বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


'সেদিন কুয়াশা ছিল' ছবির একটি দৃশ্যে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও লিলি চক্রবর্তী।

বাংলা চলচ্চিত্র জগতের পরিচালক ও কলাকুশলীদের নিয়ে ‘সময় আপডেটস’-এর বিশেষ বিভাগ ‘মুখোমুখি’। আজ আমাদের এই বিভাগে থাকছেন পরিচালক অর্ণব মিদ্যা। তাঁর পরিচালক হয়ে ওঠার গল্প শুনলেন মোহনা বিশ্বাস

● পরিচালনার কাজ কবে থেকে শুরু?
●● আমি প্রথমে বিটেক পাশ করি। তারপর আমি এমবিএ করার পর একটি মিডিয়া গ্রুপে যোগ দিই। সেখানে বছরখানেক থাকার পর আমি এনএফডিসি। এই ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া-তে সরকারি সিনেমা, ডকুমেন্টরি তৈরি হয়। লাঞ্চ বক্স, ভাগ মিলখা ভাগ, সাংহাই, তাসের দেশ—এগুলোর ডিস্ট্রিবিউশন মার্কেটিং ইস্টার্ন ইন্ডিয়াতে আমাকেই দেখতে হত। যেহেতু আমি ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার ডেপুটি হেড ছিলাম। সেই সময়ই ছবি তৈরির নেশা আমার মধ্যে চলে আসে। আর তখন থেকেই আমি স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ শুরু করি। আমার প্রথম পরিচালিত ছবি ‘অন্দরকাহিনী’। ছবিটি ২০১৭ সালে গোয়া ফেস্টিভ্যালে প্রথম দেখানো হয়। দেশের নানান ফেস্টিভ্যালে প্রশংসিত হয় এই ছবি। ৩৯টি অ্যাওয়ার্ডও পায় এই ছবিটি। ৫১টি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে জায়গা করে নিয়েছিল ‘অন্দরকাহিনী’। এরপর প্রায় চার বছর পর আসছে আমার দ্বিতীয় পরিচালিত ছবি ‘সেদিন কুয়াশা ছিল’।

● ‘সেদিন কুয়াশা ছিল’ আপনার দ্বিতীয় পরিচালিত সিনেমা। এর গল্পটা কী?
●● আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কিছু ভালো ঘটনাও ঘটে আবার কিছু খারাপ ঘটনাও ঘটে থাকে। এর মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা আমাদের মনে দাগ কেটে যায়। এমন কিছু ঘটনা যার কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। এই ধরনের তিনটি ঘটনা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই ছবির গল্প।

ছবির পরিচালক অর্ণব মিদ্যা ।

● এই ছবিতে অভিনয় করছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী, জিতু কমল। তিনটি মুখ্যচরিত্রে কাস্টিংয়ের জন্য এঁদের নাম মাথায় এল কীভাবে?
●● ‘সেদিন কুয়াশা ছিল’ ছবিটি তিনটে ভিন্ন গল্প নিয়ে তৈরি। যার মধ্যে প্রথম গল্পের শ্যুট হয়েছে। বাকি দুটো গল্পের শ্যুট এখনও হয়নি। আর ছবির এই প্রথম গল্পেই অভিনয় করছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর নাতনি পৃথা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও, এই গল্পে দেখা যাবে লিলি চক্রবর্তী এবং জিতু কমল-কে। আজকের সময়ে আমি যদি একজন বাবা-র চরিত্র ভাবি এবং আজকের টাইমফ্রেমে সেরা পাওয়ারফুল অভিনেতাদের মধ্যে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামটা অবশ্যই আসবে। যিনি সিরিয়াস হোক বা কোনও ব্যঙ্গাত্মকই হোক, যেকোনও বার্তা সহজে দর্শকের সামনে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারেন। এবং দর্শকও নিজেদের তাঁর চরিত্রের সঙ্গে কানেক্ট করতে পারেন। সুতরাং, বাবার চরিত্রের জন্য পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া বেস্ট অপশন আর কেউ হতেই পারে না। অন্যদিকে, লিলি চক্রবর্তীর মুখ মায়ের মুখের মতো। যাঁর মধ্যে একটা সারল্য আছে, মিষ্টত্ব আছে। সেইজন্য মায়ের চরিত্রে লিলি চক্রবর্তী একেবারে মানানসই বলে আমার মনে হয়। যেহেতু, এরকম দু’জন পাওয়ারফুল অভিনেতা। তাই এঁদের ছেলে হিসাবে আমাকে কোনও পাওয়ারফুল অভিনেতাকেই ভাবতে হত। সেই কারণেই জিতু কমল-কে ওঁদের ছেলের চরিত্রে ভেবেছি। আর পৃথা, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে আমার নজরে এসেছিল। তখন পৃথাকে দেখেই মনে হয়েছিল, যে আমি গল্পে যাঁকে লিখেছিলাম। এই মেয়ে সেরকমই একটি ছটফটে বাচ্চা, যে বাবা-মা-এর অশান্তির মাঝে আটকে পড়েছে। সেটা দেখেই পৃথাকে এই ছবিতে কাস্ট করার কথা ভেবেছিলাম।

পৃথা বন্দ্যোপাধ্যায়।

● পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতনি পৃথা-র এটাই ক্যামেরার সামনে প্রথম অভিনয়। তাঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
●● ‘সেদিন কুয়াশা ছিল’ ছবিতে পৃথা খুব সুন্দর কাজ করেছে। ঠাকুরদা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পৃথা নাটকের রিহার্সাল করে। সংলাপ মুখস্থ বলতেও পারে। কিন্তু এই ছবিতে প্রথম ক্যামেরা ফেস করল পৃথা। শ্যুটিং সেটে এত লোকজন থাকে তাতে যেকোনও বাচ্চাই ঘাবড়ে যাবে। পৃথাও প্রথমে একটু নার্ভাস ফিল করছিল ঠিকই, কিন্তু যেহেতু আমি পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে প্রায়ই যেতাম। আর সেই সুবাদেই পৃথার সঙ্গে আমার যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল, সেই বন্ধুত্বের খাতিরে পৃথাকে আমি বিষয়টা বোঝাতে পেরেছিলাম। পৃথা যখন শট দিত তখন আমরা এমন কিছু টেকনিক্যাল শব্দ ব্যবহার করতাম না, যাতে ও নার্ভাস হয়ে যায়। এছাড়াও, ছবিতে যাঁরা পৃথা-র মা, বাবা-র চরিত্রে অভিনয় করছেন অর্থাৎ জিতু কমল এবং সায়ন্তনী গুহ ঠাকুরতা। এই দুই অভিনেতা পৃথাকে সহযোগিতা না করলে ওর পক্ষে এত লোকজনের সামনে নিজের এক্সপ্রেশনটা বের করে আনা কঠিন হত।

● পরবর্তী আর কী কী কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে?
●● কয়েকটি ছবি তৈরির ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। তাই এখনই সেই সব প্রজেক্ট নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে পারছি না।

ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

Skip to content