রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


ছবি: সংগৃহীত।

ঘনঘোর বর্ষায় বাঙালির পাতে স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় ইলিশের মতো কুলীন মাছ না পরলে বাঙালির আর বাঙালিয়ানা থাকে না। শুধু কি আর স্বাদেই সেরা? প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন-এ, ডি, কে ইত্যাদি অত্যাবশ্যক ভিটামিন এবং ওমেগা থ্রি জাতীয় এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো সুপার নিউট্রিয়েন্টসের সমন্বয়ে বাঙালির রসনা তৃপ্তিকারী ইলিশ হয়ে উঠেছে সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।
 

ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম মাছে থাকে ২৭৩ কিলো ক্যালরি। প্রোটিন ২১.৮ গ্রাম, ফ্যাট ১৯.৪ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৩.২ গ্রাম এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্যালশিয়াম, ফসফরাস। আয়রন, কপার, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ফ্যাট দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন, ভিটামিন-এ, ডি, ই, কে ইত্যাদি উপযুক্ত মাত্রায় থাকে।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: বর্ষায় বাড়ে সংক্রমণ! সুস্থ থাকতে কোন খাবার খাবেন?

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৩: অভিনয় নয়, কিশোর মনে-প্রাণে একজন গায়ক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিলেন

 

ইলিশের গুণাগুণ

ইলিশের মতো যে সব মাছ সমুদ্রে বেশি সময় কাটায় তাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে সূর্যালোক প্রবেশ করে, যা থেকে তৈরি হয় অ্যাসথাজ্যানথিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের নানা অসুখ যেমন, ড্রাইনেস মায়োপিয়া, ক্যাটারাক্ট, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ইত্যাদি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর জন্য ছোট বয়স থেকেই সিজিনে ইলিশের মতো অত্যন্ত উপকারী ও পুষ্টিকর মাছ ডায়েটে মাঝে মাঝে রাখা উচিত।

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন একজিমা, সানবার্ন, চুলকানি, র্যা শ ইত্যাদি ছাড়াও সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের নাছোড় সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে ওমেগা থ্রি-যুক্ত ইলিশ মাছ।

আর্থরাইটিস, অস্টিওপরেসিস, হাই ব্লাডপ্রেশার, অ্যালার্জি, ইনসোমানিয়া, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবিটিস, অ্যালজাইমার্স, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা, মুড ডিজঅর্ডার, নিউরাল ডিজঅর্ডার ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলায় অত্যন্ত উপকারী এই সুস্বাদু মাছ।

অনেকেই মনে করেন, ওজন কমাতে চাইলে ইলিশ মাছ খাওয়া যাবে কিনা? ইলিশ মাছে ক্যালরির পরিমাণ অন্যান্য মাছে তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও প্রোটিন, ফ্যাট বিশেষত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং বিভিন্ন এসেনশিয়াল ভিটামিন ও মিনারেলের উৎস হওয়ায় পরিমিত মাত্রায় এই মাছ খাওয়া গেলে মানসিক সন্তুষ্টি হয়, অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। ফলে চট করে খিদে পায় না। বারবার টুকটাক খেয়ে ফেলার প্রবণতাও কম থাকে। ফলস্বরূপ দেহের ওজন বাড়ে না।

আরও পড়ুন:

মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-৩: কোচ কামতেশ্বরী মন্দিরের স্থাপত্য এক অনন্যসাধারণ মিশ্রশৈলীর উদাহরণ

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৮: শুঁটকি মাছে কি আদৌ কোনও পুষ্টিগুণ আছে?

 

কতটা খাবেন?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী, ইলিশের মতো ফ্যাটি মাছ একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে সপ্তাহে ১৫০ গ্রাম, অর্থাৎ সপ্তাহে তিন দিন ৫০ গ্রাম করে খাওয়া যেতেই পারে।

আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬৫: ইলিশ নামটির মধ্যে আমাদের আবেগ ও আস্বাদ দুটোই জড়িয়ে আছে

পাখি সব করে রব, পর্ব-২: দুর্লভ পরিযায়ী পাখি ল্যাপউইং

 

ইলিশের বিজ্ঞান

ইলিশ মাছের ওমেগা থ্রি জাতীয় ফ্যাটি অ্যাসিড লিভারে গিয়ে ইপোসা পেনটানোয়িক অ্যাসিড (EPA) এবং ডোকোসাব হেক্সানয়িক অ্যাসিডে (DHA) রূপান্তরিত হয়ে দেহের কাজে লাগে। কিন্তু দুর্বল হজমশক্তির মানুষ, শিশু বা বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষজন অথবা যারা ফ্যাটি লিভার, জন্ডিস বা গলব্লাডারের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে এই ওমেগা থ্রি ট্রান্সফর্মেশনটা খুব একটা সহজ হয় না। তাই এসব ক্ষেত্রে ইলিশ মাছ এড়িয়ে চলাই ভালো।

আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮: নহবতে সহধর্মিণী সারদা

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১০: সুন্দরবনের রক্ষয়িত্রী বনবিবি

 

কীভাবে রাঁধবেন?

ইলিশ এতই সুস্বাদু মাছ যে, ভাজা, ভাপে, পাতুরি, ঝোল-ঝাল-অম্বল যেভাবেই রাধুন না কেন বাঙালির পাত মাত করে দেবে। তবে স্বাস্থ্যের কথা যখন উঠলই, তবে বলতে হয় যে— খুব অল্প তেল, মশলা দিয়ে প্রায় না ভেজে, বেগুন, আলু, ডাঁটা, কুমড়ো ইত্যাদি বিভিন্ন আনাজপাতি-সহ রান্না করা ইলিশ মাছের গুণাগুণ অবশ্যই বেশি। আর বলাই বাহুল্য, মাছের সাইজ যত বেশি, গুণও ততই বেশি।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content