শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


তাঁর হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে অবিরাম। তাঁর অপকট বচনে দূর হয় পারিপার্শ্বের সমস্ত মালিন্য। তিনি আর কেউ নন, তাঁর নাম অপরাজিতা আঢ্য। তিনি পর্দায় এলে সমস্ত ভার যেন নেমে যায় মন থেকে। কিন্তু জানেন কি সেই ভুবনমোহিনী হাসির অধিকারিণীর অবসর কাটে কীভাবে? অভিনয়জীবন থেকে অবসরের গল্প নিয়ে এবার ‘সেলেব কথা’-য় থাকছেন অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য

● অভিনয়ই করতে চাই—এমন কোনও অভিপ্রায় ছিল কি বরাবরই? কেমন ছিল অভিনয়জীবনের আরম্ভটা?
●● আমি বরাবরই চাইতাম ভবিষ্যতে যেন একজন সার্থক শিল্পী হতে পারি। মা-বাবাও চাইতেন আমি যেন একজন শিল্পী হিসাবে জীবনে প্রতিষ্ঠালাভ করতে পারি। ছোটবেলা থেকেই যেহেতু ভরতনাট্যম এবং মণিপুরি শিখেছি সেহেতু একটা সময়ে খুব ইচ্ছা ছিল নৃত্যশিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হব। তারপর একটু বড় হওয়ার পর থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হলাম। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর তখন শঙ্কর দাসগুপ্ত’র ‘সহজিয়া’তে নাটক করি। ভবানীপুরে একটা নাটকের রিহার্সাল করছিলাম আমরা। আর ওইদিনই ওখানে শেখর চক্রবর্তীরাও একটা ‘ওয়ান ওয়াল’এর রিহার্সাল করছিলেন। শেখরদা (শেখর চক্রবর্তী) আমার অভিনয় দেখে আমাদের নির্দেশককে বললেন যে, ‘মেয়েটি তো খুব ভালো অভিনয় করে। জগন্নাথ গুহ চন্দন সেনের বিপরীতে একজন শক্তিশালী অভিনেত্রীকে খুঁজছেন। আমি একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি সেটা নিয়ে আগামীকাল ইন্দ্রপুরি স্টুডিওতে ও জগন্নাথ গুহ-র সঙ্গে গিয়ে দেখা করুক।’ আমি সেইমতো পরের দিন চিঠিটা নিয়ে গিয়ে দেখা করলাম। সঙ্গে সঙ্গে উনি একটা ছোট অডিশন করলেন। করে বললেন কাল থেকে তোমার শ্যুটিং। এইভাবেই আমার পথ চলা শুরু।

● অধিকাংশ সময়ে অভিনয়ে আসার ক্ষেত্রে বাড়ির বড়রা আপত্তি করে থাকেন। আপনার ক্ষেত্রে সেরকম কোনও সমস্যা আসেনি?
●● আমার বাবা, মা কখনওই কোনও আপত্তি করেননি, কারণ ওঁরা বরাবরই চাইতেন যে আমি শিল্পী হিসাবে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হই, ফলত আমার বাবা, মায়ের তরফ থেকে কখনওই কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি। আমার মাধ্যমিকের দু’দিন আগে আমার বাবা চলে যান। আমাদের একান্নবর্তী পরিবার ছিল সেক্ষেত্রে কাকা-জেঠুদের একটা আপত্তির জায়গা ছিল কিন্তু অভিনয়ে আসার এক বছরের মধ্যেই আমার বিয়ে হয়ে যায় আর আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে কখনওই কোনও সমস্যার জায়গা তৈরি হয়নি।

● আপনার অভিনয় জীবনের তো বহুবছর হয়ে গেল, একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আপনাকে দর্শকরা এক ধরনের চরিত্রে দেখে এসেছে। অপরাজিতা আঢ্য মানেই সাবেকি সাজে সজ্জিত কোনও ঘরোয়া চরিত্র। সেখান থেকে বর্তমানে ‘ঘরে অ্যান্ড বাইরে’ বা ‘চিনি’তে একেবারে অন্যরকমের চরিত্রে আপনি। এই পরিবর্তনের সাপেক্ষে একজন অভিনেত্রী হিসাবে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন?
●● আলাদা করে কোনও প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজনই হয়নি কারণ একজন অভিনেত্রীর ধর্ম হয় জলের মতো বহমান, তাই তাঁর কাছ থেকে এটাই আশা করা যায় যে তিনি সমস্ত রকমের চরিত্রই সমান দক্ষতার সঙ্গে করতে পারেন। আর একজন পরিচালক যদি একজন অভিনেত্রীকে একটা চরিত্রের মধ্যে দেখতে পান, সেই অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে যদি তিনি ভরসা করতে পারেন তাহলে একজন অভিনেত্রীও তাঁর কাজটা সফলভাবে করার রাস্তা পেয়ে যায়।

● মানে আপনি বলতে চাইছেন যে পুরো বিষয়টাই নির্ভর করে ব্যক্তি পরিচালকের ওপর?
●●একদমই তাই। শেখর দাস আমাকে একজন সাঁওতাল মেয়ের চরিত্রে কাস্ট করেছিলেন। আমার মধ্যে উনি ওই চরিত্রটি দেখতে পেয়েছিলেন, আমাকে ভরসা করতে পেরেছিলেন বলেই আমাকে দিয়ে কাজটা করিয়েছিলেন। মৈনাক যেমন আমাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসে। মৈনাকের সঙ্গে আমি যেমন ‘জেনারশন আমি’র মতো কাজ করেছি তেমনই ‘চিনি’র মিষ্টিমায়ের মতো চরিত্রও করেছি। সুতরাং এটা অনেকটাই ব্যক্তি পরিচালকের ওপর নির্ভর করে যে তিনি কীভাবে দেখতে চাইছেন একজন অভিনেতাকে।

● আপনার অবসর কীভাবে কাটে? কী করতে সবথেকে বেশি পছন্দ করেন অবসরে?
●●বই পড়তে ভালোবাসি, সিনেমা দেখতে ভালোবাসি, রান্না করতে ভালোবাসি৷ নাচতে, গান গাইতে সংসার করতে সবকিছু করতেই ভালোবাসি…(হাসি)

● পছন্দের লেখক কে?
●● দেখো, আমরা তো বড় হয়েছি সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লেখা পড়ে, সেক্ষেত্রে বলতে পারো সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় প্রিয় লেখক। এছাড়াও যাঁর লেখা পড়ে সেই সময়ে যাকে বলে চিত্তবৈকল্য হওয়া এগজ্যাক্টলি তেমনটাই হয়েছিল তিনি হলেন বুদ্ধদেব গুহ। মনে হত যেন একটা অন্য জগতে চলে গিয়েছি।

● অবসর সময়ে ঘর সাজাতে ভালোবাসেন?
●● অসম্ভব ভালোবাসি ঘর সাজাতে। সাবেকি পদ্ধতিতে ঘর সাজাতে অসম্ভব ভালো লাগে কিন্তু সাবেকি পদ্ধতিতে ঘর সাজানোর জন্য যে সমস্ত সরঞ্জামের দরকার হয় সেই সমস্ত সরঞ্জাম অত্যন্ত ব্যয়বহুল৷ ফলত, সবসময় ইচ্ছে থাকলেও সাবেকি পদ্ধতিতে ঘর সাজানো সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

● রান্না করতে কেমন লাগে অবসর সময়ে?
●● ভীষণ ভালো লাগে৷ আমাকে তুমি যা-ই রান্না করতে দেবে আমি সমস্ত কিছু রান্না করে দেব। আমি নিজে চিকেন, মাটন খাই না কিন্তু তুমি আমাকে যা রান্না করতে বলবে আমি সব কিছু রান্না করে দেব। এনিথিং।

● ব্যক্তি অপরাজিতা আঢ্য কি খাদ্যরসিক?
●● ভীষণরকম। কিন্তু আমি খাই সুস্থ থাকার জন্য। কোনও একটা খাবার খেতে ইচ্ছা হলে সেটা খেতে পারলে ভালো লাগবে কিন্তু না খেতে পারলে মরে যাব এমনটা একেবারেই নয়।

● প্রিয় খাবার কী?
●● লুচি, সাদা আলুর তরকারি আর মিষ্টি। কোনও বিকল্প নেই। (হাসি)

● যদি বলা হয় যে আপনাকে দুদিন সময় দেওয়া হল। কোনও কাজ নেই, মোবাইল নেই যেখানে ইচ্ছা চলে যান। কোথায় যাবেন?
●● এটা তো লিখতে পারবে না তুমি (হাসি)। কোয়েম্বাটুরে একটা আশ্রম আছে যেখানে আমি এমন একটা এনার্জির সঙ্গে পরিচিত হই যে এনার্জিটা আমার কাছে অপার্থিব এক অনুভূতিস্বরূপ। তো আমি সময় পেলেই ওখানে চলে যেতে চাই।

● অভিনেত্রী হিসাবে নিজেকে কত দেবেন?
●● শূন্য দেব। আমি তো এখনও শুরু করতেই পারিনি। এখন শিখছি।

● আগামী প্রজন্মের যাঁরা অভিনয়ে আসতে চান তাঁদের উদ্দেশে কী বলবেন?
●● ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অভিনয়ে আসুক আর যা-ই করুক তাদের উদ্দেশে একটা কথাই বলব—ধৈর্য ধরো। যেটা করতে চাও সেটা যদি রিলিজিয়াসলি করতে পার তাহলে সাফল্য একদিন আসবেই।

Skip to content