শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


মহারানি: সিজন ৩।

 

মহারানি, সিজন-৩

ভাষা: হিন্দি
প্রযোজনা: নরেন কুমার, ডিম্পল খারবান্দা
সৃজন: সুভাষ কাপুর
কাহিনি: সুভাষ কাপুর
চিত্রনাট্য ও সংলাপ: সুভাস কাপুর নন্দন সিং উমাশঙ্কর সিং
পরিচালনা: সৌরভ ভাবে
অভিনয়: হুমা কুরেশি, সোহম শাহ, অমিত শিয়াল, বিনীত কুমার, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, নেহা চৌহান, আনসা সৈয়দ, কনি কসরুতি, অনুজা শাঠে প্রমুখ।
ওটিটি রিলিজ: সোনি লিভ
পর্ব: ১০
রেটিং: ৬.৫/১০


মহারানির তিনটি সিরিজে পরিচালক কিন্তু তিনজন আলাদা আলাদা মানুষ। সিজন-১ পরিচালনা করেছিলেন করণ শর্মা, সিজন-২ পরিচালনা করেছেন রবীন্দ্র গৌতম, আর সিজন-৩-এ এলেন সৌরভ ভাবে। মূলচরিত্রে অভিনেতারা একই। সিজন-২ এবং ৩ এ নতুন আকর্ষণীয় কাহিনি সূত্রের দাবি মেটাতে যুক্ত হয়েছে নতুন কয়েকটি চরিত্র। সিরিজের মূলস্রষ্টা সুভাষ কাপুর। তবু সম্ভবত একঘেয়েমি না রেখে বৈচিত্র আনতেই নতুন সিরিজে নতুন নির্দেশক বেছে নিয়েছেন প্রযোজকেরা।

ছবির বিষয় ও সংলাপ ও দৃশ্য নিয়ে বিতর্ক আমাদের দেশে অত্যন্ত পরিচিত একটি শব্দ। কোনও ছবি বিতর্কিত না হলেই মনে করা হয় যে বিষয় তেমন যুগোপযোগী ও আকর্ষণীয় নয়। চিত্রনাট্য লেখার সময় নবীনকুমারের একটি সংলাপে বিহারের যাদব সম্প্রদায়ের প্রতি কটূ মন্তব্য রাখা হয়েছিল। সুচতুরভাবে সিরিজের প্রমোতেই সেই বিতর্কিত সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছিল। খুব স্বাভাবিকভাবে বিহারের যাদব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা কঠোর আপত্তি জানিয়েছিলেন এবং পরে ওই সংলাপ সিজন ১-এ রাখা হয়নি।

তবে মহারানি ওয়েব সিরিজের তিনটি সিজনেই আকর্ষণীয় সংলাপ ছড়িয়ে রয়েছে। বিরোধী দলনেতা নবীনকুমার পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী ভীমা ভারতীর স্ত্রী রানি ভারতীর মুখ্যমন্ত্রী হওয়া কখনওই মেনে নিতে পারেননি। বিধানসভার কক্ষের মধ্যে সকলের সামনে তিনি অশিক্ষিত রানি সবদিক থেকেই মূখ্যমন্ত্রী পদের ‘অযোগ্য’ বলে চরম অপমান করেন। কিন্তু সুগৃহিণী রানি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে উত্তর দিয়ে সেই অপমান নবীন কুমারকে ফিরিয়ে দেন।

রানি বলেছিলেন, নবীনবাবু আপনাদের মতো শিক্ষিত রাজনৈতিক নেতারা সমস্যা নিয়ে বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু আমরা সমস্যার মধ্যে জন্মেছি। তাই বিহারের সমস্যা আপনার থেকে আমি অনেক ভালো বুঝি!
আরও পড়ুন:

মুভি রিভিউ: মহারানি-২ বিহারের পরিধি ছাড়িয়ে দিল্লির রাজনীতিকে স্পর্শ করেছে

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৬: সুন্দরবনের লৌকিক চিকিৎসায় ম্যানগ্রোভ—হরগোজা ও কেয়া

এরকম অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ রয়েছে এই তিন সিজনের সিরিজেই। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় মহারানি নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। কোথাও মুখ্য প্রতিবাদীর চরিত্রে হুমা কুরেশিকে ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে মহারানি খুবই আকর্ষণীয় একটি ওয়েব সিরিজ। অক্ষয় কুমার ঘরণী টুইঙ্কল খান্না এবং শত্রুঘ্ন সিনহা দু’ জনই হুমা কুরেশির অভিনয়ের দারুণ প্রশংসা করেন। কোনও একটি পত্রিকায় বলা হয়েছে, মহারানি আসলে সাহেব বিবি এবং বিহারের কাহিনি।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২১: গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী—এক শক্তির গল্প

সিজন-২ এর বিষয়ে একটি পত্রিকায় মন্তব্য করা হয়, মহারানি আসলে আবেগ আর বিনোদনের আশ্চর্য মিশ্রণ। সিজন-২ সম্পর্কে অন্য একটি পত্রিকায় বলা হয়েছে, দ্বিতীয় অধ্যায় প্রথম অধ্যায়ের তুলনায় পরিধিতে উপাদানে অনেকটা বড় এবং অনেক বেশি হিংস্র। রানি ভারতী ছিলেন রাজনৈতিক বোড়ে। সেখান থেকে রানি কীভাবে রাজনীতির মহারানি হয়ে উঠল, সেই পরিচয় ছিল সিজন-২ এ।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৬: যন্ত্রণাদগ্ধ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ রাঁচিতে পেয়েছিলেন সান্ত্বনার প্রলেপ

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৪: সারদা মায়ের মানসিক দৃঢ়তা

কিন্তু মহারানি সিজন-৩ প্রথম এবং দ্বিতীয় সিজনে তুলনায় অপেক্ষাকৃত গতিহীন লেগেছে। পর্ব থেকে পর্বে গল্প গিয়েছে আকর্ষণীয়ভাবে। কিন্তু সিজন-১ এবং ২ এ যে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা ছিল সামান্য হলেও তার খামতি অনুভব করা গিয়েছে। সিজন-৩ এ গানের অনেক ব্যবহার করা হয়েছে। সঞ্জয় লীলা বনশালির সিগনেচার ঢঙ্গে নয়নাভিরাম রঙিন চিত্তাকর্ষক নাচের মুহূর্ত তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের রাজনৈতিক থ্রিলারে মুহূর্তের বদল ঘটানো ছাড়া এসবের বিশেষ কোনও ভূমিকা নেই বলেই মনে হয়েছে।

তবে অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই, সিজন-৩ এ হুমা কুরেশি তাঁর অভিনীত রানি ভারতীর চরিত্রের মতোই অকল্পনীয় অভিনয় মুহূর্ত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। সহ অভিনেতারা প্রত্যেকেই যথাযথ অভিনয় করেছেন। কিন্তু মহারানি সিরিজে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হুমার অভিনয় ওটিটির দর্শকদের মনের মণিকোঠায় চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।
* * জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড। (Fiji)।

Skip to content