ছবির একটি দৃশ্য।
মুভি রিভিউ: লাপাতা লেডিজ
মাত্র পাঁচ কোটি টাকায় বানানো হিন্দিছবি লাপাতা লেডিজ বউ হারিয়ে যাওয়ার সহজ সরল মজাদার গল্প। না, গল্প বলা যাবে না। অনেক ভেবেচিন্তে গল্পকার বিপ্লব গোস্বামী যে এক টানটান কাহিনির বুনোট বুনেছেন, আমি মাত্র কয়েকটা শব্দ খরচা করে কয়েক মিনিটে গল্পের গিঁট এবং ফাঁস আলগা করে দেব এমনটা হতে পারে না। স্নেহা দেশাইয়ের টানটান চিত্রনাট্য ও সংলাপ আর সঙ্গে দিবানিধি শর্মার অতিরিক্ত সংলাপ আমাদের দেশের গ্রাম্যজীবনের সহজ-সরল চেহারাকে প্রায় নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
ভোজপুরি সিনেমার বিখ্যাত অভিনেতা এবং অধুনা নানান হিন্দি ওয়েবসিরিজ খ্যাত রবি কিশনকে বাদ দিলে প্রায় অজানা অচেনা একরাশ দুর্দান্ত অভিনেতা অভিনেত্রীর দুরন্ত অভিনয়ে আগাগোড়া ঝকঝক করছে লাপাতা লেডিজ।
অভিনেতা আমির খানের অধুনা প্রাক্তন স্ত্রী পরিচালিকা কিরণ রাও শেষ ছবি করেছিলেন ২০১০ সালে ধোবি ঘাট। তার প্রথম ছবিতেই কিরণ রাও তার কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তবে চলচ্চিত্রের বিষয় এবং আঙ্গিকে ধোবিঘাট অনেক গুরুগম্ভীর ছবি। লাপাতা লেডিজ টলটলে জলের মতো স্বচ্ছ নির্মল তরল ছবি। চট করে ভালো লেগে যায়।
অভিনেতা আমির খানের অধুনা প্রাক্তন স্ত্রী পরিচালিকা কিরণ রাও শেষ ছবি করেছিলেন ২০১০ সালে ধোবি ঘাট। তার প্রথম ছবিতেই কিরণ রাও তার কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তবে চলচ্চিত্রের বিষয় এবং আঙ্গিকে ধোবিঘাট অনেক গুরুগম্ভীর ছবি। লাপাতা লেডিজ টলটলে জলের মতো স্বচ্ছ নির্মল তরল ছবি। চট করে ভালো লেগে যায়।
আরও পড়ুন:
মুভি রিভিউ: দ্য ওয়েডিং গেস্ট—অনাহুত গেস্ট দেব স্বয়ং অপহরণ করলেন কনে রাধিকাকে
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৮: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা: কাঁকড়া, গরান ও গেঁওয়া
১৯৭০ সালে নিত্যানন্দ দত্ত পরিচালনা করেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে বাক্সবদল ছবিটি। সত্যজিৎ রায় এই ছবিটির জন্য চিত্রনাট্য রচনা ও আবহসংগীত পরিচালনার কাজ করেছিলেন। যেহেতু চিত্রনাট্য এবং সংগীত এই দুটি বিষয় ছবিকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে তাই এই ছবিটি দেখতে বসলে আপনার মনে হবে ছবিটির নির্মাতা স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। সেই ছবিতে বাক্স বদল হয়ে গিয়েছিল। লাপাতা লেডিজ ছবিটি বউ বদলের গল্প। না না, দয়া করে ইচ্ছাকৃত সঙ্গিনী বদল বা wife swapping অথবা swinging ভাববেন না। আধুনিক জীবনের এই নবতম ভ্রষ্টাচারের নিকৃষ্ট বিষয় নিয়ে ছবি করেননি কিরণ। তবে কেউ হয়তো করবেন। সাহিত্য সিনেমা তো সমাজের প্রতিফলন কিনা!
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৩: তরু দত্ত— এক আনন্দ বিষাদের তরুলতা
তবে সুকুমার রায়ের অবিস্মরণীয় ননসেন্স কমেডিতে কাকেশ্বর কুচকুচের সময়ের টানাটানির মতোই আজকাল ছবির জন্য তরতাজা বিষয়ের বড্ড মাগ্যি। নামকরা নির্মাতা পরিচালকেরা বেমালুম নাম-ঠিকানা বদলে গপ্পো টুকে দিচ্ছেন। দিশি-বিদেশী প্রখ্যাত পরিচালকের পরিচিত ছবি কিচ্ছু বাদ নেই। ছবির দর্শক থেকে পুরস্কার দেওয়া জুরিমহোদয় কারোরই স্মৃতি প্রখর নয়, তাই তপন সিনহার ‘হারমোনিয়াম’ রূপবদল করে সামনে এলে তাকে অনবদ্য সৃষ্টি বলে ভ্রম হয়।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৮: ছবি আঁকতে আঁকতে অবনীন্দ্রনাথ টান দিতেন গড়গড়ায়, চিবোতেন পান
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৬: শ্রীমায়ের দুই ভ্রাতৃবধূর কথা
প্রচারের এমনই ঢক্কানিনাদ টোকা সিনেমাটাই আসল বলে মালুম হয়। পরিচালক পুরস্কার-টুরস্কার পেয়ে ঘাড়ে পাউডার মুখে পমেটম মেখে লক্ষ ক্যামেরার সামনে নিজেই নিজের গুণকীর্তন করেন। আবার ছবি তৈরির সুযোগ পান আবার মৌলিক ছবির ছদ্মবেশে লোকের দেখাজানা গল্প উপন্যাস চলতি নাটক থেকেও আবার নির্লজ্জের মতো কপি করেন। আবার হাততালি। আবার সম্মাননা। আর এক রকম হল নিজের সঙ্গে দেখার মতো নিজের থেকেই টোকা!
ছবির কলাকুশলীরা।
শেষের কবিতায় অমিত রায় রবিঠাকুরের কড়া সমালোচনা করে বলেছিলেন, তিনি তাঁর নিজের সৃষ্টিকেই বারবার ব্যবহার করেছেন। এখনও তেমন হয়, চেনাচরিত্রের অচেনা গপ্পো দেখে লোকে বগল বাজায়। এ ধরণের কিছু দেখলে আজকাল ভীষণভাবে ঋতুপর্ণ ঘোষের কথা পড়ে, কষ্টও হয়। আরও কতকিছু দেওয়ার ছিল আমাদের কতকিছু পাবার ছিল।
লাপাতা লেডিজ ছবিতে ভারতবর্ষের এক গ্রামের গল্প বলা হয়েছে। ছবি চিত্রনাট্য গল্পের পটভূমি সাবলীল ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ ও সম্পাদনা দর্শককে অত্যন্ত সহজে গল্পের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে নেন। বউ হারিয়ে ফেলা যুবক চাষি দীপকের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেছেন স্পর্শ শ্রীবাস্তব। গ্রামীণ সারল্যকে কীভাবে শারীরিক অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলতে হয় সেটা জানার জন্য স্পর্শের অভিনয় দেখতেই হবে। নিতাংশী গোয়েলের ফুলকুমারী অনবদ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর চরিত্রায়ণ জয়া বা পুষ্পারানি চরিত্রের অভিনেত্রী প্রতিভা রত্নার। রবি কিষেণের ইন্সপেক্টর শ্যাম মনোহর নজর কেড়ে নেয়। রাম সম্পৎ সুরারোপিত গানগুলি ছবির বিষয় ও পটভূমির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
লাপাতা লেডিজ ছবিতে ভারতবর্ষের এক গ্রামের গল্প বলা হয়েছে। ছবি চিত্রনাট্য গল্পের পটভূমি সাবলীল ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ ও সম্পাদনা দর্শককে অত্যন্ত সহজে গল্পের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে নেন। বউ হারিয়ে ফেলা যুবক চাষি দীপকের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেছেন স্পর্শ শ্রীবাস্তব। গ্রামীণ সারল্যকে কীভাবে শারীরিক অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলতে হয় সেটা জানার জন্য স্পর্শের অভিনয় দেখতেই হবে। নিতাংশী গোয়েলের ফুলকুমারী অনবদ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর চরিত্রায়ণ জয়া বা পুষ্পারানি চরিত্রের অভিনেত্রী প্রতিভা রত্নার। রবি কিষেণের ইন্সপেক্টর শ্যাম মনোহর নজর কেড়ে নেয়। রাম সম্পৎ সুরারোপিত গানগুলি ছবির বিষয় ও পটভূমির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
* * জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড। (Fiji)।