ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
রুপোলি পর্দার আড়ালে প্রতিনিয়তই ঘটে চলে কতশত বিচিত্র ও বৈচিত্রময় ঘটনা। সাধারণ দর্শকরা পর্দার সামনে ঘটতে দেখা ঘটনাপ্রবাহের পাশাপাশি কিন্তু অপেক্ষা করে থাকেন যদি সেই সমস্ত বৈচিত্রের টুকরো কিছু ঝলকের আভাসমাত্র পাওয়া যায় কোনওভাবে। এবার তাদের সেই অপেক্ষার অবসান হওয়ার পালা। টলিউডে প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা সেই সমস্ত নানাবিধ বৈচিত্রের সমাহার নিয়েই এবার থেকে থাকছেন টলিউডের অন্যতম মুখ্য সহকারী পরিচালক বিভাসরঞ্জন বেরা। বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক ও আকর্ষণীয় ঘটনার কাহিনি নিয়েই থাকছে তার এই ধারাবাহিক ‘অচেনা টলিউড’।
পর্ব – ৪
স্বপন সাহা নিঃসন্দেহে একজন প্রযোজক-বান্ধব পরিচালক। আঁতলামো তাঁর ধাতে ছিল না। অযথা কোনও বিষয় নিয়ে শুটিংয়ে সময় নষ্ট করতেন না। যতটুকু না হলে নয় ততটুকু হলেই তিনি শুটিং চালু করে দিতেন। শট নিয়েও তাঁর তেমন কোনও খুঁতখুঁতানি ছিল না। খুব কম শট তাঁর কাছে এনজি হিসাবে গণ্য হত। সেটা যে শুধু অর্থ খরচের ভয়ে তা নয়, আসলে ‘পারফেকশন’ নিয়ে অতটা মাথা ঘামাতেন না। শুধু দেখতেন, যে ভুল বা খামতিটা পূরণ করার জন্য আবার শটটা নেওয়া হবে, আদৌ সেটা নিয়ে দর্শকদের মাথাব্যথা আছে কি না, বা সেই ভুলটা আদৌ দর্শকের চোখে পড়বে কি না। বহু ডিরেক্টর একটা শটকে নিখুঁত করার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দেন কিন্তু আদৌ তার প্রয়োজন ছিল কি না ভেবে দেখেন না। স্বপনদা দর্শকদের চোখ দিয়ে ছবিটাকে দেখতেন বলেই ছোটখাট ভুল পাত্তা দিতেন না। কারণ তিনি জানতেন, দর্শকরা গল্প চায়, আবেগময় সংলাপ চায়, বাকি যদি পেছনে কুঁচকে থাকা বা সবে রং করা না শুকোনো ভেজা সেট থাকে, ক্যামেরাম্যানের সাদামাটা ফটোগ্রাফি থাকে, কিংবা চরিত্রদের মেকআপ বা ড্রেসের অবাস্তবতা থাকে কিচ্ছু এসে যায় না। স্বপনদা জানতেন তাঁর ছবির দর্শক কারা? আজকে টিভির সামনে বসে যাঁরা সিরিয়ালের নামে যাত্রাপালা দেখেন, তাঁরাই ছিলেন তখনকার ছবির দর্শক। তাঁরা তখন সিনেমা হলে গিয়ে টিকিট কেটে যা দেখতেন, আজ তাঁরা সেই একই জিনিস বিনা পয়সায় মেগা সিরিয়ালের মাধ্যমে দেখছেন। সুতরাং তাঁদের জন্য পারফেকশনের পেছনে সময় নষ্ট করে লাভ কী? সত্যিই লাভ নেই।
একবার সল্টলেকের রাস্তায় ‘তোমাকে চাই’ ছবির শুটিং হচ্ছে। দৃশ্যটা ছিল, বিজয় নামের এক চরিত্র জেল থেকে বেরিয়ে আসছে। শাগরেদরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য মালা নিয়ে হাজির হবে। দিনের বেলার দৃশ্য। কিন্তু তখন বাজে সন্ধে ছটা। চারদিকে অন্ধকার। স্বপনদা ক্যামেরাম্যান শংকর গুহকে জিজ্ঞেস করলেন, সিনটা ডে। এখন এই অন্ধকারে করা যাবে? শংকরদার অভিধানে ‘না’ শব্দ ছিল না। বললেন, হয়ে যাবে, তবে শট কাটা যাবে না। ওয়ান সিন, ওয়ান শট নিতে হবে। স্বপনদা রাজি হয়ে গেলেন। শঙ্করদা চারদিকে কড়া আলো মেরে বললেন, টেক করুন। ক্যামেরা চলল। এক টেকে ‘ওকে’। পর্দায় যখন ছবি পড়ল তখন যাঁরা টেকনিক্যাল লোক তাঁরা বুঝলেন, কতটা নিম্নমানের ফটোগ্রাফি। কিন্তু তাতে দর্শকদের কী? তাঁরা সিনেমা হলে গিয়ে প্রসেনজিৎকে দেখলেন, ঋতুপর্ণাকে দেখলেন, তাঁদের নাচ দেখলেন, ডায়ালগ শুনলেন, মারামারি দেখলেন। বাইরে বেরিয়ে সবাইকে বললেন, দারুণ ছবি। দর্শকদের দয়ায় ‘হিট’ তকমা পেল ছবি। এরকম আরও অনেক ঘটনা আছে। যেমন হিরো চটি পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় যখন নামল তখন পায়ে বুট। এমন নয় যে মাঝে বুট কেনার দৃশ্য ছিল। তাতে কী? কোন দর্শক আর পায়ের দিকে তাকাবে, তারা তো হিরোর ডায়ালগ শুনবে মুখে! দর্শকরা যদি পায়ের দিকে তাকাবে, তাহলে এত টাকা দিয়ে সুন্দর মুখের হিরো নেবার কী দরকার? অকাট্য যুক্তি! সবচেয়ে মারাত্মক হয়েছিল একটা ছবিতে। গল্পের নায়ক জয়-এর বয়স যখন ১০, তখন সে তার বাবাকে চারজন গুন্ডার হাতে অসহায়ভাবে খুন হতে দেখে। এরপর কেটে যায় ১৫ বছর। জয় এখন ২৫ বছরের তরতাজা যুবক (সিনেমার নায়ক)। সে তার বাবার খুনিদের বদলা নিতে যায়। ৪ জনের সঙ্গে লড়াই করে বদলা নেবে সে। ছবির এটাই ছিল ক্লাইম্যাক্স সিন। কিন্তু শুটিংয়ের দিন দেখা গেল, যে চারজন গুন্ডা আগে পার্ট করেছিল তাদের ডেট নেই, তারা অন্য ছবির শুটিংয়ে গেছে, পরিবর্তে আলাদা চারজন গুন্ডা এসেছে। আমরা সবাই ভাবছি আজ স্বপনদা নির্ঘাত শুটিং ক্যান্সেল করবেন। কারণ যারা খুন করল, তাদের না মেরে নায়ক অন্যদের মারতে যাবে কেন? ছোটবেলায় খুন করতে দেখল রাম-শ্যাম-যদু-মধু-কে আর বড় হয়ে সে খুন করল লালু-বিলু-ভোম্বল-সুবলকে! এটা হতে পারে? কিন্তু স্বপনদা শুটিংয়ে এসে বিন্দুমাত্র টেনশন না নিয়ে বললেন, শুটিং হবে। যারা এসেছে তাদের দিয়েই হবে। ৫ নম্বর সিনে দর্শকরা যে চার গুন্ডাকে দেখেছে, ৮০ নম্বর সিনে তাদের কেউ মনে রাখবে না। গুন্ডাদের মুখ কেউ মনে রাখে না, হিরোর মুখটাই দেখে। শুটিং শুরু হয়ে শেষ হল। ধুমধাম করে মুক্তিও পেল। ছবি ‘সুপারহিট’ হয়ে গেল। অবাক ব্যাপার, একজন দর্শকও ‘গুন্ডা বদল’ নিয়ে কোনও প্রশ্ন করল না।
সত্যিই তো ছবির শুরুর গুন্ডাদের মুখ কি ছবির শেষপর্যন্ত মনে রাখা সম্ভব? শুধু সংখ্যায় তারা চারজন ছিল কি না দেখেছে। হ্যাঁ, এটাই বাস্তব। যেটা স্বপনদা বুঝতেন। কিন্তু অনেক পরিচালকরা বুঝেও না বোঝার ভান করে অযথা শুটিং-এর বাজেট বাড়াতেন। তাঁর ছবিতে সরস্বতীর ছোঁয়া (শিল্প) ছিল না ঠিকই, কিন্তু লক্ষ্মীর আশীর্বাদ (মুনাফা) ছিল। অধিকাংশ প্রোডিউসাররা যে কারণে তাকে ‘বন্ধু’ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
একবার সল্টলেকের রাস্তায় ‘তোমাকে চাই’ ছবির শুটিং হচ্ছে। দৃশ্যটা ছিল, বিজয় নামের এক চরিত্র জেল থেকে বেরিয়ে আসছে। শাগরেদরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য মালা নিয়ে হাজির হবে। দিনের বেলার দৃশ্য। কিন্তু তখন বাজে সন্ধে ছটা। চারদিকে অন্ধকার। স্বপনদা ক্যামেরাম্যান শংকর গুহকে জিজ্ঞেস করলেন, সিনটা ডে। এখন এই অন্ধকারে করা যাবে? শংকরদার অভিধানে ‘না’ শব্দ ছিল না। বললেন, হয়ে যাবে, তবে শট কাটা যাবে না। ওয়ান সিন, ওয়ান শট নিতে হবে। স্বপনদা রাজি হয়ে গেলেন। শঙ্করদা চারদিকে কড়া আলো মেরে বললেন, টেক করুন। ক্যামেরা চলল। এক টেকে ‘ওকে’। পর্দায় যখন ছবি পড়ল তখন যাঁরা টেকনিক্যাল লোক তাঁরা বুঝলেন, কতটা নিম্নমানের ফটোগ্রাফি। কিন্তু তাতে দর্শকদের কী? তাঁরা সিনেমা হলে গিয়ে প্রসেনজিৎকে দেখলেন, ঋতুপর্ণাকে দেখলেন, তাঁদের নাচ দেখলেন, ডায়ালগ শুনলেন, মারামারি দেখলেন। বাইরে বেরিয়ে সবাইকে বললেন, দারুণ ছবি। দর্শকদের দয়ায় ‘হিট’ তকমা পেল ছবি। এরকম আরও অনেক ঘটনা আছে। যেমন হিরো চটি পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় যখন নামল তখন পায়ে বুট। এমন নয় যে মাঝে বুট কেনার দৃশ্য ছিল। তাতে কী? কোন দর্শক আর পায়ের দিকে তাকাবে, তারা তো হিরোর ডায়ালগ শুনবে মুখে! দর্শকরা যদি পায়ের দিকে তাকাবে, তাহলে এত টাকা দিয়ে সুন্দর মুখের হিরো নেবার কী দরকার? অকাট্য যুক্তি! সবচেয়ে মারাত্মক হয়েছিল একটা ছবিতে। গল্পের নায়ক জয়-এর বয়স যখন ১০, তখন সে তার বাবাকে চারজন গুন্ডার হাতে অসহায়ভাবে খুন হতে দেখে। এরপর কেটে যায় ১৫ বছর। জয় এখন ২৫ বছরের তরতাজা যুবক (সিনেমার নায়ক)। সে তার বাবার খুনিদের বদলা নিতে যায়। ৪ জনের সঙ্গে লড়াই করে বদলা নেবে সে। ছবির এটাই ছিল ক্লাইম্যাক্স সিন। কিন্তু শুটিংয়ের দিন দেখা গেল, যে চারজন গুন্ডা আগে পার্ট করেছিল তাদের ডেট নেই, তারা অন্য ছবির শুটিংয়ে গেছে, পরিবর্তে আলাদা চারজন গুন্ডা এসেছে। আমরা সবাই ভাবছি আজ স্বপনদা নির্ঘাত শুটিং ক্যান্সেল করবেন। কারণ যারা খুন করল, তাদের না মেরে নায়ক অন্যদের মারতে যাবে কেন? ছোটবেলায় খুন করতে দেখল রাম-শ্যাম-যদু-মধু-কে আর বড় হয়ে সে খুন করল লালু-বিলু-ভোম্বল-সুবলকে! এটা হতে পারে? কিন্তু স্বপনদা শুটিংয়ে এসে বিন্দুমাত্র টেনশন না নিয়ে বললেন, শুটিং হবে। যারা এসেছে তাদের দিয়েই হবে। ৫ নম্বর সিনে দর্শকরা যে চার গুন্ডাকে দেখেছে, ৮০ নম্বর সিনে তাদের কেউ মনে রাখবে না। গুন্ডাদের মুখ কেউ মনে রাখে না, হিরোর মুখটাই দেখে। শুটিং শুরু হয়ে শেষ হল। ধুমধাম করে মুক্তিও পেল। ছবি ‘সুপারহিট’ হয়ে গেল। অবাক ব্যাপার, একজন দর্শকও ‘গুন্ডা বদল’ নিয়ে কোনও প্রশ্ন করল না।
সত্যিই তো ছবির শুরুর গুন্ডাদের মুখ কি ছবির শেষপর্যন্ত মনে রাখা সম্ভব? শুধু সংখ্যায় তারা চারজন ছিল কি না দেখেছে। হ্যাঁ, এটাই বাস্তব। যেটা স্বপনদা বুঝতেন। কিন্তু অনেক পরিচালকরা বুঝেও না বোঝার ভান করে অযথা শুটিং-এর বাজেট বাড়াতেন। তাঁর ছবিতে সরস্বতীর ছোঁয়া (শিল্প) ছিল না ঠিকই, কিন্তু লক্ষ্মীর আশীর্বাদ (মুনাফা) ছিল। অধিকাংশ প্রোডিউসাররা যে কারণে তাকে ‘বন্ধু’ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।