বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

কোলাজেন শব্দটি আমরা কমবেশি সবাই শুনে থাকি। কিন্তু নাম জানা থাকলেও জিনিসটা আসলে কী, সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। ত্বকের জেল্লা বাড়ানো থেকে শুরু করে, চুলের গোড়া মজবুত করা সবেতেই প্রয়োজন হয় এই কোলাজেনের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কোলাজেনের ঘাটতি শুরু হয়। এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, প্রোটিনের উৎপাদন হার কমে যাওয়া-সহ একাধিক কারণে চেহারায় অকালে বয়সের ছাপ পড়ে। বলি লেখা পড়ে, ত্বকের জেল্লা হারিয়ে যায়, ত্বক ঝুলে যায়। এক কথায়, ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে কোলাজেনের কোনও বিকল্প নেই।

দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশ, যেমন জাপান, কোরিয়া, চিন, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশের মানুষের তারুণ্যোজ্জ্বল ত্বকের অন্যতম রহস্য কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার। তাঁরা দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রাখা হয়, যা শরীরে কোলাজেন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ জন্যই অন্যান্য দেশের তুলনায় এ সব দেশের মানুষজনকে তাদের বয়সের চেয়ে অনেক বেশি তরুণ দেখায়।
পুষ্টিবিদদের মতে, দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় বদল এনে শরীরে কোলাজেনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। প্রধানত প্রাণীজ প্রটিন কোলাজেনের ভাল উৎস। এমন কিছু শাক-সব্জিও আছে যা শরীরে কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

 

কোলাজেন কী?

কোলাজেন আসলে এক ধরনের প্রোটিন। এটি আমাদের শরীরেই তৈরি হয়। পেশি, হাড়, দাঁত, ত্বক, টেন্ডন, লিগামেন্ট, অঙ্গ, রক্তনালী, অন্ত্রের আস্তরণ এবং অন্যান্য সংযোগকারী সমস্ত টিস্যুতেই রয়েছে কোলাজেন। এই প্রোটিন সারা শরীরকে সচল ও কর্মক্ষম রাখে। ত্বক ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। সার্বিকভাবে আমাদের সুস্থ ও সুন্দর রাখে।

আরও পড়ুন:

ডায়েট টিপস: শিশুর শরীরেও হানা দিতে পারে ডায়াবিটিস! কোন কোন উপসর্গে সতর্ক হবেন? কী করণীয়?

রিভিউ: দ্য নাইট ম্যানেজার: দেশীয় সংস্করণে চোখে চোখ রেখে লড়েছেন আদিত্য, অনিল, শাশ্বত ও শোভিতা

 

কোলাজেনের ঘাটতিতে কী কী সমস্যা হয়?

ত্বক অকালেই কুঁচকে যায়।
বলিরেখা পড়ে।
টেন্ডন এবং লিগামেন্টের নমনীয়তা কমে।
পেশি সঙ্কুচিত ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
জয়েন্টে ব্যথা বা অস্টিওআর্থারাইটিস দেখা দেয়।
অন্ত্রের আস্তরণ পাতলা হয়ে যায়, ফলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যার সূত্রপাত হয়।
 

প্রাকৃতিক উপায়ে কোলাজেনের ঘাতটি মেটাতে কী কী খাবার খাবেন?

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার

ভিটামিন সি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর ত্বক ও চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর জুড়ি মেলা ভার। তাই তো চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে টক জাতীয় ফল অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। লেবু ও বেরি জাতীয় ফলে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি আছে। পাশাপাশি ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, স্কোয়াশ, টম্যাটো, পেঁপে, কাঁচা লঙ্কা, লাল ও হলুদ বেলপেপারও খাওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন:

হাত বাড়ালেই বনৌষধি: একাধিক সমস্যার অব্যর্থ দাওয়াই, বাজিমাত হবে এই ‘অমৃত’ ফলে

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪: আমারে তুমি অশেষ করেছ

 

ম্যাঙ্গানিজ জাতীয় খাবার

শরীরে কোলাজেন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচকগুলির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এই খনিজ ম্যাঙ্গানিজ। বিভিন্ন ধরনের গোটা শস্য, বাদাম, ব্রাউন রাইস, সবুজ শাক-সব্জি, পালং, বাঁধাকপি, ব্রকোলিরতে ভরপুর মাত্রায় থাকে। তাই খাদ্যতালিকাই এই খাবারগুলি রাখতে হবে।
 

জিঙ্ক জাতীয় খাবার

শরীরে কোলাজেন উৎপাদন করতে জিঙ্কেরও প্রয়োজন আছে। এটি কোলাজেন প্রোটিন ধ্বংস হতে বাঁধা দেয়। রোজের খাদ্যতালিকায় কুমড়োর বীজ, কাজুবাদাম, ডাল, ডার্ক চকলেট মাংস, দুগ্ধজাতীয় খাবার, নারকেল, কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারা, লিচু, আম, আনারস, অ্যাভোকাডো, অ্যালোভেরা, ধনেপাতা ইত্যাদি রাখলেই শরীরে জিঙ্কের পরিমাণ বাড়বে।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪১: কান্না হাসির দোল দোলানো ‘একটি রাত’

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২১: আবার কালাদেও?

 

প্রোটিন জাতীয় খাবার

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, দুগ্ধ জাতীয় দ্রব্য, ছানা, চিজ ইত্যাদি শরীরে অ্যামিনো অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়। অ্যামিনো অ্যায়ড শরীরে কোলাজের উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। ফলে সঠিক মাত্রায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার কোলাজেন উৎপাদনের হার বাড়িয়ে দেয়।
 

মাংস

শরীরে কোলাজেন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অ্যামিনো অ্যাসিড। মুরগির মাংসে অ্যামিনো অ্যাসিড ভালো মাত্রায় থাকে। ফলে খাবার পাতে মিয়মিত চিকেন রাখলে শরীরে কোলাজেন উৎপাদনের হারও বাড়বে।
 

মাছ

মাছেও ভালো পরিমাণ অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। এছাড়াও মাছে জিঙ্ক ও কপারের মতো খনিজ পদার্থ পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। আমাদের শরীরে কোলাজেন উৎপাদনের জন্য এই প্রকার খনিজের প্রয়োজন। এগুলি কোলাজেন প্রোটিন ধ্বংস হতে দেয় না। পাশাপাশি মাছে ফ্যাটও ত্বকের জেল্লা বাড়তে সাহায্য করে।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২

* হেলদি ডায়েট (Healthy Diet): সুতনুকা পাল (Sutanuka Paul), পুষ্টিবিদ, ডায়েট-টু-ফাইট।

আপনার রায়

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে দফা বৃদ্ধি করা জরুরি?

Skip to content