বুধবার ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫


ছবিতে তাবু, করিনা ও কৃতি।

 

মুভি রিভিউ: ‘ক্রু’

কাহিনি বৈশিষ্ট্য: কমেডি থ্রিলার (২০২৪)
ভাষা: হিন্দি
প্রযোজনা: একতা কাপুর, রিয়া কাপুর, অনিল কাপুর, দিগ্বিজয় পুরোহিত
পরিবেশনা: বালাজি মোশন পিকচার্স এবং অনিল কাপুর ফিল্মস অ্যান্ড কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক
কাহিনি: নিধি মেহরা এবং মেহুল সুরি
নির্দেশনা: রাজেশ এ কৃষ্ণান
অভিনয়ে: তব্বু, করিনা কাপুর খান, কৃতি শ্যানন, দিলজিৎ দোসাঞ্জ, কপিল শর্মা, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, রাজেশ শর্মা, কুলভূষণ খারবান্দা প্রমুখ
সময়সীমা : ১১৮মিনিট
দেখা যাবে: নেটফ্লিক্স
রেটিং: ৬.৫/১০

সাম্প্রতিক হিন্দি ছবি ‘ক্রু’ একটি কমেডি ক্রাইমধর্মী ছবি। না, ব্যাপারটা একেবারেই সোনার পাথরবাটির মতো নয়। ছবিটি আদতে ক্রাইমধর্মী, কিন্তু পুরোটাই কমেডি ট্রিটমেন্ট। মোটামুটি ঠিকঠাক লেখা হলে কমেডি ছবি সবসময় ভালো ব্যবসা করে। স্বাভাবিকভাবে একতা কাপুর, রিয়া কাপুর, অনিল কাপুর এবং দিগ্বিজয় পুরোহিত প্রযোজিত বালাজি মোশন পিকচার্স এবং অনিল কাপুর ফিল্মস অ্যান্ড কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক পরিবেশিত এই ছবিটি আদ্যন্ত মজার।

রাজেশ এ কৃষ্ণান নির্দেশিত এই ছবির রচয়িতা নিধি মেহরা এবং মেহুল সুরি। তিন বয়সের তিনজন এয়ার হোস্টেস-এর ভূমিকায় তব্বু, কারিনা কাপুর এবং কৃতি শ্যানন যথাযথ অভিনয় করেছেন। সহ ভুমিকায় দিলজিট দোসাঞ্জ এবং কপিল শর্মা। ছোট ভূমিকায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, রাজেশ শর্মা ও কুলভূষণ খারবান্দা উল্লেখযোগ্য। ছবিতে এই তিনজন এয়ার হোস্টেস সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
২০২২ সালের নভেম্বরে এই ছবির নির্মাণের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে এই ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছবির কাজ সম্পন্ন হয়। ছবিটি মুক্তি পায় মার্চে। এখনও পর্যন্ত ৭৫ কোটি টাকায় তৈরি এই ছবির বিশ্বব্যাপী আয় ১৫৭ কোটি টাকা।

ক্রাইম-এর উত্তেজনা আর হাসি মজায় ভরে থাকা এই ছবিতে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু কিছু কাজ খুব গ্ল্যামারাস। দূর থেকে দেখতে বসে মনে হয় আমি যদি এরকম একটা কাজ করতাম। যেমন ছবির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অভিনেতা অভিনেত্রী বা পর্দার পিছনে থাকা কলাকুশলীদের কাজকে দুর্দান্ত মজাদার বলে মনে হয়। কিন্তু আদপে সেই কাজ কতটা ঝুঁকির কতখানি দুশ্চিন্তার সেটা যাঁরা এ কাজ করেন এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ পরিবারের লোকজনই জানেন। ঠিক তেমনি একটি কাজ হল এয়ার হোস্টেস বা বিমান সেবিকার ভূমিকা।

শারীরিক, পারিবারিক ও মানসিক যন্ত্রণা ক্ষত কষ্ট দুশ্চিন্তা সবকিছু ভুলে কঠিন নিয়মানুবর্তিতায় হাসিমুখে একটা তরতাজা ঝকঝকে মুখোশ মুখে ও শরীরে এঁটে সকাল থেকে রাত ঘড়ির কাঁটা ধরে কাজ করতে হয়। এয়ার ক্রুদের এই কঠিন জীবনের চলচ্ছবি এই সিনেমায় খুব স্বল্প হলেও স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:

মুভি রিভিউ: নীরজ পাণ্ডের ‘আইয়ারি’ মনোজ-সিদ্ধার্থের যুগলবন্দি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯১: এক আলমারি বই : রাণুর বিয়েতে কবির উপহার

অন্য বিষয়টি হল, কোনও সংস্থার আচমকা দেউলিয়া ঘোষণা হয়ে যাওয়া। ঈশ্বরের কৃপায় যাঁদের এই ধরনের ভয়ংকর সময়ের মুখোমুখি হতে হয়নি। তাঁরা ঠিক আন্দাজ করতে পারবেন না যে সেই সব সংস্থার কর্মচারী ও তাদের পরিবারের উপর দিয়ে কী ভয়ঙ্কর আর্থিক ঝঞ্ঝা বয়ে যায়। আর্থিক দৈন্যতা একটা জিনিস। কারও স্বল্প রোজগার একটা নির্দিষ্ট সীমার বেশি তাঁকে বা তাঁদের খরচের অধিকার দেয়নি। স্বপ্নকে বড় হতে দেয়নি।

আকাঙ্ক্ষাকে জন্মাতেই দেয়নি। কিন্তু একটা নিশ্চিন্ত ভালো রোজগার একজন মানুষকে একটি পরিবারকে সীমিত স্বপ্ন দেখতে দেয়। কিছু কিছু আকাঙ্খাকে বাস্তবে নিয়ে আসার সুযোগও দেয়। তার জন্য হয়তো ঋণ করতে হয়, বাড়ির জন্য ঋণ গাড়ির জন্য ঋণ উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণ। কিন্তু সেইসব প্রাপ্তির পরে বাকি জীবনটা হয়তো ঋণশোধ করতে করতেই বেঁচে থাকার আনন্দকে তাঁরা উপভোগ করতে পারেন। কিন্তু আচমকা কোনও একদিন এই নিশ্চিন্ত রোজগারটুকু বন্ধ হয়ে গেলে? কী হতে পারে?
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫১: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—পশুর, ধুধুল ও হাবল

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৯: রসিক স্বভাব মা সারদা

ক্রু ছবিতে আমাদের দেখা এমন একটি বিমান পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবার ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। এয়ার ডেকান, জেট এয়ারলাইন্স বা কিংফিশার এয়ারলাইন্স-এর নাম এই ছবিতে কোহিনুর এয়ারলাইন্স বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তার পরিণতি হাজার হাজার কর্মচারী এবং তাদের পরিবারকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। এই ছবিতে কোহিনুর এয়ারলাইন্স ঠিকঠাক মতো মাসের মাইনে দিতে পারছে না, প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা পড়ছে না। কিন্তু এয়ারলাইন্স তখনও চালু রয়েছে, এমন একটা সময়ের গল্প।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪৬: রাজার নিয়ন্ত্রণহীন অনুচরেদের কুকর্মের দায় রাজাকেই নিতে হয়

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৩: এক্সপায়ারি ডেটের ওষুধ খাবেন?

কিন্তু গল্প বলা যাবে না। নেটফ্লিক্সে গিয়ে ক্রু ছবিটি দেখে নিতে হবে। তবে ছবিটি দেখতে বসে একটা জিনিস আমার একটু দৃষ্টিকটু লেগেছে। সেটা ইদানিং অনেক ছবিতেই ব্যবহার করা হয়। হয়তো মনে করা হয় যে স্টোরি ট্রেলিংয়ের লিনিয়ার ন্যারেটিভ বহু ব্যবহৃত এবং যথেষ্ট পুরনো। তাই কাহিনি চিত্রনাট্যকারেরা ইদানিং নন-লিনিয়ার ন্যারেটিভ-এর ওপর বেশি ভরসা করেন। একজনের গল্প বলতে বলতে অন্য জনের গল্পে চলে যাওয়া আবার প্রথম জনের গল্পে ফিরে আসা অথবা কোনও ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর মাঝের বাদ রাখা অংশটা ফিরিয়ে নিয়ে আসা। অনেকে বলেন, এ সবই নাকি ক্রিস্টোফার নোলানের ইক্লিপটিক্যাল স্টোরিটেলিং-এর স্পষ্ট অনুপ্রেরণা। কিন্তু বিনোদনমূলক ছবিতে সাধারণত এই জিকস-পাজল গল্প বলার ধরণ ছবির আবেদনকে খানিকটা ব্যাহত করে বলে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়। অবশ্যই এই ধরণ কারও কাছে খুব আকর্ষণীয় মনে হতেই পারে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content