শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

করোনার প্রকোপ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে ডেঙ্গির প্রভাব। জেলা থেকে শহর সর্বত্র ঘরে ঘরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। গত কয়েক মাস ধরে এই সংখ্যা ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। একের পর এক মৃত্যুর খবর আসছে। ক্রমশ বেড়ে চলছে এর প্রকোপ।
এই রোগের সঙ্গে লড়াই করার জন্য শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পুষ্টি বাড়ানো প্রয়োজন। এই সংক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকতে হবে। তবে ডেঙ্গির চিকিৎসা ঘরে করা সম্ভব। পর্যাপ্ত পরিমাণে হাইড্রেশন ও পুষ্টির মাধ্যমে সহজেই ডেঙ্গির জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই রোগে প্রধানত রক্তের প্লেটলেট বা অনুচক্রিকার হার কমে যায়। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই খাদ্য তালিকায় কিছু পরিবর্তন আনায় জরুরি।
 

ডেঙ্গুর প্রধান উপসর্গগুলি

ডেঙ্গি রোগটি প্রধানত ভাইরাসের কারণে হয়। এক্ষেত্রে প্রধানত জ্বর হয়। তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্তও উঠতে পারে।
জ্বর হওয়ার পর কারও কারও গায়ে র‍্যাশ বের হয়।
লাল লাল অ্যালার্জির মতো বা ঘামাচির মতো হতে পারে।
খুব বেশি সমস্যা দেখা দিলে চার-পাঁচ দিন পর থেকে রক্তের প্লেটলেটকাউন্ট কমতে শুরু করে।
ব্রাশ করার সময় দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত বের হয়। প্রস্রাবে রক্ত বেরোয়। এমন মলত্যাগের সময়ও রক্ত বের হয়।
অনেক ক্ষেত্রে চোখে রক্ত জমে যায়। গায়ে চাকা চাকা হয়ে রক্ত জমে যায় কারও কারও।
মেয়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড এগিয়ে আসে অথবা যাঁদের পিরিয়ড শুরু হয়ে গিয়েছে তা থামতে চায় না।
অনেক ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ শরীরের ভেতরে হয়, যা বোঝা যায় না
ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
মাথা ব্যথা, গাঁটে গাঁটে ব্যথা ইত্যাদি হল এর প্রাথমিক উপসর্গ।

 

খাদ্য তালিকা যে পরিবর্তনগুলি আনা প্রয়োজন

প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সবচেয়ে বেশি ডিহাইড্রেশনের দেখা যায়। ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ শরীরের জলের অভাব। তাই সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। দিনে অন্তত ৩ থেকে ৪ লিটার জল খাওয়া উচিত। তবে জ্বরের প্রকোপ বেশি হওয়ায় এত জল খাওয়া সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে অন্তত দু’ লিটার জল খেতে হবে। জল খেতে ইচ্ছা না করলেও জল খাওয়ার দিকে বিশেষ জোর দিতে হবে। কারণ, আমাদের শরীরে টক্সিন একমাত্র জলের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
 

পেঁপে পাতার রস

পেঁপে পাতায় থাকা পাপাইন এবং কাইমোপাপেইন এনজাইম হজমে সাহায্য করে। ৩০ এমএল পেঁপে পাতার রস প্লেটলেট সংখ্যা বাড়ায়। ডেঙ্গির সময় যাতে প্লেটলেট হ্রাস না পায় তাই পেঁপে পাতার রস দিনে দু’বার খেতে হবে। এটা যেমন হজমে সাহায্য করে, তেমনি পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা সহজেই দূর করে।
 

ডাবের জল

ডাবের জল ইলেকট্রোলাইট এবিং বিভিন্ন খনিজ পদার্থের খুব ভালো উৎস। এটা শরীরকে শক্তি যোগায়। তাছাড়াও ডাবের জলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর মাত্রায় রয়েছে। তাই প্রতিদিন ডাবের জল খেলে শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের টক্সিন বেরিয়ে যায়। এছাড়াও দেহে যে জলশূন্যতার সৃষ্টি হয় ডাবের জল তা প্রতিরোধের জন্য খুবই উপকারী। ডাবের জল পান করলে হার্ট ভালো থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়।

 

টাটকা পেয়ারা

পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি। ভিটামিন-সি-তে প্রচুর পরিমাণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় একটা করে পেয়ারা অবশ্যই রাখতে হবে। তবে পেয়ারার রস খাওয়ার থেকে গোটা পেয়ারা খাওয়া ভালো।
 

মেথি

এক চামচ মেথি এক কাপ জলে রাতে ভিজিয়ে সেই জল পরের দিন দু’বার করে খান। খালি পেটে মেথি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে‌। মেথি ঘুমেও সাহায্য করে। এছাড়াও এটা শরীরের যে কোনও ব্যথা উপশমের জন্য খুবই উপকারী। মেথি বীজে ভিটামিন-সি এবং কে উপস্থিত থাকায় জ্বর কমানো ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
 

লেবু

লেবু ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ, যা শ্বেত রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে। ডেঙ্গি জ্বরে আক্রান্তদের অন্যতম একটি উপকারী ফল হল কমলালেবু। এটি ভিটামিন-সি’তে ভরপুর। শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। পাশাপাশি পাতিলেবু মিষ্টি লেবুর সমান উপকারী।
 

বেদানা

আয়রনের খুব ভালো উৎস হল বেদানা, যা দেহে শক্তি বাড়ায় এবং অনুচক্রিকার হারও বাড়াতে সাহায্য করে। এতে এমন কিছু পুষ্টিকর উপাদান আছে, যা তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়। বিষণ্ণতা ও ক্লান্তি কমায়। আবার শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ার জন্য প্লেটলেটও বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: পিরিয়ডের সময় দুর্বলতা প্রতিরোধে অবশ্যই ডায়েটে রাখুন এই সব খাবার

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব -২৪: ন্যাশনাল থিয়েটারে মধুকবির ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র গিরিশচন্দ্রের নাট্যরূপ মুগ্ধ করেছিল দর্শকদের

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৪: আশা-নিরাশা ও ভরসার সে এক অন্য ‘মনের ময়ূর’

হোমিওপ্যাথি: অর্শে কষ্ট পাচ্ছেন? রেহাই পেতে জেনে নিন কী করবেন, কী করবেন না

 

আদার জল

ডেঙ্গি আক্রান্তদের প্রায়ই বমি বমি ভাব দেখা যায়। আদা বা আদার জল খেলে এই বমি ভাব অনেকটা কমে যায়।
 

দই

দই প্রোবায়োটিকের খুব ভালো একটি উদাহরণ। প্রোবায়োটিক দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন টক্সিন শরীর থেকে বের করে শরীরকে দূষণমুক্ত রাখে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দই রাখা জরুরি আর এই দই যদি ঘরে পাতা হয় তবে তার উপকার আরো খানিকটা বেড়ে যায়।
 

ব্রকোলি

ব্রকোলি ভিটামিন-কে সমৃদ্ধ। ভিটামিন-কে প্রধানত রক্ত তঞ্চনে সাহায্য করে। এছাড়াও অনুচক্রিকার পুনরুৎপাদনে ভিটামিন-কে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। প্লেটিলেট তৈরিতে ভিটামিন-কে সাহায্য করে। তাই যখন প্লেটলেট হঠাৎ করে কমে যায়, তখন খাদ্য তালিকায় ব্রকোলি রাখা উচিত বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই ব্রকোলি।
 

আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য

আয়রনের খুব ভালো উৎস হল ড্রাইফ্রুট, যেমন কিশমিশ, মাখানা, আখরোট, আমন্ড ইত্যাদি। প্রাণিজ উৎসের মধ্যে চিকেন বা মটনের মেটে আয়রনের ভালো উৎস। যেহেতু এই সময় দেহে আয়রনের বিশেষ ঘাটতি দেখা যায় তাই এই সব খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: না খেয়ে নয়, বরং খেয়েই কমান ওজন! কী কী খেলে মেদ ঝরবে? দেখুন ভিডিয়ো

ডায়েট ফটাফট: না খেয়ে নয়, বরং খেয়েই কমান ওজন! কী কী খেলে মেদ ঝরবে? দেখুন ভিডিয়ো

ইংলিশ টিংলিশ: আজকে এসো দেখি Prefix আর Suffix কাকে বলে

যোগা-প্রাণায়াম: গ্যাস-অ্যাসিডিটির সমস্যায় জেরবার? যোগাসনে মিলবে মুক্তি

 

কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার

ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে জ্বর হওয়ার পরে মুখের রুচি একদম চলে যায়। তাই এই সময় মুখরোচক খাবার খেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু তা একেবারেই দেওয়া চলবে না। তার বদলে বরং উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার যেমন বার্লি, সাবু, সুজি ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। খাবারগুলি রান্না করার সময় একটু বেশি করে জল দিয়ে পাতলা করে পরিবেশন করতে হবে।
 

রান্নাঘরের মশলাতেও হবে রোগ প্রতিরোধ

রান্নায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মশলা যেমন আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ, এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি, সাদা জিরে, কালো জিরে ইত্যাদি আন্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, ইমিউন বুস্টার, অ্যান্টিভাইরাস হিসেবে কাজ করে। তাই এই সময় শরীরকে রোগ-জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ওই মশলাগুলি রান্নায় ব্যবহার করলে শরীর ভালো থাকবে। দুধে ভিজিয়ে কাঁচা হলুদ খেলে তা যেমন শরীরকে প্রদাহের থেকে রক্ষা করে।
 

নরম খাবার

নরম খাবার ডেঙ্গি রোগীদের হজমে সমস্যা দেখা যায়। তাই এই সময় নরম খাবার তাঁদের জন্য খুবই উপকারী। খিচুড়ি এর খুব ভালো একটি উদাহরণ। খিচুড়ি গিলতে যেমন সুবিধা হয় তেমনই হজমে তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।

আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-২১: ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ শুটিংয়ে সিউড়ির বাঁশবনে দু’ দুটি বাঘ আনিয়েছিলেন সত্যজিৎ

ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৭: রঙের খেলা আর উইসকনসিনের আঁকাবাঁকা ফাঁকা রাস্তা—জীবনীশক্তিকে আরও উসকে দেয়

খাই খাইঃ বাড়িতেই চিকেন ভর্তা বানাতে চান? জেনে নিন সহজ রেসিপি

দশভুজাঃ রুমা দেবী—তিরিশ হাজার মহিলার ভাগ্য পরিবর্তনের কান্ডারি তিনি

 

কী কী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে

কফি বা ক্যাফিন জাতীয় খাবার।
ভাজাভুজি।
চকোলেট কোকো একদমই খাওয়া চলবে না।
সফট ড্রিঙ্কস
তেল-মশলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
যেকোনও রকমের বাইরের খাবার, ফাস্টফুড খাওয়া চলবে না।
ইনস্ট্যান্ট যে কোনও খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা চলবে না।
বাটার বা চিজ ও মানা।

আরও পড়ুন:

বরণীয় মানুষের স্মরণীয় সঙ্গ, পর্ব-১১: পরজন্মে যেন বাঙালি হয়েই জন্মগ্রহণ করি: অশোককুমার

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৬: ‘সত্যেরে লও সহজে’—রাজসুখ ছেড়ে কি তবে বনবাসী মন?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪২: নিজেকে যিনি আড়ালে রেখেছিলেন

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪৫: পরশুরামের আশ্রমে এসে পৌঁছলেন পাণ্ডবেরা

 

ডেঙ্গি প্রতিরোধে আর কী করতে হবে?

নিজের নিরাপত্তা নিজের কাছে। তাই মশা যেন না কামড়ায় সে-দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। তাই দিনে বা রাতে যখনি ঘুমোবেন অবশ্যই মশারি ব্যবহার করবেন।
বাচ্চাদের স্কুলে হাফ-প্যান্টের বদলে ফুল-প্যান্ট পরিয়ে পাঠানোই ভালো। তাহলে মশা কামড়ানো কিছুটা হলেও কম হবে।
স্বচ্ছ পরিষ্কার জলে ডেঙ্গুর মশা বেশি হয়। তাই খেয়াল রাখতে হবে জল জমতে দেওয়া একদমই চলবে না। বাথরুমে বা ছাদে জল বেশি দিন জমিয়ে রাখা চলবে না।
ডেঙ্গুর মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়। তবে রাতের উজ্জ্বল আলোতেও ডেঙ্গু মশা কামড়াতে পারে।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২


Skip to content