মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


”আমাদের তিনটে বস্তুর প্রয়োজন: অনুভব করিবার হৃদয়,
ধারণা করিবার মস্তিষ্ক এবং কাজ করিবার হাত।”—স্বামী বিবেকানন্দ
স্বামীজি চেয়েছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর তৈরি করতে। রামকৃষ্ণ মিশন হল স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অপর নাম। স্বামীজির নিজ হস্তে প্রতিষ্ঠিত সেই তরুটি আজ তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে বিশাল এক মহীরূহে পরিণত হয়েছে। রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বালকাশ্রম তেমনি এক শাখা।
প্রতি বছরের মতো এ বারও রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বালকাশ্রম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্বামী বিবেকানন্দের ১৬১তম জন্মদিবস পালন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বালকাশ্রমের ছাত্ররা ছাড়াও উপস্থিত ছিল রহড়া ভবনাথ ইনস্টিটিউশন ফর গার্লস, কল্যাণনগর বিদ্যাপীঠ ফর গার্লস, বন্দিপুর আইডিয়াল অ্যাকাডেমি ফর গার্লস, সূর্যসেন হাই স্কুল প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আশ্রম সম্পাদক স্বামী জয়ানন্দজি মহারাজ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও দেশ পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক হর্ষ দত্ত। ছিলেন চিকিৎসক তথা রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনী ডাঃ কল্লোলকুমার দে। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে। এর পরে যথাক্রমে জাতীয় সঙ্গীত ও উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করা হয়।
আরও পড়ুন:

জীবনের প্রথম বড় ম্যাচের আগে অনুশীলনে ফাঁকি নয়, পরীক্ষায় লক্ষ্যভেদ করলে আগামীর পথ মসৃণ হবে

ইংলিশ টিংলিশ: মাধ্যমিকে ইংরেজিতে ভালো নম্বর পাওয়ার উপায় কি? দেখে নাও আজকের বিষয়: Seen Comprehension

আশ্রম সম্পাদক মহারাজ, বর্তমান যুগে স্বামীজির আদর্শের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। তিনি স্বামীজির তেজস্বিতা প্রসঙ্গে বলেন —“সূর্য উঠলে কোনও ঘোষণাকারীর প্রয়োজন হয় না।” তাঁর কথায়, আত্মজাগানিয়া বিবেকানন্দের একটি বলিষ্ঠ উক্তি একজন মানুষের সমগ্র জীবনকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তিনি এক নোবেলজয়ীর জীবনের অন্ধকারময় এবং অবসাদগ্রস্ত অধ্যায় থেকে মুক্তি পেতে স্বামী বিবেকানন্দ রচিত এক পুস্তকের অবদানের কথাও তুলে ধরেন। মহারাজ এও বলেন, “ভুবনেশ্বরী দেবী সিংহী ছিলেন বলেই বিবেকানন্দের ন্যায় পুরুষ সিংহের জন্ম দিতে পেরেছিলেন।”
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৮: খোকা নয়, খুকি নয়

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩১: অন্ধমুনির অভিশাপ কি ফলল তবে?

জয়ানন্দজি মহারাজের বক্তব্যের পরে ভবনাথ ইনস্টিটিউশন ফর গার্লসে ছাত্রীরা সমবেতভাবে পরিবেশন করে— “শরণাগত তুমি স্বাগত এসো এসো হে মহামানব…।” প্রধান অতিথি হর্ষ দত্ত আমাদের সামনে আলোর দিশারী স্বামীজির জীবনের বেশ কিছু অজানা দিক তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, স্বামীজি একবার বলেছিলেন— “তোমাদের এক নতুন দেবতার সন্ধান দিচ্ছি।” সেই দেবতা হল ‘মানুষ’। স্বামীজির ভাষায়, “দরিদ্র, মূর্খ, অজ্ঞানী, কাতর ইহারাই তোমার দেবতা হউক।” বিবেকানন্দের কথায়, “Dreams, Dreams, Dreams, don’t forget dream is the cause of your life.” অর্থাৎ, স্বপ্ন দেখাই হল জীবনের হেতু। প্রধান অতিথির বক্তব্যের পরে কল্যাণনগর বিদ্যাপীঠ ফর গার্লসের ছাত্রীরা সম্মিলিতভাবে “বীর সেনাপতি বিবেকানন্দ” সংগীতটি পরিবেশন করে
মঞ্চস্থ হয় বন্দিপুর আইডিয়াল একাডেমির প্রয়াস আবৃত্তি “সখার প্রতি”। এরপর ডাঃ কল্লোলকুমার দে বক্তব্য রাখেন। তিনি বললেন—স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন একজন বাস্তববাদী সন্ন্যাসী। স্বামীজি মনে করতেন, “৩৩ কোটি দেবদেবীতে বিশ্বাস করে লাভ নেই, যদি তার আত্মবিশ্বাস না থাকে।”

বালকাশ্রম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বামী মুরলীধরানন্দজি মহারাজ বলেন, অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টদের অমূল্য বক্তব্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে। স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের একটাই ধর্ম শিখিয়েছিলেন, তা হল মানব ধর্ম। স্বামীজির অমর বাণী বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করতে পারলেই সমগ্র মানবজাতির উন্নতি সম্ভব।
আরও পড়ুন:

বিচিত্রের বৈচিত্র্য, নাম রেখেছি বনলতা…/১

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২০: মেলা থেকে ফিরে ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’

যে ভাবাদর্শকে পাথেয় করে অনুষ্ঠিত হল যুগাচার্য স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিবস সেই আদর্শ যদি আমাদের জীবনে নিত্যসমুজ্জ্বল থাকে, যদি কখনও আমাদের অন্তরে সঞ্চিত অসীম আত্মশক্তির উন্মেষ ঘটাতে পারে, তবেই এই অনুষ্ঠানের সার্থকতা।

নম শ্রীযতিরাজায় বিবেকানন্দসূরয়ে।
স্বচ্চিৎ সুখস্বরুপায় স্বামিনে তাপহারিণে।।
* সাগ্নিক মণ্ডল, অরিণ সাহা, দেবার্ঘ্য দাস, রূপম দাস, ঈশান সেন ও নীলাদ্রী পাল— রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বালকাশ্রম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (Rahara Ramakrishna Mission Boys’ Home High School) নবম শ্রেণির ছাত্র।

Skip to content