একটা সময় ছিল, যখন তাঁরা নিজেরাই একটা পুরো সিনেমাকে দর্শক বৈতরণী পার করে দিতে পারতেন। তাঁদের উপস্থিতি মানেই দর্শকের মনে জাগতো ভালো অভিনয়ের প্রত্যাশা। বয়সের ভারে দুজনেই এখন অভিনয় জগতে কিছুটা ব্যাকফুটে। তবু যখন পর্দায় আসেন, তখন দর্শকের মনে একটা ভালোলাগা বোধ তৈরি হয়। বড় পর্দায় উপস্থিতি কমে গেলেও দীপঙ্কর দে এখনও ছোট পর্দার নিয়মিত শিল্পী। রঞ্জিত মল্লিককে ছোট পর্দায় দেখা যায় না। তবে মাঝে মাঝে বড় পর্দায় স্বল্প উপস্থিতিও দর্শকের সমীহ আদায় করে নেয়। যেমন সম্প্রতি দেব এবং প্রসেনজিৎ অভিনীত ‘কাছের মানুষ’ সিনেমাটিতে। আমার সৌভাগ্য যে এই দু’জন প্রাজ্ঞ অভিনেতার সঙ্গেই আমি সিনেমাতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, ব্যক্তিগত স্নেহ সান্নিধ্যও পেয়েছি। সম্পর্ক আজও রয়ে গিয়েছে এঁদের সঙ্গে। প্রথমেই বলি রঞ্জিত মল্লিকের কথা।
রঞ্জিত মল্লিক
স্টুডিও পাড়ার এই নিপাট ভদ্রলোকটির ফিল্ম কেরিয়ার শুরু হয়েছিল মৃণাল সেনের ছবি ‘ইন্টারভিউ’ দিয়ে, যে ছবি এই জেনারেশনের প্রায় কেউই দেখেননি, দেখার কোনও সুযোগ নেই বলে। একজন রাগী প্রতিবাদী যুবকের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রঞ্জিতদা। অথচ এই মানুষটি দীর্ঘদিন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে যেসব ভূমিকায় অভিনয় করছেন, সেগুলির অধিকাংশই তাঁর মতোই নিপাট ভদ্রলোকের চরিত্র এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে অবশ্যই সৎ ও প্রতিবাদী। কিন্তু রাগী চরিত্রে রঞ্জিতদাকে অভিনয় করতে সম্ভবত আর কোনও সিনেমায় দেখিনি।
এই ভালো মানুষটির সঙ্গে অভিনয় করার ইচ্ছে অনেক দিন ধরেই ছিল। সুযোগ দিলেন প্রখ্যাত পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী তার ‘নবাব নন্দিনী’ সিনেমাতে। বছর ১২-১৩-র আগের ঘটনা হবে। দিন চারেকের টানা বৃষ্টিতে কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গ তখন জলের তলায়, অথচ উত্তরবঙ্গে খটখটে রোদ। শুটিং হবে সেখানেই। জল ঠেলতে ঠেলতে পায়ে হেঁটে বেলঘরিয়া স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন ধরে শিয়ালদায়। সেখান থেকে সকালের কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস। ট্রেন যত এগোয় বৃষ্টির দমক ততই কমতে থাকে। ফরাক্কা পার হতে না হতেই বৃষ্টি ভ্যানিশ। রাতে পৌঁছলাম এনজিপিতে। প্রোডাকশনের গাড়ি ছিল, সোজা এসে উঠলাম দার্জিলিং মোড়ের এক হোটেলে। পরের দিন সকালে শুটিং লোকেশনে পৌঁছলাম। এক বিশাল চা বাগানের মধ্যে শুটিং। এই সিনেমার নায়ক-নায়িকা ছিল হিরণ এবং কোয়েল। রঞ্জিতদা তো ছিলেনই। আমার চরিত্র ছিল এক অসৎ পুলিশ অফিসারের। ইতিমধ্যে রায়চকে একদিনের কাজও হয়ে গিয়েছিল সুমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বাকি কাজ এখানে। শুনেছিলাম রঞ্জিতদা এবং তার কন্যা কোয়েল, আমরা যে হোটেলে আছি তারই চার তলায় উঠেছেন।
দৃশ্যটা ছিল চা বাগানে কিছু মাস্তান-তোলাবাজের হামলা, যাদের মদতদাতা স্থানীয় থানা এবং তার অসৎ পুলিশ অফিসারের, যে ভূমিকায় ছিলাম আমি স্বয়ং। অসহায় চা শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানাচ্ছে, কিন্তু ওরা মারধর ভাঙচুর শুরু করেছে। এমন সময় জিপ নিয়ে সেখানে প্রবেশ আমার। এবং যথারীতি ওই বদমাইশগুলোর সমর্থনে কথা বলা ও শ্রমিকদের উপর হম্বিতম্বি করা। ওদের উপর মারধরের অভিযোগ জানালে, আমি বলি, ‘ওরা যে তোদের মেরেছে, তার কোনও প্রমাণ আছে!’ এমন সময় অকুস্থলে প্রবেশ রঞ্জিত মল্লিকের। আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, দু-চার কথার পর সপাটে আমার গালে একটা চড় কষিয়ে দেন। আমি চিৎকার করে বলি, ‘আপনার এত বড় সাহস! আমায় চড় মারলেন! ‘রঞ্জিতদা হেসে বলেন, ‘আমি আপনাকে চড় মারলাম, এটার কোনও প্রমাণ আছে!’ চড় খাওয়ার ব্যাপারটায় আমার খুব আতঙ্ক লাগে। এর আগে ‘তুলকালাম’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করতে আসা একজন মহিলার কাছে বার পাঁচেক চড় খেয়েছিলাম। ক্লোজ শট, মিড শর্ট, লং শট… সব শটেই। ফলস চড় নয়, সত্যিকারের চড়। রঞ্জিতদা পোড় খাওয়া অভিনেতা। কায়দা করে চড়টা মারলেন। আমিও টাইমলি গালটা সরিয়ে নিলাম। ওঁর হাত আমার গাল ছুঁল না। কিন্তু পর্দায় যখন দেখলাম, তখন দেখি যে একেবারে সত্যিকারের চড়। সিনেমা অবশ্য এ ভাবেই হয়। চিটিং করে অনেক সিকোয়েন্সই ডেভেলপ করা হয়।
এ ভাবে চড়ের দৃশ্যের মাধ্যমেই রঞ্জিতদার সঙ্গে আমার প্রথম মোলাকাত। সিনটা শেষ হওয়ার পর আমরা দুজনে একই মেকআপ ভ্যানে গিয়ে বসলাম। পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী আমার পরিচয় ওঁকে আগেই জানিয়েছিলেন। উনি খুব সসম্মানে এবং সস্নেহে আমার সঙ্গে গল্প গুজব শুরু করলেন। মানুষটির সঙ্গে ১০ মিনিট কথা বলেই বোঝা গেল শতকরা একশো ভাগ ভদ্রলোক কাকে বলে! উনি সন্ধ্যাবেলায় আমাকে চা খাওয়া নিমন্ত্রণ জানালেন ওঁর ঘরে। আগেই বলেছি, একই হোটেলের দোতলায় ছিলাম আমি, চার তলায় ছিলেন উনি। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ উনি আমার ঘরে ফোন করে রিমাইন্ডার দিলেন।
একটু বাদে আমি আমার নিজের লেখা দুটো বই নিয়ে ওঁর ঘরে হাজির হলাম। বিশাল সুট। রঞ্জিতদা একদম ধুতি পাঞ্জাবি পরে কাঁধে চাদর ঝুলিয়ে আমাকে অভ্যর্থনা করলেন, পাশে ওঁর স্ত্রী। সোফায় নিয়ে গিয়ে বসালেন। একটু বাদে কোয়েলে এলে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর কফি আর স্নাক্স খেতে খেতে প্রায় ঘণ্টাখানেক নির্ভেজাল আড্ডা হল। রঞ্জিতদার আন্তরিক ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছিল, ওঁর সঙ্গে আমার চার ঘণ্টা আগে পরিচয় হয়নি, পরিচয় হয়েছে চার বছর আগে। এরপরে অবশ্য রঞ্জিতদার সঙ্গে অভিনয় করার আর সুযোগ হয়নি। কিন্তু যোগাযোগটা কম বেশি ছিলই। লিখতে লিখতে মনে পড়ল, হরনাথ চক্রবর্তীর ‘রাজু আঙ্কেল’ সিনেমায় আমি অভিনয় করেছিলাম অনেকদিন আগে। রঞ্জিতদা এই সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন, কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার কোনও দৃশ্য ছিল না। দাদার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল বছর কয়েক আগে ডাক্তারদের কনফারেন্সে এক পাঁচ তারা হোটেলে। উনি প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন। ঘণ্টাখানেক আমাদের সঙ্গে ছিলেন, ওঁর বক্তব্যে আমার নাম উল্লেখও করলেন। দীর্ঘ ৩৭ বছরের অভিনয় জীবনে আমি বড় পর্দা এবং ছোট পর্দায় অনেকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। কারও কারও ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যেও এসেছি। কিন্তু রঞ্জিতদা আমার চোখে দেখা একজন নিপাট ভদ্রলোক। উনি কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন, কারও নিন্দা করেছেন বা কোনও স্ক্যান্ডেলে জড়িয়েছেন, এমন কথা স্টুডিও পাড়ায় শোনা যায় না। এ ভাবেই আমাদের কাছে উনি আমৃত্যু থাকুন, সেটাই প্রার্থনা করি।
দীপঙ্কর দে
স্টুডিও পাড়ায় টিটোদা নামেই যিনি পরিচিত। ওঁর সঙ্গে পরিচয় বছর কুড়ি আগে। তখন ল্যান্ড লাইনের যুগ ছিল। একদিন সকালে উনি ফোন করেছিলেন। নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, পুলুদা অর্থাৎ আমাদের সবার প্রিয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের থেকে উনি আমার ফোন নম্বর পেয়েছেন। গলার সমস্যায় ভুগছেন, তাই একবার আমাকে দেখাতে চান। আমি তো শুনে থ! একজন বিখ্যাত অভিনেতা আরেকজন বিখ্যাত অভিনেতাকে রিকোমেনড করেছেন আমার নাম! কেন, কলকাতায় কি বিখ্যাত ইএনটি স্পেশালিস্ট কম পড়িয়াছে! যাই হোক, টিটোদা আমার শিয়ালদার চেম্বারে একদিন সত্যিই এলেন আমাকে দেখাতে। আমি দেখলাম তাঁর ভোকাল কর্ডের সমস্যা, গলার অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অপব্যবহার এর কারণ। বিষয়টি তাঁকে ভালোভাবে বুঝিয়েও বললাম, ওষুধপত্রও দিলাম। মোটামুটি সামলেও নিলেন। রোগী হিসেবে খুব বাধ্য উনি, ফোনে আমার পরামর্শ নিয়মিতই নিতেন।
আমার একটা অভ্যাস আছে, মাঝে মাঝে অ্যালবাম খুলে পুরনো ছবিগুলো দেখা। এখন তো মোবাইলেই ফটো তোলা হয়, সেখানেই ফটো থাকে, কেউ কেউ কম্পিউটারে লোড করেও রাখেন। কিন্তু আমি এখনও কোনও জায়গায় বেড়াতে গেলে কোনও অনুষ্ঠান বা ঘটনার সিলেক্টেড কয়েকটি ফটো প্রিন্ট করে অ্যালবামে রাখি। পুরনো ফটো দেখতে গিয়ে হঠাৎ দেখলাম, দীপঙ্কর দে-র পাশে বসে আমি একটি রেস্টুরেন্টে খাচ্ছি, পাশে দাঁড়িয়ে সুখেন দাস খেতে খেতে কারও সঙ্গে কথা বলছেন। অন্তত বছর ৩৫ আগে তোলা ছবি। পরিচালক, অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকার সুখেন দাসের নাম হয়তো এই জেনারেশন জানেন না। অঞ্জন চৌধুরী পূর্ববর্তী যুগে এই স্বশিক্ষিত অভিনেতা বড়পর্দায় দাঁপিয়ে রাজত্ব করে গিয়েছেন এবং একের পর এক হিট ছবি আমাদের উপহার দিয়েছেন। কিশোরকুমারকে দিয়ে নিয়মিত ওঁর সিনেমায় গান গাইয়েছেন। সুর করেছেন অজয় দাস। ওঁর সিনেমার কয়েকটি বিখ্যাত গানের প্রথম লাইন বলি। হয়তো আমাকে কারও মনে নেই, আমি যে ছিলাম এই গ্রামেতেই/তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে আমার মরণ যাত্রা যেদিন যাবে/ কী উপহার সাজিয়ে দেব/আজ মিলন তিথির পূর্ণিমা চাঁদ ঘোচায় অন্ধকার…। কয়েকটি সিনেমার নামও এই মুহূর্তে মনে পড়ছে.. প্রতিশোধ, সিংহদুয়ার, মিলন তিথি।
ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে কাজ করাকালীন সুখেন দাসের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল ক্যানসার আক্রান্ত তাঁর মেয়ের চিকিৎসার ব্যাপারে। মেয়েটি অবশ্য স্বল্পকাল পরে মারা যায়। কিন্তু আমার সঙ্গে সুখেন দাসের একটা যোগাযোগ থেকেই যায়। আমি ওঁর ‘পাপ পুণ্য’ সিনেমায় একটু মুখ দেখানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। তাঁর ছেলে অকাল প্রয়াত রজত দাস আমার সমবয়সী ছিল। আমার সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল ওর।
ধান ভাঙতে অনেক শিবের গীত হল। আবার দীপঙ্কর দে-র প্রসঙ্গে ফিরি। অভিনয় জগতে আসার আগে এই মানুষটি সেলসম্যানের কাজ করতেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, বিশেষ আগ্রহ ছিল জ্যোতিষবিদ্যা নিয়ে। এই ব্যাপারে কিছু গবেষণামূলক কাজও করেছিলেন, যেটি এক সময় সানন্দা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। ওঁর সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা করা যায়। খুব বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলেন। আর পুরনো দিনের সিনেমা জগতের কথা উঠলে অনেক অজানা তথ্য তাঁর থেকে জানাও যায়, যেগুলো অভিনেতা হিসেবে আমাকে ঋদ্ধ করেছে। দাদা মাঝখানে হঠাৎ দোলন রায়কে নিয়ে যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন। বছর ১০-১২ আগে একদিন সকালে ল্যান্ড লাইনে দাদার ফোন। গলা দিয়ে সপ্তসুর বেরোচ্ছে, তাই একদম চিনতে পারিনি। বারবার জিজ্ঞেস করে বুঝলাম যে এটা টিটোদার গলা। বাঁকুড়ায় যাত্রা করতে গিয়ে গলা সম্পূর্ণ বসে গিয়েছে। অথচ সেদিন রাতেই পরবর্তী শো রয়েছে। কিছু ওষুধ পত্রের অ্যাডভাইস দিলাম, ভেপার নিতে বললাম, শো-এর আগে একদম ভয়েস রেস্ট নিতে বললাম। এরপরেও যাত্রা করতে গিয়ে বারেবারেই টিটো দার গলা ভেঙে যাচ্ছিল। আমি বললাম, এ ভাবে চলবে না, যদি গলাকে চিরতরে হারাতে না চান, তাহলে যাত্রা ছেড়ে দিন, এই মিডিয়া আপনার জন্য নয়। এর বছর দু’য়েক বাদে সত্যিই টিটোদা যাত্রা জগতকে পার্মানেন্টলি গুডবাই জানালেন এবং জানিয়ে এখন পর্যন্ত গলার দিক থেকে ভালোই আছেন।
দীপঙ্কর দে-র সঙ্গে আমি এ পর্যন্ত তিনটে সিনেমায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। প্রথম সিনেমাটির নাম মনে নেই। নায়ক-নায়িকা ছিলেন জিৎ এবং স্বস্তিকা। জিতের বাবা ছিলেন দীপঙ্কর দা, আমি হয়েছিলাম পুলিশ অফিসার। ছেলে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ, বাবা তাই থানায় এসেছেন ডায়েরি করাতে। একটু কমেডি অ্যাক্টিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলাম, দাদার থেকে এ ব্যাপারে টিপসও নিয়েছিলাম। আপনারা যাঁরা তপন সিংহের ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ দেখেছেন, তাঁদের নিশ্চয়ই মনে আছে জমিদারের ভূমিকায় দীপঙ্কর দে-র অসাধারণ কমেডি অ্যাক্টিংয়ের কথা। এই মানুষটিই আবার বিভিন্ন সিনেমায় ভয়ংকর ভিলেনের অ্যাক্টিংও করেছেন। এরপর হরনাথ চক্রবর্তীর ‘চিরসাথী’ সিনেমায় আমি দাদার সঙ্গে একটি বড় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাই। তিন ভাইয়ের যৌথ পরিবারে দীপঙ্কর দে ছিলেন আমাদের বড়দা, আমি ছিলাম মেজদা। ১২-১৪ দিনের কাজ ছিল। এই সময় অভিনেতা এবং মানুষ হিসেবে টিটো দাকে আরও কাছে পাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। মজার মজার কথা বলে পুরো ইউনিটটাকে সুন্দর ভাবে মাতিয়ে রাখতেন।
একবার আমাদের আউটডোর শুটিং ছিল রায়চকে। আমি নিজের গাড়ি নিয়ে টিটো দার ফ্ল্যাটে গেলাম। সেখান থেকে প্রোডাকশনের গাড়িতে আমরা দুজন গিয়েছিলাম রায়চকে। ওখান থেকে একটা ভিতরের পথ ধরে ডায়মন্ড হারবার রোডের আমতলাতে যাওয়া যায়। সেই পথে যেতে যেতে হঠাৎ বললেন, জানো অমিতাভ এই রাস্তাতেই সেই বিখ্যাত গানের শুটিং হয়েছিল, এই পথ যদি না শেষ হয়…। এরপর অবধারিত ভাবে চলে এল উত্তম কুমারের প্রসঙ্গ। আমি কথার ফাঁকে জানতে চাইলাম ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ সিনেমায় উত্তমকুমারের বাদ পড়ার প্রসঙ্গ। মহানায়কের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধা এবং সম্মান প্রদর্শন করে, পুরো বিষয়টা উনি আমাকে বুঝিয়ে বললেন। নিজের জীবন সম্পর্কে ভীষণ অকপট উনি, কোনও ঢাক ঢাক গুরু গুরু ব্যাপার নেই।
আমাদের একান্ত আলাপচারিতায় অনেকবারই অনেক ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ এসেছে, সেগুলো আলোচনা করার জায়গা এটা নয়। শুধু এটুকুই বলব, মানুষটি আমার খুব পছন্দের, শুধু অভিনেতা হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেও। দাদার সঙ্গে শেষ কাজ করেছি বছর চারেক আগে জি বাংলার জন্য নির্মিত হরনাথ চক্রবর্তীর একটি সিনেমায়। আমি দাদার ছোটবেলার বন্ধু হয়েছিলাম। কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় শুটিং হয়েছিল। আবার কবে ওঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাব, সেই প্রতীক্ষায় আছি।