শ্যালক, পৃষতপৌত্র দ্রুপদরাজের ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতি বীর পুত্রগণ।
প্রথমে, পাণ্ডবদের জয় কেন অসম্ভবপ্রায়? সেই সম্বন্ধে,এই সব কারণগুলি, অবগত হয়ে, তারপরে ধর্মসম্মত উপায়ে রাজ্যের উত্তরাধিকারের বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। বিদুর, রাজা ধৃতরাষ্ট্রের স্মরণে আনলেন, পাণ্ডবদের প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়ে পুরোচন যে কাজটি করেছিলেন, নিঃসন্দেহে গুরুতর অখ্যাতির কালিমা সেটি, আগে ধুয়ে ফেলা আবশ্যক। পাণ্ডবদের প্রতি এবং বংশের সকলের প্রতি যদি রাজা এই অনুগ্রহটুকু দেখান তবে, জীবনরক্ষা ও ক্ষত্রিয়দের বংশবৃদ্ধি সম্ভব,তাহলেই পরম মঙ্গল। মহান রাজা দ্রুপদের সঙ্গে অতীতের শত্রুতার অবসান হবে, তাঁকে আয়ত্তাধীন করা সম্ভব হবে, সেইসঙ্গে স্বপক্ষের উন্নতি, সম্ভব হবে। যাদবরা সকলে বীর এবং সংখ্যাগুরু, তাঁরা সকলে যেখানে কৃষ্ণ সেই দলেই থাকবেন। আর যেখানে কৃষ্ণ সেখানেই জয়।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৮: প্রতিভা দেবী—ঠাকুরবাড়ির সরস্বতী
গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১১: কাঁটার মুকুট
যে কাজ সন্ধির মাধ্যমে সম্ভব সেটি দৈবের অভিশাপগ্রস্ত কোন ব্যক্তি বিগ্রহ অর্থাৎ বিরোধিতার আশ্রয় নিয়ে, যুদ্ধ করে, জিতে নেবেন? জীবিত পাণ্ডবদের দর্শনের আশায়, পুরবাসী ও জনপদ বাসীরা সন্তুষ্টচিত্তে, অত্যন্ত উদগ্রীব হয়ে আছেন। বিদুরের অনুরোধ, ধৃতরাষ্ট্র তাঁদের প্রিয় কাজ অর্থাৎ ইচ্ছাপূরণ করুন। দুর্যোধন,কর্ণ,সুবলপুত্র শকুনি, এনারা অধার্মিক, দুষ্টবুদ্ধি, মূঢ়, ধৃতরাষ্ট্র যেন তাঁদের সহমত না হন। বিদুরের সবিনয় নিবেদন, গুণবান আপনি, আপনাকে আগেই জানিয়েছিলাম যে, দুর্যোধনের অপরাধের ফলে প্রজাদের বিনাশ হবে। উক্তমেতৎ পুরা রাজন্! ময়া গুণবতস্তব। দুর্য্যোধনাপরাধেন প্রজেয়ং বৈ বিনঙ্ক্ষ্যতি।।
নব বিবাহিত,দ্রুপদরাজের জামাতা পঞ্চ পাণ্ডবদের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত প্রতিহিংসার আগুন জ্বালিয়ে রাখা, না, তাঁদের মহাসমাদরে ফিরিয়ে এনে ন্যায্য প্রাপ্য পৈত্রিক রাজ্য প্রদান—এই দুইটি মতের সমর্থক দুটি দলে বিভক্ত হলেন। বলাবাহুল্য দুর্যোধন ও তাঁর বন্ধু কর্ণ, পাণ্ডববিদ্বেষী। তাঁরা সেই বিরূপ মনোভাব অন্তরে নিয়ত পুষে রেখেছেন। ধৃতরাষ্ট্রপুত্রদের এবং তাঁদের সমর্থকদের লক্ষ্য হল— বিগ্রহ, যুদ্ধাভিযান যে কোনও উপায় অবলম্বনে, চিরশত্রু জ্ঞাতিপুত্রদের রাজ্যাধিকার হতে বঞ্চিত করা বা তাঁদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলা। এই বিরোধিতায় ধৃতরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে।
গুরু দ্রোণাচার্য, মহান কুরুশ্রেষ্ঠ ভীষ্মের সমমতাবলম্বী। গুরুর স্নেহদৃষ্টিতে কৌরব ও পাণ্ডব উভয়েই সমান। তিনি রাষ্ট্রপ্রধান ধৃতরাষ্ট্রের কাছে আবেদন রেখেছেন, ধৃতরাষ্ট্রের যেন নিজপুত্র ও পাণ্ডবদের প্রতি ব্যবহার,সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। শিষ্যদের প্রতি একজন গুরুর ব্যবহার পক্ষপাতিত্বহীন হওয়াই বাঞ্ছনীয়।কুরুরাজকুলের বেতনভুক অস্ত্রগুরু দ্রোণ,যোগ্য গুরুর আদর্শে অটল থেকেছেন। তাঁর মন্ত্রণা যথাযথ। মন্ত্রণাদাতারূপে একজন শিক্ষকের মানদণ্ড ধরে রেখেছেন আচার্য দ্রোণ। স্নেহশীল শিক্ষকের আদর্শ হয়তো ছাত্রছাত্রীদের আস্থা অর্জন। তাই তিনি পাণ্ডবদের প্রথমে আশ্বস্ত করা প্রয়োজন যে দ্রুপদ রাজের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন শুভফলপ্রদ হয়েছে।তারপরে রাজ্যে যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁদের অধিষ্ঠিত করা কর্তব্য।
নব বিবাহিত,দ্রুপদরাজের জামাতা পঞ্চ পাণ্ডবদের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত প্রতিহিংসার আগুন জ্বালিয়ে রাখা, না, তাঁদের মহাসমাদরে ফিরিয়ে এনে ন্যায্য প্রাপ্য পৈত্রিক রাজ্য প্রদান—এই দুইটি মতের সমর্থক দুটি দলে বিভক্ত হলেন। বলাবাহুল্য দুর্যোধন ও তাঁর বন্ধু কর্ণ, পাণ্ডববিদ্বেষী। তাঁরা সেই বিরূপ মনোভাব অন্তরে নিয়ত পুষে রেখেছেন। ধৃতরাষ্ট্রপুত্রদের এবং তাঁদের সমর্থকদের লক্ষ্য হল— বিগ্রহ, যুদ্ধাভিযান যে কোনও উপায় অবলম্বনে, চিরশত্রু জ্ঞাতিপুত্রদের রাজ্যাধিকার হতে বঞ্চিত করা বা তাঁদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলা। এই বিরোধিতায় ধৃতরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে।
গুরু দ্রোণাচার্য, মহান কুরুশ্রেষ্ঠ ভীষ্মের সমমতাবলম্বী। গুরুর স্নেহদৃষ্টিতে কৌরব ও পাণ্ডব উভয়েই সমান। তিনি রাষ্ট্রপ্রধান ধৃতরাষ্ট্রের কাছে আবেদন রেখেছেন, ধৃতরাষ্ট্রের যেন নিজপুত্র ও পাণ্ডবদের প্রতি ব্যবহার,সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। শিষ্যদের প্রতি একজন গুরুর ব্যবহার পক্ষপাতিত্বহীন হওয়াই বাঞ্ছনীয়।কুরুরাজকুলের বেতনভুক অস্ত্রগুরু দ্রোণ,যোগ্য গুরুর আদর্শে অটল থেকেছেন। তাঁর মন্ত্রণা যথাযথ। মন্ত্রণাদাতারূপে একজন শিক্ষকের মানদণ্ড ধরে রেখেছেন আচার্য দ্রোণ। স্নেহশীল শিক্ষকের আদর্শ হয়তো ছাত্রছাত্রীদের আস্থা অর্জন। তাই তিনি পাণ্ডবদের প্রথমে আশ্বস্ত করা প্রয়োজন যে দ্রুপদ রাজের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন শুভফলপ্রদ হয়েছে।তারপরে রাজ্যে যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁদের অধিষ্ঠিত করা কর্তব্য।
ছবি: প্রতীকী।
কর্ণ, ভীষ্ম ও দ্রোণের এই উদারতার ঘোর সমালোচনা করেছেন। অর্থ ও সম্মান এই দুই ব্যক্তিত্ব, তাঁদের যথাযোগ্য মর্যাদানুসারে পেয়ে থাকেন। কর্ণের মতানুসারে অর্থ ও সম্মান প্রাপ্তি সত্ত্বেও প্রকৃত হিতাকাঙ্খীর ছদ্মবেশে দুই প্রৌঢ় তাঁদের মনে দুরভিসন্ধি প্রচ্ছন্ন রেখেছেন। তাঁরা দুজন সঠিক পরামর্শদাতা নন। তিনি ভাগ্যের দোহাই দিয়ে ধৃতরাষ্ট্রের রাজ্যাধিকার নিশ্চিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে যে কাহিনির অবতারণা করেছেন সেখানে শুধুমাত্র শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে জীবনধারণের সক্ষম রাজার রাজ্য তাঁর মন্ত্রী শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দখল করতে পারেননি। এর কারণ দৈবের আনুকূল্য। দৈব সহায় বলেই রাজার রাজ্যাধিকার বজায় থেকেছে, ব্যর্থ হয়েছেন মন্ত্রী। সেই খল মন্ত্রীদের সঙ্গে একই পর্যায়ভুক্ত করতে চেয়েছেন ভীষ্ম ও দ্রোণকে। কর্ণের বিবেচনায় এই দুই মন্ত্রণাদাতা দুষ্ট। রাজার, এই সাধু ও অসাধুর পার্থক্য অবগত হওয়া প্রয়োজন। দ্রোণাচার্য কর্ণের কথায় মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন।
বিদুর, ধৃতরাষ্ট্রকে ভীষ্ম ও দ্রোণের শুভ উদ্দেশ্যে সম্বন্ধে নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেছেন। বিদুরের মতে, ভীষ্ম ও দ্রোণের সুচিন্তিত বিবেচনাপ্রসূত প্রজ্ঞাসম্মত মতামতেই আছে কুরুপাণ্ডব উভয় পক্ষের মিলনের সমাধানসূত্র। কৃষ্ণ বলরাম প্রভৃতি যাদবদের পৃষ্ঠবলে বলী এবং দ্রুপদরাজপুত্র-সহ দ্রুপদরাজ যাঁদের সহায়, সেই অপরিসীম শক্তিধর, পাণ্ডবদের বিরোধিতার নীতিতে নয়,জয় করতে হবে সন্ধির মাধ্যমে। প্রাজ্ঞ ধার্মিক বিদুরের মন্ত্রণায় আছে সদর্থক চিন্তার প্রকাশ। তিনি, অতীতে পাণ্ডবদের প্রতি হত্যার ষড়যন্ত্রের অপরাধে দোষী ধৃতরাষ্ট্রকে অপবাদ মুছে ফেলে বংশের গৌরব ও বংশের সুরক্ষায় তৎপর হতে পরামর্শ দিয়েছেন। এর ফলে প্রজাদের সন্তুষ্টিবিধান সম্ভব হবে।
কর্ণের সঙ্গে ভীষ্ম, দ্রোণ ও বিদুরের মতপার্থক্য যেন প্রজন্মান্তরে চিন্তার ব্যবধান মনে করিয়ে দেয়। সব যুগেই, নবীন ও প্রবীনদের চিন্তার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়ে যায়। কর্ণ নবীন, তাঁর রক্তে উদ্দাম যৌবন, তিনি চটজলদি সমাধানে বিশ্বাসী। যুদ্ধাভিযান,হত্যা কোনটিতেই তাঁর আপত্তি নেই।যে কোন মূল্যে কার্যোদ্ধার তাঁর উদ্দেশ্য। স্থিতধী, প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য, বিদুর এনারা জীবনকে দেখেন অভিজ্ঞতার আলোকে। দূরদর্শিতা,বহুদর্শিতা তাঁদের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার লব্ধ। কর্ণ রাধেয়, সূতপুত্র। উচ্চ ক্ষমতালোভী হলেও তিনি রাজনৈতিক আবহে বড় হয়ে ওঠেননি।দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন কর্ণ। যুক্তির যাথার্থ্য খুঁজে না পেয়ে তিনি দৈবের দোহাই দিয়ে থাকেন।যুদ্ধ ও বিভেদসৃষ্টির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান নয় মৈত্রী স্থাপনের মধ্যে প্রাণহানির সম্ভাবনা নেই,নেই অখ্যাতির প্রলেপ, নেই কোন অগৌরব বরং অতীতের ভুল সংশোধনের সুযোগ রয়েছে, রয়েছে আপামর জনমানস জয়লাভের মধ্যে অক্ষয় যশোলাভের সম্ভাবনা। তাই হানাহানি, বিদ্বেষের মধ্যে কোনও সমস্যার সমাধান নয়, সমাধান আছে মৈত্রীর মন্ত্রে,সন্ধির শান্তিতে, পরকে মর্যাদার আসনে অভিষিক্ত করায়, মিলনের আনন্দে। এ সব কিছুই সমাদৃত হয়েছে যুগে যুগে। বিরোধিতা নয়, ক্ষতিকারক নয় এমন সন্ধিই স্বীকৃত সত্য, মহাভারতেও প্রজন্মান্তরে এখনও।—চলবে।
বিদুর, ধৃতরাষ্ট্রকে ভীষ্ম ও দ্রোণের শুভ উদ্দেশ্যে সম্বন্ধে নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেছেন। বিদুরের মতে, ভীষ্ম ও দ্রোণের সুচিন্তিত বিবেচনাপ্রসূত প্রজ্ঞাসম্মত মতামতেই আছে কুরুপাণ্ডব উভয় পক্ষের মিলনের সমাধানসূত্র। কৃষ্ণ বলরাম প্রভৃতি যাদবদের পৃষ্ঠবলে বলী এবং দ্রুপদরাজপুত্র-সহ দ্রুপদরাজ যাঁদের সহায়, সেই অপরিসীম শক্তিধর, পাণ্ডবদের বিরোধিতার নীতিতে নয়,জয় করতে হবে সন্ধির মাধ্যমে। প্রাজ্ঞ ধার্মিক বিদুরের মন্ত্রণায় আছে সদর্থক চিন্তার প্রকাশ। তিনি, অতীতে পাণ্ডবদের প্রতি হত্যার ষড়যন্ত্রের অপরাধে দোষী ধৃতরাষ্ট্রকে অপবাদ মুছে ফেলে বংশের গৌরব ও বংশের সুরক্ষায় তৎপর হতে পরামর্শ দিয়েছেন। এর ফলে প্রজাদের সন্তুষ্টিবিধান সম্ভব হবে।
কর্ণের সঙ্গে ভীষ্ম, দ্রোণ ও বিদুরের মতপার্থক্য যেন প্রজন্মান্তরে চিন্তার ব্যবধান মনে করিয়ে দেয়। সব যুগেই, নবীন ও প্রবীনদের চিন্তার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়ে যায়। কর্ণ নবীন, তাঁর রক্তে উদ্দাম যৌবন, তিনি চটজলদি সমাধানে বিশ্বাসী। যুদ্ধাভিযান,হত্যা কোনটিতেই তাঁর আপত্তি নেই।যে কোন মূল্যে কার্যোদ্ধার তাঁর উদ্দেশ্য। স্থিতধী, প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য, বিদুর এনারা জীবনকে দেখেন অভিজ্ঞতার আলোকে। দূরদর্শিতা,বহুদর্শিতা তাঁদের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার লব্ধ। কর্ণ রাধেয়, সূতপুত্র। উচ্চ ক্ষমতালোভী হলেও তিনি রাজনৈতিক আবহে বড় হয়ে ওঠেননি।দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন কর্ণ। যুক্তির যাথার্থ্য খুঁজে না পেয়ে তিনি দৈবের দোহাই দিয়ে থাকেন।যুদ্ধ ও বিভেদসৃষ্টির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান নয় মৈত্রী স্থাপনের মধ্যে প্রাণহানির সম্ভাবনা নেই,নেই অখ্যাতির প্রলেপ, নেই কোন অগৌরব বরং অতীতের ভুল সংশোধনের সুযোগ রয়েছে, রয়েছে আপামর জনমানস জয়লাভের মধ্যে অক্ষয় যশোলাভের সম্ভাবনা। তাই হানাহানি, বিদ্বেষের মধ্যে কোনও সমস্যার সমাধান নয়, সমাধান আছে মৈত্রীর মন্ত্রে,সন্ধির শান্তিতে, পরকে মর্যাদার আসনে অভিষিক্ত করায়, মিলনের আনন্দে। এ সব কিছুই সমাদৃত হয়েছে যুগে যুগে। বিরোধিতা নয়, ক্ষতিকারক নয় এমন সন্ধিই স্বীকৃত সত্য, মহাভারতেও প্রজন্মান্তরে এখনও।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।/strong>