বিয়ের এই ভিডিয়ো ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত।
সেদিনের ক্লাসরুমে মালাবদল এবং সিঁদুরদানের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ায় যথেষ্ট সম্মানহানি হচ্ছে। ওই ভিডিয়ো না ছড়ানোর আবেদন জানিয়েছিলেন সেই অধ্যাপিকা। তিনি নদিয়ার হরিণঘাটার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (ম্যাকাউট)-র মনস্তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপিকা। এ বার সেই অধ্যাপিকা ম্যাকাউটের রেজিস্ট্রারের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। ওই ইস্তফাপত্রে অধ্যাপিকা কলেজ ছাড়ার কথা জানিয়েছেন।
১ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ গতকাল শনিবার মনস্তত্ত্ববিদ্যার সেই অধ্যাপিকা ম্যাকাউটের রেজিস্ট্রার পার্থপ্রতিম লাহিড়ির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ও অধ্যাপিকা জানান, তিনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। যে ভাবে সেদিনের বিয়ের ভিডিয়ো ছড়ানো হচ্ছে, এতে আর কাজ করা সম্ভব নয়! ম্যাকাউটের রেজিস্ট্রারও জানিয়েছেন তিনি অধ্যাপিকার ইস্তফাপত্র পেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রারের জানিয়েছেন, ‘‘অধ্যাপিকার ওই ইস্তফাপত্র উপাচার্যের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার একমাত্র ম্যাকাউটের উপাচার্যেরই আছে।’’
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৪: শিকারী ও ‘শিকার’
গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১৭: প্রবল অজেয় বাণী তব
গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ওই অধ্যাপিকা এবং এক ছাত্রের একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিয়োটিতে দেখা যায়, ওই মনস্তত্ত্ব বিভাগের সেই অধ্যাপিকার পরনে ছিল লাল বেনারসি। গলায় রজনীগন্ধার মালা। ওই অধ্যাপিকার সিঁথিতে সিঁদুর রাঙিয়ে দিচ্ছেন এক কলেজ ছাত্রকে। এরকম একটি ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয়। ক্লাসরুমে এরকম একটি ঘটনা কীভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এড় মধ্যে ম্যাকাউটের হরিণঘাটা ক্যাম্পাসের ‘অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি’ (ফলিত মনস্তত্ত্ববিদ্যা) বিভাগের প্রধান ওই অধ্যাপিকাকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১০: মানুষের পাশে, মানুষের কাছে
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০১: সরষের মধ্যে ভূত
সেদিন ক্লাসরুমে কী ঘটেছিল? অধ্যাপিকা কেন এমন করলেন? বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য ম্যাকাউট কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়েন। সেই কমিটি রিপোর্টও জমা দেয়। পাঁচ সদস্যের কমিটির ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্লাসরুমে অধ্যাপিকা যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা পাঠক্রমের অংশ ছিল না। যদিও ওই অধ্যাপিকা দাবি করেছিলেন, ‘ফ্রেশার্স’ অনুষ্ঠানের জন্য ছাত্রছাত্রীরা একটি নাটক পরিবেশনা করা পরিকল্পনা করেছিলেন। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই বিয়ের দৃশ্যটি ওই নাটকেরই অংশ। আর ওই ভিডিয়ো করে ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে চক্রান্ত আছে বলে অধ্যাপিকা দাবি করেন। অধ্যাপিকার অভিযোগ ছিল, এক সহকর্মী সম্মানহানি করতেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে দিয়েছেন। এর পরে সেই অধ্যাপিকা সমাজমাধ্যমে সবাইকে অনুরোধ করেন, ‘‘অসভ্যতাকে প্রশ্রয় দেবেন না। এ সব বন্ধ করুন। আমার পাশে দাঁড়ান। ভিডিয়োটি আপনারা রিপোর্ট করুন। আর শেয়ার করবেন না।’’ যদিও তাঁর আবেদনে কোনও কাজ হয়নি। সেই কারণেই সেই অধ্যাপিকা এ বার কলেজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।