বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


কলকাতায় বৃষ্টি

ছবি একটি দৃশ্যে রিচা চড্ডা।

কাহিনি বৈশিষ্ট্য: পলিটিক্যাল থ্রিলার
ভাষা: হিন্দি
প্রযোজনা: ভূষণ কুমার, কৃষণ কুমার প্রমুখ
কাহিনি চিত্রনাট্য সংলাপ পরিচালনা: সুভাষ কাপুর
অভিনয়ে: রিচা চড্ডা, মানব কউল, সৌরভ শুক্লা, অক্ষয় ওবেরয় প্রমুখ
সময়সীমা: ১২২ মিনিট
রেটিং: ৬.৫/১০
ওটিটি প্ল্যাটফরম: নেটফ্লিক্স


ভোট নিয়ে চারদিকে ঘোঁট। ভোটের বাদ্যি বেজে গিয়েছে। পাঁচ বছরে একবার পাত্তা পাওয়া জনতা তারিয়ে তারিয়ে অনুভব করছে ভবিষ্যৎ জনপ্রতিনিধিদের হাঁকুপাঁকু হুটোপুটি। পাঁচ বছরের নিশ্চিন্ত আয়েশের জন্য এই কটা মাস আদাজল খাওয়া পরিশ্রম তো করতেই হবে। জনতাকে তো সারাবছর কষ্ট করতে হয়। হাতুড়ি ঠুকতে হয়, লাঙল চালাতে হয়, কলম পিষতে হয়, কম্পিউটারে ঠায় তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যথা করে ঘাড় ব্যথা করে। কিবোর্ড ঠুকতে ঠুকতে আঙুল-কব্জি টাটিয়ে ওঠে। দোকানদারি ব্যবসা ডাক্তারি মোক্তারি সবেতেই আমজনতাকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু জনতাকে ভালো রাখার এই জনগণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতায় যাঁরা শেষমেশ ফার্স্ট হতে পারেন তাদের এবং তাদের সাতপুরুষের লাইফ সেট। অর্থ রাজনৈতিক ক্ষমতা সুযোগসুবিধা আয়েশ ফুর্ত্তি কোনকিছুর খামতি থাকে না।
এই ভোট আর ভোটের পিছনের রাজনীতি নিয়ে সুভাষ কাপুরের রচনা-নির্দেশনায় টানটান পলিটিকাল থ্রিলার ম্যাডাম চিফ মিনিস্টার। নাম ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন রিচা চাড্ডা। এই ম্যাডাম চিফ মিনিস্টার উত্তর প্রদেশের। যাঁদের ১৯৮০-৯০ সাল পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের দলিত রাজনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা আছে, তাঁরা এই ছবির মূল চরিত্রদের হয়ত মেলাতে পারবেন। গল্পের মূল উপাদান সংগ্রহ করা হয়েছে সেই পটভূমিকা থেকে কিন্তু খুব স্বাভাবিকভাবে নাটকীয়তার জন্য এবং অবশ্যই বিতর্ক এড়িয়ে যেতে প্রচলিত ধারণাকে বদলে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:

মুভি রিভিউ: মার্ডার মুবারক—অধিক প্রতিভার ভিড়েই কি নষ্ট হইল গাজন?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৪: নোবেল পাওয়ায় বন্ধু দিয়েছিলেন লজ্জাবতীর চারা

দলিত মেয়ে তারা। প্রাথমিকভাবে দলিতদের উপর অত্যাচার নিয়ে তারার সেরকম কোনও চিন্তাভাবনা ছিল না। উচ্চবর্ণের ইন্দ্রমণি ত্রিপাঠীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল তারা। ইন্দ্রমণি রাজনীতিতে তার ক্যারিয়ার গড়তে চায়। এদিকে তারা জানায় যে তাদের বিয়ে হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি কারণ তারার শরীরে জন্ম নিয়েছে ইন্দ্রমণির সন্তান। জাতের বাধা ভেঙে বিয়েতে আপত্তি আসবে। তাই ইন্দ্রমণিকে নিয়ে তারা অন্য কোথাও ঘর বাঁধতে চায়। কিন্তু রাজনীতির আঙিনায় নিজেকে প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদেখা উচ্চবর্ণের ইন্দ্রমণি ত্রিপাঠী কখনও তারাকে বিয়ে করার কথা ভাবেনি। সে চায় এই অনাগত সন্তানের মৃত্যু। তারা তা চায় না। বরং সে এই সম্পর্ককে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে চায়। দ্বন্দ্ব বাড়ে।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৩: সুন্দরবনের পশ্চিমাংশে ম্যানগ্রোভ

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৭: ওরাল হেলথ

তারা সম্পর্কের কথা প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখায়। ইন্দ্রমণির লোকজন তারাকে কি ভয়ংকর ভাবে আক্রমণ করে এবং শারীরিক ক্ষতিসাধন করে। তারাকে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন দলিত সমাজের প্রতিনিধি এক রাজনৈতিক নেতা মাস্টারজি সূরযভান। বহু বছর আগে এক বিয়ের শোভাযাত্রায় তুচ্ছ ঝগড়াঝাঁটিতে উচ্চবর্ণের লোকজন তারার বাবাকে গুলি করে মেরে ফেলে। আর সেই দিনই তারার জন্ম দিয়েছিল তারার মা। মাস্টারজি সূরযভান এই ইতিহাস জানতেন। তিনি তারাকে পিতৃস্নেহে আশ্রয় দেন। মাস্টারজির আশ্রয়ে তারা দলিত সমাজের প্রতিনিধি হয়ে ওঠে। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যখন কোনও প্রার্থী দাঁড়াতে সাহস পাচ্ছে না। তখন মাস্টারজি সূরযভান তারাকে বাজি ধরেন এবং তিনি বাজি জিতে যান।
আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও: পূর্বোত্তরে ইতিহাস ঐতিহ্যে হাতি

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৯: কামিনী রায়, জনৈক বঙ্গমহিলা

ম্যাডাম চিফ মিনিস্টার ছবিতে জোট রাজনীতি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, পাওয়ার পলিটিক্স, বিধায়ক ভাঙ্গিয়ে নেওয়া, রাজ্য রাজনীতিতে নেতাদের উত্থান ও পতন আজকের পলিটিকসের সবকটি অধ্যায় রয়েছে। রয়েছে চোরাগুপ্তা খুন, আক্রমণ একেবারে কাছের মানুষকে দিয়ে রাজনৈতিক হত্যা ও বিষপ্রয়োগ এবং আমলাতন্ত্রের সুফল ও কুফল।

ভোটদানের মতো পবিত্র কর্তব্যে যাবার আগে আয়েশ করতে করতে নেটফ্লিক্স এর ছবিটি দেখে নিলে মস্তিষ্কের সার্কিট রিচার্জ হয়ে যাবে। বেশ ফুরফুরে মনে ভোট দিতে পারবেন।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content