মঙ্গলবার ৪ মার্চ, ২০২৫


উইল স্মিথ।

বিশ্বজুড়ে এখন একটাই ঝড়, আর সেই ঝড় হল ৯৪তম অস্কার মঞ্চে তোলা উইল স্মিথের চপেটাঘাতের ঝড়। স্মিথের স্ত্রী জাডা পিঙ্কেটের অসুস্থতা নিয়ে করা চটুল রসিকতা সহ্য করতে না পেরে সোজা মঞ্চে উঠে সঞ্চালক ক্রিস রককে কসিয়ে এক চড় মারেন উইল স্মিথ। সমগ্র বিশ্বের বিনোদন জগৎ ও বুদ্ধিজীবী মহল এই ঘটনাক কেন্দ্র করে স্পষ্টত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছেন। কারওর মতে স্মিথ যা করেছেন একদমই ঠিক কাজ। কারওর অসুস্থতা নিয়ে এরকম বর্বরতা সহ্য করা একেবারেই উচিত নয়। আবার কেউ বা বলছেন প্রতিবাদ তো অন্যভাবেও করা যায়, এইভাবে জনসমক্ষে প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। আর এবার এই দ্বিতীয় পক্ষের সঙ্গে পা মেলালেন বিশিষ্ট কবি শ্রীজাত। ফেসবুক অ্যাকাউন্টের দেওয়ালে কবি লিখলেন,
‘কদর্যতার বিপরীতে সুন্দর থাকার চেয়ে বড় ক্ষমতা আর কিছুই হয় না। থাপ্পড় তো চাইলেই মারা যায়৷’ আর শ্রীজাতর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই নেটমাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে তুমুল আলোড়নের। ৭০০ জনেরও বেশি নেটনাগরিকের তোপের মুখে পড়লন শ্রীজাত। সরাসরি বগটুই কাণ্ড টেনে এনে বিরোধিতার ঝড় তুলেন নেটনাগরিকরা। সরাসরিই তাঁরা বললেন, ‘তাই বোধহয় রাজ্যজুড়ে আনিস খানের হত্যা, রামপুরহাট গণহত্যা সহ প্রতিদিন এতকিছু দেখেও আপনি মুখে কুলুপ এঁটেছেন। প্রতিবাদ তো চাইলেই করা যায়!’ কেউ বা লেখেন, ‘রামপুরহাট নামে আমাদের রাজ্যে একটা জায়গা আছে; ওখানে তো কতকিছু হয়ে গেল, জানতেই পারলে না তুমি।’ আরেক নেটিজেনের মতে ‘ঠিক যেভাবে আনিশ খান, রামপুরহাট, মাটিয়া নিয়ে নীরব থাকা যায়৷’ কেউ বা কটাক্ষ করেছেন এইভাবে, ‘এই ধরুন বগটুই-এ আগুনে পুড়িয়ে মারা হল। কী কদর্যতা! তাই না। আর আপনি চুপ করে থাকলেন। সুন্দর তাই না। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। ভালো থাকুন। আনন্দে থাকুন।’
শ্রীজাতর নিজের কবিতার পংক্তি উদ্ধৃত করে তোপ দাগতে ছাড়েননি মানুষ : ‘তুমিও মানুষ, আমিও মানুষ, তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।’ আবার কেউ বা লিখেছেন, ‘আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে বিশ্বাস করুন, আপনারা নিজেদের জাস্টিফাই করেন কীভাবে! প্রতিবাদহীন শিল্পীসত্তা স্তাবকতার মোড়কে প্রেজেন্ট করে সমাজের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা আপনারা পালন করছেন কে জানে! আসলে কী জানেন তো এই অস্থির সময়েও বড় বেশি নিস্পৃহ আপনারা যা প্রকারান্তরে সুবিধাবাদেরই দ্যোতক।’
মোদ্দা কথা হল, কোনও পক্ষই এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে রাজি নন। উইল স্মিথ নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর এহেন আচরণের জন্য নিজে ক্ষমা চেয়েছেন ক্রিস রকের কাছে, কিন্তু জল্পনা যে তারপরেও জারি রয়েছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অস্কার মঞ্চের এই বিতর্ককে শেষমেশ কোন প্রেক্ষাপটে নিয়ে গিয়ে ফেলতে চলেছেন বাংলার মানুষ? সে উত্তর আমাদের জানা নেই। হাজার হোক মানুষের হৃদয় যে রহস্যাবৃত এক খনি একথা কে না জানে!

Skip to content