শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫


অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত

জনপ্রিয়তা এবং সমালোচনা উভয়েই তাঁর পিছু ছাড়েনি কখনও, টিনসেল টাউন সবসময় চকিত হয়ে থাকত কখন কোথায় তিনি বিরাজমান৷ কোনওটাই কখনও পাপারাৎজিদের চোখ এড়াত না। এহেন তারকাপুত্রের খুঁটিনাটি যখন জনতার নখদর্পণে ঠিক সেই সময়ে সেই মানুষটি লড়ে যাচ্ছিলেন নিজের সঙ্গে নিজে, একান্তে, কেউ জানতে পারেনি
তাঁর লড়াইয়ের আখ্যান কখনও। সমালোচনা আর গসিপের অলিগলি পার করে এবার সময় এসেছে সেই তারকার মধ্যেকার ব্যক্তি মানুষটির যুদ্ধকে কুর্নিশ জানানোর।
আমরা কথা বলছি বিশিষ্ট অভিনেতা সঞ্জয় দত্তকে নিয়ে। নার্গিসপুত্র সঞ্জয় দত্ত, প্রেমিকপুরুষ সঞ্জয় দত্ত, নব্বইয়ের দশকের সবচেয়ে চর্চিত বলিউড ব্যক্তিত্ব সঞ্জয় দত্ত, কেমন ছিল এই বহুজন চর্চিত মানুষটির শরীরের মধ্যে বেড়ে ওঠা এক ভয়াবহ মারণরোগকে অতিক্রম করে আরোগ্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার যাত্রাটা? সেই গল্পই শুনবে আজ মানুষ। বছর দুই আগে করোনাকালীন আবহে একদিন আচমকাই বোন প্রিয়াঙ্কা দত্তের কাছ থেকে জানতে পারেন তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে কর্কট রোগ। জানার পরে প্রথমেই মনে হয়েছিল—‘সব ছেড়ে চলে যেতে হবে!’ এ জগতের মায়াভরা বাঁধন কে পারে সহজে টুটিতে! না এমন কোনও ভাবালুতায় ভোগেননি অভিনেতা। ক্ষণিকের হতাশায় মন আচ্ছন্ন হলেও সেই হতাশা কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন নিজের কাছে নিজে, জীবন তাকে ফিরিয়ে দিলেও তিনি জীবনকে হেরে ফিরতে দেবেন না কিছুতেই। আরম্ভ হল লড়াই। প্রথমে মনস্থ করেছিলেন বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় বন্ধু রাকেশ রোশনের পরিচিত এক ক্যানসার বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা আরম্ভ করেন। শুরু হয় ধাপে ধাপে অদম্য সহ্যশক্তিকে সম্বল করে সুস্থতার পথে এগিয়ে চলার লড়াই। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে সঞ্জয়ের চতুর্থ স্তরের ক্যানসার ধরা পড়ার পরে কেমোথেরাপি চলাকালীন যখন ডাক্তার তাঁকে চুল পড়ে যাওয়া ও বমির বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন প্রিয়জনদের আশ্বস্ত করতে পর্দার মুন্নাভাই নিজেই যেন ঢাল হয়ে ওঠেন—’মেরেকো কুছ নেহি হোগা’—এই আত্মবিসশ্বাসই তাঁকে তাঁর কথায় তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে সবথেকে প্রিয় উপহারটা দেওয়ায় সংকল্পবদ্ধ করে তুলেছিল, আর সেই উপহারটি হল তাঁর আরোগ্য। কেমোথেরাপির রুটিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে শরীরচর্চা ও ব্যাডমিন্টন খেলা। সম্প্রতি বহু চর্চিত ছবি কেজিএফ চ্যাপ্টার ২-এর অধীরা চরিত্রে অভিনয় করার মধ্যে দিয়ে আবার কাজে ফিরেছেন সঞ্জুভাই, ভালোবাসাও পেয়েছেন দর্শকদের কাছ থেকে অফুরন্ত। তাঁর এই অদম্য প্রাণশক্তির জোরেই তিনি মানুষের মাঝে আরও বহু বহু বছর এইভাবে ভাস্বর হয়ে থাকবেন এই আশাই ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের খুঁটিস্বরূপ হয়ে থাকুক আজন্ম৷

Skip to content