নাটকের একটি দৃশ্যে।
পর্ব-৪
নাটুকে জীবন কথাটার মধ্যে যেমন নাটকীয়তা আছে, তেমনি একটু হালকা তাচ্ছিল্যের ভাবও আছে। আসলে নাটক মানেই তো যা সত্যি নয় তাই অর্থাৎ মিথ্যা। অথচ এই মিথ্যার সঙ্গেই আমার সখ্য হয়েছিল খুব ছোট্ট বয়সেই। যখন ক্লাস ওয়ান-টু-তে পড়ি অর্থাৎ পাঁচ-ছ’বছর বয়স, তখন গরম, শীত বা পুজোর সময় যখন আমার পিসতুতো-মাসতুতো ভাই-বোনেরা আমাদের বাড়িতে আসত, তখন সবাই মিলে টুকটাক নাটক করতাম। আমাদের বাড়ির দোতলা উঠছে তখন। ছাদে বেঞ্চ কিংবা চৌকি সাজিয়ে মা-কাকিমার শাড়ি ঝুলিয়ে ‘অবাক জলপান’ নাটক করেছিলাম, মনে আছে। দর্শক বাড়ির লোকেরাই। ছোটবেলায় এমনটা অবশ্য অনেকেই করে।
আমার নাটুকে জীবন ঠিকঠাক শুরু হয়েছিল, যখন আমার দশ-বারো বছর বয়স। পাড়ায় ভ্রাতৃসংঘ নামে একটি ক্লাব ছিল। সেই ক্লাবের বার্ষিক অনুষ্ঠানে ছোট নাটক হবে, ‘অমল ও দইওয়ালা’। অমলের ভূমিকায় আমি। আমাদের বাড়ির সামনে ছিল একফালি ফাঁকা জায়গা, সেখানে পাড়ার এর-তার বাড়ি থেকে চেয়ে আনা গোটা চারেক চৌকি সাজিয়ে স্টেজ হয়েছে। মনে আছে, পাড়ার নাটক-পাগল বলাইদা ছিল আমাদের ডিরেক্টর। রিহার্সাল করানোর সময় বলেছিল, ভালো অভিনয় করতে পারলে, পেট ভরে জিলিপি খাওয়াবে। ডাকঘরে অমলের সেই নিঃসঙ্গ হয়ে একটি ঘরে বন্দি থাকা, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা, একে-তাকে ডেকে কথা বলা— নিশ্চয়ই মনে আছে সবার। পাড়ার একজনের বাড়ি ভাঙা হচ্ছিল। সেই বাড়ি থেকে পাল্লা-সহ ভারী একটি জানালা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেটিই তোলা হল স্টেজে। তার এক প্রান্ত বলাইদা উইংসের পাশ থেকে এমনভাবে ধরে রেখেছিলেন, যাতে সেটি পড়ে না যায়, আবার বলাইদাকেও দেখাও না যায়। শুরু হল নাটক। বলাইদা প্রম্পট করছে, আবার এক হাত দিয়ে জানালার একটা ধার ধরে আছে। আমি জানালার শিক ধরে বলছি, দইওয়ালা ও দইওয়ালা। হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে বলাইদা হাত ছেড়ে দিতেই জানালাটা দড়াম করে পরল স্টেজে। আমি ভাগ্যিস ছিটকে সরে গিয়েছিলাম, তা না হলে ওটা আমার উপরেই পড়ত! বন্ধ হয়ে গেল নাটক। হুলুস্থুল কাণ্ড। সবাই বলাইদাকে এই মারে তো সেই মারে। যাই হোক, নাটক ভন্ডুল হলেও আমরা কিন্তু পেট ভরে জিলিপি খেতে পেরেছিলাম। এই ঘটনার পর থেকে বলাইদা আর কোনওদিন নাটকমুখো হয়নি। একটু বড় হওয়ার পর পাড়ার ক্লাব থেকে প্রতিবছরই আমরা নাটক করতাম। লাট্টু সাউ নামে নাট্যপ্রেমী এক অবাঙালি ভদ্রলোক আমাদের নাটকের ডিরেকশন দিতেন। আমার প্রথম নাট্য শিক্ষক তিনিই।
এরপর স্কুলজীবনে দু’একবার নাটক করলেও, সেটা উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু নয়। সিরিয়াসলি নাটকের প্রতি ভালোবাসাটা তৈরি হল, আরজি করে ডাক্তারিতে ঢোকার পর, ১৯৭৪ সালে। তখন ডাক্তারিতে এক বছর প্রি-মেডিকেল পড়তে হত, এখন যেটা উঠে গেছে। কলেজের রি-ইউনিয়নে আমরা প্রি-মেডিকেলের ছাত্ররা কলেজের স্থায়ী মঞ্চে প্রথম নাটক করলাম, ‘বাঘনখ’। সিনিয়র দাদারা এবং মাস্টারমশাইরা প্রশংসা করাতে আমরা কয়েকজন মিলে আরজি করে সিরিয়াস নাট্যচর্চা শুরু করে দিলাম। আমাদের একটি নাটকের দল তৈরি হল। পাণ্ডা ছিল দেবাশিস দত্ত। ও একটি গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে তখন যুক্ত ছিল। নাম ছিল প্রয়াস, যার কর্ণধার ছিলেন বিদ্যুৎ নাগ। ওঁর লেখা দুটি নাটক ওঁরই নির্দেশনায় আমরা বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিনয় করলাম, এমনকী প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেওয়া শুরু করলাম, পুরস্কৃতও হলাম। নাটক দুটির নাম ছিল হ্যামলেট ও হিটলার এবং রাজা নিরুদ্দেশ।
পরবর্তীকালে আমার নিজের দল থিয়েটার কোরামের হয়েও আমি এ দুটি অভিনয় করেছি। এই সময় অ্যাকাডেমিতে নাটক দেখা শুরু করেছি। হঠাৎ দেখে ফেললাম শম্ভু মিত্রর অভিনয়, বহুরূপীর দশচক্র নাটকে। কিছুদিনের মধ্যেই দেখলাম চেতনার জগন্নাথ এবং হাতিবাগানের রঙ্গনাতে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী নাটক মঞ্জরী আমের মঞ্জরী, তিন পয়সার পালা, শের আফগান ইত্যাদি। এরপর উৎপল দত্তের ব্যারিকেড, টিনের তলোয়ার। শরীর মন জুড়ে একটা অদ্ভুত তোলপাড় শুরু হল। আধুনিক নাটকের মেধা-মনন-উপস্থাপন আমাকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করতে লাগল। বুঝলাম, নাটকটা আমাকে সিরিয়াসলিই করতে হবে এবং সে জন্য একটি গ্রুপ থিয়েটারের যোগ দেওয়া খুব প্রয়োজন। কলকাতায় তখন যেমন গ্রুপ থিয়েটারের খুব রমরমা, তেমনি হাতিবাগান পাড়ায় বাণিজ্যিক থিয়েটারেরও স্বর্ণযুগ। চেষ্টা করলে কলকাতার কোনও নামীদামি গ্রুপ থিয়েটারে যোগ দিতেই পারতাম, কিন্তু গ্রুপ থিয়েটার মানেই তো ভীষণ কড়াকড়ি, ডাক্তারি পড়াশোনা চালিয়ে যেটা সব সময় মেনে চলা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাছাড়া আমি বাড়ি থেকে যাতায়াত করে ডাক্তারি পড়তাম। চেষ্টা করলাম, আমার এলাকাতেই কোনও নাটকের দলে যোগ দেওয়া যায় কি না! আমার পাশের পাড়ার কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের ট্যালেন্ট নাট্যদলে যোগ দিলাম। রক্তকরবী, রাজা ক্যানিউট-সহ কয়েকটি নাটক সেখান থেকে করলাম। এরপর ছোটবেলার বন্ধুদের নিয়ে নিজেই থিয়েটার কোরাম বলে একটি নাট্যদল তৈরি করে নাটক করা শুরু করলাম। কিন্তু মনে হচ্ছিল, নাটকের ব্যাকরণ তো আমি কিছুই জানি না, অনেক কিছুই যে শেখা দরকার! ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯, পাঁচ বছর এই ভাবে কাটল। ১৯৮০-তে, তখন আমার ডাক্তারিতে ফাইনাল ইয়ার, যোগ দিলাম পূর্ণেন্দু হালদারের নর্থ ক্যালকাটা থিয়েটার অ্যাকাডেমিতে। এই সময় আমি প্রচুর বাণিজ্যিক থিয়েটারও দেখেছি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নামজীবন দেখেছিলাম কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চে। এছাড়া বিশ্বরূপা, রংমহল, সারকারিনা, বিজন থিয়েটার, রঙ্গনায় একের পর এক নাটক দেখে গেছি। এই হলগুলোর কোনওটারই এখন আর কোনও অস্তিত্ব নেই, এরা সবাই এখন ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। এই হলগুলোতে বাণিজ্যিক থিয়েটারের স্বর্ণযুগকে আমি দর্শক হিসেবে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছি। এরাই গড়ে তুলেছে আমার নাটকের মনোভূমি।
পূর্ণেন্দুদার সঙ্গে কাজ করতে করতে আমি অভিনয়ের পাশাপাশি লাইট, সেট, মিউজিক, মেকআপ এবং সর্বোপরি দল চালানোর ব্যাপারে নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে থাকি। এবং তখনই বুঝে যাই অন্য কোথাও রোজগারের ব্যবস্থা না থাকলে শুধু গ্রুপ থিয়েটার করে পেট চালানো যায় না। এই থিয়েটার টাকা দেয় না, উলটে এখানে টাকা ঢালতে হয়। দর্শকে ধরে বেঁধে আনতে হয় হলে। তখন গ্রুপ থিয়েটারের এত কমার্শিয়ালাইজেশন হয়নি, অনুদানেরও কোনও ব্যবস্থা ছিল না। শহর-মফস্বলে এত নাট্য উৎসবও হত না। তবে খুব একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা হত, এখন যা হয় না। আমাদের বেলঘরিয়ায় উদয়পুরে সংগঠনী নামে একটি স্থায়ী মঞ্চ ছিল, এখনও আছে, যেখানে নিয়মিত নাট্য প্রতিযোগিতা হত। কলকাতার বিভিন্ন দলও অংশ নিত। সেই সময় কলকাতার হাতেগোনা কয়েকটি নাট্যদল ছাড়া বাকি দলগুলোর অবস্থা ছিল করুণ।
শুধু এই নাটক প্রতিযোগিতাগুলোই ছোট গ্রুপ থিয়েটারগুলোকে তখন বাঁচিয়ে রেখেছিল। টাকা না আসুক, অন্তত অনেক দর্শকের সামনে নাটকটা করা যেত। শ্যামবাজারের বিখ্যাত মিষ্টির দোকান বাসুদেব সুইটস, বাসুদেব মঞ্চ নামে একটি নতুন হল চালু করল শ্যামবাজারেই। আমরা প্রতি বুধবার সেখানে পূর্ণেন্দু হালদারের রচনা ও নির্দেশনায় চে গুয়েভারা নাটকটি অভিনয় করতে শুরু করলাম। এই নাটকের জন্য লিখিত শুভেচ্ছা আনতে আমি টালিগঞ্জে উৎপল দত্তের বাড়িতে সরাসরি চলে গিয়েছিলাম। সে গল্প পরে করব। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর মতো লেজেন্ডকে এই নাটক দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলাম আমি। তিনি এসেওছিলেন, তবে শরীর ভালো না থাকাতে প্রথমার্ধর বেশি দেখতে পারেননি। এরপর এক অদ্ভুত আকর্ষণে ওঁর বাড়িতে আমি অনেকবারই গিয়েছি। বহু গল্পও শুনেছি ওঁর থেকে। সেসব নিয়ে আমার উদ্যোগে আমারই সম্পাদনায় বিতর্ক পত্রিকায় একটি বড় লেখাও লিখেছিলাম সেই সময়। জীবনে ওই একবারই আমি মুদ্রিত পত্রিকা বার করেছিলাম, যার কোনও কপিই দুর্ভাগ্যক্রমে আমার কাছে আজ আর নেই। পাঁচ সপ্তাহ অনেক টেনেটুনে চালানোর পর কালের নিয়মে বন্ধ হয়ে গেল আমাদের চে গুয়েভারা নাটকটি, বছর পাঁচেক বাদে বাসুদেব মঞ্চও বন্ধ হয়ে গেল। আমার তখন ফাইনাল ইয়ার, ডাক্তারি পড়াশোনার খুব চাপ বাড়তে লাগল। নাট্যচর্চায়ও সাময়িক ইতি ঘটল। পূর্ণেন্দুদাও চাকরিসূত্রে কলকাতার বাইরে চলে যাওয়াতে নর্থ ক্যালকাটা থিয়েটার অ্যাকাডেমি ধীরে ধীরে উঠেই গেল। কিন্তু বছর দুয়েকের এই নাট্যচর্চার অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়ে দিল অনেক কিছুই। বিশেষ করে নাটক পরিচালনা এবং সংগঠন চালানো।
এরপর প্রায় পাঁচ বছর ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে কাজ করাকালীন নাটকটা সেভাবে করার সুযোগ পাইনি, তবে একেবারেই যে করিনি তা নয়। এ সময় শ্রুতিনাটক লেখা এবং পরিবেশন আমি শুরু করি সেই সময়ের বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব অমল রায়ের সংস্পর্শে এসে। ঠাকুরপুকুর পর্ব শেষ হওয়ার পর বাড়িতে যখন প্র্যাকটিস শুরু করি তখন আবার নতুন করে নাট্যচর্চা শুরু হয় আমার এক দাদা মানবেন্দ্র গোস্বামীর নাট্যদল অবেক্ষণ-এ। তখন এখানে সেখানে দৌড়োদৌড়ি করে প্র্যাকটিস জমানোর চেষ্টা করছি। বিয়ে করেছি, সংসার হয়েছে, অর্থ উপার্জন তো করতেই হবে। এই অবস্থায় নিজের পক্ষে দল চালানো মুশকিলই ছিল, তাছাড়া শেখার তখনও যে অনেক বাকি ছিল। আমার দলের সাত-আটজনকে নিয়ে আমি যোগ দিলাম অবেক্ষণে। প্রথম নাটক ছিল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মজার গল্প নিয়ে চিররঞ্জন দাসের নাটক কামার কাহিনী। আমি একটি মজার শয়তানের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম, যে ছন্দে ছন্দে কথা বলত। এই নাটকটি আমাকে নাটকের নানা আঙ্গিক শেখাতে সাহায্য করেছিল। মানবেন্দ্রদাও খুব যত্ন করে এটি নির্মাণ করেছিলেন। কলকাতার নানা মঞ্চ ছাড়াও আমরা উত্তরবঙ্গ, বাংলাদেশ-সহ নানা জায়গায় অবেক্ষণের বেশ কয়েকটি নাটক অভিনয় করেছি। বছর বারো আমি ছিলাম এই দলে। শিখেছিও অনেক কিছু মানবেন্দ্রদার কাছে।
এই সময় আমাদের ডাক্তারদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের কামারহাটি শাখার বার্ষিক কনফারেন্সের নাটকের দায়িত্ব এসে পড়ে আমার উপর। এখানে আমি টানা বাইশ বছর নাটক পরিচালনা করেছি, পাশাপাশি নিজে নাটক লিখে অভিনয়ও করিয়েছি। এই নাটকগুলো বিভিন্ন সময়ে দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এই রাজ্যের বিভিন্ন নাট্যদলগুলো এগুলো অভিনয় করেছেন, এখনও করেন। এখানে নাটক পরিচালনা করতে গিয়ে আমি শুধু অভিনয় নয়, নাটকের সেট মিউজিক লাইট—এগুলো সম্বন্ধেও ধীরে ধীরে নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে থাকি। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল।
অবশেষে ২০১২-তে স্বাধীনভাবে নিজের দল তৈরি করলাম আমি, বেলঘরিয়া থিয়েটার একাডেমি। এটা না করে আমার উপায় ছিল না। আমার পেশাগত ব্যস্ততার পাশাপাশি সিরিয়াল-সিনেমায় কাজের চাপ বাড়ছিল। তাছাড়া লেখালেখি তো ছিল। এগুলো সামলে অন্য নাটকের দলে সময়মতো মহড়ায় হাজিরা দেওয়া এবং অন্যান্য কাজকর্ম করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। একবার মনে হয়েছিল অভিনয়জগৎ থেকে সরেই আসি। কিন্তু আমার অন্যতম অভিনয় গুরু স্বনামধন্য অভিনেতা পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে নিজেই দল তৈরি করে ফেললাম। নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এই বছর আমার দল বেলঘরিয়া থিয়েটার একাডেমি দশে পা দিল। দশ বছরে দশটি নাটক প্রযোজনা করেছি আমরা, যার মধ্যে সাতটি নাটক আমারই লেখা। বারো জন নিয়মিত এবং জনা পাঁচেক অনিয়মিত অভিনেতা নিয়ে ভালোই আছি। আমি যেমন ওদের নাটক শেখাই, তেমনি ওদের কাছ থেকে শিখিও।
অর্ধ শতাব্দীর উপর আমার নাট্যজীবন। বিভিন্ন নাটকের শতাধিক অভিনয় করেছি, পরিচালনা করছি অন্তত তিরিশটি নাটক। ডাক্তারের মতো ব্যস্ত পেশা থেকে সময় বাঁচিয়ে এত দীর্ঘ দিন কেউ তার নাকে জীবন চালু রাখতে পেরেছেন কি না জানি না, তবে আমি পেরেছি। বিনয়ের সঙ্গে শুধু এটুকুই বলতে পারি, নাটক আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন।
ছবি : লেখক
আমার নাটুকে জীবন ঠিকঠাক শুরু হয়েছিল, যখন আমার দশ-বারো বছর বয়স। পাড়ায় ভ্রাতৃসংঘ নামে একটি ক্লাব ছিল। সেই ক্লাবের বার্ষিক অনুষ্ঠানে ছোট নাটক হবে, ‘অমল ও দইওয়ালা’। অমলের ভূমিকায় আমি। আমাদের বাড়ির সামনে ছিল একফালি ফাঁকা জায়গা, সেখানে পাড়ার এর-তার বাড়ি থেকে চেয়ে আনা গোটা চারেক চৌকি সাজিয়ে স্টেজ হয়েছে। মনে আছে, পাড়ার নাটক-পাগল বলাইদা ছিল আমাদের ডিরেক্টর। রিহার্সাল করানোর সময় বলেছিল, ভালো অভিনয় করতে পারলে, পেট ভরে জিলিপি খাওয়াবে। ডাকঘরে অমলের সেই নিঃসঙ্গ হয়ে একটি ঘরে বন্দি থাকা, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা, একে-তাকে ডেকে কথা বলা— নিশ্চয়ই মনে আছে সবার। পাড়ার একজনের বাড়ি ভাঙা হচ্ছিল। সেই বাড়ি থেকে পাল্লা-সহ ভারী একটি জানালা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেটিই তোলা হল স্টেজে। তার এক প্রান্ত বলাইদা উইংসের পাশ থেকে এমনভাবে ধরে রেখেছিলেন, যাতে সেটি পড়ে না যায়, আবার বলাইদাকেও দেখাও না যায়। শুরু হল নাটক। বলাইদা প্রম্পট করছে, আবার এক হাত দিয়ে জানালার একটা ধার ধরে আছে। আমি জানালার শিক ধরে বলছি, দইওয়ালা ও দইওয়ালা। হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে বলাইদা হাত ছেড়ে দিতেই জানালাটা দড়াম করে পরল স্টেজে। আমি ভাগ্যিস ছিটকে সরে গিয়েছিলাম, তা না হলে ওটা আমার উপরেই পড়ত! বন্ধ হয়ে গেল নাটক। হুলুস্থুল কাণ্ড। সবাই বলাইদাকে এই মারে তো সেই মারে। যাই হোক, নাটক ভন্ডুল হলেও আমরা কিন্তু পেট ভরে জিলিপি খেতে পেরেছিলাম। এই ঘটনার পর থেকে বলাইদা আর কোনওদিন নাটকমুখো হয়নি। একটু বড় হওয়ার পর পাড়ার ক্লাব থেকে প্রতিবছরই আমরা নাটক করতাম। লাট্টু সাউ নামে নাট্যপ্রেমী এক অবাঙালি ভদ্রলোক আমাদের নাটকের ডিরেকশন দিতেন। আমার প্রথম নাট্য শিক্ষক তিনিই।
এরপর স্কুলজীবনে দু’একবার নাটক করলেও, সেটা উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু নয়। সিরিয়াসলি নাটকের প্রতি ভালোবাসাটা তৈরি হল, আরজি করে ডাক্তারিতে ঢোকার পর, ১৯৭৪ সালে। তখন ডাক্তারিতে এক বছর প্রি-মেডিকেল পড়তে হত, এখন যেটা উঠে গেছে। কলেজের রি-ইউনিয়নে আমরা প্রি-মেডিকেলের ছাত্ররা কলেজের স্থায়ী মঞ্চে প্রথম নাটক করলাম, ‘বাঘনখ’। সিনিয়র দাদারা এবং মাস্টারমশাইরা প্রশংসা করাতে আমরা কয়েকজন মিলে আরজি করে সিরিয়াস নাট্যচর্চা শুরু করে দিলাম। আমাদের একটি নাটকের দল তৈরি হল। পাণ্ডা ছিল দেবাশিস দত্ত। ও একটি গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে তখন যুক্ত ছিল। নাম ছিল প্রয়াস, যার কর্ণধার ছিলেন বিদ্যুৎ নাগ। ওঁর লেখা দুটি নাটক ওঁরই নির্দেশনায় আমরা বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিনয় করলাম, এমনকী প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেওয়া শুরু করলাম, পুরস্কৃতও হলাম। নাটক দুটির নাম ছিল হ্যামলেট ও হিটলার এবং রাজা নিরুদ্দেশ।
পরবর্তীকালে আমার নিজের দল থিয়েটার কোরামের হয়েও আমি এ দুটি অভিনয় করেছি। এই সময় অ্যাকাডেমিতে নাটক দেখা শুরু করেছি। হঠাৎ দেখে ফেললাম শম্ভু মিত্রর অভিনয়, বহুরূপীর দশচক্র নাটকে। কিছুদিনের মধ্যেই দেখলাম চেতনার জগন্নাথ এবং হাতিবাগানের রঙ্গনাতে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী নাটক মঞ্জরী আমের মঞ্জরী, তিন পয়সার পালা, শের আফগান ইত্যাদি। এরপর উৎপল দত্তের ব্যারিকেড, টিনের তলোয়ার। শরীর মন জুড়ে একটা অদ্ভুত তোলপাড় শুরু হল। আধুনিক নাটকের মেধা-মনন-উপস্থাপন আমাকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করতে লাগল। বুঝলাম, নাটকটা আমাকে সিরিয়াসলিই করতে হবে এবং সে জন্য একটি গ্রুপ থিয়েটারের যোগ দেওয়া খুব প্রয়োজন। কলকাতায় তখন যেমন গ্রুপ থিয়েটারের খুব রমরমা, তেমনি হাতিবাগান পাড়ায় বাণিজ্যিক থিয়েটারেরও স্বর্ণযুগ। চেষ্টা করলে কলকাতার কোনও নামীদামি গ্রুপ থিয়েটারে যোগ দিতেই পারতাম, কিন্তু গ্রুপ থিয়েটার মানেই তো ভীষণ কড়াকড়ি, ডাক্তারি পড়াশোনা চালিয়ে যেটা সব সময় মেনে চলা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাছাড়া আমি বাড়ি থেকে যাতায়াত করে ডাক্তারি পড়তাম। চেষ্টা করলাম, আমার এলাকাতেই কোনও নাটকের দলে যোগ দেওয়া যায় কি না! আমার পাশের পাড়ার কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের ট্যালেন্ট নাট্যদলে যোগ দিলাম। রক্তকরবী, রাজা ক্যানিউট-সহ কয়েকটি নাটক সেখান থেকে করলাম। এরপর ছোটবেলার বন্ধুদের নিয়ে নিজেই থিয়েটার কোরাম বলে একটি নাট্যদল তৈরি করে নাটক করা শুরু করলাম। কিন্তু মনে হচ্ছিল, নাটকের ব্যাকরণ তো আমি কিছুই জানি না, অনেক কিছুই যে শেখা দরকার! ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯, পাঁচ বছর এই ভাবে কাটল। ১৯৮০-তে, তখন আমার ডাক্তারিতে ফাইনাল ইয়ার, যোগ দিলাম পূর্ণেন্দু হালদারের নর্থ ক্যালকাটা থিয়েটার অ্যাকাডেমিতে। এই সময় আমি প্রচুর বাণিজ্যিক থিয়েটারও দেখেছি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নামজীবন দেখেছিলাম কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চে। এছাড়া বিশ্বরূপা, রংমহল, সারকারিনা, বিজন থিয়েটার, রঙ্গনায় একের পর এক নাটক দেখে গেছি। এই হলগুলোর কোনওটারই এখন আর কোনও অস্তিত্ব নেই, এরা সবাই এখন ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। এই হলগুলোতে বাণিজ্যিক থিয়েটারের স্বর্ণযুগকে আমি দর্শক হিসেবে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছি। এরাই গড়ে তুলেছে আমার নাটকের মনোভূমি।
পূর্ণেন্দুদার সঙ্গে কাজ করতে করতে আমি অভিনয়ের পাশাপাশি লাইট, সেট, মিউজিক, মেকআপ এবং সর্বোপরি দল চালানোর ব্যাপারে নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে থাকি। এবং তখনই বুঝে যাই অন্য কোথাও রোজগারের ব্যবস্থা না থাকলে শুধু গ্রুপ থিয়েটার করে পেট চালানো যায় না। এই থিয়েটার টাকা দেয় না, উলটে এখানে টাকা ঢালতে হয়। দর্শকে ধরে বেঁধে আনতে হয় হলে। তখন গ্রুপ থিয়েটারের এত কমার্শিয়ালাইজেশন হয়নি, অনুদানেরও কোনও ব্যবস্থা ছিল না। শহর-মফস্বলে এত নাট্য উৎসবও হত না। তবে খুব একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা হত, এখন যা হয় না। আমাদের বেলঘরিয়ায় উদয়পুরে সংগঠনী নামে একটি স্থায়ী মঞ্চ ছিল, এখনও আছে, যেখানে নিয়মিত নাট্য প্রতিযোগিতা হত। কলকাতার বিভিন্ন দলও অংশ নিত। সেই সময় কলকাতার হাতেগোনা কয়েকটি নাট্যদল ছাড়া বাকি দলগুলোর অবস্থা ছিল করুণ।
শুধু এই নাটক প্রতিযোগিতাগুলোই ছোট গ্রুপ থিয়েটারগুলোকে তখন বাঁচিয়ে রেখেছিল। টাকা না আসুক, অন্তত অনেক দর্শকের সামনে নাটকটা করা যেত। শ্যামবাজারের বিখ্যাত মিষ্টির দোকান বাসুদেব সুইটস, বাসুদেব মঞ্চ নামে একটি নতুন হল চালু করল শ্যামবাজারেই। আমরা প্রতি বুধবার সেখানে পূর্ণেন্দু হালদারের রচনা ও নির্দেশনায় চে গুয়েভারা নাটকটি অভিনয় করতে শুরু করলাম। এই নাটকের জন্য লিখিত শুভেচ্ছা আনতে আমি টালিগঞ্জে উৎপল দত্তের বাড়িতে সরাসরি চলে গিয়েছিলাম। সে গল্প পরে করব। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর মতো লেজেন্ডকে এই নাটক দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলাম আমি। তিনি এসেওছিলেন, তবে শরীর ভালো না থাকাতে প্রথমার্ধর বেশি দেখতে পারেননি। এরপর এক অদ্ভুত আকর্ষণে ওঁর বাড়িতে আমি অনেকবারই গিয়েছি। বহু গল্পও শুনেছি ওঁর থেকে। সেসব নিয়ে আমার উদ্যোগে আমারই সম্পাদনায় বিতর্ক পত্রিকায় একটি বড় লেখাও লিখেছিলাম সেই সময়। জীবনে ওই একবারই আমি মুদ্রিত পত্রিকা বার করেছিলাম, যার কোনও কপিই দুর্ভাগ্যক্রমে আমার কাছে আজ আর নেই। পাঁচ সপ্তাহ অনেক টেনেটুনে চালানোর পর কালের নিয়মে বন্ধ হয়ে গেল আমাদের চে গুয়েভারা নাটকটি, বছর পাঁচেক বাদে বাসুদেব মঞ্চও বন্ধ হয়ে গেল। আমার তখন ফাইনাল ইয়ার, ডাক্তারি পড়াশোনার খুব চাপ বাড়তে লাগল। নাট্যচর্চায়ও সাময়িক ইতি ঘটল। পূর্ণেন্দুদাও চাকরিসূত্রে কলকাতার বাইরে চলে যাওয়াতে নর্থ ক্যালকাটা থিয়েটার অ্যাকাডেমি ধীরে ধীরে উঠেই গেল। কিন্তু বছর দুয়েকের এই নাট্যচর্চার অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়ে দিল অনেক কিছুই। বিশেষ করে নাটক পরিচালনা এবং সংগঠন চালানো।
এরপর প্রায় পাঁচ বছর ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে কাজ করাকালীন নাটকটা সেভাবে করার সুযোগ পাইনি, তবে একেবারেই যে করিনি তা নয়। এ সময় শ্রুতিনাটক লেখা এবং পরিবেশন আমি শুরু করি সেই সময়ের বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব অমল রায়ের সংস্পর্শে এসে। ঠাকুরপুকুর পর্ব শেষ হওয়ার পর বাড়িতে যখন প্র্যাকটিস শুরু করি তখন আবার নতুন করে নাট্যচর্চা শুরু হয় আমার এক দাদা মানবেন্দ্র গোস্বামীর নাট্যদল অবেক্ষণ-এ। তখন এখানে সেখানে দৌড়োদৌড়ি করে প্র্যাকটিস জমানোর চেষ্টা করছি। বিয়ে করেছি, সংসার হয়েছে, অর্থ উপার্জন তো করতেই হবে। এই অবস্থায় নিজের পক্ষে দল চালানো মুশকিলই ছিল, তাছাড়া শেখার তখনও যে অনেক বাকি ছিল। আমার দলের সাত-আটজনকে নিয়ে আমি যোগ দিলাম অবেক্ষণে। প্রথম নাটক ছিল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মজার গল্প নিয়ে চিররঞ্জন দাসের নাটক কামার কাহিনী। আমি একটি মজার শয়তানের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম, যে ছন্দে ছন্দে কথা বলত। এই নাটকটি আমাকে নাটকের নানা আঙ্গিক শেখাতে সাহায্য করেছিল। মানবেন্দ্রদাও খুব যত্ন করে এটি নির্মাণ করেছিলেন। কলকাতার নানা মঞ্চ ছাড়াও আমরা উত্তরবঙ্গ, বাংলাদেশ-সহ নানা জায়গায় অবেক্ষণের বেশ কয়েকটি নাটক অভিনয় করেছি। বছর বারো আমি ছিলাম এই দলে। শিখেছিও অনেক কিছু মানবেন্দ্রদার কাছে।
এই সময় আমাদের ডাক্তারদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের কামারহাটি শাখার বার্ষিক কনফারেন্সের নাটকের দায়িত্ব এসে পড়ে আমার উপর। এখানে আমি টানা বাইশ বছর নাটক পরিচালনা করেছি, পাশাপাশি নিজে নাটক লিখে অভিনয়ও করিয়েছি। এই নাটকগুলো বিভিন্ন সময়ে দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এই রাজ্যের বিভিন্ন নাট্যদলগুলো এগুলো অভিনয় করেছেন, এখনও করেন। এখানে নাটক পরিচালনা করতে গিয়ে আমি শুধু অভিনয় নয়, নাটকের সেট মিউজিক লাইট—এগুলো সম্বন্ধেও ধীরে ধীরে নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে থাকি। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল।
অবশেষে ২০১২-তে স্বাধীনভাবে নিজের দল তৈরি করলাম আমি, বেলঘরিয়া থিয়েটার একাডেমি। এটা না করে আমার উপায় ছিল না। আমার পেশাগত ব্যস্ততার পাশাপাশি সিরিয়াল-সিনেমায় কাজের চাপ বাড়ছিল। তাছাড়া লেখালেখি তো ছিল। এগুলো সামলে অন্য নাটকের দলে সময়মতো মহড়ায় হাজিরা দেওয়া এবং অন্যান্য কাজকর্ম করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। একবার মনে হয়েছিল অভিনয়জগৎ থেকে সরেই আসি। কিন্তু আমার অন্যতম অভিনয় গুরু স্বনামধন্য অভিনেতা পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে নিজেই দল তৈরি করে ফেললাম। নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এই বছর আমার দল বেলঘরিয়া থিয়েটার একাডেমি দশে পা দিল। দশ বছরে দশটি নাটক প্রযোজনা করেছি আমরা, যার মধ্যে সাতটি নাটক আমারই লেখা। বারো জন নিয়মিত এবং জনা পাঁচেক অনিয়মিত অভিনেতা নিয়ে ভালোই আছি। আমি যেমন ওদের নাটক শেখাই, তেমনি ওদের কাছ থেকে শিখিও।
অর্ধ শতাব্দীর উপর আমার নাট্যজীবন। বিভিন্ন নাটকের শতাধিক অভিনয় করেছি, পরিচালনা করছি অন্তত তিরিশটি নাটক। ডাক্তারের মতো ব্যস্ত পেশা থেকে সময় বাঁচিয়ে এত দীর্ঘ দিন কেউ তার নাকে জীবন চালু রাখতে পেরেছেন কি না জানি না, তবে আমি পেরেছি। বিনয়ের সঙ্গে শুধু এটুকুই বলতে পারি, নাটক আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন।
ছবি : লেখক