বৃহস্পতিবার ৮ মে, ২০২৫


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

খাণ্ডববনদহনের উদ্যোগী হয়েছেন অগ্নিদেব। তাঁর পাশে আছেন দুই আপ্ত সহায়ক কৃষ্ণ ও অর্জুন। দেবরাজ ইন্দ্র, অগ্নিদেবের প্রতিপক্ষ। দেবরাজ, অগ্নির দহনকার্যে বাদ সাধলেন। দেবরাজ বার বার জল বর্ষণ করতে লাগলেন। অর্জুন তাঁর অস্ত্রপ্রয়োগকৌশলে সেই জলবর্ষণে প্রতিরোধ সৃষ্টি করলেন। কুয়াশাবৃত চন্দ্রের মতো অর্জুনের বাণে আচ্ছাদিত হল খাণ্ডববন। শরাচ্ছন্ন খাণ্ডববন হতে কোনও প্রাণী নির্গত হতে পারল না। খাণ্ডববন জ্বলছে যখন, মহাবলী নাগরাজ তক্ষক কিন্তু সেই সময়ে সেখানে ছিলেন না। তিনি ছিলেন কুরুক্ষেত্রে। তক্ষকপুত্র বলবান অশ্বসেন সেখানে ছিলেন।বহ্নির অভিঘাত হতে মুক্ত হতে সে গুরুতর চেষ্টা করল। কিন্তু অর্জুনের বাণে রুদ্ধ হল তাঁর নির্গমন পথ। সে বনের বাইরে যেতে পারল না।
তাঁর জননী তাঁকে গিলে ফেললেন, এইভাবে সে মুক্ত হল। প্রথমে মাথা, রপরে লেজ পর্যন্ত গিলে ফেলে, সেই নাগ মাতা তাকে বাইরে মুক্ত করতে নির্গত হলেন। অর্জুন শাণিত তীক্ষ্ণ বাণ দিয়ে তক্ষকপত্নীর মাথাটি ছেদন করলেন। ঠিক সেই সময়ে দেবরাজ ইন্দ্র, গমনরতা নাগপত্নীকে দেখতে পেলেন। দেবেন্দ্র অশ্বসেনকে মুক্ত করবার উদ্দেশ্যে, বায়ু বর্ষণ করে পাণ্ডুপুত্রকে মোহাবিষ্ট করে তুললেন। সেই সময়ে মুক্ত হলেন অশ্বসেন।সেই মায়ার প্রভাব দেখে এবং নাগের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন, অনুভব করে,অর্জুন, আকাশচারী প্রাণীদের দুই, তিন খণ্ডে ছিন্ন করতে লাগলেন। ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়ে বীভৎসু অর্জুন,বাসুদেব কৃষ্ণ এবং অগ্নিদেব, নাগপুত্র অশ্বসেনকে অভিশাপ দিলেন, তুই, আশ্রয়হীন হবি। শশাপ তঞ্চ সংক্রুদ্ধো বীভৎসুর্জিহ্মগামিনম্। পাবকো বাসুদেবশ্চাপ্যপ্রতিষ্ঠো ভবিষ্যসি।। ক্রুদ্ধ, জিষ্ণু অর্জুন, ইন্দ্রের বঞ্চনার কথা স্মরণ করে, দ্রুতগামী শর দিয়ে আকাশ পরিব্যাপ্ত করে, সহস্রাক্ষ ইন্দ্রের সঙ্গে, যুদ্ধ করতে লাগলেন। দেবরাজ, যুদ্ধরত ক্রুদ্ধ অর্জুনকে দেখে, সম্পূর্ণ গগন আবৃত করে, নিজের যত কঠোর অস্ত্র প্রয়োগ করতে লাগলেন। ঘোর শব্দকারী বায়ু,সাগরগুলি জুড়ে সংক্ষোভ সৃষ্টি করল। ফলে আকাশে জলধারাবর্ষী মেঘ সৃষ্টি হল।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১২: প্রশাসক রামচন্দ্রের সাফল্য কী আধুনিক কর্মব্যস্ত জীবনে সফল প্রশাসকদের আলোর দিশা হতে পারে?

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৪৮: রান্নার জ্বালানি নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?

বজ্রনিক্ষেপকারী ইন্দ্রের বিদ্যুৎগর্জনতুল্য মহারবকারী মেঘ দেখে,সেগুলি প্রতিহত করবার জন্যে, অর্জুন শ্রেষ্ঠ অস্ত্র সৃষ্টি করলেন। প্রতিকারনিপুণ অর্জুন, মন্ত্র পাঠ করে, বায়ব্য অস্ত্র প্রয়োগ করলেন। তার ফলে ইন্দ্রের অশনি ও মেঘের তেজের প্রকোপ হ্রাস পেল। সেই জলধারা নিঃশেষিত হল, বিদ্যুৎ অন্তর্হিত হল, ক্ষণকালের জন্যে গগনমণ্ডল ধূলি ও অন্ধকারমুক্ত হল। সুখোপভোগ্য বায়ু প্রবাহিত হল,অন্তরীক্ষ স্বাভাবিক হল। কোনও প্রতিবন্ধকতা না থাকায় বিভিন্ন (দীর্ঘহ্রস্ব প্রভৃতি) আকৃতিবিশিষ্ট অগ্নি আনন্দিত হলেন। প্রাণীদের দেহনিঃসৃত তরল ধাতু বিশেষের স্রোতে সিক্ত অর্চিষ্মান অগ্নি নিজের গর্জনে জগৎ পূর্ণ করে, জ্বলে উঠলেন। কৃষ্ণ ও অর্জুন বনরক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন, দেখে, দর্পভরে গরুড়বংশীয় পাখিরা আকাশে উড়তে লাগল। গরুড়ের বংশধররা বজ্রতুল্য পক্ষ, চঞ্চু ও নখের সাহায্যে (প্রতিপক্ষকে) প্রহার করতে উদ্যত হয়ে, কৃষ্ণ ও অর্জুনের কাছে উপস্থিত হল। জ্বলন্তবদন সর্পসমূহ তীব্র বিষ উদ্গিরণ করতে করতে পাণ্ডব অর্জুনের নিকটেবর্তী স্থানে পড়তে লাগল।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৫: এ কেমন রঙ্গ জাদু, এ কেমন রঙ্গ…/৩

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৪: ঠাট্টা করলে যে বুঝতে পারত, ঠিক সময়ে হাসতে পারত

পার্থ, রোষসম্ভূত শর দ্বারা তাদের কেটে ফেললেন। তারা, সশরীরে বিনাশের জন্য, প্রদীপ্ত অগ্নিতে প্রবেশ করতে লাগল। অসুর, ন্ধর্ব, যক্ষ, রাক্ষস, নাগেরা ক্রোধেহেতু বর্দ্ধিততেজসহকারে, মহাগর্জনে কৃষ্ণ ও পার্থকে হত্যার ইচ্ছায়, লোহা ও স্বর্ণচক্র (যাঁর সাহায্যে দূরে প্রস্তর নিক্ষেপ সম্ভব), পাষাণ ও ভুষুণ্ডী (চর্ম ও রজ্জুময় অস্ত্রবিশেষ) প্রভৃতি অস্ত্রপ্রয়োগে উদ্যত হয়ে উপস্থিত হল। বীভৎসু অর্জুন, কলরবকারী সেই অস্ত্র নিক্ষেপকারীদের মস্তক ছেদন করতে লাগলেন। অত্যন্ত তেজস্বী শত্রুহন্তা কৃষ্ণ, চক্র ব্যবহারের ফলে, দৈত্য দানবদের সম্মিলিত দলটি মহাদুর্গতির সম্মুখীন হল। শরবিদ্ধ, চক্রবেগে তাড়িত শত্রুদের অবস্থা হল, জলের আবর্তে, বেগবলে দূরে নিক্ষিপ্ত,বেলাভূমিতে আশ্রিত, ঘূর্ণায়মান তৃণের মতো। গজারোহী দেবরাজ ইন্দ্র, অতিমাত্রায় ক্রুদ্ধ হয়ে, ধেয়ে গেলেন তাঁদের দুজনের দিকে। তিনি বেগে, তুলে নিলেন, অশনি। বজ্র অস্ত্র সৃষ্টি করলেন। অসুরবিজয়ী ইন্দ্র, ঘোষণা করলেন, *হতাবেতাবিতি* এরা দুজনে হত হলেন। অস্ত্রপ্রয়োগে উদ্যত দেবরাজকে দেখে, দেবতারা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হলেন। যমরাজ, ধনেশ্বর কুবের ও বরুণ যথাক্রমে কালদণ্ড, গদা, পাশসমূহ ও বজ্র প্রভৃতি অস্ত্রে সজ্জিত হলেন। স্কন্দ অর্থাৎ কার্তিক শক্তি সঞ্চয় করে মেরুপর্বততুল্য অচলাবস্থায় রইলেন। অশ্বিনীকুমারদ্বয় উজ্জ্বল ওষধি (প্রাণনাসিকা লতা) নিলেন। ধাতা নামে দেবতা নিলেন ধনুক, জয় ধারণ করলেন মুষল, মহাবল ত্বষ্টা সক্রোধে একটি পর্বত তুলে নিলেন।দেবতা অংশ শক্তি, মৃত্যুর দেবতা পরশু, সূর্যদেব পরিঘ ধারণ করে বিচরণ করতে লাগলেন। মিত্র, পূষা, ভগ, সবিতা, সকলে প্রচণ্ড ক্রোধে, ক্ষুরধার চক্র নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। মহাবল রুদ্র, বসু, মরুৎ প্রভৃতি দেবতারা ধনুক ও খড়্গ নিয়ে কৃষ্ণ ও অর্জুনের প্রতি ধেয়ে চললেন।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৭: শ্রীমার কথায় ‘ঠাকুরের দয়া পেয়েচ বলেই এখানে এসেচ’

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৫: সর্বত্র বরফ, কোত্থাও কেউ নেই, একেবারে গা ছমছম করা পরিবেশ

নিজেদের তেজে জাজ্বল্যমান হয়ে বিশ্বদেব ও সাধ্যগণ এবং অন্যান্য বহুদেবতা বিবিধ অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে, পুরুষশ্রেষ্ঠ কৃষ্ণ ও অর্জুনের প্রাণহরণের লক্ষ্যে, তাঁদের পশ্চাতে ধাবিত হলেন। সেই মহাসমরে অদ্ভুত সব দুর্লক্ষণ (উল্কাপাত প্রভৃতি) দেখা গেল। যুগের অবসানে প্রাণীদের সম্মোহিত করছে যেন সেই সব অবস্থা। অতীব ক্রুদ্ধ দেবতাদের সঙ্গে ইন্দ্রকে দেখে নির্ভীক, যুদ্ধে দুর্ধর্ষ, সজ্জিতধনু, যুদ্ধবিশারদ, অত্যন্ত ক্রোধান্বিত, কৃষ্ণ ও অর্জুন,আক্রমণোদ্যত দেবতাদের, বজ্রতুল্য বাণ দ্বারা তাড়িত করলেন। এইভাবে বার বার, যুদ্ধজয়ের ইচ্ছায় ভগ্নমনোরথ হয়ে, দেবতারা রণক্ষেত্র পরিত্যাগ করে,ইন্দ্রের আশ্রয় নিলেন। অর্জুন ও কৃষ্ণের দ্বারা পরাজিত দেবতাদের দেখে নভোমণ্ডলস্থিত মুনিগণ বিস্ময়াবিষ্ট হলেন। ইন্দ্রও দুই বীরের বার বার বীর্যবত্তার পরিচয় পেয়ে পরম প্রীত হলেন এবং আবারও যুদ্ধ শুরু করলেন। পাকশাসন ইন্দ্র এবারে ভয়ঙ্করভাবে পাষাণ বর্ষণ করতে লাগলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল—সব্যসাচী অর্জুনের শৌর্য কতটা? সেটি জ্ঞাত হওয়া। ক্রোধে ক্ষিপ্ত অর্জুন বাণ দ্বারা সেই আঘাত প্রতিহত করলেন।শতক্রতু ইন্দ্র সেই সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে দেখে, আবারও প্রস্তরবর্ষণ বৃদ্ধি করলেন।পিতা ইন্দ্রকে আনন্দ দিয়ে, বর্ষিত পাষাণগুলিকে মহাবেগশালী শরদ্বারা নাশ করলেন ইন্দ্রপুত্র অর্জুন। পাণ্ডুপুত্র অর্জুনকে হত্যা করতে ইচ্ছুক,ইন্দ্র, দুই হাতে বৃক্ষসহ সুবৃহৎ মন্দরপর্বতশৃঙ্গ উৎপাটিত করে, নিক্ষেপ করলেন। অর্জুন বেগবান, উজ্জ্বল অগ্রভাগবিশিষ্ট, সরলগামী তীর দ্বারা শৃঙ্গটিকে সহস্র খণ্ডে বিভক্ত করে ধ্বংস করলেন।অর্জুনের শরে খণ্ডবিখণ্ড শৃঙ্গটি যেন ভগ্ন আকাশ হতে পতিত সূর্য, চন্দ্র, গ্রহগুলির মতো রূপ ধারণ করল। সেই সুবিশাল গিরিশৃঙ্গটি ভয়ঙ্কর খাণ্ডববনের ওপরে পড়ে খাণ্ডববনবাসী প্রাণীদেরকে নিহত করল।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৭: পাতি সরালি

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৭: পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যাঁর জীবনের আকাশে কখনও শত্রুতার মেঘ জমেনি

খাণ্ডববনদহনে এক বীভৎস হত্যালীলায় মেতে উঠলেন কৃষ্ণ ও অর্জুন। তাঁদের প্রতিপক্ষ বনবাসী প্রাণী এবং উদ্ভিদ। অগ্নিদেবের ভোজ্য সরবরাহের জন্যে অঙ্গীকারবদ্ধ দুই বীর। দু’জনেই প্রখ্যাত বীর। অর্জুন, কুরুকুলের প্রখ্যাত বীর পাণ্ডপুত্র, অপরজন যাদবকুলরত্ন কৃষ্ণ, এ পর্যন্ত তাঁর পরিত্রাতারূপ প্রকাশিত হয়নি। প্রাণীহত্যাই দুই বীরের মুখ্য উদ্দেশ্য। প্রাণীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন দেবরাজ ইন্দ্রসহ প্রখ্যাত দেবতারা।খাণ্ডববন জ্বলছে, ক্রমে সেটি রূপান্তরিত হল এক যুদ্ধক্ষেত্রে। এ যেন বর্তমানের যুদ্ধোন্মাদনায় উন্মত্ত পৃথিবী। যুদ্ধে স্নেহ, মায়া, দয়া, দাক্ষিণ্য, অনুকম্পা,সহানুভূতি প্রভৃতি হৃদয়বৃত্তির কোন স্থান নেই।এক ভয়ঙ্কর জিঘাংসা গ্রাস করে যুদ্ধমান দুই পক্ষকে। প্রভাবশালীরা যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হন। নাগমাতার সন্তানকে বাঁচাবার আত্যন্তিক প্রয়াস ব্যর্থ হয়। অর্জুনের শাণিত শরাঘাতে ছিন্ন হয় মায়ের মস্তক। অর্জুন এখন নির্মম,ভয়ঙ্কর যুদ্ধজয়ের নেশায় আবিষ্ট এক যোদ্ধা মাত্র। ক্ষত্রিয়সুলভ শরণাগতের রক্ষক নন। এক জননীর সন্তানরক্ষার ক্ষীণ প্রচেষ্টা তাঁর মর্মে রেখাপাত করে না। যুদ্ধ ভুলিয়ে দেয় মানবিক ধর্ম, হিংসার বিষবাষ্প দূষিত করে অন্তর্লোক, গিলে ফেলে সুকোমল ত্যাগ, তিতিক্ষা, মায়াময় জীবনবোধ। ইন্দ্রের অনুগ্রহে তক্ষকপুত্র অশ্বসেনের প্রাণ রক্ষা পায়। ইন্দ্রপুত্র অর্জুনের এই সাময়িক ব্যর্থতা, ক্রোধে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে তোলে ক্ষমতাশীল অর্জুন,কৃষ্ণ ও অগ্নিদেবকে। তাঁদের অভিশাপের আগুনে দগ্ধ হয় অশ্বসেন। যুযুধান পিতা ইন্দ্র ও পুত্র অর্জুন দুজনেই, প্রাণঘাতী এই যুদ্ধে সামিল হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করতে একটুও দ্বিধান্বিত হন না। পুত্রের বিরুদ্ধে,কঠোর অস্ত্র প্রয়োগ করেন দেবরাজ। অর্জুন বহু অলৌকিক অস্ত্রের অধিকারী। তিনি ইন্দ্রের দুরূহ অস্ত্রের প্রভাব প্রতিহত করতে সক্ষম হন।

ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

আধুনিক পৃথিবীতেও প্রভাবশালী দুই পক্ষের যুদ্ধ যেন মগজাস্ত্রের সঙ্গে শাণিত, অব্যর্থ লক্ষ্যভেদে সক্ষম অস্ত্রপ্রয়োগের প্রদর্শনী। সে যুদ্ধ দুর্বলদের আরও সজাগ ও সচেতন করে। দুর্বলরাও এই অস্ত্রাঘাতের মোকাবিলা করতে তৎপর হয়ে ওঠেন। তবু প্রাণহানির শিকার হন নিরীহ মানুষ।কথাই আছে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। বনাশ্রিত হিংস্র শ্বাপদ ও অসুর, গন্ধর্ব, যক্ষ, রক্ষ, নাগ সকলে আক্রমণোদ্যত হয়েছে।দৈবাস্ত্রের কাছে নতি স্বীকার করেছে সকলেই, যেমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বৃহৎ শক্তির কাছে, নতিস্বীকার করে অসম দুর্বল প্রতিপক্ষরা। দল বেঁধে লড়াইয়ে নেমেছেন দেবতারা, যেমন নিজেদের স্বার্থরক্ষার তাগিদে জোট বাঁধে বৃহৎ শক্তির আধার দেশগুলি। দেবতারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ অস্ত্রগুলি নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়েন। এই দুই ক্ষমতাশালীর যুদ্ধ যেন নিজেদের সেরা অস্ত্রসম্ভারপ্রয়োগের প্রদর্শনী হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিককালে আধুনিক পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া বিখ্যাত যুদ্ধগুলি, ঠিক সেই যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি যেন।

অগ্নিদেবের পরিতৃপ্তি সাধনের কারণে খাণ্ডববনদহন, পৃথিবীর উষ্ণায়নের ফলে বিস্তীর্ণ বনদহনের সঙ্গে এক শ্রেণিভুক্ত হতে পারে কী? মহাভারতের খাণ্ডববনদহন, যেন এক ভবিষ্যতের বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ইঙ্গিতবাহী ইতিবৃত্ত। সেই কাহিনিতে প্রচ্ছন্ন হয়ে রয়ে যায়, রণোন্মাদনায় অপরিণামদর্শিতার ফলাফল, কালস্রোতে ভেসে চলে হত্যা, মৃত্যু, ধ্বংসের নিরবিচ্ছিন্ন ধারা, যুগান্তরেও।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content