বুধবার ১৩ নভেম্বর, ২০২৪


ওয়ামিকা গাব্বি, তব্বু এবং আলি ফজল। ছবি: সংগৃহীত।

কাহিনি বৈশিষ্ট্য: থ্রিলার (২০২৩)
ভাষা: হিন্দি
কাহিনি চিত্রনাট্য সংলাপ নির্দেশনা: বিশাল ভরদ্বাজ
অভিনয়ে: তব্বু, আলি ফজল, ওয়ামিকা গাব্বি, আশিস বিদ্যার্থি, আজমেরি হক বাঁধন প্রমুখ
সময়সীমা: ১১৮ মিনিট
দেখা যাবে: নেটফ্লিক্সে


অমর ভূষণের ভূষণের উপন্যাস ‘এস্কেপ টু নোহোয়্যার’ অবলম্বনে বিশাল ভরদ্বাজ এর নতুন স্পাই থ্রিলার ‘খুফিয়া’। খুফিয়া শব্দের অর্থ গোপনীয়। RAW অর্থাৎ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইং— ভারতের ফরেন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি। ঠিক যেমন বৃটেনের এম১৫, আমেরিকার সিআইএ, রাশিয়ার কেজিবি বা আমাদের পড়শি দেশ পাকিস্তানের আইএসআই।
আমাদের ‘র’ তৈরি হয়েছে ১৯৬৮ সালে। এর আগে এই কাজ দেখাশোনা করত ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা আইবি, যা তৈরি হয়েছিল ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশ আমলে। ১৯৪৭ এ দেশ স্বাধীনতার পর আইবির ভারতীয় ডিরেক্টর হলেন সঞ্জীবী পিল্লাই। তিনি বৃটেনের এম ফিফটিনের আদলে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন আইবি ডিপার্টমেন্টকে। কিন্তু ১৯৬২ ইন্দোচিন যুদ্ধে ভারতের পরাজয়ের পর বোঝা গেল যে, আইবি সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। বৈদেশিক নজরদারির ক্ষেত্রে আইবি সফল নয়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এর প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করেন। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৬৮ সালে আরএন কাওয়ের নেতৃত্বে তৈরি হল RAW অর্থাৎ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইং।
আরও পড়ুন:

মুভি রিভিউ: সুধীর মিশ্রের ‘আফওয়া’ নতুন প্রজন্মকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সাহস জোগাবে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী

র-এর আধিকারিকরা দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের কাজ, কাজের ধরণ বা গতিবিধির বিষয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রাখেন। খুফিয়া চলচ্চিত্রে কৃষ্ণা মেহরা ওরফে কেএম এমনই একজন আধিকারিক। কাজের স্বার্থে নিজের ছেলের কাছেও কৃষ্ণাকে র-এর বিষয়ে সব কিছু গোপনীয় রাখতে বাধ্য হতে হয়। স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কাজের জন্য ছেলের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। কিন্তু কৃষ্ণ মেহরার মতো আধিকারিকেরা ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার থেকে দেশের নিরাপত্তায় তাদের দায়িত্ব-কর্তব্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। হয়তো এই কাজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ঝুঁকি এবং প্রতি মুহূর্তের উত্তেজনা এঁদের টানে।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, পর্ব-৩৫: সুন্দরবনের নদীবাঁধের অতীত

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৯: কবির ভালোবাসার পশুপাখি

একদম ভিতরকার গোপনীয় খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে নিযুক্ত র-এর এক এজেন্ট খুন হয়। কৃষ্ণ এবং তার বস জীবের সন্দেহ হয়, র-এর ভিতরেই কোনও একজন ডাবল এজেন্ট বা চর রয়েছে। শুরু হয় খোঁজ। এই খোঁজার পিছনে কাহিনি ছুটতে থাকে। আবিষ্কৃত হয় র-এর এক গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ট রবি মোহন গোপনভাবে বিদেশে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নথি পাচার করছে।

রবি, তাঁর স্ত্রী চারু বা মা সকলেই সন্দেহের তালিকায়। এরপর কী হল? আসল দোষী কে? তারা ধরা পড়ল কিনা এ সব জানতে ছবিটি দেখা খুব জরুরি। চরিত্রে দায়িত্ব কর্তব্যের দাবির সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের টানাপোড়েন না থাকলে প্রেমের চরিত্রে যে কেউ অভিনয় করতে পারতেন। তব্বুকে প্রয়োজন হতো না। তব্বুও হয়তো-বা সেই চরিত্রে অভিনয় করতেন না।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫০: লক্ষ্মণ—ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩১: বীণাপাণির চরণ ছুঁয়ে…

কৃষ্ণ মেহরার চরিত্রে তব্বুর কোনও বিকল্প নেই। তার এখনকার বয়স চরিত্র অনুযায়ী নিজেকে ক্যামেরার সামনে উপস্থাপিত করা সবেতেই অনবদ্য এই অভিনেত্রী। ঠিক একই কথা বলা যায় আলি ফজলের ক্ষেত্রে। এই অভিনেতা নানান চরিত্রে নিজের অভিনয় ক্ষমতা প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ক্রমশ পরিণত করে তুলেছেন। জুবিলি সিরিজেই নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিলেন ওয়ামিকা গব্বি। এই ছবিতে চারুর ভূমিকায় ওয়ামিকা অবাক করেছেন। জুবিলি সিরিজের নিলোফার চরিত্রের মধ্যে দেনা পাওনার একটা হিসেব ছিল, সেই চরিত্রে যেমন নিখুঁত ছিল ওয়ামিকার অভিব্যক্তি ‘খুফিয়া’র চারু ঠিক তার উল্টো সহজ সরল এক স্ত্রী। যে তার স্বামী এবং সন্তানকে নিয়ে খুব সুখী।

বাংলাদেশি অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশের অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধনকে নির্দেশক বিশাল ভরদ্বাজ এই ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আরেক ‘র’ এজেন্ট হিনা রহমানের ভূমিকায় নির্বাচিত করেছেন। হিনার সঙ্গে কৃষ্ণার একটা সম্পর্ক তৈরি করা হয়েছে এই ছবিতে। পদ্মা পাড়ের অভিনেত্রী সুন্দর অভিনয় করেছেন। তবে চরিত্রটি কাহিনিকে খুব একটা সাহায্য করেনি।

বিশাল ভরদ্বাজ অত্যন্ত গুণী চিত্রপরিচালক। তাঁর পরিচালিত যে কোনও ছবি প্রতি দর্শকের একটা অন্য আকর্ষণ থাকে। এই আকর্ষণ থেকেই ক্রমশ আমাদের প্রত্যাশা বাড়তে থাকে। আমার ব্যক্তিগতভাবে খুফিয়া দেখার পর সেই প্রত্যাশাপূর্ণ হয়নি। সম্ভবত সেই সব অপূর্ণতার কারণ হল মাঝেমধ্যে হারিয়ে ফেলা গতি। মাঝে মাঝে ছবিটি যেন দিশাহীন হয়ে পড়েছে। এ সব না হলে কাহিনির যথেষ্ট জোর ছিল। অত্যন্ত গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এই ছবিতে কাজ করেছেন ক্যামেরা দৃশ্য ভাবনা সবকিছুর মধ্যেই যথেষ্ট উত্তেজনা ছিল। কিন্তু কোথায় যেন তুবড়ির ভাগের মতো মিশেলটা ঠিক হয়নি। তাই তুবড়ি থেকে ছিটকে যাওয়া আলোর ফুলকি উচ্চতা এবং ফুলকির ঝাড় একসঙ্গে প্রকাশ করতে পারল না।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content