শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

অত্যন্ত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর আমন্ডের সঙ্গে চেনাজানা অনেকেরই। সারা বছর এই বাদাম খাওয়া গেলেও শীতকালে আমন্ডের খাওয়ার মজাই আলাদা। মাতৃভূমি সাউথ ওয়েস্ট এশিয়া হলেও এখন সারা পৃথিবীর মোট উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশই হয় ক্যালিফোর্নিয়াতে। এই বাদামের ইংরেজি নামের উচ্চারণ নিয়ে নানা মত আছে। আমেরিকানরা বলেন ‘আলমন্ড’, আর ব্রিটিশরা আমন্ড নামেই ডাকেন। তো আমার আপনার নাম নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এই বাদাম যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং বহু রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকারের সাহায্য করে সে ব্যাপারে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা সবাই একমত। আমন্ডের বৈজ্ঞানিক নাম প্রানাস ডুলসিস (Prunus dulcis)।
 

আমন্ডের পুষ্টিগুণ

প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, কপার, ভিটামিন-ই এবং হার্ট হেলদি মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের গুণে সমৃদ্ধ সুস্বাদু এই বাদাম। এছাড়াও আমন্ডে আছে আয়রন, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, বি-ভিটামিনস এবং অন্তত কুড়ি রকম অত্যন্ত শক্তিশালী ফ্ল্যাভোনয়েড জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস। তবে হ্যাঁ, বাদাম জাতীয় যে কোনও খাবারের মতো আমন্ডেও ক্যালরির পরিমাণ একটু বেশি—এক আউন্স (২৮ গ্রাম) থেকে প্রায় ১৬৫ কিলো ক্যালরি পাওয়া যায়। আর খান চারেক খেলে ২৮ কিলো ক্যালরি।

 

রোগ প্রতিরোধে আমন্ড

 

হার্ট অ্যাটাক

বিজ্ঞানীদের মতে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন মাত্র এক আউন্স করে আমন্ড খেতে পারলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা প্রায় ৫০ শতাংশ হারানো সম্ভব।
 

হাইপারলিপিডেমি

রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ছে? এখন থেকে নিয়ন্ত্রিত খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করুন গুটিকয়েক আমন্ড বাদাম। ডায়েটারি ফাইবার, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং মুফা (MUFA) সমৃদ্ধ আমন্ড রক্তের টোটাল কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরল এইচডিএল (LDL) এর মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল (HDL)-এর মাত্রা বাড়িয়ে হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত করবে।
 

ক্যানসার

আমন্ডের বিভিন্ন ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, ভিটামিন-ই, সেলেনিয়াম এবং ওয়েলিক অ্যাসিড ক্যানসার প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
 

উচ্চ রক্তচাপ

হাইপ্রেশারের সমস্যা থাকলে সল্ট রেস্ট্রিকটেড ডায়েটে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রাখতে পারেন এই বাদাম।
 

ডায়াবিটিস

আমন্ডের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। অর্থাৎ রক্তে দ্রুত সুগার লেভেল বাড়ায় না। তাই বি-ভিটামিনস, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ডায়েটারি ফাইবার যুক্ত আমন্ড ডায়েটে রাখতে পারেন। তবে আপনার উচ্চতা, ওজন, সুগার মাত্রা, কর্মক্ষমতা এবং বয়স অনুযায়ী আপনি কত ক্যালরির ডায়েট নেবেন বা তাতে কতসংখ্যক আমন্ড অন্তর্ভুক্ত করবেন সে ব্যাপারে অবশ্যই ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেবেন।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: তরতাজা থাকতে নিয়মিত প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খান? বড়সড় বিপদ এড়াতে এই সব নিয়ম মেনে চলছেন তো?

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১: চায়ের দোকান থেকে বিশ্বজয়

ডায়াবিটিসে ভুগছেন? সকালের জলখাবারে কী ধরনের খাবার খেতে পারেন? রইল ডক্তারবাবুর জরুরি পরামর্শ

 

ওবেসিটি

লো-ক্যালোরির ডায়েটে হিন্দি স্ন্যাকস হিসেবে আমন্ড বেশ ভালো। এতে প্রচুর বি-ভিটামিনস এবং ফাইবার থাকায় এনার্জি দেবে। ক্রেভিং কম রাখবে। ফলে বারবার মুখ চালানোর অভ্যাসও কমে যাবে। ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
 

অ্যালজাইমার্স

বয়স্কদের মধ্যে অ্যালজাইমার্স প্রতিরোধের জন্য এবং শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে আমন্ড অত্যন্ত উপকারী।
 

রোগ প্রতিরোধে

অগণিত পুষ্টিদ্রব্য এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুণে সমৃদ্ধ এই বাদাম বিভিন্ন অসুখবিসুখ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন:

ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-১০: আশ মিটিয়ে দেখে ছিলাম অপূর্ব সেই রূপ…আর প্রকৃতিও সেদিন সবটুকু মেলে ধরেছিল আমার সামনে

জিভে জল আনা এমন ফুলকপির পরোটাতেই জমে যাক শীতের পাত!

অবনীন্দ্রনাথ‌: শিশুসাহিত্যের মুকুটহীন সম্রাট

 

কীভাবে খাবেন?

খেতে পারেন কাঁচা বাদাম হিসেবে। আবার রোস্টেড বাদাম হিসেবে ছাতুর লাড্ডুতে বা সুজির হালুয়াতে ডেজার্ট আইটেমে এবং সর্বোপরি আমন্ড মিল্ক হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে। যাঁদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, তাঁদের জন্য নন-ডায়েটারি এই প্লান্ট বেসড মিল্ক অত্যন্ত উপকারী। যাঁদের আইবিএস (Irritable bowel syndrome)-এর সমস্যা আছে তারাও খেতে পারেন এই আমন্ড মিল্ক।
 

সাবধানতা

যাঁদের খুব অ্যাসিডিটি বা হজমের সমস্যা আছে, তাঁরা মেপেজুপে আমন্ড খেলেও ভেজানো বাদামের খোসা ছাড়িয়ে খাবেন।
বাদামে অ্যালার্জি থাকলে মোটেই চলবে না এই আমন্ড।
কিডনির সমস্যা থাকলেও অমন্ড খাবেন না।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content