
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
কৈকেয়ীপুত্র ভরত, জ্যেষ্ঠ রামচন্দ্রের প্রাপ্য অযোধ্যার সিংহাসনের উত্তরাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে, তাঁকে অযোধ্যায় সঙ্গে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে, চিত্রকূট পর্বতে উপস্থিত হয়েছেন। রামের সঙ্গে সহাবস্থানরত লক্ষ্মণ, ভরতের উদ্দেশ্যে সম্বন্ধে সন্দিহান। তাঁর ঘোর সন্দেহ কল্পিত প্রতিদ্বন্দ্বী রামকে হত্যা করে তাঁর পথের কাঁটা দূর করতেই ভরতের আগমন। লক্ষ্মণও ভরতকে তিনি সমূলে নিহত করতে প্রস্তুত। বিমাতা কৈকেয়ীরও তাঁর এই ক্রোধের থেকে নিস্তার নেই। প্রবল ক্রোধে জ্বলে উঠে, লক্ষ্মণ, জ্যেষ্ঠ রামের কাছে এই সব প্রাণঘাতী পরিকল্পনা প্রকাশ করলেন।
জ্যেষ্ঠ রামের দুদিকে দুই স্নেহধন্য ভাই, ভরত ও লক্ষ্মণ। ভরত সসৈন্যে উপস্থিত,অপরদিকে ক্রোধান্ধ লক্ষ্মণ। রাম সম্মুখে উপস্থিত লক্ষ্মণকেই সান্ত্বনা দিতে উদ্যত হলেন। মহাবীর, মহোৎসাহী ভরত স্বয়ং এখানে উপস্থিত হয়েছেন, তখন এই ধনুক, অসি ও চর্মের কী প্রয়োজন? ওহে লক্ষ্মণ, পিতার কাছে সত্যপ্রতিজ্ঞ আমি, তাই এই যুদ্ধে ভরতকে হত্যা করে অপবাদ-সহ রাজ্য গ্রহণ করে কী করব? পিতুঃ সত্যং প্রতিশ্রুত্য হত্বা ভরতমাহবে। কিং করিষ্যামি রাজ্যেন সাপবাদেন লক্ষ্মণ।। বন্ধু ও মিত্রগণকে বিনাশ করে যে দ্রব্যে অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়, বিষমিশ্রিত ভোজ্যদ্রব্যের মতো সেটি গ্রহণ করতে রামের কোনও আকাঙ্খা নেই। রামের দৃঢ় প্রত্যয়, ধর্ম, অর্থ ও কাম তিনি কামনা করেন শুধু ভবতামর্থে লক্ষ্মণদের জন্যই। রাম, লক্ষ্মণকে জানালেন, ভাইদের সম্মিলিত সাহচর্য্যলাভ ও সুখের জন্যেই তিনি রাজ্যগ্রহণে আগ্রহী এবং তিনি সত্যের কারণেই অস্ত্র ধারণ করে থাকেন। ভ্রাতৃণাং সংগ্রহার্থঞ্চ সুখার্থঞ্চাপি লক্ষ্মণ। রাজ্যমপ্যহমিচ্ছামি সত্যেনায়ুধমালভে।।
জ্যেষ্ঠ রামের দুদিকে দুই স্নেহধন্য ভাই, ভরত ও লক্ষ্মণ। ভরত সসৈন্যে উপস্থিত,অপরদিকে ক্রোধান্ধ লক্ষ্মণ। রাম সম্মুখে উপস্থিত লক্ষ্মণকেই সান্ত্বনা দিতে উদ্যত হলেন। মহাবীর, মহোৎসাহী ভরত স্বয়ং এখানে উপস্থিত হয়েছেন, তখন এই ধনুক, অসি ও চর্মের কী প্রয়োজন? ওহে লক্ষ্মণ, পিতার কাছে সত্যপ্রতিজ্ঞ আমি, তাই এই যুদ্ধে ভরতকে হত্যা করে অপবাদ-সহ রাজ্য গ্রহণ করে কী করব? পিতুঃ সত্যং প্রতিশ্রুত্য হত্বা ভরতমাহবে। কিং করিষ্যামি রাজ্যেন সাপবাদেন লক্ষ্মণ।। বন্ধু ও মিত্রগণকে বিনাশ করে যে দ্রব্যে অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়, বিষমিশ্রিত ভোজ্যদ্রব্যের মতো সেটি গ্রহণ করতে রামের কোনও আকাঙ্খা নেই। রামের দৃঢ় প্রত্যয়, ধর্ম, অর্থ ও কাম তিনি কামনা করেন শুধু ভবতামর্থে লক্ষ্মণদের জন্যই। রাম, লক্ষ্মণকে জানালেন, ভাইদের সম্মিলিত সাহচর্য্যলাভ ও সুখের জন্যেই তিনি রাজ্যগ্রহণে আগ্রহী এবং তিনি সত্যের কারণেই অস্ত্র ধারণ করে থাকেন। ভ্রাতৃণাং সংগ্রহার্থঞ্চ সুখার্থঞ্চাপি লক্ষ্মণ। রাজ্যমপ্যহমিচ্ছামি সত্যেনায়ুধমালভে।।
এই সসাগরা পৃথিবী লাভ করা রামের পক্ষে দুরূহ নয়। অধর্ম আশ্রয় করে ইন্দ্রত্বলাভেও তিনি ইচ্ছুক নন। রাম লক্ষ্মণকে আশ্বস্ত করলেন, ভরত, লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন বিনা যদি কিছু সুখেচ্ছা থাকে তবে অগ্নিদেব যেন সেটি ভস্মীভূত করেন। রাম মনে করেন প্রাণসম প্রিয়, ভ্রাতৃবৎসল ভরত,কুলধর্ম স্মরণ করে (মাতুলালয় হতে) অযোধ্যায় এসেছিলেন। তাঁর স্থির বিশ্বাস, রাম জটাবল্কল ধারণ করে, জানকী ও বীর লক্ষ্মণসহ প্রব্রজ্যা নিয়েছেন — জেনে, স্নেহদুর্বল ও শোকবিহ্বল হয়ে রামের দর্শনার্থী ভরত এখানে এসেছেন, অন্য কোনও কারণে নয়। মায়ের প্রতি ক্রুদ্ধ ভরত, কর্কশভাষায় জননীকে ভর্ৎসনা করে, পিতার প্রসন্নতা বিধানের জন্য, রামকে রাজ্য প্রত্যর্পণ করতেই এখানে এসেছেন।ভরত যখন তাঁদের দর্শন করতেই এখানে এসেছেন,রামের দৃঢ় বিশ্বাস, ভরতের মনে কোন অশুভ অভিসন্ধি নেই। রামের প্রশ্ন, লক্ষ্মণের এমন আশঙ্কার কারণ কী? ভরত কি অতীতে কখনও কোনও বিরূপ আচরণ করেছেন যে ভরতকে দেখে এত ভয় এবং আশঙ্কা? রামের অনুরোধ, ভরতের উদ্দেশে লক্ষ্মণ যেন কোনও নিষ্ঠুর ও অপ্রিয় বাক্য না বলেন। ভরতকে কোন অপ্রিয় কথা বললে,তবে সেই অপ্রিয় কথা রামকেই বলা হবে। ন হি তে নিষ্ঠুরং বাচ্যো ভরতো নাপ্রিয়ং বচঃ। অহমপ্রিয়মুক্তঃ স্যাৎ ভরতস্যাপ্রিয়ে কৃতে।।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৫: বনবাসে অর্জুনের অসংযত জীবন, আশ্রয়দাতার বিশ্বাসভঙ্গ কি অনুসরণযোগ্য আচরণ?

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-২০: সঙ্কল্পজাতক
রামের কাছে অকল্পনীয়, ভরতের ব্যবহারসম্বন্ধে লক্ষ্মণের এমন নৃশংস মূল্যায়ন। কোনও চরম সংকটেও কী পুত্ররা পিতাকে কিংবা ভাই ভাইকে হত্যা করতে পারে? রামের কণ্ঠে ভর্ৎসনার সুর, যদি রাজ্যের নিমিত্ত লক্ষ্মণ এমন কথা বলে থাকেন, তবে রাম ভরতকে বলবেন, রাজ্যমস্মৈ প্রদীয়তাম্ একেই (লক্ষ্মণকেই) রাজ্যাধিকার দেওয়া হোক। রাম এ বিষয়ে নিশ্চিত, ভরত এই প্রস্তাবে সম্মত হবেন। ধর্মাত্মা জ্যেষ্ঠ রামের কথায় লজ্জায় সঙ্কুচিত হয়ে যেন নিজের শরীরেই মিশে গেলেন লক্ষ্মণ। লজ্জিত লক্ষ্মণের অনুমান, মনে হয়, পিতা রাজা দশরথ রামকে দেখতে এসেছেন। লক্ষ্মণকে লজ্জিত দেখে রাম, তাঁর অনুমান সমর্থন করলেন, এষ মন্যে মহাবাহুরিহাস্মান্ দ্রষ্টুমাগতঃ। রামের ধারণা, মহাবাহুপিতা পুত্রদের দেখতেই এসেছেন। বনবাসী দুই পুত্র সুখের জীবনে অভ্যস্ত, বনবাস নিতান্তই কষ্টকর মনে করে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছেন। শ্রীমান পিতা চিরকাল সুখে লালিতা বিদেহরাজদুহিতা সীতাকে গৃহে নিয়ে যাবেন। ওই যে উত্তমবংশজাত, বায়ুবেগতুল্য গতিময়, মনোহর, শক্তিশালী, শ্রেষ্ঠ ঘোড়াদুটি দৃশ্যমান, আর সৈন্যবাহিনীর পুরোভাগে আছে, প্রজ্ঞাবান বৃদ্ধ পিতার শত্রুঞ্জয় নামে বিশালাকৃতির হাতিটি। রাম বিস্মিত, কারণ পিতার সেই লোকবিখ্যাত পাণ্ডুরবর্ণের দিব্য ছত্রটি দেখা যাচ্ছে না যে। তাই রামের মনে ঘোর সংশয়।রাম আদেশ দিলেন, বৃক্ষাগ্রাদবরোহ ত্বং কুরু লক্ষ্মণ মদ্বচঃ। আমার কথা শোন,বৃক্ষের অগ্রভাগ হতে অবতরণ কর। লক্ষ্মণ তৎক্ষণাৎ আদেশ পালন করে জোড় হাতে দাঁড়ালেন। যাতে কোনও রকম উৎপাতজনিত কষ্ট না হয়, তাই ইতিমধ্যে ভরতের আদেশানুসারে, পর্বতের চতুর্দিকে সেনানিবাসের পরিকল্পনা করা হল। পর্বতের অর্দ্ধ যোজন স্থান ব্যাপ্ত করে, গজাশ্বপদাতিকযুক্ত ইক্ষ্বাকুসেনা বিস্তৃত হল। ধর্মবোধকে সম্মান জানিয়ে, দম্ভ ত্যাগ করে, রঘুনন্দন রামের প্রসন্নতাবিধানের উদ্দেশ্যে, নীতিজ্ঞ ভরত চিত্রকূটে সৈন্য সমাবেশ করলেন।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫০: রোজই দেখি আলাস্কা পর্বতশৃঙ্গের বাঁ দিকের চূড়া থেকে সূর্য উঠতে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৯: সে এক স্বপ্নের ‘চাওয়া পাওয়া’
ইতিমধ্যে সব জল্পনার কেন্দ্রবিন্দু, যাঁকে ঘিরে লক্ষ্মণের এত উদ্বেগ, যাঁর প্রতি রামের অসীম আস্থা সেই ভরত কী করছেন? তিনি সৈন্যদের যথাযথরূপে বিন্যস্ত করে গুরুপ্রতিম, রামের কাছে পদব্রজে যাবেন বলে মনস্থ করলেন। সৈন্যসমাবেশান্তে ভরত সবিনয়ে ভাই শত্রুঘ্নকে নির্দেশ দিলেন, দ্রুত লোকজনসহ নিষাদগণের সঙ্গে একত্রে চারিদিকের অরণ্যে অন্বেষণ করা হোক। নিষাদরাজ গুহ স্বয়ং তীর ধনুক নিয়ে সহস্র পরিজনসহ কাকুৎস্থ রামের অনুসন্ধান করুন। ভরত স্বয়ং পুরবাসীদের সঙ্গে নিয়ে,অমাত্য,গুরু,ব্রাহ্মণদের সঙ্গে সমবেতভাবে পায়ে হেঁটে এই অরণ্যে বিচরণ করবেন। অমাত্যৈঃ সহ পৌরৈশ্চ গুরুভিশ্চ দ্বিজাতিভিঃ। সহ সর্ব্বং চরিষ্যামি পদ্ভ্যাং পরিবৃতঃ স্বয়ম্।। যতক্ষণ না রাম, মহাবীর লক্ষ্মণ ও বৈদেহী সীতার দর্শন লাভ করবেন ততক্ষণ ভরতের শান্তি নেই। ন মে শান্তির্ভবিষ্যতি। যে পর্যন্ত কমলের মতো আয়ত বিশালনেত্র সোমবৎ শুভবদন জ্যেষ্ঠ রামের দর্শন লাভ করবেন, সেই পর্যন্ত ভরতের শান্তি নেই। ভরতের বিশ্বাস, সুমিত্রানন্দন লক্ষ্মণ সফল হয়েছেন, তিনি কমললোচন, চন্দ্রতুল্য নির্মল রামের দ্যুতিময় মুখটি দেখছেন। যতক্ষণ না জ্যেষ্ঠ রামের রাজোচিত চিহ্নযুক্ত চরণদুটি মস্তকে ধারণ করতে পারছেন ততক্ষণ ভরতের মনে শান্তি নেই।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯২: দুর্গা টুনটুনি

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৭: লুকাবো বলি, লুকাবো কোথায়?
রাজ্যের যোগ্য উত্তরাধিকারী রাম যে পর্যন্ত অভিষেকের জলে স্নাত না হচ্ছেন সে পর্যন্ত ভরত অশান্ত রইবেন। ভরতের অনুমান, জানকী বৈদেহী মহা ভাগ্যবতী সত্যিই ধন্যা ও কৃতার্থা। তিনি যে সসাগরা পৃথিবীর অধীশ্বর স্বামীর অনুগামিনী হয়েছেন। এই চিত্রকূট পর্বত গিরিরাজ হিমালয়সম সৌভাগ্যশালী, কারণ হল সেখানে নন্দনকাননে অধিষ্ঠিত কুবেরতুল্য রামচন্দ্র বাস করছেন। এই শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্য ধন্য, যেহেতু শস্ত্রবিদদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাম এখানে বসবাস করছেন। এমন কথা বলে ভরত পদব্রজে মহারণ্যে প্রবেশ করলেন। গিরিসানুদেশে কত কুসুমিত তরুরাজির মধ্যে দিয়ে চলতে লাগলেন। ভরত চিত্রকূটপর্বতে একটি শালবৃক্ষে আরোহণ করে রামের আশ্রমের ধূম দেখতে পেলেন। সেটি দেখে,ভরত সবান্ধবে পরম সন্তুষ্ট হলেন। ‘এখানে রাম আছেন’—জেনে যেন সাগরের কূল খুঁজে পেলেন। অত্র রাম ইতি জ্ঞাত্বা গতঃ পারমিবাম্ভসঃ। ভরত, চিত্রকূটপর্বতে সজ্জনাশ্রিত রামের আশ্রমের অবস্থান জেনে,সৈন্যদের পুনর্বিন্যস্ত করে, নিষাদপতি গুহের সঙ্গে দ্রুত রওনা দিলেন।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৯: উদ্বোধনের ঠাকুরঘরে মা সারদার সঙ্গে স্বামী অরূপানন্দের কথোপকথন
লক্ষ্মণ সসৈন্য ভরতের উপস্থিতিতে ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। সাধারণের চিন্তা ও বুদ্ধি অনুযায়ী যিনি উৎপাতের মূল কারণ ও প্রতিপক্ষের বিপদাপন্ন অবস্থায় যিনি লাভবান হয়েছেন তাঁর প্রতিই জনরোষ ধাবিত হয়।নীতিগতভাবে আদর্শনিষ্ঠ জ্যেষ্ঠর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ,মনুষ্যত্ববোধের ও পারিবারিক বন্ধনের অন্যতম শর্ত। সম্পূর্ণভাবে রামের নিরাপত্তার দিকটি চিন্তা করেই লক্ষ্মণ তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রাজগৃহের বাতাবরণ অকস্মাৎ রাজ্যচ্যুত রামকে হয়তো সন্দেহপ্রবণ করে তুলেছিল। তিনি ভরত সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করেননি এমনটা হয়তো নয়। নিভৃত অরণ্যযাপন তাঁকে করে তুলেছে শান্ত সমাহিত। সত্যদ্রষ্টা রাম তাঁর অন্তরে সত্যের আলোকে ভ্রাতৃস্নেহের আলোকবর্তিকাকে নিরন্তর প্রজ্বলিত রেখেছেন। তিনি যুযুধান লক্ষ্মণ ও শান্তিকামী ভরতের মাঝখানে পারিবারিক ঐক্যের মানদণ্ড হয়ে সুস্থিতির ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। লক্ষ্মণ রামের ছায়া। রামের চারিত্রিক দৃঢ়তা সত্যনিষ্ঠতায় প্রতিষ্ঠিত।লক্ষ্মণের মধ্যে তাৎক্ষণিক আবেগ মিশ্রিত নৈতিক আনুগত্যের মিশ্রণ। হত্যা, মৃত্যু, অপবাদে দীর্ণ ঘৃণ্য রাজ্যাধিকার রামের অভিপ্রেত নয়। রাজ্য বা ক্ষমতার থেকেও স্বজনপ্রীতি অর্থাৎ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের গুরুত্ব তাঁর কাছে অনেক বেশি। মহর্ষি বাল্মীকির মহাকাব্যের পরিসর রাজপ্রাসাদের অলিন্দ থেকে মুক্ত হয়ে ঘরোয়া গার্হস্থ্যজীবনের আঙিনায় প্রবেশ করেছে। রাম অযোধ্যার মহিমাময় রাজপদের ভাবি উত্তরাধিকারী নয় তিনি হয়ে উঠেছেন ভারতীয় যৌথ পারিবারিককেন্দ্রিক সামাজিকজীবনের জ্যেষ্ঠ স্নেহময় ভাইটি। যিনি ক্রোধে অন্ধ কনিষ্ঠের আবেগপ্রসূত অনেক আত্মঘাতী ইচ্ছাকে প্রশমিত করতে পারেন, অনেক অজ্ঞাত ভাবি ভীতিপ্রদ সম্ভাবনাকে সদর্থক চিন্তার উদ্ভাসে দীপ্ত করে,নতুন কোন দিশা দেখান।

ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
ভরতের প্রতি অসীম আস্থাশীল রাম,ভরত সম্বন্ধে কোন অপ্রিয় কটূক্তি শুনতেও নারাজ।কোমল হৃদয়বৃত্তির অনুষঙ্গ চিরকাল ভারতীয় যৌথ পরিবারকেন্দ্রিক জীবনের নির্যাস। স্নেহমায়ামমত্বের বন্ধনে পারিবারিক জীবনকে ধরে রাখেন,যে জ্যেষ্ঠ, তাঁর গরিমায়, রাম, লক্ষ্মণের বিরূপ সমালোচনাকে প্রশ্রয় দেননি। বরং তিনি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী প্রতিবাদের মাধ্যমে, প্রকারান্তরে লক্ষ্মণকে ভর্ৎসনা করেছেন। তাঁর সদর্থক চিন্তার আলোকে ভরতের আগমনের সম্ভাব্য কারণগুলি,লক্ষ্মণের মনের ঘৃণার অন্ধকারকে বিদূরিত করতে পেরেছে।
মন্দিরে পূজিত রাম নয়, কোনও অবতার ভাবমূর্তি নয়, স্নেহময় রামের জ্যেষ্ঠ ভাইয়ের ভূমিকা, রামায়ণকে ভারতীয় ঘরোয়া পারিবারিক জীবনের আঙিনায় চিরকালের জন্যে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারতাত্মার অন্তর্লোকে হৃদয়বৃত্তির আবেদন চিরন্তন, এমন অনেক সম্পর্কের সূত্র ধরে, মহাকাব্যের মহিমায় তা উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। —চলবে।
মন্দিরে পূজিত রাম নয়, কোনও অবতার ভাবমূর্তি নয়, স্নেহময় রামের জ্যেষ্ঠ ভাইয়ের ভূমিকা, রামায়ণকে ভারতীয় ঘরোয়া পারিবারিক জীবনের আঙিনায় চিরকালের জন্যে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারতাত্মার অন্তর্লোকে হৃদয়বৃত্তির আবেদন চিরন্তন, এমন অনেক সম্পর্কের সূত্র ধরে, মহাকাব্যের মহিমায় তা উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। —চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।