বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


হঠাৎ করেই কেমন যেন সব থেমে গেল। বুধবার নাগেরবাজারের রামগড় কলোনির ফ্ল্যাট থেকে মডেল-অভিনেত্রী বিদিশা দে মজুমদারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্ল্যামার জগতে পা রাখার বছর চারেকের মধ্যে তিনি নিজের মতো করে একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছিলেন। একেবারেই সাদামাটা জীবন থেকে উঠে এসে মডেলিং দুনিয়ার ঝাঁ-চকচকে জগতের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন বিদিশা। ২১ বছরের মেয়ের অকালমৃত্যু উঠছে অনেক প্রশ্ন। হাসিখুশি, আঁকায় পটু, মিশুকে স্বভাবের বিদিশার মনে কী তাহলে অন্ধকার জমতে শুরু করেছিল? ঘনিষ্ঠরাও বিদিশার এই মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
বিদিশা নৈহাটিতে এক বোনকে নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। তিনি ওয়াল পেন্টিংয়ে ভীষণ দক্ষ ছিলেন বলে ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও পেশা হিসেবে তিনি মডেলিংকে বেছে নিয়েছিলেন। মডেলের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের তথ্য বলছে, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মডেলিং থেকে রোজগার শুরু করেন ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে। ২০১৮তে তিনি অ্যাকাউন্ট খোলেন নেটমাধ্যমে। পরিচিতদের বক্তব্য, অনলাইনে তিনি স্নাতকস্তরের পড়াশোনাও শেষ করেছিলেন। বিদিশা একাধিক মডেলিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। ২০১৮ সালে পেয়েছেন শারদসুন্দরী সম্মান।
সম্প্রতি বিদিশা রামগড় কলোনির একটি ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেছিলেন। নৈহাটিতে থাকেন বাবা-মামা এবং বছর চোদ্দর ছোট বোন। বাবা বিশ্বনাথ দে মজুমদার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। সংসার সামলাতে ব্যস্ত থাকেন মা পম্পা মজুমদার। জেনে গিয়েছে, বিদিশার হাতে কাজের অভাবও ছিল না। মডেলিং থেকে নাকি ভালোই রোজগার করতেন। নিয়মিত মডেলিংয়ের পাশাপাশি বিদিশা ‘ভাঁড়: The Clown’ নামে এক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তাহলে বিদিশার কেন এই পরিণতি হল তা অবশ্য তদন্তের বিষয়। পরিচিতদের মতে, আর্থিকভাবে সচ্ছল হলেও বিদিশা অবসাদে ভুগছিলেন।
বুধবার নাগেরবাজারের রামগড় কলোনির বাড়ি থেকে বিদিশার দেহ গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ভিতর থেকে ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। দেহের পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গিয়েছে। কয়েকদিন আগেও তাঁকে একটি গয়নার বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছে। মৃত্যুর প্রায় ২০ ঘণ্টা আগে প্রোফাইলের তাঁর ছবিও শেয়ার করেছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, বিদিশার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যু নিয়ে তদন্তকারীরা অনেকটা আলোকপাত করতে পারবেন।
গত ১৫ মে অভিনেত্রী পল্লবী দে-র ঝুলন্ত দেহ গরফার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধারের পর মডেল-অভিনেত্রী বিদিশা ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘মানে কী এ সব। মেনে নিতে পারলাম না’। এখানেই শেষ নয়, এদিন সন্ধ্যে নাগাদ তিনি এও লিখেছিলেন, ‘আমি নত হই, তাই আমি ভেঙে পড়ি না।’
সেই বিদিশার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হল পল্লবীর মৃত্যুর ঠিক ১০ দিনের মধ্যে নাগেরবাজারের ফ্ল্যাট থেকে। এরকম একজন দৃঢচেতা মনের মেয়ের অকালমৃত্যুতে অবাক অনেকেই। মডেল- অভিনেত্রী বিদিশার এই পরিণতির কারণ আপাতত অজানা!

ছবি: ফেসবুক

Skip to content