রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


আজ ৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবস। আমার ছাত্র জীবনের একটি মূল্যবান ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। অন্য দিনগুলির মতো সাধারণ দিন নয় আজকের দিনটি। আমার মতো সকল ছাত্র-ছাত্রীদের পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক-শিক্ষিকা ও গুরুজনদের যথাযথ সম্মান শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন-এর এক বিশেষ দিন-সন্ধিক্ষণ হল ৫ সেপ্টেম্বর।
‘‘গুরু সাক্ষাৎ পরম ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ।।”

ব্রহ্মরূপী সমস্ত শিক্ষক গুরুজনদের শ্রীচরণে প্রণাম জানাতেই আজকের এই প্রতিবেদন। বিশ্বে এমন কেউ কি আছেন, যিনি তাঁর জীবনে মা এবং শিক্ষকের অবদান অস্বীকার করবেন। প্রত্যেক মানুষের জন্মদাত্রী হলেন মা কিন্তু জ্ঞানরূপী জীবন দান করেন তার শিক্ষক। তিনি বাঁচার লক্ষ্য তৈরি করে দেন। তাই তো বলা হয়ে থাকে—‘‘A great teacher is like a candle— it consumes itself to light the way for others”. এক জন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই।
৫ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষকদিবস’ ড. সর্বপল্লিরাধাকৃষ্ণণের জন্মজয়ন্তী। দেশের অগণিত শিক্ষকদের আদর্শগত মহান কর্মকাণ্ডের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁদের পেশাগত অবদানকে স্মরণে-বরণে পালন করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মহান শিক্ষক দিবস পালন করার রীতি আজ সর্বজনবিদিত। দিনটি বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালিত হয়। যেমন কিছু দেশে ৫ অক্টোবর, ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালন করা হয়।

বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের একজন হলেন সক্রেটিস। তিনি না থাকলে একজন প্লেটো তৈরি হতেন না। আবার প্লেটো না থাকলে একজন অ্যারিস্টটল তৈরি হতেন না। অ্যারিস্টটল না থাকলে হয়তো একজন আলেকজান্ডার তৈরি হতেন না। কেন না সক্রেটিসের ছাত্র ছিলেন প্লেটো, প্লেটোর অ্যারিস্টটল এবং অ্যারিস্টটলের ছাত্র ছিলেন আলেকজান্ডার। শিক্ষক যে শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রেই হতে হবে, তা নয়। তিনি থাকতে পারেন জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রেই। যাঁদের কাছ থেকে আমরা শিখি তাঁরাই আমাদের শিক্ষক। আমাদের তাঁরা সন্তানসম স্নেহ ও আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষিত করে পূর্ণাঙ্গ মানুষ গড়ে তোলেন বলেই “মানুষ গড়ার কারিগর” হিসেবে স্বীকৃত। মা-বাবা যেমন শিশুকে জন্মদান ও লালন করেন, তেমনি শিক্ষক তাঁর মেধা, শ্রম ও সাধনা দিয়ে তাকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৩: রবীন্দ্রনাথের মাস্টারমশায়

এখনও ফাঁকা পড়ে আসন, ফের ভর্তির আবেদন নিচ্ছে কিছু কলেজ

ইংলিশ টিংলিশ : APOSTROPHE-এর সঠিক ব্যবহার, Happy Teacher’s Day, নাকি Happy Teachers’ Day?

নিঃসন্দেহে শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। শিক্ষকতা অন্য সব পেশার জননী। সেটি শিক্ষার যে কোনও স্তরেই হোক না কেন। হতে পারে সেটি কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কিংবা কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে। দল-মত, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে একজন শিক্ষক সমাজের সকল মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র। সমৃদ্ধ জাতি গড়ে তুলতে একজন শিক্ষক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষকদের হাতেই গড়ে ওঠে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, অফিসার প্রমুখ।

বর্তমান শিক্ষাক্ষেত্রে পঠনপাঠনের সুস্থ পরিবেশ তথা গুরু-শিষ্যের এই সুসম্পর্কে কিছুটা ফাটল ও অবক্ষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। ‘ছাত্রানং অধ্যয়ন্দং তপঃ’ — এই প্রবাদটি আজ যেন অতীত। আবার বর্তমানে শিক্ষক ও ছাত্র উভয়েরই ভবিষ্যৎ নিরাপত্তাহীনতা, অসন্তোষ, সামাজিক মর্যাদা ও মূল্যবোধের মাত্রায় যেন একটা ভাঙন ধরিয়ে ফেলেছে, যা আজকের অন্যতম একটা বড় সমস্যা। তবু শিক্ষকরা তাঁদের দায়িত্ব পালনে বিচ্যুত হননি কখনও। তাঁরা যথেষ্ট সচেতন ও কর্তব্যে বদ্ধপরিকর। শিক্ষকদের নিকট সমাজের প্রত্যাশাও অনেক। কিন্তু শুধু প্রত্যাশা থাকলেই চলবে না, শিক্ষককে যথাযোগ্য মর্যাদাও দিতে হবে। আমাদের অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেকের উচিত শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ আস্থা, শ্রদ্ধা, আন্তরিক ভক্তি এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা। ঘটা করে শুধু অনুষ্ঠান করলেই হবে না অন্তর থেকে সমস্ত শিক্ষক গুরুজনদের শ্রদ্ধা ও ভক্তি করতে হবে। তবেই ‘শিক্ষক দিবস’ পালন সার্থক হয়ে উঠবে।

Skip to content