কাহিনী চিত্রনাট্য: শ্রেয়া ভট্টাচার্য, অক্ষত গিল্ডিয়াল, শ্রীরাও প্রমুখ
পরিচালনা: শ্রী রাও
অভিনয়: মাধুরী দীক্ষিত, সঞ্জয় কাপুর, মানব কউল, সুহাসিনী মুলে, রাজশ্রী দেশপাণ্ডে প্রমুখ
ওটিটি রিলিজ: নেটফ্লিক্স
পর্ব: ৮
রেটিং: ৬.৫/১০
সিনেমা জগতের রুপোলি দুনিয়াটা ঠিক কেমন? আমার চেনা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির এক বয়স্ক প্রোডাকশন ম্যানেজার উত্তরে চার লাইনের ছড়া বলেছিলেন—
যতটা চকচকে!
ততটাই কালো!
দেখো যা ঝকমকে!
সব মেকআপ আর আলো!
সকলের সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। এটা একেবারেই সেই মানুষটির ব্যক্তিগত উপলব্ধি অভিজ্ঞতা। কিন্তু নেটফ্লিক্সের নতুন ওয়েব সিরিজ ‘দ্য ফেমগেম’ তৈরি হয়েছে এই ধরনের উপলব্ধি বা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে। বিলাসবহুল গাড়ি বিশাল গেটওয়ালা সুদৃশ্য বাংলো—প্রচারমাধ্যমে হাসিখুশি মনোরম জীবনের পোস্টকার্ড ছবি আওয়ার্ড ফাংশান তারকাখচিত পার্টিতে সহাস্য উপস্থিতির আড়ালে প্রকৃত জীবনটা কি ভীষণ অশান্তি অনিশ্চয়তা আর অবিশ্বাসে ভরা সেটাই এই ওয়েবসিরিজের পটভূমি।
ততটাই কালো!
দেখো যা ঝকমকে!
সব মেকআপ আর আলো!
সকলের সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। এটা একেবারেই সেই মানুষটির ব্যক্তিগত উপলব্ধি অভিজ্ঞতা। কিন্তু নেটফ্লিক্সের নতুন ওয়েব সিরিজ ‘দ্য ফেমগেম’ তৈরি হয়েছে এই ধরনের উপলব্ধি বা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে। বিলাসবহুল গাড়ি বিশাল গেটওয়ালা সুদৃশ্য বাংলো—প্রচারমাধ্যমে হাসিখুশি মনোরম জীবনের পোস্টকার্ড ছবি আওয়ার্ড ফাংশান তারকাখচিত পার্টিতে সহাস্য উপস্থিতির আড়ালে প্রকৃত জীবনটা কি ভীষণ অশান্তি অনিশ্চয়তা আর অবিশ্বাসে ভরা সেটাই এই ওয়েবসিরিজের পটভূমি।
বহুদিন ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করার পর অধুনা প্রাক্তন এক জনপ্রিয় নায়িকা অনামিকা আনন্দের (মাধুরী দীক্ষিত) কামব্যাক ছবি। এ ছবি সুপারহিট করাতে বদ্ধপরিকর নায়িকা এবং নায়িকার প্রযোজক স্বামী নিখিল মোরে (সঞ্জয় কাপুর)। এর জন্যে তিনি শুটিঙের মাঝে নায়ক বদলে নায়িকার বহু পুরোনো এক নায়ক মণীষ খান্নাকে (মানব কউল) ফিরিয়ে আনতেও পিছপা নন। এই নায়কের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক নিয়ে মুখরাচক গসিপ ছিল একসময়। কুছ পরোয়া নেই। বরং পুরনো সম্পর্কের উত্তাপ ফ্যানেদের মধ্যে ফিরে আসুক, বক্স অফিসে তার প্রভাব পড়ুক। কারণ এই মানুষগুলোর গোটা জীবনটাই হল ব্যবসা।
আরও পড়ুন:
রিভিউ: মহাকাশ বিদ্ধ করা রকেটের মতোই শক্তিশালী মাধবনের ‘রকেট্রি: দ্য নাম্বি এফেক্ট’
গল্পের ঝুলি: শারদীয়ার গল্প-৪: সীমানা ছাড়ায়ে…
হঠাৎ করেই নায়িকা অনামিকা আনন্দ উধাও হয়ে গেলেন। সন্দেহভাজন অনেকে। পুলিশ দ্বায়িত্ব নিল। তারা অপেক্ষা করেন। কিন্তু কেউ কোনও মুক্তিপণ দাবি করে না। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে বোঝা যায় নায়িকার নামে বিশাল অংকের টাকার জীবনবিমা রয়েছে। তার নমিনি হলেন নায়িকার প্রযোজক স্বামী। ক্রমশ জানা যায় সেই মানুষটির বাজারে দেনার দায়ে মাথার চুল বিকিয়ে আছে। নায়িকার দাপুটে মা (সুহাসিনী মুলে) যিনি মেয়েকে প্রায় জোর করে নায়িকা বানিয়েছেন। যিনি মেয়ের প্রায় সমস্ত ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে মাথা ঘামান তিনিও সন্দেহভাজন।
গোটা পরিবার একা অনামিকার রোজগারে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। অনামিকার মেয়ে আমারা (মুস্কান জাফেরি) মায়ের মত অভিনেত্রী হতে চায়। কিন্তু তার মায়ের মতো সৌন্দর্য নেই। ছেলে অবিনাশের জীবন দিশাহীন। তার মধ্যে সমকামিত্বের প্রভাব এবং এই নিয়ে একই সঙ্গে দোলাচল রয়েছে। একটি বারসিঙ্গার মেয়েকেও সে পছন্দ করে। আবার সহপাঠী দানিশ সুদকেও তার পছন্দ। আর্থিক কারণ থাকলেও বহুদিনের কাজের দিদি লতা আই (শুভাঙ্গী লাটকর) একমাত্র অনামিকাকে বোঝে। আর বোঝে মনীষ খান্না। কিন্তু মনীষের সঙ্গে অনামিকার যখন গোপন সম্পর্ক ছিল তখন মণীষ বিবাহিত এবং কন্যা সন্তানের পিতা। অনামিকার মা অনামিকাকে সেই সম্পর্ক থেকে বের করে আনেন এবং একপ্রকার জোর করেই নিখিল মোরের সঙ্গে বিয়ে দেন। সিরিজের পর্বে পর্বে পুলিশ ইনভেস্টিগেশনের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত গোপনীয় তথ্য প্রকাশ হতে থাকে।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৩: এক্সপায়ারি ডেটের ওষুধ খাবেন?
পরিযায়ী মন, পর্ব-১২: নেতারহাটের নাশপাতি বাগান
অনামিকার কি হল এটাই গল্প। তাই সঙ্গত কারণেই সেদিকে আলোকপাত করা যাবে না। কিন্তু অনামিকাকে খুঁজে বেড়ানোর সময় চেনা বলিউডের অচেনা অন্ধকারের ওপর আলো ফেলেছে এই সিরিজ।
নায়ক-নায়িকা অভিনেতা অভিনেত্রীরা যত সুন্দরই দেখতে হন বা সুমিষ্টভাষী সদালাপী হাসিখুশি মানুষ হন রূপোলি পর্দায় জায়গা দখলের লড়াইটা মরণপন সংগ্রাম। দর্শকের মনোযোগ ছিনিয়ে নেবার এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইটা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে অনেক বেশি ভয়ংকর। ছবিতে জায়গা না পেলে তাই আজ অভিনেতা অভিনেত্রীদের সোশ্যালি হ্যাপেনিং হতে হয়। বেশি বাদবিচার না করে আত্মপ্রচারটা যাতে বজায় থাকে সেদিকে নজর দিতে হয়। খরচাপাতি করে মার্কেটিং টিম রাখতে হয়। নিজেকে এবং নিজের ছবিকে প্রচার করার জন্য প্রতি মুহূর্তে নতুন পদ্ধতির কথা ভাবতে হয়। এই সবই দ্য ফেম গেম ওয়েব সিরিজ ছুঁয়ে গিয়েছে। এঁর কিছু কিছু উল্লেখ আমরা চিত্রপরিচালক মধুর ভাণ্ডারকরের বিভিন্ন ছবিতে দেখেছি।
নায়ক-নায়িকা অভিনেতা অভিনেত্রীরা যত সুন্দরই দেখতে হন বা সুমিষ্টভাষী সদালাপী হাসিখুশি মানুষ হন রূপোলি পর্দায় জায়গা দখলের লড়াইটা মরণপন সংগ্রাম। দর্শকের মনোযোগ ছিনিয়ে নেবার এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইটা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে অনেক বেশি ভয়ংকর। ছবিতে জায়গা না পেলে তাই আজ অভিনেতা অভিনেত্রীদের সোশ্যালি হ্যাপেনিং হতে হয়। বেশি বাদবিচার না করে আত্মপ্রচারটা যাতে বজায় থাকে সেদিকে নজর দিতে হয়। খরচাপাতি করে মার্কেটিং টিম রাখতে হয়। নিজেকে এবং নিজের ছবিকে প্রচার করার জন্য প্রতি মুহূর্তে নতুন পদ্ধতির কথা ভাবতে হয়। এই সবই দ্য ফেম গেম ওয়েব সিরিজ ছুঁয়ে গিয়েছে। এঁর কিছু কিছু উল্লেখ আমরা চিত্রপরিচালক মধুর ভাণ্ডারকরের বিভিন্ন ছবিতে দেখেছি।
নায়িকা অনামিকার ভুমিকায় মাধুরী সুন্দর মানিয়েছেন। এঁর বেশি কিছু বলার নেই, মাধুরী বলেই একটি দৃষ্টিনন্দন নাচের দৃশ্য এসেছে। আসলে সমস্যা মাধুরী দীক্ষিতের নয়। তিনি গুণী অভিনেত্রী কিন্তু তাকে কেউ কখনও কোনও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে ব্যবহার করার সৎ সাহস দেখাতে পারেননি। অন্য অভিনেত্রী কে নিয়েছেন। কিন্তু তাকে এমন কোনও নতুন অন্যধরনের চরিত্র দিতে পারেননি যাতে মাধুরী দীক্ষিত নিজে নিজের পরিচিত ইমেজকে ভেঙে আসতে পারেন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া পেরেছেন। পরিণীতি পেরেছেন। চিরকালের জন্য হারিয়ে যাওয়ার আগে শ্রীদেবী পেরেছেন। দীপিকা, আলিয়া ভাটরা পারছেন।
তাই মাধুরীর অভিনীত চরিত্রে সর্বদাই নায়িকার লুককে চরিত্রের থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই প্রথম একটি চরিত্রে ভয়ংকর মানসিক টানাপোড়নের অভিব্যক্তিতে তিনি যথেষ্ট সফল। কিছু চরিত্রের সেরকম জোর না থাকলে ভালো অভিনেত্রী হয়েও তো কিছু করার থাকে না।
তাই মাধুরীর অভিনীত চরিত্রে সর্বদাই নায়িকার লুককে চরিত্রের থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই প্রথম একটি চরিত্রে ভয়ংকর মানসিক টানাপোড়নের অভিব্যক্তিতে তিনি যথেষ্ট সফল। কিছু চরিত্রের সেরকম জোর না থাকলে ভালো অভিনেত্রী হয়েও তো কিছু করার থাকে না।
আরও পড়ুন:
কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১১: আমার নাম, তোমার নাম— তুং নাম, তুং নাম!
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩৪: আরডি-র গানে সারা পৃথিবীর মিউজিক উঠে এসেছিল
কোনও ছবিতেই সঞ্জয় কাপুরের বিশেষ কিছু করার থাকে না এখানেও নেই। মানব কউল যথেষ্ট ভালো অভিনেতা। অথচ এই সিরিজে তাকে বেশ ম্লান লেগেছে। মানে মানব কউল ছাড়াও যে কেউ এই চরিত্রটা করতে পারতেন বলে মনে হয়েছে। কোনও কোনও চরিত্রে ভালো অভিনেতার একটা বিশেষ স্মারক রেখে যান, যেটাতে মনে হয় তিনি ছাড়া আর কেউ অভিনয় করলে বোধহয় চরিত্রটা এমন হতো না। না, সেরকম মনে হয়নি।
সুহাসিনী মুলে কিন্তু এই চরিত্রে ভীষণ সাবলীল। অনামিকার ছেলে এবং মেয়ের চরিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীরা লকশবীর শরণ ও মুস্কান জাফেরি ঠিকঠাক। তবে চরিত্রের দাবি অনুযায়ী সিরিজের শেষাংশে নিষ্ঠুরতার অভিনয় করতে গিয়ে অনামিকার মেয়ে আমরার চরিত্রে মুস্কান জাফেরিকে একটু অতিরিক্ত মনে হয়েছে। বরং নায়ক মণীষ খান্নার মেয়ের ছোট্ট ভূমিকায় আয়েষা কাদুস্কর নজর কাড়েন। বহুদিনের কাজের দিদি লতার ভূমিকায় শুভাঙ্গী লাটকর উল্লেখযোগ্য।
সুহাসিনী মুলে কিন্তু এই চরিত্রে ভীষণ সাবলীল। অনামিকার ছেলে এবং মেয়ের চরিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীরা লকশবীর শরণ ও মুস্কান জাফেরি ঠিকঠাক। তবে চরিত্রের দাবি অনুযায়ী সিরিজের শেষাংশে নিষ্ঠুরতার অভিনয় করতে গিয়ে অনামিকার মেয়ে আমরার চরিত্রে মুস্কান জাফেরিকে একটু অতিরিক্ত মনে হয়েছে। বরং নায়ক মণীষ খান্নার মেয়ের ছোট্ট ভূমিকায় আয়েষা কাদুস্কর নজর কাড়েন। বহুদিনের কাজের দিদি লতার ভূমিকায় শুভাঙ্গী লাটকর উল্লেখযোগ্য।
ইনভেস্টিগেটিং অফিসারের চরিত্রের ভিতরে উল্লেখযোগ্য রকমফের রয়েছে। চরিত্রটির দাবি পুরোপুরি মেটাতে রাজশ্রী দেশপাণ্ডে সক্ষম হননি। তারকা-খচিত এই সিরিজে অনামিকার একজন অবসেসড ফ্যান মাধবের ছোট্ট চরিত্রে গগন অরোরা অসাধারণ। মাধবকে দেখে প্রথম দিকের শাহরুখ খানের কথা মনে পড়ে যায়। হ্যাঁ, আমার কাছে ঠিক অতটাই মর্মভেদী মাধবের সিনেমাটিক অভিব্যক্তি। সিরিজের অপর একটি ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন মারাঠি থিয়েটারের স্বনামধন্য অভিনেতা মকরানন্দ দেশপাণ্ডে। প্রথম একটি বা দুটি পর্বে ছিলেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।
* ফিল্ম রিভিউ: জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। দ্বিতীয় খণ্ড লিখেছেন।