
ছবি: সংগৃহীত।
যমুনায় জলবিহারের উদ্দেশ্যে আগত কৃষ্ণ ও অর্জুন, যমুনাতীরবর্তী সন্নিহিত খাণ্ডববনে এসে উপস্থিত হয়েছেন। ঠিক সেই সময়ে এক তেজোদীপ্ত ব্রাহ্মণের সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ হল। ব্রাহ্মণ পরিচয় দিলেন, পাবকং মাং নিবোধত আমায় অগ্নিদেব বলে চিনে নাও। অগ্নিদেব জানালেন, তিনি অপরিমিত ভোজনে অভ্যস্ত। বর্তমানে দেবরাজ ইন্দ্র যে খাণ্ডববন রক্ষা করছেন, সেই খাণ্ডববন তাঁর উদ্দিষ্ট ভোজ্য যা তিনি দগ্ধ করতে অসমর্থ হয়েছেন। সাহায্যপ্রার্থী অগ্নিদেব জানালেন, তিনি, অস্ত্রজ্ঞ দুই বীর, কৃষ্ণ ও অর্জুনের সহায়তায় খাণ্ডববনদহনে সক্ষম হবেন। কারণ শৌর্যশালী দু’জনের ইন্দ্রের প্রদত্ত জলধারা প্রতিরোধের শক্তি আছে।
খাণ্ডববনদহনের কারণসম্বন্ধে একটি পুরাবৃত্ত আছে। রাজা শ্বেতকিকৃত দ্বাদশবর্ষব্যাপী যজ্ঞে অপরিমিত আহুতিপ্রদত্ত অপরিমিত ঘৃতগ্রহণের ফলে অগ্নিদেবের এমন অরুচি জন্মাল তিনি সেটি দূর করতে অক্ষম হয়ে ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন। ব্রহ্মা প্রতিবিধানের উপায় বলে দিলেন। খাণ্ডববন দগ্ধ করলেই অগ্নির রোগমুক্তি সম্ভব। অরণ্যবাসী অগণিত প্রাণীর প্রচেষ্টার ফলে, অগ্নিদেব খাণ্ডববনদহনে ব্যর্থ হলেন।
খাণ্ডববনদহনের কারণসম্বন্ধে একটি পুরাবৃত্ত আছে। রাজা শ্বেতকিকৃত দ্বাদশবর্ষব্যাপী যজ্ঞে অপরিমিত আহুতিপ্রদত্ত অপরিমিত ঘৃতগ্রহণের ফলে অগ্নিদেবের এমন অরুচি জন্মাল তিনি সেটি দূর করতে অক্ষম হয়ে ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন। ব্রহ্মা প্রতিবিধানের উপায় বলে দিলেন। খাণ্ডববন দগ্ধ করলেই অগ্নির রোগমুক্তি সম্ভব। অরণ্যবাসী অগণিত প্রাণীর প্রচেষ্টার ফলে, অগ্নিদেব খাণ্ডববনদহনে ব্যর্থ হলেন।
ব্যাধিপীড়িত অগ্নি ব্রহ্মার কাছে সকারণ সমস্ত ব্যর্থতার বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন। ব্রহ্মা অভয় দিলেন, ভবিষ্যতে নর-নারায়ণ ঋষির সহায়তায়, অগ্নি খাণ্ডববনদহনে সক্ষম হবেন। অগ্নি ধ্যানযোগে জানতে পারলেন, অর্জুন ও কৃষ্ণ নর-নারায়ণরূপে জন্ম নিয়েছেন। এর পরে বহু সময় অতিবাহিত হয়েছে। অগ্নি, ব্রহ্মার আশ্বাসবাণী তাঁর স্মরণে আনলেন। ব্রহ্মা আশ্বস্ত করলেন, নর-নারায়ণ ঋষি পূর্বে দেবগণের মধ্যে গণ্য ছিলেন। এখন তাঁরা মনুষ্যলোকে অবতীর্ণ হয়েছেন। দেবতাদের কোন কাজের উদ্দেশ্যে তাঁদের এই নরজন্মলাভ। অর্জুন ও কৃষ্ণ এই নর-নারায়ণ ঋষি। এই দুজনের সম্মিলিত শক্তি, প্রাণীদের এবং ইন্দ্রকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে, ব্রহ্মা এ বিষয়ে নিশ্চিত। তৌ তু সত্ত্বানি সর্ব্বাণি যত্নতো বারয়িষ্যতঃ। দেবরাজঞ্চ সহিতৌ তত্র মে নাস্তি সংশয়ঃ।। সেই আশ্বাস-বাণী শুনে অগ্নি, কৃষ্ণ ও অর্জুনের কাছে উপস্থিত হলেন। অর্জুন জানালেন, তাঁর অনেক উত্তম ও দৈব যুদ্ধাস্ত্র আছে, নেই শুধু বাহুবলের উপযোগী ধনুক এবং বহু শরনিক্ষেপের জন্য বহু শর প্রয়োজন ও বহু বাণ বহনোপযোগী রথও আবশ্যক।
শুধু তাই নয়, অর্জুনের প্রয়োজন বায়ুর তুল্য বেগবান শ্বেতবর্ণ অশ্ব এবং সূর্যতুল্য তেজস্বী ও মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনের মতো শব্দকারী একটি রথ। কৃষ্ণেরও যথোপযুক্ত শৌর্যপ্রকাশের উপযোগী এবং নাগ ও পিশাচদের দমনে সমর্থ, এমন কোন অস্ত্র নেই। তাহলে কর্মসিদ্ধির উপায়? অগ্নিদেব কী সেই উপায় জানেন? যার সাহায্যে অর্জুন মহারণ্যে বর্ষণরত ইন্দ্রকে প্রতিহত করতে পারেন? জানা থাকলে বলুন। উপায়ং কর্ম্মসিদ্ধৌ চ ভগবন্! বক্তুমর্হসি। নিবারয়েয়ং যেনেন্দ্রং বর্ষমাণং মহাবনে।। অর্জুনের মূল বক্তব্য হল—পৌরুষ দ্বারা সব কিছুই সম্ভব। তবে, পৌরুষপ্রকাশের উপকরণ প্রদান করবার সামর্থ্য কী অগ্নিদেবের আছে?
শুধু তাই নয়, অর্জুনের প্রয়োজন বায়ুর তুল্য বেগবান শ্বেতবর্ণ অশ্ব এবং সূর্যতুল্য তেজস্বী ও মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনের মতো শব্দকারী একটি রথ। কৃষ্ণেরও যথোপযুক্ত শৌর্যপ্রকাশের উপযোগী এবং নাগ ও পিশাচদের দমনে সমর্থ, এমন কোন অস্ত্র নেই। তাহলে কর্মসিদ্ধির উপায়? অগ্নিদেব কী সেই উপায় জানেন? যার সাহায্যে অর্জুন মহারণ্যে বর্ষণরত ইন্দ্রকে প্রতিহত করতে পারেন? জানা থাকলে বলুন। উপায়ং কর্ম্মসিদ্ধৌ চ ভগবন্! বক্তুমর্হসি। নিবারয়েয়ং যেনেন্দ্রং বর্ষমাণং মহাবনে।। অর্জুনের মূল বক্তব্য হল—পৌরুষ দ্বারা সব কিছুই সম্ভব। তবে, পৌরুষপ্রকাশের উপকরণ প্রদান করবার সামর্থ্য কী অগ্নিদেবের আছে?
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১০: বনবাসী রামের নিরাসক্ত ভাবমূর্তির অন্তরালে, ভাবি রামরাজ্যের স্রষ্টা দক্ষ প্রশাসক রাম

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৪: ‘মহেশ্বরের অনন্ত ধৈর্য’
ধূম যাঁর কেতু বা ধ্বজা সেই হুতাশন অগ্নি, বিষয়টি চিন্তা করে, অদিতিপুত্র,জলে বসবাসকারী, জলদেবতা বরুণদেবকে স্মরণ করলেন। বরুণদেব তাঁকে দেখা দিলেন। জলেশ্বর, চতুর্থ লোকপাল, দেবদেব,সনাতন বরুণকে, অগ্নি সাদরে গ্রহণ করলেন। বরুণদেবের কাছে প্রার্থনা করলেন অগ্নি,চন্দ্র আপনাকে যে ধনুক, যে দুটি তূণীর এবং যে কপিধ্বজ রথটি দিয়েছেন, সেগুলি আমায় দান করুন। সোমেন রাজ্ঞা যদ্দত্তং ধনুশ্চৈবেষুধী চ তে। তৎ প্রযচ্ছোভয়ং শীঘ্রং রথঞ্চ কপিলক্ষণম্।। লক্ষ্য কী? অর্জুন সেই গাণ্ডীব ধনুর সাহায্যে এবং কৃষ্ণ চক্রের (সুদর্শন) দ্বারা মহান কাজটি (খাণ্ডববনদহন) করবেন। বরুণদেব, অগ্নির প্রার্থিত গাণ্ডীব ধনু এবং দুটি অক্ষয় তূণ দান করলেন।
এই গাণ্ডীবধনুর বিশেষত্ব কী? এই ধনুকটি ব্যতিক্রমী ও অদ্ভুত। যশ ও কীর্তিবর্দ্ধক এই গাণ্ডীবধনু। সর্বপ্রকার অস্ত্রদ্বারা অজেয়, সকলাস্ত্রবিজয়ী, ধনুকটি সবরকম অস্ত্রের মধ্যে মাত্রাহীন বৃহৎ। সমস্ত সৈন্যজয়ী, সংখ্যায় এক হয়েও শত সহস্র ধনুকের তুল্য, রাষ্ট্রের উন্নতির মূলে ছিল গাণ্ডীবধনু। নানা প্রকার বর্ণসজ্জিত ধনুকটি ছিল মসৃণ ও কীটপতঙ্গের ক্ষতহীন। দেব-দানব-গন্ধর্বদের দ্বারা চিরকাল পূজিত হত গাণ্ডীব। বরুণদেব সর্বদাই বাণপূর্ণ, মহাতূণ দুটিও প্রদান করলেন। তিনি দিব্যাশ্বযুক্ত, কপি অর্থাৎ বানরধ্বজসমন্বিত রথও দিলেন। রথের অশ্বগুলি ছিল রৌপ্যবর্ণ, গন্ধর্বদেশীয়, স্বর্ণাভরণে সজ্জিত,শুভ্রমেঘবরণ,মন ও বায়ুসম গতিমান, সমস্ত উপকরণ যুক্ত,দেবতা ও দানবদের অজেয়।ভৌম অর্থাৎ বিশ্বকর্মা অনেক কষ্ট করে, অতি উজ্জ্বল, গম্ভীর গর্জনকারী,সব প্রাণীদের কাছে রমণীয়, রথটি সৃষ্টি করেছিলেন। সূর্যতুল্য অবর্ণনীয় রূপ সেই রথের, এই রথে আরোহণ করে, প্রজাপতি চন্দ্র, দানবদের জয় করেছিলেন। ইন্দ্রধনুর মতো বর্ণময় অর্জুন ও কৃষ্ণ, নতুন মেঘবৎ উজ্জ্বল, শ্রেষ্ঠ রথটিতে আরোহণ করলেন।
এই গাণ্ডীবধনুর বিশেষত্ব কী? এই ধনুকটি ব্যতিক্রমী ও অদ্ভুত। যশ ও কীর্তিবর্দ্ধক এই গাণ্ডীবধনু। সর্বপ্রকার অস্ত্রদ্বারা অজেয়, সকলাস্ত্রবিজয়ী, ধনুকটি সবরকম অস্ত্রের মধ্যে মাত্রাহীন বৃহৎ। সমস্ত সৈন্যজয়ী, সংখ্যায় এক হয়েও শত সহস্র ধনুকের তুল্য, রাষ্ট্রের উন্নতির মূলে ছিল গাণ্ডীবধনু। নানা প্রকার বর্ণসজ্জিত ধনুকটি ছিল মসৃণ ও কীটপতঙ্গের ক্ষতহীন। দেব-দানব-গন্ধর্বদের দ্বারা চিরকাল পূজিত হত গাণ্ডীব। বরুণদেব সর্বদাই বাণপূর্ণ, মহাতূণ দুটিও প্রদান করলেন। তিনি দিব্যাশ্বযুক্ত, কপি অর্থাৎ বানরধ্বজসমন্বিত রথও দিলেন। রথের অশ্বগুলি ছিল রৌপ্যবর্ণ, গন্ধর্বদেশীয়, স্বর্ণাভরণে সজ্জিত,শুভ্রমেঘবরণ,মন ও বায়ুসম গতিমান, সমস্ত উপকরণ যুক্ত,দেবতা ও দানবদের অজেয়।ভৌম অর্থাৎ বিশ্বকর্মা অনেক কষ্ট করে, অতি উজ্জ্বল, গম্ভীর গর্জনকারী,সব প্রাণীদের কাছে রমণীয়, রথটি সৃষ্টি করেছিলেন। সূর্যতুল্য অবর্ণনীয় রূপ সেই রথের, এই রথে আরোহণ করে, প্রজাপতি চন্দ্র, দানবদের জয় করেছিলেন। ইন্দ্রধনুর মতো বর্ণময় অর্জুন ও কৃষ্ণ, নতুন মেঘবৎ উজ্জ্বল, শ্রেষ্ঠ রথটিতে আরোহণ করলেন।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৭: পাতি সরালি

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১২: অপারেশন অপহরণ
সুবর্ণনির্মিত কপিধ্বজরথটির পতাকাটিতে সিংহ ও ব্যাঘ্রতুল্য দিব্য এক ভয়ঙ্করাকৃতি বানর যেন বিপক্ষকে দগ্ধ করতে করতে মস্তকে শোভা বিস্তার করেছে। সেই ধ্বজে অন্যন্য বিশাল প্রাণীরাও রয়েছে। রথধ্বনিতে শত্রুসৈন্যদের সংজ্ঞা লুপ্ত হতো। অর্জুন, নানাপতাকাশোভিত রথখানি প্রদক্ষিণ করলেন। তিনি, দেবতাদের প্রণাম জানিয়ে, কবচ, খড়্গ, গোধা ও অঙ্গুলিত্রাণ, ধারণ করে, পুণ্যবান মানুষের মতো, বিমানে আরোহণ করলেন। তিনি পুরাকালে ব্রহ্মানির্মিত সেই অলৌকিক সর্বোত্তম গাণ্ডীবধনুকটি উত্তোলিত করে আনন্দিত হলেন। তার থেকেও শৌর্যশালী অগ্নিদেবের সম্মুখে রেখে, বলপূর্বক ধনুকটিতে গুণ যুক্ত করলেন। বীর অর্জুনের গুণারোপের সময়ে, যাঁরাই শব্দ শুনলেন তাঁরাই ব্যথিত হলেন। সেই রথ, অক্ষয় তূণ দুটি নিয়ে, সন্তুষ্ট কুন্তীপুত্র, অর্জুন, অগ্নির সাহায্যার্থে রণসাজে প্রস্তুত হলেন। অগ্নিদেব, বজ্রসম মধ্যদেশ যার এমন বজ্রনাভ চক্রটি কৃষ্ণকে দান করলেন।
আগ্নেয়াস্ত্রের মতো প্রিয় চক্রটি হল কৃষ্ণের যুদ্ধের সাজ। পাবক অগ্নিদেব, মধুসূদনকে বললেন, এর সাহায্যে অমানব, মানব ও দেবতাদের সঙ্গে যুদ্ধে, নিঃসন্দেহে আপনার জয় হবে। অমানুষানপি রণে জেষ্যসি ত্বমসংশয়ম্। অনেন তু মনুষ্যাণাং দেবানামপি চাহবে।। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, শ্রেষ্ঠ এই চক্রটি যুদ্ধে রাক্ষস, পিশাচ, দৈত্য ও নাগেদের থেকেও প্রবল। রণক্ষেত্রে বার বার শত্রুদের প্রতি নিক্ষিপ্ত হলেও, শত্রু নাশ করে, অপ্রতিহত চক্রটি আবারও কৃষ্ণের হাতেই ফিরে আসবে। বরুণদেব কৃষ্ণকে কৌমোদকী নামে, অশনিবৎ গর্জনকারী, দৈত্যবিনাশে সক্ষম, ভয়ঙ্কর গদা দান করলেন। তখন অস্ত্রবিদ্যাবিদ, অস্ত্রসজ্জিত, দুজন রথী, ধ্বজাধারী কৃষ্ণ ও অর্জুন আনন্দসহকারে অগ্নিদেবকে বললেন, যুদ্ধের জন্য অস্ত্রসজ্জিত আমরা দু’জনে দেব ও অসুরের সঙ্গে যুদ্ধে সক্ষম। তক্ষকের রক্ষাকারী যুদ্ধে ইচ্ছুক একাকী ইন্দ্রের কথাতো তুচ্ছ। কল্যৌ স্বো ভগবন্! যোদ্ধুমপি সর্ব্বৈঃ সুরাসুরৈঃ। কিং পুনর্ব্বজ্রিণৈকেন পন্নগার্থে যুযুৎসতা।।
আগ্নেয়াস্ত্রের মতো প্রিয় চক্রটি হল কৃষ্ণের যুদ্ধের সাজ। পাবক অগ্নিদেব, মধুসূদনকে বললেন, এর সাহায্যে অমানব, মানব ও দেবতাদের সঙ্গে যুদ্ধে, নিঃসন্দেহে আপনার জয় হবে। অমানুষানপি রণে জেষ্যসি ত্বমসংশয়ম্। অনেন তু মনুষ্যাণাং দেবানামপি চাহবে।। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, শ্রেষ্ঠ এই চক্রটি যুদ্ধে রাক্ষস, পিশাচ, দৈত্য ও নাগেদের থেকেও প্রবল। রণক্ষেত্রে বার বার শত্রুদের প্রতি নিক্ষিপ্ত হলেও, শত্রু নাশ করে, অপ্রতিহত চক্রটি আবারও কৃষ্ণের হাতেই ফিরে আসবে। বরুণদেব কৃষ্ণকে কৌমোদকী নামে, অশনিবৎ গর্জনকারী, দৈত্যবিনাশে সক্ষম, ভয়ঙ্কর গদা দান করলেন। তখন অস্ত্রবিদ্যাবিদ, অস্ত্রসজ্জিত, দুজন রথী, ধ্বজাধারী কৃষ্ণ ও অর্জুন আনন্দসহকারে অগ্নিদেবকে বললেন, যুদ্ধের জন্য অস্ত্রসজ্জিত আমরা দু’জনে দেব ও অসুরের সঙ্গে যুদ্ধে সক্ষম। তক্ষকের রক্ষাকারী যুদ্ধে ইচ্ছুক একাকী ইন্দ্রের কথাতো তুচ্ছ। কল্যৌ স্বো ভগবন্! যোদ্ধুমপি সর্ব্বৈঃ সুরাসুরৈঃ। কিং পুনর্ব্বজ্রিণৈকেন পন্নগার্থে যুযুৎসতা।।
আরও পড়ুন:

অসমের আলো অন্ধকার, পর্ব-৪৯: পান-সুপারি ছাড়া অসম্পূর্ণ অসমীয়া খাবারের থালি

পর্ব-১৪: আকাশ এখনও মেঘলা
অর্জুন বললেন, ত্রিলোকে এমন কোন বস্তু নেই যা, যুদ্ধে বিচরণকারী, শৌর্যশালী, চক্রপাণি, কৃষ্ণের নিক্ষিপ্ত চক্র, ধ্বংস করেনি। অর্জুন নিজে গাণ্ডীবধনু ও অক্ষয় তূণীর নিয়ে যুদ্ধে সকল লোক জয় করতে উৎসাহী হয়েছেন। অর্জুন অগ্নিদেবকে উদ্বুদ্ধ করলেন, হে মহান প্রভু, আপনি আজই এই অরণ্যের (খাণ্ডববনের) সবদিক পরিবেষ্টন করে, জ্বলে উঠুন। অস্ত্রসজ্জিত আমরা দু’জনে এই সাহসিকতার কাজের জন্য প্রস্তুত। সর্ব্বতঃ পরিবার্য্যৈব দাবমেতং মহাপ্রভো!। কামং সম্প্রজ্বলাদ্যৈব কল্যৌ স্বঃ সাহ্যকর্ম্মণি।। দেবরাজ যদি প্রমাদবশত সৈন্যসহ খাণ্ডববনকে রক্ষা করতে অগ্রসর হন, তবে শরে তাড়িত দেহ ও কুণ্ডলীমাত্র নয়, দেবসেনাদের কেমন দুর্গতি হয় আপনি শুধু দেখবেন।
অর্জুন ও কৃষ্ণ এমন কথা বললে, অগ্নিদেব, তেজস্বী রূপ ধারণ করে খাণ্ডবারণ্যদহনে প্রবৃত্ত হলেন। তিনি, সব স্থান বেষ্টন করে যুগান্তের প্রলয়কালীন অগ্নির দর্শনীয় রূপ দেখিয়ে, খাণ্ডববন দহন করতে লাগলেন। অগ্নি সেই বনটি গ্রহণ করলেন,সেখানে অবস্থান করলেন। তাঁর মেঘের মতো গরুগর্জন সকল প্রাণীকে প্রকম্পিত করে তুলল। অগ্নিদহনকালে অরণ্যের রূপ হল সূর্যকিরণে পরিব্যাপ্ত সুমেরুপর্বততুল্য। রথারূঢ় দুই রথিশ্রেষ্ঠ কৃষ্ণ ও অর্জুন, খাণ্ডববনের দুই দিক অবস্থান করে সব দিক দিয়ে প্রাণীদের বিপদ ডেকে আনলেন। পলায়নপর বনবাসী প্রাণীদের যেখানে দেখা গেল, সেখানেই দুই প্রখ্যাত বীর ধেয়ে গেলেন।
দ্রুতগামী রথারোহী দুই বীরের মধ্যে যেন কোনও ব্যবধান নেই, উত্তম রথিদ্বয় অভিন্ন অর্থাৎ যুক্ত প্রতিভাত হলেন। খাণ্ডবন দগ্ধ হতে লাগল, সেখানকার অসংখ্য প্রাণী ভয়ঙ্কর আর্তনাদ করতে করতে চারিদিক হতে দৃশ্যমান হল। কারও শরীরের কোন অংশ দগ্ধ হল। অর্ধনগ্ন হল কেউ, চক্ষু বিদীর্ণ হল কারও, বাকিদের কেউ ক্ষীণ ও গলিতাঙ্গ হল। প্রাণীদের অনেকে, সন্তানদের, পিতাদের, ভ্রাতাদের জড়িয়ে ধরে মৃত্যুবরণ করল,স্নেহবশত ত্যাগ করতে পারল না। দাঁতে দাঁত চেপে অনেকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করল, কিন্তু (অগ্নিতাপে) ঘূর্ণায়মান অবস্থায় আবারও আগুনে পড়ল। দেখা গেল, অনেক পাখির পাখা, চক্ষু, চরণ দগ্ধ হয়েছে, তারা কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে পড়ে মারা যাচ্ছে। অগ্নির উত্তাপে জলাশয়গুলির জল উত্তপ্ত হয়ে ফুটন্ত অবস্থায় পৌঁছল, তখন মৎস্য, কূর্ম প্রভৃতি জলচর প্রাণীরা নিষ্প্রাণ হল।
অর্জুন ও কৃষ্ণ এমন কথা বললে, অগ্নিদেব, তেজস্বী রূপ ধারণ করে খাণ্ডবারণ্যদহনে প্রবৃত্ত হলেন। তিনি, সব স্থান বেষ্টন করে যুগান্তের প্রলয়কালীন অগ্নির দর্শনীয় রূপ দেখিয়ে, খাণ্ডববন দহন করতে লাগলেন। অগ্নি সেই বনটি গ্রহণ করলেন,সেখানে অবস্থান করলেন। তাঁর মেঘের মতো গরুগর্জন সকল প্রাণীকে প্রকম্পিত করে তুলল। অগ্নিদহনকালে অরণ্যের রূপ হল সূর্যকিরণে পরিব্যাপ্ত সুমেরুপর্বততুল্য। রথারূঢ় দুই রথিশ্রেষ্ঠ কৃষ্ণ ও অর্জুন, খাণ্ডববনের দুই দিক অবস্থান করে সব দিক দিয়ে প্রাণীদের বিপদ ডেকে আনলেন। পলায়নপর বনবাসী প্রাণীদের যেখানে দেখা গেল, সেখানেই দুই প্রখ্যাত বীর ধেয়ে গেলেন।
দ্রুতগামী রথারোহী দুই বীরের মধ্যে যেন কোনও ব্যবধান নেই, উত্তম রথিদ্বয় অভিন্ন অর্থাৎ যুক্ত প্রতিভাত হলেন। খাণ্ডবন দগ্ধ হতে লাগল, সেখানকার অসংখ্য প্রাণী ভয়ঙ্কর আর্তনাদ করতে করতে চারিদিক হতে দৃশ্যমান হল। কারও শরীরের কোন অংশ দগ্ধ হল। অর্ধনগ্ন হল কেউ, চক্ষু বিদীর্ণ হল কারও, বাকিদের কেউ ক্ষীণ ও গলিতাঙ্গ হল। প্রাণীদের অনেকে, সন্তানদের, পিতাদের, ভ্রাতাদের জড়িয়ে ধরে মৃত্যুবরণ করল,স্নেহবশত ত্যাগ করতে পারল না। দাঁতে দাঁত চেপে অনেকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করল, কিন্তু (অগ্নিতাপে) ঘূর্ণায়মান অবস্থায় আবারও আগুনে পড়ল। দেখা গেল, অনেক পাখির পাখা, চক্ষু, চরণ দগ্ধ হয়েছে, তারা কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে পড়ে মারা যাচ্ছে। অগ্নির উত্তাপে জলাশয়গুলির জল উত্তপ্ত হয়ে ফুটন্ত অবস্থায় পৌঁছল, তখন মৎস্য, কূর্ম প্রভৃতি জলচর প্রাণীরা নিষ্প্রাণ হল।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৯: সে এক স্বপ্নের ‘চাওয়া পাওয়া’

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৭: পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যাঁর জীবনের আকাশে কখনও শত্রুতার মেঘ জমেনি
অরণ্যে প্রাণীদের প্রাণক্ষয়হেতু, প্রদীপ্ত অপরাপর শরীরে, অগ্নি যেন দেহধারী, তাঁর অনেক দীপ্তিময় রূপ। অর্জুনের শর উড়ন্ত পাখিদের ডানা ছিন্নভিন্ন করে, প্রজ্জ্বলিত অগ্নিতে নিক্ষেপ করতে লাগল। সর্বাঙ্গ বাণবিদ্ধ অবস্থায় পাখিরা মহাশব্দে আর্ত চিৎকার করে, ঊর্দ্ধে উঠে খাণ্ডবারণ্যেই পড়তে লাগল। অন্যান্য পাখিরা, যারা বাণ বিদ্ধ হয়নি তাদেরও মধ্যমান সমুদ্রের মতো অতি ভয়ানক কলরব শোনা গেল। প্রজ্জ্বলিত অগ্নির গগনস্পর্শী, লেলিহান শিখা দেবতাদের গভীর উদ্বেগের কারণ হল। অগ্নিদেবের অসহনীয় উত্তাপে সন্তপ্ত মহাত্মাবৃন্দ ও দেবগণ সকলে মিলে অসুরবিনাশী দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে উপস্থিত হলেন। দেবতারা বললেন, চিত্রভানু অগ্নি, কী সকল মানুষকে দগ্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছেন? হে দেবরাজ, লোকক্ষয়কারী প্রলয়কাল কী সমুপস্থিত হয়েছে? কিং ন্বিমে মানবাঃ সর্ব্বে দহ্যন্তে চিত্রভানুনা। কচ্চিন্ন সংক্ষয়ঃ প্রাপ্তো লোকানামমরেশ্বর!।।
তাঁদের বক্তব্য শুনে, বৃত্রাসুরনিহন্তা হরিবাহন ইন্দ্র, স্বয়ং সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে, খাণ্ডববন রক্ষা করতে অগ্রসর হলেন। আকাশ জুড়ে বৃহৎ ও নানাপ্রকার রথের সাহায্যে সুরেশ্বর ইন্দ্র,জল বর্ষণ করতে লাগলেন। দেবরাজের ইচ্ছানুসারে, মেঘেরা জপমালার মতো বড় বড় বিন্দুতে খাণ্ডববনে শত সহস্র ধারায় জল বর্ষণ করতে লাগল। জাতবেদা অগ্নির তেজঃসন্তাপে আকাশেই সেই সব জলধারা শুষ্ক হয়ে দহনস্থলে পৌঁছতে অক্ষম হল। তখন নমুচিহা ইন্দ্র,অগ্নির উপর ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়ে আবারও বহু মহামেঘের দ্বারা জলবর্ষণ করতে লাগলেন। অগ্নিশিখা ও জলধারার সম্মিলিত মহাধূম, সেই সঙ্গে পরিব্যাপ্ত বিদ্যুৎ, সব মিলিয়ে মেঘাবৃত সেই খাণ্ডববন অতি ভয়ানক হয়ে উঠল।
খাণ্ডববনদহনের জন্যে সাহায্যার্থী অগ্নিদেবের প্রার্থনায় সাড়া দিলেন অর্জুন ও কৃষ্ণ। প্রতিপক্ষ দেবরাজ ইন্দ্র। অগ্নিদেব ক্ষুধামান্দ্য রোগের শিকার। ব্রহ্মার নির্দিষ্ট রোগমুক্তির উপায় হল, খাণ্ডববনদহনের ফলে দগ্ধ পশুদের মেদ ভক্ষণ। তেষাং ত্বং মেদসা তৃপ্তঃ প্রকৃতিস্থো ভবিষ্যসি। নর-নারায়ণ ঋষি, জন্মান্তরে যাঁরা দু’জনে কৃষ্ণ ও অর্জুন হয়েছেন, তাঁরাই হবেন সাহায্যকারী। অর্জুন—যাঁর শৌর্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নাতীত, অপরজন শরণাগতের রক্ষক কৃষ্ণ। এক বীভৎস বনদহনে মেতে উঠলেন দুই প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব। অগ্নির আগ্রাসী লেলিহান শিখা গ্রাস করছে অরণ্যবাসী প্রাণীদের,তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছেন দুই বীর। অগ্নিদেবের কাছে, অর্জুন ও কৃষ্ণ, অস্ত্রসম্ভার প্রার্থনা করলেন। অর্জুন লাভ করলেন, গাণ্ডীবধনু, অক্ষয় তূণীর ও কপিধ্বজ রথ। কৃষ্ণের প্রার্থিত সুদর্শন চক্র খাণ্ডবারণ্য দহনকার্যে ও বনবাসী পশুদের নিধনে, প্রথম ব্যবহৃত হল। এটি অস্ত্রের অপব্যবহার বলে মনে হতেই পারে।
তাঁদের বক্তব্য শুনে, বৃত্রাসুরনিহন্তা হরিবাহন ইন্দ্র, স্বয়ং সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে, খাণ্ডববন রক্ষা করতে অগ্রসর হলেন। আকাশ জুড়ে বৃহৎ ও নানাপ্রকার রথের সাহায্যে সুরেশ্বর ইন্দ্র,জল বর্ষণ করতে লাগলেন। দেবরাজের ইচ্ছানুসারে, মেঘেরা জপমালার মতো বড় বড় বিন্দুতে খাণ্ডববনে শত সহস্র ধারায় জল বর্ষণ করতে লাগল। জাতবেদা অগ্নির তেজঃসন্তাপে আকাশেই সেই সব জলধারা শুষ্ক হয়ে দহনস্থলে পৌঁছতে অক্ষম হল। তখন নমুচিহা ইন্দ্র,অগ্নির উপর ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়ে আবারও বহু মহামেঘের দ্বারা জলবর্ষণ করতে লাগলেন। অগ্নিশিখা ও জলধারার সম্মিলিত মহাধূম, সেই সঙ্গে পরিব্যাপ্ত বিদ্যুৎ, সব মিলিয়ে মেঘাবৃত সেই খাণ্ডববন অতি ভয়ানক হয়ে উঠল।
খাণ্ডববনদহনের জন্যে সাহায্যার্থী অগ্নিদেবের প্রার্থনায় সাড়া দিলেন অর্জুন ও কৃষ্ণ। প্রতিপক্ষ দেবরাজ ইন্দ্র। অগ্নিদেব ক্ষুধামান্দ্য রোগের শিকার। ব্রহ্মার নির্দিষ্ট রোগমুক্তির উপায় হল, খাণ্ডববনদহনের ফলে দগ্ধ পশুদের মেদ ভক্ষণ। তেষাং ত্বং মেদসা তৃপ্তঃ প্রকৃতিস্থো ভবিষ্যসি। নর-নারায়ণ ঋষি, জন্মান্তরে যাঁরা দু’জনে কৃষ্ণ ও অর্জুন হয়েছেন, তাঁরাই হবেন সাহায্যকারী। অর্জুন—যাঁর শৌর্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নাতীত, অপরজন শরণাগতের রক্ষক কৃষ্ণ। এক বীভৎস বনদহনে মেতে উঠলেন দুই প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব। অগ্নির আগ্রাসী লেলিহান শিখা গ্রাস করছে অরণ্যবাসী প্রাণীদের,তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছেন দুই বীর। অগ্নিদেবের কাছে, অর্জুন ও কৃষ্ণ, অস্ত্রসম্ভার প্রার্থনা করলেন। অর্জুন লাভ করলেন, গাণ্ডীবধনু, অক্ষয় তূণীর ও কপিধ্বজ রথ। কৃষ্ণের প্রার্থিত সুদর্শন চক্র খাণ্ডবারণ্য দহনকার্যে ও বনবাসী পশুদের নিধনে, প্রথম ব্যবহৃত হল। এটি অস্ত্রের অপব্যবহার বলে মনে হতেই পারে।

ছবি: সংগৃহীত।
অগ্নিদেব অবোধ প্রাণীদের নৃশংস নিধনে আঁটঘাট বেঁধে নেমে পড়লেন। বিধ্বংসী সে আগুন বনভূমি পরিব্যাপ্ত করে জ্বলে উঠল, যাঁর থেকে নিস্তার নেই কোনও প্রাণীর। এই নির্মম হত্যালীলা যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সেই দিকে লক্ষ্য রেখে অতন্দ্র প্রহরায় রইলেন মহাভারতখ্যাত দুই বীর। শৌর্যের এই অপব্যবহার,অপচয়, মানবিকতবিরোধী বললে, বোধ হয় অত্যুক্তি নয়। যুযুধান আগুন ও জল,অগ্নিদেব ও ইন্দ্রের বিরোধিতার পরিণাম হল ধোঁয়া, জল, বিদ্যুৎ, মেঘের ঘনঘটায় আবৃত, এক ভয়ঙ্কর খাণ্ডববন। খাণ্ডববনদহনের মূল উদ্দেশ্য পশুহত্যা ও তাদের মেদ, ভক্ষ্যরূপে গ্রহণ। অরণ্য তাঁর অনুষঙ্গমাত্র। এইভাবে যুযুধান দুই বৃহৎ শক্তির বিরোধিতার ফল ভোগ করেন নিরপরাধ কত মানুষ, ঠিক অরণ্যবাসী ওই অবোধ প্রাণীদের মতো। অগ্নিদেবের আগ্রাসী ক্ষুধা যেন আমাদের অপরিমিত লোভের প্রতীক। যাতে ইন্ধন যোগান দেন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত প্রশাসকরা, তাঁদের আখের গুছিয়ে নেবার তাগিদ প্রচ্ছন্নভাবে কাজ করে। আমরা আত্মঘাতী অরণ্যবিনাশে মেতে উঠি, প্রাণীদের অমূল্য জীবনের যে প্রয়োজন আছে, সে কথা ভুলে যাই, জীববৈচিত্র্যরক্ষায় তাঁদের অবদান ভুলে যাই, যেমন ভুলে যাই আমাদের প্রাণবায়ুরক্ষায় উদ্ভিদজগতের অবদানও।
নরহরি, শরণাগত, দীন, আর্তের রক্ষক, কৃষ্ণকে চেনা যায় কী? কিংবা শস্ত্রবীর অর্জুনকে? অগ্নিদেবের ক্ষুণ্ণিবৃত্তির সাহায্যকারী দু’জনেই শরণাগতের রক্ষক। ক্ষত্রিয়ের শাস্ত্রানুমোদিত ধর্ম, দেশরক্ষা ও প্রজাপালন। অর্জুন এই ধর্মনিষ্ঠতার কী উদাহরণ রাখলেন? তাঁরা নির্বিচারে অসংখ্য প্রাণীদের হত্যা করলেন। চর এবং সেই সঙ্গে অচর উদ্ভিদ তাঁদের অস্ত্রের শিকার হল। লক্ষ্যভেদে অব্যর্থ অর্জুনের শর, শান্তির বারিধারা প্রতিহত করল। এইভাবে উষ্ণায়নের পক্ষে ক্ষমতাবান প্রশাসকদের লড়াই প্রকাশ্যে নয়, প্রচ্ছন্নভাবে চলেছে। বলি হচ্ছে সহস্র প্রাণ। এ চিত্র শুধু মহাভারতেই নয়, আধুনিক পৃথিবীতেও হয়তো এমন এক বিরল যুগচিত্রের সূচনা হতে চলেছে।—চলবে।
নরহরি, শরণাগত, দীন, আর্তের রক্ষক, কৃষ্ণকে চেনা যায় কী? কিংবা শস্ত্রবীর অর্জুনকে? অগ্নিদেবের ক্ষুণ্ণিবৃত্তির সাহায্যকারী দু’জনেই শরণাগতের রক্ষক। ক্ষত্রিয়ের শাস্ত্রানুমোদিত ধর্ম, দেশরক্ষা ও প্রজাপালন। অর্জুন এই ধর্মনিষ্ঠতার কী উদাহরণ রাখলেন? তাঁরা নির্বিচারে অসংখ্য প্রাণীদের হত্যা করলেন। চর এবং সেই সঙ্গে অচর উদ্ভিদ তাঁদের অস্ত্রের শিকার হল। লক্ষ্যভেদে অব্যর্থ অর্জুনের শর, শান্তির বারিধারা প্রতিহত করল। এইভাবে উষ্ণায়নের পক্ষে ক্ষমতাবান প্রশাসকদের লড়াই প্রকাশ্যে নয়, প্রচ্ছন্নভাবে চলেছে। বলি হচ্ছে সহস্র প্রাণ। এ চিত্র শুধু মহাভারতেই নয়, আধুনিক পৃথিবীতেও হয়তো এমন এক বিরল যুগচিত্রের সূচনা হতে চলেছে।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।