বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ইরফান, দীপিকা ও অমিতাভ বচ্চন। ছবি: সংগৃহীত।

অমিতাভ বচ্চন সারা জীবন যে চরিত্রেই অভিনয় করেছেন, তাই দর্শকের মনে দাগ কেটে গিয়েছে। গত কয়েক বছরে মুক্তি পাওয়া বহু ছবির তালিকার মধ্যে বিশেষ ভাবে জায়গা করে নিয়েছে ‘পিকু’ ছবিটি। অমিতাভকে ছাড়া ভাস্করের চরিত্র কতটা জনপ্রিয় হতো, তা নিয়ে সন্দিগ্ধ আমজনতা। ছবির পরতে পরতে যে আবেগ তার বেশিটাই প্রাণবন্ত করে তুলেছেন অমিতাভ। কিন্তু যখন এ ছবির প্রস্তাব তাঁকে দেওয়া হয়েছিল, একেবারেই তিনি রাজি হননি। কেন?
‘পিকু’র ট্যাগলাইনই ছিল ‘বেগ থেকেই আবেগ’। ছবির অনেকটা জায়গা জুড়ে দেখানো হয়েছিল কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। যে রোগে আক্রান্ত ছিল অমিতাভ বচ্চন অভিনীত চরিত্র ভাস্কর। সেই কারণেই প্রাথমিক ভাবে চরিত্রটিতে অভিনয় করতে রাজি ছিলেন না বিগ বি। সম্প্রতি ছবির চিত্রনাট্যকার জুহি চতুর্বেদীর মাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশ্যে আসে।

জুহি জানান, ‘পিকু’-র ভাস্কর ও ‘গুলাবো সিতাবো’-র মির্জার চরিত্র দু’টি তিনি অমিতাভকে মাথায় রেখেই লিখেছিলেন। তিনি বলেন, “সাধারণত কোনও বিশেষ অভিনেতার কথা চিন্তা করে আমরা চিত্রনাট্য লিখি না। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, অমিতাভ ছাড়া আর কেউ নেই যিনি এই চরিত্র দু’টি এমন দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন।”
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৫: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— আমুর ও গোশিঙা

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭০: পিতার সমালোচক রাম শুধুই মানুষ, তবু তিনি কেন পুরুষোত্তম?

তাঁর মতে, সব অভিনেতারই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। চিত্রনাট্য লেখার ক্ষেত্রে সেই ভাবনা প্রভাব ফেলে। কিন্তু বিগ বি-র ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। এমন কোনও বিষয় নেই যা তিনি জানেন না বা যে বিষয়ে তাঁর কৌতূহল নেই।

অমিতাভের এই বিরল গুণ সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা হয় যখন তিনি ‘শুবাইট’ ছবিতে কাজ করছিলেন। তাঁর কথায় “ছবিটি এখনও মুক্তি পায়নি। আমি দেখেছি, এখনও তিনি কতটা সচল। ২০০৮ সাল। প্রবল ঠান্ডায় আমরা শুটিং করছিলাম, আর অমিতাভ যেন পঁয়ত্রিশ বছরের যুবকের মতো কাজ করছিলেন।”
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৩: মহীয়সী গৃহস্থনারী মা সারদা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৪: জোড়াসাঁকোয় পাগল-যাচাই

এ সব দেখেই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন জুহি, ‘পিকু’ অমিতাভকে ছাড়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়। এ ছবিতে কোনও ছকবাঁধা চিত্রনাট্য ছিল না। নিরীক্ষামূলক অনেক ধাপ ছিল এতে। সে অর্থে কোনও নায়ক-নায়িকা কিংবা নায়কোচিত মুহূর্তও ছিল না ‘পিকু’তে।
যদিও প্রাথমিক ভাবে অমিতাভ ‘না’ই বলে দেন। তাঁর ভাবনা ছিল, “লোকে কী ভাববে এ সব বিষয় নিয়ে কথা বললে?”
তখন জুহি আর একবার চিত্রনাট্য পড়তে বলেন। এই ছবির কিছু মুহূর্ত তাঁর সামনে অভিনয় করে দেখানো হলে ভাবটা বুঝতে পারেন তিনি। তখন ছবিতে অভিনয় করতে সম্মত হন অমিতাভ।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-২: যতই দেখি তারে, ততই দহি…

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭৩: জোর কা ঝটকা

জুহি জানান, ‘‘পিকু’-র পরে আমার কাজের ধারা তিনি বুঝতে পারেন। তাই ‘গুলাবো সিতাবো’-তে কাজ করতে তিনি আর দ্বিধা করেননি।” আমরা সবাই জানি, ‘পিকু’-র চিত্রনাট্যের জন্য জুহি জিতে নেন সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের জাতীয় পুরস্কার। আর সেই মঞ্চেই অমিতাভ পান সেরা অভিনেতার স্বীকৃতি।
* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।

Skip to content