সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


শ্বেতা গঙ্গোপাধ্যায়

‘মুহূর্তেরা এসে চলে যায়, ছড়িয়ে নিজের মায়াজাল
কিন্তু কিছু ভাবনা রয়ে যায় চিরকাল।’


আমাদের জীবন হাসিকান্না সুখদুঃখে গাঁথা রত্নহার। এই বৈচিত্রময় ঘটনা জীবন রঙ্গমঞ্চে প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে। কিছু বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে গেলেও কিছু এমন ঘটনা থাকে যা চিরকালের জন্য হৃদয়ের অন্তস্থলে সুপ্ত হয়ে থাকে। আজ সেরকম এক আনন্দঘন মুহূর্তের স্মৃতিকেই রোমন্থন করতে বসেছি।

আজ আমি স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর স্তরে উঠেছি। আনন্দের স্মৃতিচিত্র তুলে ধরতে উচ্চমাধ্যমিক রেজাল্টের সময়কার ঘটনা স্মরণে এসে যায়। সকলের মতো উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্টের দিন ছিল আমার কাছে ভীষণ মূল্যবান উত্তেজনাপূর্ণ। আমি কাউকে কিছু না বললেও আশা করেছিলাম দশের মধ্যে নাম শুনতে পাব কিন্তু দশজনের মধ্যে নাম শুনতে না পাওয়ায় মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। স্কুলে কলাবিভাগে প্রথম এবং রাজ্যে কুড়িজনের মধ্যে নাম থাকায় বাড়ির সকলে অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন কিন্তু আমি তাদের সেই আনন্দের ভাগীদার তো হতেই পারলাম না, কষ্টে কেঁদে ফেললাম। মা-বাবা অনেক ভাবে বোঝালেন, এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল ; আমি পড়াশোনার জন্য কলকাতার হস্টেলে চলে গেলাম। একদিন রাত্রে হস্টেলের ঘরে একাকী কাজ করছি এমন সময়ে এক অচেনা ভদ্রলোকের ফোনে আমি আনন্দে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়লাম। তিনি আমায় বললেন, আমি হুগলি জেলার চুঁচুড়া শহরের সমস্ত স্কুলের কলাবিভাগের মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম স্থান অধিকার করায় আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তাঁরা আমার বাড়ির ঠিকানায় নিমন্ত্রণপত্র পাঠাবেন। উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্টের দিনের সেই বেদনার মুহূর্ত ভদ্রলোকের কথায় যেন আনন্দের স্রোতে ভেসে গেল। একাকী সেই মুহূর্তে আনন্দে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। ‘PATHFINDER’ থেকে চুঁচুড়া চন্দননগরের ব্রাঞ্চে আমি প্রথম হিসাবে পুরস্কার পেলেও এই সংবর্ধনার আনন্দ যেন আমার জীবনে এক অন্যরূপে এসেছিল তাই কিছুক্ষণ কী বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না।

জন্মাষ্টমী পুজোর দিন অনেক রাজনৈতিক গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিদ্বজ্জন এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের সামনে যখন আমাকে কলাবিভাগের প্রথম স্থানের জন্য পুরস্কার প্রদাণ করলেন তখন আমার মন আনন্দে আপ্লুত হয়ে উঠল। সেদিন আমাকে কিছু বলতে বলা হলে অনেক কথা বলার ইচ্ছা থাকলেও আনন্দাশ্রু আমার বাকরুদ্ধ করেছিল। তবে সেদিন অঙ্গীকার করেছিলাম যে এই আলোকশিখায় পরবর্তী পথ যেন উজ্জ্বল হয়ে পরবর্তী বর্তিকাগুলোকে জ্বালিয়ে দিয়ে যায়।
‘Those special memories will always bring us smile/ if only I could have them back just a little while.’

লেখিকা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত বিভাগে পাঠরতা

 


Skip to content